ম্পঞ্জিয়া-টোষ্টা (Spongia Tosta)
পরিচয়।– সমুদ্রপানিতে প্রাপ্তব্য স্পঞ্জ নামক পদার্থ।
ব্যবহারস্থল। – হাঁপানি, ঘুংড়িকাশি, ব্রঙ্কাইটিস, ধমনীর অর্বুদ, মূৰ্চ্ছা, গলগন্ড, হৃৎপিন্ডের কাঠিন্য, অন্ত্রবৃদ্ধি, অন্ডকোষ প্রদাহ, একশিরা, ক্ষয়কাস, ক্রিমি ইত্যাদি।
ক্রিয়াস্থল। বায়ুনলী ও স্বরনলী প্রধান ক্রিয়াকেন্দ্র। এটা দ্বারা স্বরনলী সঙ্কুচিত হয়, অন্ডকোষ স্ফীত ও শক্ত হয়।
প্ৰদৰ্শক লক্ষণ।-শীতকালে ঠান্ডা বাতাস হতে রোগোৎপত্তি। দমবন্ধ হওয়ার মত কাশি, করাত চেরার মত শব্দ। ঘুংড়ি বা croup, মধ্যরাত্রের পূর্বে বৃদ্ধি। গলগন্ড রোগ, শক্ত, দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। বুকে দুর্বলতা বোধ। হৃৎশূল, স্ত্রীলোকের মাসিক ঋতুকালে। কোমরের কাপড় টান করে বাঁধিয়া রাখা যায় না। অত্যন্ত ক্ষুধা, অত্যন্ত পিপাসা। সব সময় গলা ঝাড়ে বা পরিষ্কার করে। গলক্ষত, মিষ্টি খেলে বৃদ্ধি। মানসিক উত্তেজনা কাশি বৃদ্ধি করে। বুক ধড়ফড় করে,শুইতে পারে না। হৃৎরোগ, মধ্যরাত্রে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় এবং উঠে বসে আকুলভাবে কাশতে থাকে। গ্ল্যান্ডগুলি ফুলে উঠে ও শক্ত হয়। ঘুমের পর লক্ষণের বৃদ্ধি। শ্বাসরোধক কাশি, নিদ্রাকালে এবং নিদ্রার পর বাড়ে। মনে হয় যেন নিদ্রা যাইবামাত্র দমবন্ধ হয়ে যাবে।
মন।-রোগী এই আনন্দিত, পরমুহূর্ত্তেই বিমর্ষ। কোন কাজ করতে চায় না, কোন বিষয় সে সহজে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না। ইগ্নেসিয়া বা পালসেটিলার মত রোগীর মনোভাব ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হয়।
গঠন ও স্বভাব।-স্পঞ্জিয়া রোগী গৌরবর্ণ; রোগীর মাংসপেশী শিথিল, মুখমন্ডল ফুলা ফুলা। রোগী বা রোগিণীর শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ থাকেই।
শ্বাসযন্ত্রের রোগ। -ঘুংড়ি-কাশি। ঘুংড়ি কাশিতে শ্বাস ফেলতে রোগীর অত্যন্ত কষ্ট হয়, যেন তার গলনলী আবদ্ধ আছে। কাশি কুকুরের ডাকের মত খনখনে, করাত চেরার মত শব্দ, অত্যন্ত শুষ্ক, কিছুতেই গয়ার উঠতে চায় না। হঠাৎ ঘুংড়ি কাশিতে স্বরনলী বন্ধ হয়ে শিশু নীল হয়ে যায়। ডাঃ হেরিং বলেন-ঘুংড়ি কাশিতে অ্যাকোন, ব্রোম, হিপার, আয়োড, ফস এবং স্পঞ্জিয়া বিফল হলে ক্যাওলিন দ্বারা আশাতিরিক্ত ফল পাওয়া যায়। ঘুংড়ি-কাশিতে সর্বপ্রথম অবস্থায় অ্যাকোনাইট উপযোগী, তারপর স্পঞ্জিয়া উপযোগী। ঘুংড়ি কাশি চিকিৎসায় বনিংহোসেন বর্ণিত চিকিৎসা-পদ্ধতি বিশেষ ফলপ্রদ। যখন দেখিবে শিশুর হঠাৎ ঘুংড়ির আক্রমণ হয়েছে তখনই ২/৩ মাত্রা অ্যাকোনাইট ঘন্টা বা এক ঘন্টা অন্তর প্রয়োগ করবে, তাতে যদি উপকার না পাও, কাশি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির দিকে যায়, অত্যন্ত শুষ্ক কাশি, কাশবার সময় শিশুর গলার ভিতর হিস হিস শব্দ হতে থাকে বা করাত দ্বারা কাটিবার মত শব্দ হতে থাকে, তখন স্পঞ্জিয়া প্রয়োগ করবে। অধিকাংশ স্থলেই হয় অ্যাকোনাইট না হয় স্পঞ্জিয়া রোগ আরোগ্য করে। স্পঞ্জিয়া সেবন করার পর ঘুংড়ি-কাশি সরল হয়ে গলার ভিতর ঘড়ঘড় করলে হিপার ব্যবস্থেয়। ব্রোমেটাম যখন ঘুংড়ির সাথে গ্লটিসের সঙ্কোচন এসে পড়ে; তখন কার্যকরী; ক্যাওলিন ঝিল্লীযুক্ত ঘুংড়ি-কাশিতে কার্যকরী, বিশেষতঃ যখন ঝিল্লী টেকিয়ার নিকট নেমে যায়, বুকে অত্যন্ত বেদনা অনুভব করে। আয়োডিনও ঘুংড়ি-কাশির কার্যকরী ঔষধ, তবে এই ঔষধ প্রয়োগ করার পূর্বে দেখে লইবে পূর্বে খুব ঝড়-বৃষ্টি হয়েছিল কিনা।
কাশি।-স্পঞ্জিয়ার কাশি শুষ্ক খনখনে; মনে হয় যেন তার বায়ুনলী শুকিয়ে গেছে, সেজন্য প্রতিবার কাশবার সময় যেন করাত দ্বারা চিরিতেছে এরূপ শব্দ হতে থাকে। এটার কাশি মিষ্ট দ্রব্য খাওয়ার পর (জিঙ্কাম) এবং ঠান্ডা পানীয়ের পর, ধূমপান করলে, গরম ঘরের ভিতর থাকলে, গান করলে ও কথা বললে বৃদ্ধি। গরম দ্রব্য পান করলে রোগী অনেকটা উপশম বোধ করে (আর্স, লাইকো, রাস, সাইলি)। কেবল ঘুংড়ি নয়, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মাকাশি প্রভৃতি রোগেও এটার প্রয়োগ আছে। নিউমোনিয়া আরোগ্যের মুখে রোগীর কাশতে কাশতে বুকে প্রচুর পরিমাণে শ্লেষ্মা উঠে, সেজন্য রোগী শয়ন করতে পারে না, কেবল বামপার্শ্ব ফিরে শুইতে পারে বা চিৎ হয়ে শয়ন করতে পারে (সালফার); ব্রঙ্কাইটিস রোগে পূর্বোক্তরূপ কাশিতে শ্লেষ্মা পরিমাণে খুব কমই উঠে। রোগীর বায়ুনলীভূজের ভিতর জ্বালা করে, রোগী মনে করে, তার গলার ভিতর হেজে গেছে। হুপিং-কাশিতেও এটা ব্যবহার্য্য ঔষধ, যদি সেটা রাত্রি দ্বিপ্রহরের সময় ঠান্ডা হাওয়ায় বেশী হয়।
যক্ষ্মারোগ।-রোগী জোরে নিঃশ্বাস গ্রহণ করতে গেলে তার ঘঙঘঙে কাশি হয় এবং কাশির পর রোগী অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। রোগী জোরে কথা বললে, জোরে শ্বাস গ্রহণ করতে গেলে অথবা ঠান্ডা হাওয়া লাগলে বৃদ্ধি।
হৃদযন্ত্রের রোগ।-হৃৎশূলে রোগী মনে করে তার বুক যেন সেঁটে ধরেছে, শ্বাসরোধ হওয়ার উপক্রম হয়, রোগী অত্যন্ত অবশ হয়ে পড়ে, প্রচুর ঘাম হয়। সে ঘুমাতে ঘুমাতে উঠে বসে প্রবলভাবে কাশতে থাকে। এটা হৃৎকম্পেরও ভাল ঔষধ। রোগীর অত্যধিক বুক ধড়ফড়ানি থাকে; সেইসঙ্গে বুকে অত্যন্ত বেদনা। রোগীর হতে হতে খুব শুষ্ক কাশি হতে থাকে। রমণীদের ঋতুর পূর্বে বা ঋতুকালে (রজঃস্রাব হচ্ছে তৎকালে) হৃৎস্পন্দন বা হৃৎশূল প্ৰবল থাকলেও উপযোগী।
একশিরা বা অন্ডকোষ-প্রদাহ। -একশিরা রোগে রোগীর অন্ডকোষটি ফুলে শক্ত হয়, সেটার ভিতর যেন কেউ মুচড়াইয়া পাক দিচ্ছে এরূপ বেদনা। কাপড়-চোপড়ের সংঘর্ষে, নড়াচড়ায় বা স্পর্শে সেটার ভিতর ধকধক করতে থাকে। অকালে প্রমেহস্রাব রুধ হয়ে বা কুচিকিৎসার ফলে ঐরূপ অন্ডকোষের প্রহার হলে, এটা বিশেষ ফলপ্রদ ঔষধ। ডাঃ ফ্যারিংটন বলেন-একশিরা রোগে সর্বপ্রথম জেলসিমিয়াম কার্যকরী তারপর পালসেটিলা, সর্বশেষ হ্যামামেলিস উপযোগী ঔষধ। প্রমেহ স্রাব হলুদবর্ণের হওয়ার পর যদি একশিরা হয়, তখন মার্ক-সল। একশিরা হয়ে যদি,অন্ডকোষ ফুলে শক্ত হয়, রেতঃরজ্জু যদি ব্যথান্বিত হয়, তবে স্পঞ্জিয়া, রডোডেনড্রণ ও ক্লিমেটিস কার্যকরী। অরাম-মেটেও অন্ডকোষের শক্তভাব আছে, তবে সেটা উপদংশ রোগ ও পারদের অপব্যবহার জন্য। ক্লিমেটিস ও পালসেটিলা-প্রমেহ রোগের স্রাব বন্ধ হয়ে যে-সকল একশিরা হয়, সেইস্থানে উপযোগী। বাতরোগের জন্য অথবা ঠান্ডা লেগে একশিরা হলে রডোডেনড্রণ দিতে হয়।
গলগন্ড বা থাইরয়েড স্ফীতি।– গলার গ্রন্থিসকল ফুলে শক্ত ও বড় হয়ে পড়ে; মলগন্ডের আক্রমণে গলার ভিতর কি যেন নড়ছে এরূপ বোধ, সময় সময় মনে করে যেন তার গলার ভিতর কেউ পিন ফুটাইয়া দিচ্ছে। রাত্রে শ্বাসরোধ হওয়ার উপক্রম হয়, সেইসঙ্গে রাত্রে ঘঙঘঙে কাশিও হতে থাকে। গলগন্ড রোগে স্পঞ্জিয়া চমৎকার ঔষধ। কিন্তু বুদ্ধির জড়তাসহ গলগন্ড রোগে ল্যাপিস-অ্যালবা অধিকতর উপযোগী, অসম্পূর্ণ বৃদ্ধি। আয়োডাম-অন্যতম উৎকৃষ্ট ঔষধ, পূর্ণিমার পরে অর্থাৎ চন্দ্রের হ্রাসপ্রাপ্তির সঙ্গে ব্যবহারে বিশেষ ফল পাওয়া যায়, রাক্ষুসে ক্ষুধা, সর্বদা যাই খাই করে, কিছুক্ষণ পর পর আহার করতে বাধ্য হয়।
সম্বন্ধ। -ঘুংড়ি-কাশিতে-অ্যাকোন, হিপার, আয়োডিন, ব্রোমেটাম তুল্য; হৃত্যন্ত্রের রোগে- ন্যাজা, ক্যালমিয়া তুল্য; অন্ডকোষ প্রদাহে-জেলস, পালস, হ্যামা, কোনায়াম তুল্য; স্বরভঙ্গে-ড্রসেরা তুল্য।
বৃদ্ধি।– সিঁড়িতে চড়লে; ঝড়ে; মধ্যরাত্রের পূর্বে; চাপে; কথা বললে; গান করলে; ডানদিকে শুইলে; গরম ঘরে; ঠান্ডা বায়ুতে; আবহাওয়া পরিবর্তনে; মিষ্টদ্রব্যে।
হ্রাস।-মাথা নীচু করে শুইলে; শুষ্ক বায়ুতে (মাথাব্যথা); সামনে ঝুঁকলে (শ্বাসকষ্ট)।
শক্তি।-মূল-অরিষ্ট, ৩, ৬, ৩০ ও ২০০।