স্পাইজেলিয়া-অ্যান্থেমিন্টিকা (Spigelia Anthelmintica)
পরিচয়।-অপর নাম অ্যান্থেলমিয়া-কোয়াড্রিফাইলা।
ব্যবহারস্থল।-মন, গ্রন্থির বিবৃদ্ধি, হৃৎশূল, দন্তশূল, অন্ত্রশূল, আমবাত, তোলামি, এবং ক্রিমি রোগ।
ক্রিয়াস্থল।-মস্তক, চোখ, মুখমন্ডল, পঞ্জর, অন্ত্রাশয়াদি এটার ক্রিয়াক্ষেত্র। হৃৎপিন্ডের স্নায়ুশূলে অত্যন্ত উপযোগী
স্বভাব ও গঠন।-রোগীর মুখমন্ডল ফুলা এবং ডান চোখ দুইটি হলুদ বর্ণের রেখাবেষ্টিত, ঠোটদ্বয় ফাটা ফাটা।
মন।-স্পাইজেলিয়া রোগীর যেন কতই চিন্তা এরূপভাবে একদৃষ্টে তাকাইয়া থাকে। রোগীর আলপিন, সূচ প্রভৃতিতে ভয়; সাইলিসিয়া রোগী অনবরত আলপিন ও সূচ খুঁজে বের করে, কারণ পাছে তার গায়ে ফুটে যায়। রোগী কোনরূপ মানসিক পরিশ্রম করতে চায় না-স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ। সামান্য কারণে রেগে যায়। মাঝে মাঝে আত্মহত্যার প্রবৃদ্ধি।
প্রদর্শক লক্ষণ।-ক্রিমি ও ক্রিমিজনিত রোগ। নিউরালজিক ও রিউম্যাটিক মাথাব্যথা, – ক্রিমি ও ক্রিমিজান সূর্য্যাবর্ত্ত মাথাধরা। উঁচু-নীচুতে পা পড়লে বাড়ে। বামদিকের ঔষধ। যন্ত্রণা ঘাড়ে সুরু হয়, ঘুরে বাম চোখের উপর সীমাবদ্ধ হয়। শুইলে কমে। চক্ষে অত্যন্ত যন্ত্রণা। চোখ বড় বোধ। আলোক সহ্য হয় না। দাঁতবেদনা, খাওয়ার পর ও ঠান্ডায় বৃদ্ধি। মুখ হতে দুর্গন্ধ। হৃত্যন্ত্রে যন্ত্রণা, দৃশ্যমান হৃৎস্পন্দন, নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। ব্যথা হাত পৰ্য্যন্ত পৌছায়। গরম পানি খেতে চায়, তাতে উপশম। বামদিকে টাটানি। কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস। মাথা উঁচুতে রেখে ডানদিকে শুইতে বাধ্য হয়। তোতলামি, ক্রিমি-লক্ষণ, একই কথা তিন-চার বার উচ্চারণ করে। বর্ষাকালে বৃদ্ধি। চোখের পাতার পক্ষাঘাত। শরীরের চামড়া ফ্যাকাসে ও কোঁচকান। সামান্য নড়াচড়ায় দমবন্ধ ভাব।
শিরঃশূল। -শিরঃবেদনা নির্দিষ্টকাল অন্তর আবির্ভূত হয়। সাধারণতঃ সকালে ঘাড় হতে আরম্ভ হয়ে ব্রহ্মতালু পার হয়ে বামদিকের চোখের উপরে ছড়িয়ে পড়ে। শিরঃরোগ সকালে আরম্ভ হয় ও দুপুরে বৃদ্ধিলাভ করে, তারপর রোদের প্রখরতা কমতে থাকলে শিরঃরোগও কমতে আরম্ভ করে। আধ-কপালে মাথাব্যথা, বিশেষতঃ বামদিকের রোগে স্পাইজিলিয়া এবং ডানদিকের রোগে স্যাঙ্গুইনেরিয়া উপযোগী। নেট্রাম মিউর ও স্পাইজিলিয়া উভয় ঔষধেই সূর্য্যাবর্ত মাথাধরা আছে। পার্থক্য-নেট্রাম-মিউরের মাথার যন্ত্রণা ঘুম ভাঙ্গিবার পরই আরম্ভ হয় এবং সেইসঙ্গে পানিপিপাসা ও কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে। স্পাইজেলিয়ার মাথার যন্ত্রনা সাধারণতঃ স্নায়ুর উত্তেজনা হেতু হয়; মাথাব্যথার সাথে গা-বমি-বমি ভাব থাকে।
চোখের স্নায়ুশূল।-অক্ষিগোলকের মধ্য দিয়ে মস্তকের পশ্চাৎ পর্য্যন্ত তীক্ষ্ণ অস্ত্র বিদ্ধবৎ বেদনা হয়, বেদনার সময় চোখতারা বড় হয়ে গেছে বোধ। চোখে সামান্য হাতের স্পর্শও সহ্য করতে পারে না; চোখ রগড়ালে মাথার যন্ত্রণা আরও বেশী অনুভূত হয়; চোখ হতে অনবরত অশ্রু বের হতে থাকে। ক্রিমিজনিত টেরা-দৃষ্টিতেও এটা ফলপ্রদ ঔষধ।
কর্ণশূল।-শিরঃশূলের সাথে কর্ণশূলে রোগী উচ্চ শব্দ সহ্য করতে পারে না। কর্ণশূলের সময় রোগী মনে করে কানের ভিতর কি যেন ফড়ফড় করছে। সময় সময় রোগী ভাল শুনতে পায়, আবার শূলের ব্যথা আরম্ভ হলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়।
দন্তশূল।-অত্যন্ত দপদপ করে দন্তশূল, মনে হয় যেন কেউ জোর করে তার দাঁত উপড়াইয়া ফেলছে, তখন রোগী শুয়ে থাকলে আরাম পায়-ব্রাইয়োনিয়ার রোগীও গুইয়া থাকলে আরাম পায়। দন্তশূল সাধারণতঃ সন্ধ্যাবেলা ধূমপানের পরই বেশী হয় (ক্যামো, ইগ্নে)। পোকালাগা দাঁতে অত্যন্ত দপদপ করে, আহারের সময় কিছু খাওয়ার পরই আবার যন্ত্রণা আরম্ভ হয়।
ক্রিমি।-শিশুদের ছোট ছোট ক্রিমিরোগে বিশেষতঃ যদি সেটারা বহু সংখ্যায় বের হতে থাকে তবে এই ঔষধ ব্যবহাৰ্য্য। স্পাইজেলিয়া ক্রিমিজনিত টেরা-দৃষ্টিতে সিনা ও নেট্রাম-ফসের মত উপযোগী।
হৃৎপিন্ডের রোগ।-ভয়ানক হৃৎস্পন্দন। রোগীর হৃৎপিন্ডের ভিতর এত ধড়ফড় করতে থাকে যে, সেই স্পন্দন দূর হতেও শোনা যায়। হৃৎকম্পে, তার সমস্ত দেহ কাঁপতে থাকে। রোগীর নাড়ী সবিরাম হয়ে যায়। যন্ত্রদ্বারা বিড়ালের গায়ে আঘাত করলে যেরূপ শব্দ হয়, হৃত্যন্ত্রের আকুঞ্চনের সময়ে সেইরূপ শব্দ শুনা যায়। রোগের প্রচণ্ড অবস্থায় এই ঔষধ ম্যাগ-ফস ও ডিজিটেলিস তুল্য। কেউ কেউ বলেন এটা হৃত্যন্ত্রের রোগে ডিজিটেলিস, ক্যাক্টাস ও ম্যাগ-ফস কেউ বলেন ত অপেক্ষাও ভাল ঔষধ।
ডাঃ হেরিং বলেন-হৃৎপিন্ডের রোগে স্পাইজিলিয়া বহু অংশে ক্যালমিয়া তুল্য ঔষধ। রোগের প্রথমে স্পাইজেলিয়া প্রয়োগ করে ক্যালমিয়া প্রয়োগে বিশেষ ফল পাওয়া যায়। স্নায়ুশূলও উভয় ঔষধে আছে; ক্যালমিয়ার শূলবেদনা ডানদিকে এবং স্পাইজেলিয়ায় সাধারণঃ বামদিকে বেশী দেখা যায়। এই দুই ঔষধ বাতজ হৃত্যন্ত্রের রোগে অতিশয় কার্যকরী। দুই ঔষধেরই হৃৎস্পন্দন অত্যধিক। নিকটে কেউ দাঁড়ালে স্পন্দন শুনতে পায়, তবে বাতযুক্ত হৃৎরোগে ক্যালমিয়াই শ্রেষ্ঠ।
মলান্ত্র।-রোগীর মলান্ত্র মধ্যে যেন কোন পোকা বেড়াচ্ছে বোধ, এইজন্য তার গুহ্যদ্বার অত্যন্ত চুলকায়। রোগীর মল আমযুক্ত, সেটা অত্যন্ত কোথ দিবার পর বের হয়, কখনও বা অসংখ্য ক্রিমিসহ প্রচুর মল বের হয়ে থাকে। এটা কেঁচো ক্রিমিরও ঔষধ। মলান্ত্রের কর্কটিয় অর্বুদ রোগে যখন অসহনীয় যন্ত্রণা থাকে তখন ডাঃ অ্যালেন এই ঔষধ প্রয়োগ করতে উপদেশ দেন।
স্পাইজেলিয়া রোগী রাত্রে হস্ত-পদাদি কিছুতেই স্থির রাখতে পারে না, সেজন্য রাত্রে তার ভাল ঘুম হয় না, দিনের বেলায় ঘুমায়।
সম্বন্ধ।-বাম চোখের স্নায়ুশূলে থিরিডি তুল্য; শিরঃরোগে-নেট্রাম মিউর, স্যাঙ্গুইনেরিয়া তুল্য; চোখের বেদনায়-বেলেডোনা তুল্য; হৃৎপিন্ডের স্পন্দনে-ক্যালমিয়া, ডিজি, ক্যাক্টাস তুল্য; নির্গমনে সিনা, টিউক্রিয়াম, ষ্ট্যানাম, নেট্রাম-ফস তুল্য।
বৃদ্ধি। স্পর্শে, নড়াচড়ায়; সামনে ঝুঁকলে; বর্ষার সময়; ঠান্ডা হাওয়ায়।
হ্রাস। চাপ দিলে; মাথা উঁচু করলে; ডানদিকে শুইলে; খোলা বাতাসে (মাথাধরা)।
শক্তি।– ৩x, ৬x, ৬, ৩০, ২০০, ১০০০। কিন্তু সাধারণতঃ ৩০ ও ২০০ শক্তিই বেশী ব্যবহৃত হয়।