সেনেগা (Senega)
পরিচয়।–অপর নাম স্লেট-রুট।
ব্যবহারস্থল। –হাঁপানি, ফুসফুস-প্রদাহ, বায়ুনলী-প্রদাহ, যক্ষ্মা, হুপিং-কাশি, চোখের শ্বেতক্ষেত্রের অস্বচ্ছতা, চোখে জলসঞ্চয়, চোখের তারা-প্রদাহ, উদরী প্রভৃতি।
ক্রিয়াস্থল।-বক্ষঃগহ্বর, চোখ ও মূত্রাশয়ের উপর ক্রিয়া আছে। শ্বাসনলীর সর্দিরোগে এটার উপকারিতা প্রসিদ্ধ।
চোখের অসুখ।-রোগী চোখগোলকের উপরে ব্যথা অনুভব করে। কোন দ্রব্যের প্রতি একদৃষ্টে তাকাইয়া থাকলে চোখ নাচিতে থাকে এবং চোখে পানি আসে। বার বার চোখ মুছিতে হয়। বৈকাল বেলা সূর্য্যের দিকে তাকালে মনে হয় যেন দুইটি সূর্য্য একটির নীচে অপরটি রয়েছে অর্থাৎ রোগী একটি জিনিসকে দুইটি দেখে। ছানি তুলিবার পর অক্ষিমুকুর অংশ চোখমধ্যে হতে গেলে সেনেগা ব্যবহাৰ্য্য। গন্ডমালা-দোষযুক্ত ব্যক্তিদের চোখের ভিতর পুঁজ জন্মিয়া চোখের পাতা জুড়ে যায়। পানিতে ভিজিয়ে চোখ খুলতে হয়।
শ্বাসযন্ত্রের রোগ।-এই রোগে এটা রাস-টক্স ও ব্রাইওনিয়ার মধ্যবর্তী ঔষধ। সেনেগার কাশি প্রায় অনেক স্থলেই ব্রাইয়োর মত দেখা যায়, কিন্তু বিশ্রামে এটার উপশম হয় না, রাস-টক্সের মত সঞ্চালনে উপশম হয়। ডাঃ গ্যারেন্সি বলেন, বৃদ্ধদের নিউমোনিয়া ও প্লুরিসি রোগেই সেনেগা বেশী ব্যবহৃত হয়। রোগীর বুকে প্রচুর শ্লেষ্মা জমে, শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করার সময় বা কাশবার সময় বুকের ভিতর ঘড়ঘড় শব্দ হয়, গলার ভিতর সাঁই সাঁই করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পাদনে অত্যন্ত কষ্ট হয় ও জ্বালা করে। রোগীর শ্বাসনলীতে প্রচুর শ্লেষ্মা জমা থাকা সত্ত্বেও গয়ার সহজে উঠে না, অনেকক্ষণ কাশবার পর তবে কিছু পরিমাণ উঠে। তুলনীয়। -অ্যান্টিম-টার্ট-সেনেগার মত শ্বাসনলীতে যথেষ্ট শ্লেষ্মা জমা থাকে, ঘড়ঘড় শব্দ হয়; কিন্তু কাশলে কিছু উঠে না অথবা কাশতে কাশতে বুকে অতি সামান্য উঠে। শ্বাসযন্ত্রের রোগে এটা সেনেগা ও অ্যান্টিমটার্টের প্রকৃতিগত লক্ষণ। দেশীয় ঔষধ জাষ্টিসিয়াতেও (বাসক) ঠিক এই প্রকারের লক্ষণ পাওয়া যায়, জাষ্টিসিয়ায় রোগীর বুকেও শ্লেষ্মা ঘড়ঘড় করে, কাশতে কাশতে বুকে অতি সামান্য উঠে অথবা মোটেই উঠে না। অ্যান্টিম-টার্টে গলার মধ্যে ঘড়ঘড় শব্দ বেশী, কাশি বারে কম, এতে বমনেচ্ছা নেই কিন্তু আচ্ছন্নতা আছে। ইপিকাক ঔষধে সেনেগা ইত্যাদি ঔষধের মত ঘড়ঘড় শব্দযুক্ত কাশি আছে, বমনেচ্ছা বা গা-বমি-বমি আছে, কিন্তু তন্দ্রাচ্ছন্নতা নেই, ইপিকাকে বুকে ব্যথা নেই, কিন্তু শ্বাসকষ্ট আছে। কাশতে কাশতে বুকে রোগী অনেক সময়ে বমি করে দেয়। রোগীর যেমন শ্বাসকষ্ট সেইরূপ বুকে বেদনা। হাঁচিলে, কাশলে ও স্পর্শ করলে বেদনার বৃদ্ধি।
প্লুরিসি। -যদি বুকে পানি জমে চাপবোধ ও বেদনা হয় তবে ফলপ্রদ। তুলনীয়।-বুকে পানি জমিলে -সেনেগার মত এপিস এবং অ্যাপোসানামও অনেক সময়ে ব্যবহারের প্রয়োজন হয়ে থাকে। ব্রাইগুনিয়া এবং সাঙ্কারও সময়ে সময়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ব্রাইওনিয়া –বুকে সূচফোটান ব্যথা, নিঃশ্বাস লবার সময়ে এবং কাশবার সময়ে বেদনার বৃদ্ধি, কাশবার সময়ে রোগী হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে। কিন্তু অ্যাসকেপিয়াসে নিঃশ্বাস ফেলিবার সময়ে বেদনা বাড়ে। ব্রাইওনিয়ার পরে অনেক সময়ে এটার প্রয়োজন হয়, অথবা ব্রাইওনিয়ায় উপকার না হলে তার পরে এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কেলি-কার্বে সূচফোটানো বেদনা আছে, ব্রাইওনিয়ার মত নড়াচড়ায় বেদনা বাড়ে কিন্তু স্থির হয়ে থাকলেও কমে না। প্রায়ই ব্রাইওনিয়ার পরে দরকার হয়ে থাকে। র্যানানকুলাস-বালবো-বুকে পানি জমিলে বিশেষ উপযোগী, বুকে খোঁচামারা বেদনা এটার বিশেষ প্রয়োগ লক্ষণ।
হুপিং-কাশি।-মোটাসোটা শিথিল মাংসযুক্ত শিশু। সন্ধ্যাবেলা কাশির বৃদ্ধি দেখা যায়, বুকের দুই পার্শ্বে খুব ব্যথা থাকে।
মূত্রস্থলীর প্রদাহ।-প্রস্রাবের পরিমাণ ক্রমাগত কমতে থাকে। প্রস্রাব ঘোর ও ফেনা ফেনা। অনবরত প্রস্রাব করার তীব্র বেগ, কিন্তু প্রস্রাব করার পূর্বে ও পরে মূত্রনলীর ভিতর পুড়ে যাবার মত দাহ ও জ্বালা।
নিদ্রা – সেনেগা রোগী সন্ধ্যার পর শুয়ে পড়িবামাত্র নিদ্রায় অভিভূত হয়ে পড়ে, কিন্তু নিদ্রিত অবস্থায় রোগী অত্যন্ত অস্থিরতা প্রকাশ করে। বুকের ভিতর সূচ ফোটানবৎ ব্যথার জন্য তার বার বার ঘুম ভেঙে যায়।
বৃদ্ধি।-স্পর্শে; চাপে; ডানদিকে শুইলে (বুকে যন্ত্রণা); বাহু নাড়লে (বুকে ব্যথা); সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলে; রাত্রে; সন্ধ্যাকালে; ঠান্ডা বাতাসে; কোন জিনিসের প্রতি কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলে।
হ্রাস।-ঘাম হলে; মাথা পিছনে হেলাইলে।
শক্তি।-মূল-অরিষ্ট, ৩, ৬, ৩০, ২০০। ডাঃ ক্লার্ক ৩০ শক্তিই ব্যবহার করতেন।