স্যার্সাপ্যারিলা (Sarsaparilla)
পরিচয়।-অপর নাম স্পাইল্যাক্স অফিসিনেলিস।
ব্যবহারস্থল।-মূত্রযন্ত্রের উপর প্রধান ক্রিয়া। মূত্ররোধ, মূত্র-পাথরী, হাঁপানী, স্তনের ক্যান্সার, নানাবিধ চর্মরোগ, পুরাতন বাত, অন্ত্রবৃদ্ধি, লিঙ্গাবরকের উপর দাদবৎ উদ্ভেদ, শিশুদের যন্ত্রণাদায়ক প্রস্রাব, প্রস্রাবে সাদা সাদা তলানি, কৃত্রিম মৈথুনের পর বিষাদ, শুক্রবাহীনলীর স্ফীতি, ক্ষত, আঁচিল, ম্যারাসমাস প্রভৃতি।
ক্রিয়াস্থল।সোরা, সাইকোসিস ও সিফিলিস-দুষ্ট ধাতু এটার ক্রিয়াস্থল। পারদ দোষ-দুষ্ট ব্যক্তি অথবা তার সন্তান-সন্ততির উপরেও এটার ক্রিয়া আছে।
গঠন।শিশুর গ্রীবা অত্যন্ত শীর্ণ, ঐ স্থানের চামড়া কুঁচকাইয়া যায় এবং তথাকার গ্রন্থি সকল ফুলে উঠে। অ্যাব্রোটেনাম শিশুর সমস্ত শরীর শুকিয়ে যায়, কিন্তু বেশী শুকিয়ে যায় পায়ের দিকটা। সার্সাপেরিলার শিশুর গায়ের চামড়ায় বৃদ্ধ ব্যক্তির মত ভাঁজ পড়ে, এটার রোগীর ঘাড়ের দিকটাই বেশী শুকিয়ে যায়। নেট্রাম-মিউর শিশুরও ঘাড়ের দিকা বেশ শুকাতে আরম্ভ করে। সার্সার সাথে পার্থক্য এই-সার্সার শিশুর পিতামাতার দিক হতে সাইকোসিস বা সিফিলিসের ইতিহাস থাকে। আয়োডিয়ামে সর্বশরীর সমভাবে শীর্ণ হতে থাকে, কিন্তু সেইসঙ্গে তার খাই খাই ভাব থাকে। আর্জেন্টাম নেইট্রিকাম ও সাইলিসিয়া শিশু এত শীর্ণ হয়ে যায় যে, আর্জেন্টামের শিশুকে দেখতে বৃদ্ধের মত এবং সাইলিসিয়ার শিশুর মুখখানা বাদুরের মত দেখায়।
মন।-রোগী সর্বদাই যন্ত্রণার জন্য বিমর্ষভাবে থাকে। রেতঃপাতের সময়, প্রস্রাব করার পর তার অত্যন্ত চিত্ত-চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তার ফুর্ত্তির অত্যন্ত অভাব, অথচ কেন যে তার ফুর্ত্তি হয় না, তা সে ব্যক্ত করতে পারে না।
প্ৰদৰ্শক লক্ষণ।– প্রস্রাব করার শেষে অত্যন্ত যন্ত্রণা। মূত্রে আঁস আঁস তলানি। বসবার সময় ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব ঝরিতে থাকে। ডান কিডনী হতে যন্ত্রণা নীচের দিকে নেমে যায়। প্রস্রাবের ধারা সরু। প্রস্রাব অল্প। শুক্রে রক্ত থাকে। মাসিক ঋতুর পূর্বে কপালে উদ্ভেদ, তা হতে রস পড়ে। ডান কুঁচকিতে উদ্ভেদ। শিশুর ঘাড়ের চামড়া কোঁচকাইয়া যায়, ভাঁজ পড়ে যায়। বসন্তকালে চর্মরোগ। দাদের মত চর্মরোগ, সেটার চারিদিকে লালবর্ণ মন্ডলী। হাত-পায়ের চামড়া ফাটা। রোগ ডানদিক হতে বামদিকে যায়। মেহরোগের পর বাতরোগ। হাত-পা কাঁপে।
স্ত্রীলোকের স্তনবৃত্ত কলিকার মত ভিতরে ঢুকে যায় (সাইলি)। পেটে কলিক ও পিঠে ব্যথা। মুখে ঘা, মুখ হতে লালাস্রাব। নিঃশ্বাসে গন্ধ। গর্মিরোগের জন্য পেরিয়ষ্টিয়ামে বেদনা। মাথাধরা, সেইসঙ্গে বিমর্ষভাব। বাত, ফোলা ও আক্রান্ত স্থান গরম। হাঁপানি, শুইলে বেশী। মাথাধরা, গা-বমি- বমি, টকবমি।
প্রস্রাব-যন্ত্রের রোগ।-সার্সাপ্যারিলা রোগীর মূত্রাশয়ে অত্যন্ত বেদনা। রোগী বসে প্রস্রাব করলে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব করবে, কিন্তু দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে বেশ খোলসা প্রস্রাব হবে জিঙ্কাম রোগী দাঁড়িয়ে পিছনের দিকে বেঁকে প্রস্রাব করে। কষ্টিকাম রোগী দাঁড়িয়ে মলত্যাগ করে। চিমাফিলা-অ্যাম্বেলেটা রোগী পদ্বদয় ফাঁক করে সম্মুখের দিকে ঝুঁকে দাঁড়ালে সম্মুখে প্রস্রাব করতে পারে না। সার্সাপ্যারিলা রোগীর প্রস্রাব করার পর অত্যন্ত জ্বালা অনুভূত হয়। থুজা রোগীর যখন শেষ ফোঁটা প্রস্রাব বের হয়, তখন জ্বালা করতে থাকে। মার্কারির প্রস্রাব হয়ে যাবার পরও অত্যন্ত কোঁথানি থাকে। ক্যান্থারিস রোগীর প্রস্রাবের পূর্বে, সময়ে ও পরে জ্বালা। সার্সাপ্যারিলার শিশু প্রস্রাব করার পূর্বে ও সময়ে অত্যন্ত চীৎকার করে, শিশু বিছানায় প্রস্রাব করলে বিছানার উপর সাদা সাদা দাগ মত পড়ে। পুরাতন প্রমেহ রোগীর প্রবল আকুঞ্চনের ফলে প্রস্রাবের সাথে ও অন্য সময় কষায় পুঁজ ও শ্লেষ্মা বের হয়।
পুংজননেন্দ্রিয়ের রোগ।-সামান্য উত্তেজনাতেই রেতঃপাত (ক্যালোডিয়াম)। অনেক সময় কামোত্তেজনা না হয়েও রক্তমিশ্রিত রেতঃপাত হয়। রেতোরজ্জু মধ্যে ধকধক করতে থাকে, ঐ স্থানে স্পর্শদ্বেষ থাকে। জননেন্দ্রিয় প্রদেশ হতে অত্যন্ত দুর্গন্ধ বের হয়। প্রমেহের স্রাব অবরুদ্ধ হওয়ার জন্য বাতরোগ হতে সার্সা-কোনায়াম, থুজা, মেডোরিণাম ও পালসেটিলা তুল্য ঔষধ।
স্ত্রীরোগ। ঋতুস্রাব হওয়ার পূর্বে রোগিণীর বার বার প্রস্রাবের বেগ হয় এবং ঋতুস্রাব আরম্ভ হলে কপালে কন্ডুয়নযুক্ত ব্রণ বের হয় (সোরিণাম, স্যাঙ্গিউ)। ঋতুস্রাব অত্যন্ত ঝাঁঝাল, উরুতে লাগলে ঐ স্থান হেজে যায়। বিশ্রামে উপশম-সিলিয়াম-টাইগ্রিনাম-চলবার সময়ে প্রদর ও ঋতুস্রাব আরম্ভ হয়, চলা বন্ধ করলে স্রাবও বন্ধ হয়ে যায়। অল্প পরিমাণে কাল জমাট দুৰ্গন্ধ স্রাব। কষ্টিকামে কেবলমাত্র দিনের বেলাতেই রজঃস্রাব হয় রাতে কম থাকে অথবা একেবারে বন্ধ হয়। কিন্তু ক্রিয়োজোটের রজঃস্রাব শয়নে বাড়ে এবং বসে থাকলে অথবা চলাফেরা করার সময়ে কমে যায়, অথবা একেবারেই বন্ধ হয়। মাগ্নেসিয়া-মিউরে-কাল চাপ চাপ স্রাব, কোমরে এবং উরুদেশে বেদনাসহ রাত্রিকালেই বাড়ে। প্রদরস্রাব চলাফেরার সময় অধিক হয়। স্তনে ক্যান্সার হয়ে তার স্তনের বৃত্ত বসে যায় (কোনায়াম, আর্স-আয়োড, হাইড্রাস, কভিউরাঙ্গো)।
মূত্রপাথরী।-মূত্রপাথরীর শূলবেদনা ডান দিকে হতে বামদিকে চালিত হয়। শিশু প্রস্রাবকালে ভয়ানক চীৎকার করে; শিশু বসলে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হয়, কিন্তু দাঁড়ালে ভাল প্রস্রাব করে। প্রস্রাবে ছোট ছোট বালির মত আঁস আঁস সাদা সাদা তলানি থাকে। তুলনীয়।-প্রথমেই লাইকোপোডিয়ামের কথা মনে পড়ে। সার্সাপ্যারিলার মত রোগের আক্রমণ এবং বেদনার আরম্ভ প্রথমে ডানদিকে পরে সেটা বাঁদিকে চালিত হয়। লাইকোপোডিয়ামেও শিশু প্রস্রাব করার পূর্বে চীৎকার করে। (সার্সাপ্যারিলায়-প্রস্রাবের সময়ে) ক্রন্দন করে। প্রস্রাবে তলানি লাইকোপোডিয়ামে ও আছে কিন্তু লাল ইঁটের গুঁড়ার মত। ওসিমাম-ডানদিক আক্রান্ত, অত্যন্ত বেদনা। ঘন ঘন বমি হয়। প্রস্রাবও লাল। বার্বেরিস-বেদনা প্রথমে কিডনী হতে আরম্ভ হয়, ইউরেটার দিয়ে ব্লাডারে এবং সেখান হতে ইউরেথরায় যায়। বার বার প্রস্রাব করার ইচ্ছা এবং কোমরে বেদনা। হিডিওমা- ইউরেটারে বেদনা, প্রস্রাবে লাল বালিকণার মত পদার্থ (লাইকোপোডিয়ামের মত)। ক্যান্থারিস – এই রোগের প্রধান এবং বিশিষ্ট ঔষধ। প্রস্রাব করার পূর্বে, সময়ে এবং পরে জ্বালা-পোড়া, বার বার বেগ, কোঁথপাড়া।
বাত-আর্দ্র স্থানে বসবাস সম্ভূত বা পারদ ঘটিত কোন ঔষধ সেবন জনিত বাত, প্রমেহ রোগের স্রাব অবরুদ্ধ হয়ে বাত এবং অস্থি-আবরণীর বেদনা সর্বদা সার্সা ব্যবহারে নিরাময় হয়। সার্সাপ্যারিলা পারদের অপব্যবহার জনিত সর্বশরীরের ক্ষত বা নানাজাতীয় উদ্ভেদ অথবা হাত-পায়ের চর্ম ফাটায় উপযোগী। তুলনীয়।-রাস টক্স – আর্দ্র স্থানে বাস, আর্দ্রতায় উৎপত্তি এবং বৃদ্ধিযুক্ত বাত। ঠান্ডায় এবং জলো হাওয়ায় বৃদ্ধি, বিশ্রামে বৃদ্ধি, উষ্ণতায় এবং সঞ্চালনে হ্রাস। ঠান্ডা, আর্দ্রবায়ুতে এবং রাতে বৃদ্ধি। রডোডেনড্রন – বাতের বেদনা অস্থিতে বেশী। আর্দ্রবায়ুতে এবং বিশ্রামে বৃদ্ধি, সঞ্চালনে উপশম (রাস-টক্সের মত)। বর্ষাকালে এবং ঝড় বৃষ্টি ও বজ্রপাতের পূর্বে বৃদ্ধি, উত্তাপে উপশম। নেট্রাম-সাম্ফ রোগী আর্দ্রবায়ু মোটেই সহ্য করতে পারে না। আর্দ্র গৃহে বাসে এবং আর্দ্রবায়ু ভোগে বাতের উৎপত্তি এবং বৃদ্ধি। নাক্স-মঙ্কেটা–বৃষ্টিতে ভিজে বা ঠান্ডা লেগে বাত বেদনার উৎপত্তি ও বৃদ্ধি। শুষ্ক উষ্ণ বায়ুতে এবং উষ্ণ গৃহে উপশম। ডাক্কামারা -আর্দ্র ঠান্ডা হতে জাত বাতবেদনা। আর্দ্র ঠান্ডা লেগে অথবা বৃষ্টিতে ভিজে ঘাড় এবং চোয়াল আড়ষ্ট হয়। পৃষ্ঠে বেদনা। অ্যাসিড-নাইট্রিক-পারদ ঘটিত বা পারদের অপব্যবহার জনিত বাতরোগ। কাঁটা বেঁধা বা সূচফোটান বেদনা। বেদনা হঠাৎ আসে হঠাৎ কমে যায় (বেলেডোনার মত)।
শিরঃরোগ।-সকালে গা-বমি-বমি সহ মাথার যন্ত্রণায় প্রমেহ দোষ থাকলে সার্সা কার্যকরী। বেদন। মাথার পশ্চাৎ হতে আরম্ভ হয়। নাক ফুলে উঠে সেইসঙ্গে বেদনা এসে চোখের ভিতর অবস্থিত হয়। মাথার যন্ত্রণার সময় যেন মাথায় চতুর্দিকে একটি দৃষ্টবেষ্টনী রয়েছে বোধ। মাথার চামড়ায় অত্যন্ত ব্যথা, তার মাথার চুল উঠে যায়, মাথায় অত্যধিক মরামাস পড়ে। তুলনীয়।– নেট্রাম-মিউর সূর্য্যোদয় হতে সূর্য্যাস্ত পর্য্যন্ত মাথাধরা। দৃষ্টিহীনতার সঙ্গে আরম্ভ। বমনেচ্ছা এবং বমন, চোখের অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য শিরোবেদনা। যাদের ঠান্ডা সহ্য হয় না এবং অতিরিক্ত লবণ খায়, তাদের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। স্যাঙ্গুইনেরিয়া-সকালে আরম্ভ হয়ে সমস্ত মাথায় প্রসারিত হয়, পরে ডান চোখের উপর স্থায়ী হয়। বমনেচ্ছা এবং বমন প্রায়ই সঙ্গে থাকে। রোগী অন্ধকার গৃহে চুপ করে থাকতে ভালবাসে। সাইলিসিয়াতেও এই প্রকারের মাথাধরা আছে, কিন্তু স্পাইজিলিয়ায় বামদিকের অর্দ্ধশিরঃশূলে উপযোগী।
চর্মরোগ।-শরীরের স্থানে স্থানে, বিশেষতঃ জননেন্দ্রিয়ের চামড়ার উপর একজিমার মত উদ্ভেদ। কখনও শুষ্ক, কখনও বা রসস্রাবী। উদ্ভেদগুলতে ভয়ানক চুলকানি হয়, রাত্রে শোয়ার সময় বৃদ্ধি। উপদংশ রোগগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রেই বিশেষ উপযোগী। শিশুদের মুখে দুধে-ঘা। ক্রমাগত কান্নাকাটি করে, গরম ঘর হতে বাহিরে হয়। উপদংশ রোগগ্রস্ত ব্যক্তির সন্তানের পক্ষে; পারদ অপব্যবহার জনিত ক্ষতাদির জন্য ও উপদংশ-বিদুষ্ট ব্যক্তির চর্মরোগে এটা উত্তম। চর্ম-রোগ প্রতি গ্রীষ্ম ও বসন্তকালেই বেশী হয়।
সম্বন্ধ।-প্রমেহ রোগে–থুজা তুল্য; শিশুদের শীর্ণতা রোগে-অ্যাব্রোটেনাম, আয়োড তুল্য; শিরঃরোগে – আইরিস, কেলি-বাই তুল্য।
বৃদ্ধি। -স্পর্শে; শুইলে (হাঁপানি); হেঁট হলে (মাথা); সিঁড়িতে উঠলে; বসন্তকালে (চর্মরোগ); ঠান্ডা আর্দ্র ঋতুতে; রেতঃপাত হলে।
হ্রাস।-বিশ্রামে; দাঁড়ালে; ঠান্ডা খাদ্যে; ঠান্ডা বায়ুতে।
শক্তি।-৩x হতে ১০০০ ক্রম। ডাঃ হিউজেস বলেন উচ্চশক্তি বিশেষ কার্যকরী।