রাস-টক্সিকোডেন্‌ড্রণ (Rhus Toxicodendron)

পরিচয় ।— এটার অপর নাম পয়জন ওক।

ব্যবহারস্থল। বর্ষাকালীন জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গুজ্বর, টাইফয়েড জ্বর, বেরি-বেরি, বাত, সন্ধিবাত, আমাশয়, বিসর্প, পোড়ানারাঙ্গা, বয়োব্রণ, কর্ণের পামারোগ, একজিমা, ক্ষত’, রক্তস্রাব, অর্শ, চোখের প্রদাহ, যকৃতের স্ফোটক, জরায়ু হতে রক্তস্রাব গর্ভস্রাব, ঋতুর স্বল্পতা, অস্থিবেষ্টনীপ্রদাহ, প্লুরিসি, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, মেনিঞ্জাইটিস, আঘাতাদি লেগে নানাবিধ রোগ; পাকাশয় ও অন্ত্রের প্রদাহ, পক্ষাঘাত অর্বুদ; উল্টামুদা প্রভৃতি ক্ষেত্রে কার্যকরী।

ক্রিয়াস্থল। -রাস-টক্সও একটি হাইড্রোজেনোয়েড ধাতুর ঔষধ। বাত রোগগ্রস্ত ব্যক্তির এবং যারা স্যাঁতসেঁতে স্থানে বসবাস করে তাদের রোগ; বৃষ্টিতে ভিজে রোগাদি। শরীরের কোন অংশ মচকাইলে; কোন ভারী দ্রব্য তুলে স্নায়ুর অবসাদ ঘটিলে উপযোগী। রাসের অনুপূরক ব্রাইওনিয়া। দেহের ডান পার্শ্বেই ক্রিয়া অধিক। বিশ্রামে রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি, নড়াচড়ায় রোগের উপশম, কিন্তু পক্ষাঘাত ও অবসন্নতা বিশ্রামে উপশমিত হয়। .

প্রদর্শক লক্ষণ।-রোগী সর্বদা এপাশ-ওপাশ করে, ছটফট করে। পিপাসা, রাত্রে মুখ খুব শুষ্ক। ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা দুধ চায়। জিব শুষ্ক ও খসখসে, ধারগুলি লাল, ডগা লাল (ত্রিভুজের মত) অথবা পরিষ্কার, লাল ও ফাটা ফাটা। প্রচুর তরল মল, রাত্রে অধিক। সন্ধ্যাকালীন জ্বরের পূর্বে বিরক্তিকর কাশি। ঠোঁট শুষ্ক, পিঙ্গলবর্ণ বা কাল। লালাস্রাব, খাদ্যদ্রব্য তেঁতো, বিশেষতঃ রুটী, চিংড়ি মাছ খেতে ইচ্ছা। পেটের মধ্যে ভুটভাট শব্দ, উরুদেশে ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা। স্বপ্ন কঠিন পরিশ্রমের কাজ করছে এরূপ স্বপ্ন দেখে। মলদ্বারে ভারবোধ। অপারেশনের পরবর্ত্তী রোগ। সেপটিক অবস্থা, ছটফট করে। বাতরোগ, বর্ষায় ও শীতে বৃদ্ধি, ঘাম হচ্ছে, এমন সময় ভিজে রোগ। মাথা ভারী। চোখে বহুদিন পূর্বে আঘাত লাগলে। বাতজনিত আইরাইটিস রোগ, বর্ষায় বৃদ্ধি, হলদে পুঁজ; চোখ হতে পানি পড়ে, তা গরম, গাল হেজে যায়। মাংসপেশীতে টাটান ব্যথা, হাত-পা টিপিয়া দিতে বলে। সন্ধ্যা হতে দুপুর রাত্রি পর্যন্ত বৃদ্ধি। উদ্ভেদ ফোস্কার আকার। কান হতে পুঁজ, তাতে রক্ত। নাকের ডগা লাল। মুখের কষে ঘা, আশে- পাশে জ্বর-ঠটা। বাঁদিকের গলায় বেদনা, গ্ল্যান্ড বড় হয়। খাওয়ার পর ঘুম আসে, কলিক, উপুড় হয়ে শুইলে উপশম। হেঁট হয়ে চলে, রেক্টামের নীচে ফোঁড়া। পরিশ্রমের জন্য হিম্পটাইসিস, রক্ত লাল। স্থির হয়ে বসে থাকলে বুক ধড়ফড় করে ও কাঁপে। কিছু গিললে দুইটি কাঁধের মধ্যস্থলে বেদনা। কোমরে ব্যথা, শক্ত স্থানে শুইলে উপশম। সেলুলাইটিস।

মন।-টাইফয়েড রোগী নানাবিধ অসংলগ্ন কথা বলে। রোগী ভয়ানক উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করে (অ্যাকোন, আর্স), রাত্রে ভয়ানক ভয়, কারণ সর্ব লক্ষণ রাত্রের দিকেই বেশী হয়। রোগী তার বিছানায় স্থির হয়ে থাকতে পারে না, অনবরত এপাশ-ওপাশ করে। ডাঃ ন্যাশ-রাস, অ্যাকোন ও আর্সকে অস্থিরতাত্রয়ী (Trio of restlessness) বলেন; বস্তুতঃ এই তিনটি ঔষধেই ছটফটানি; অ্যাকোনাইটে উদ্বেগ, সেই সাথে দুর্বলতার সাথে দৈহিক অস্থিরতা; আর্সেনিক রোগীর উদ্বেগ ও অস্থিরতা, মানসিক ও মৃত্যুভয় অত্যধিক, এমন কি-সে মৃত্যুর সময় পৰ্য্যন্ত বলে দেয়। আর্সেনিকের মৃত্যুভয় খুব, সে মনে করে ঔষধ-পথ্যাদি সেবন বৃথা, কেননা মৃত্যু নিশ্চিত। রাস- টক্স রোগী জীবনের উপর বীতশ্রদ্ধা হয়ে আত্মহত্যা করতে চায়।

বাতরোগ।-আক্রান্ত স্থানে ফোলা, যন্ত্রণা ও গরম। টেনে ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা। নড়াচড়ায় উপশম। ঠান্ডা হাওয়া সহ্য হয় না। রাত্রে বেশী। পিপাসা, ঠান্ডা দুধ খেতে চায়। কঠিন পরিশ্রমের স্বপ্ন। জিহবার অগ্রভাগ ত্রিভুজাকার লাল। তুলনীয়।-ব্রাইওনিয়া-এটার লক্ষণ এবং হ্রাস-বৃদ্ধি রাস-টক্সের বিপরীত। রাস টক্সের রোগীর বিশ্রামে বৃদ্ধি এবং সঞ্চালনে উপশম; ব্রাইওনিয়ার সঞ্চালনে বৃদ্ধি এবং বিশ্রামে উপশম। ব্রাইওনিয়ার রোগী চুপ করে থাকতে ভালবাসে; নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়, ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা, আক্রান্তস্থান শক্ত, লালবর্ণ, চকচকে হয়। রেডিয়াম-কোমরে, নিতম্বে, সমস্ত গাঁটে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বেদনা, রাতে বাড়ে, সঞ্চালনে উপশম বোধ। রডোডেন্‌ড্রণ-শরীরের কোন স্বল্প-পরিসর স্থানে হঠাৎ বেদনা হয়ে পরে অস্থি ও অস্থিবেষ্টে প্রসারিত হয়। সকালে মেঘ দেখা দিলে, ঠান্ডা হাওয়া বহিলে অথবা বিদ্যুৎ চমকাইলে রোগী অসুস্থ বোধ করে (রাস-টক্সের মত), নড়াচড়ায় এবং তাপ প্রয়োগে উপশম ও বিশ্রামে বৃদ্ধি (ব্রাইওনিয়ার বিপরীত)। ফাইটোলাক্কা -বাতবেদনার জন্য রোগী সর্বদা এপাশ-ওপাশ করে, রাস- টক্সের বেদনা তাতে কমে, কিন্তু ফাইটোলাক্কার বেদনা না কমে আরও বাড়ে। ব্রাইওনিয়ার রোগী নড়াচড়া করতেই চায় না, নড়াচড়ায় তার উপসর্গ বাড়ে। ফাইটোলাক্কার বেদনা স্থান পরিবর্তন করে। ও রাস টক্সের মধ্যবর্তী লক্ষণে ব্যবহৃত হয়।

পোড়ানারাঙ্গা।-ফোস্কা ফোস্কা উদ্ভেদ। আশ-পাশ লাল। চুলকায়। জ্বালা করে। রাত্রে ও বর্ষাকালে বৃদ্ধি।

নিউমোনিয়া। -নিউমোনিয়া রোগে টাইফয়েড লক্ষণ দেখা দিলে। কাশি, ছটফটানি। স্থির হয়ে থাকলে যন্ত্রণা ও শ্বাসকষ্ট বাড়ে। জিভের ডগা লাল। দুর্বলতা। নিদ্রালুতা। কানে কম শোমা। অসাড়ে বাহ্যে-প্রস্রাবত্যাগ। চর্ম শুল্ক ও গরম। পেটে বায়ু ও পেটফোলা, গয়ারে রক্ত। গয়ারের রঙ ইটের গুড়ার মত, দুৰ্গন্ধ।

মেনিঞ্জাইটিস।-উদ্বেগ, ছটফটানি, মাথায় পূর্ণতাবোধ ও থেঁতলান ব্যথা। কান ও নাক হতে রক্ত পড়ে। শুষ্ক কাশি; গয়ারে রক্ত। পিঠে ব্যথা। মাংসপেশী ও গাঁটে আড়ষ্ট ভাব। স্বপ্ন। উদ্ভেদ

অর্শ। অর্শের বলতে টাটানি, মলত্যাগের পর বলি বের হয়। স্থির হয়ে থাকলে পিঠে 13 কোমরে ব্যথা। দিনরাত ঘন ঘন প্রস্রাব পায়। প্রস্রাব পরিমাণে অধিক। অর্শে রক্ত পড়ে বা না পড়ে। রাত্রে বৃদ্ধি। বিশ্রামকালে, ঠান্ডায় ও চাপে বৃদ্ধি।

ইনফ্লুয়েঞ্জা।-বর্ষাকালীন আক্রমণ, পানিতে ভিজে বা ঠান্ডা লেগে। হাত-পায়ে কামড়ানি ব্যথা। রোগী টিপিয়া দিতে বলে। অস্থিরতার জন্য ছটফট করে।

ডিফথিরিয়া। —শিশু ছটফট করে, কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। প্রায়ই ঘুম ভাঙ্গে, বলে গলায় কষ্ট। ঘুমন্ত অবস্থায় রক্তাভ লালাস্রাব; টন্সিলে যন্ত্রণা। গিলতে গলায় লাগে। গ্ল্যান্ডগুলি ফোলে। জেলির মত স্বচ্ছ মল। টাইফয়েড লক্ষণ।

শিরঃরোগ।-মাথা নাড়লে বা জোরে চলাফেরা করলে রোগী মনে করে যেন তার মাথার ভিতরটা দুলছে। চলবার সময় কপালের উপর জ্বালানুভব; নাক্স ভমিকার রোগী আহারের পর ঘুম ভেঙে গেলে জ্বালানুভব করে। রাস রোগীর কপালের একদিক হতে অপরদিক পর্যন্ত একখন্ড কাঠ বাধা আছে এরূপ অনুভূতি; এই ভাবটা সাধারণতঃ টাইফয়েড রোগীরই বেশী হয় (কার্বো-অ্যানি), মাথার ভিতর পিপীলিকা চলে বেড়ানবৎ সড়সড়ি, মাথার যন্ত্রণায় মুখমন্ডল আরক্তিম হয়। মাথার যন্ত্রণার জন্য রোগী ভয়ানক অস্থির হয়ে পড়ে, সে একস্থানে স্থির থাকতে পারে না। পানিতে ভিজে বা স্যাঁতসেঁতে স্থানে বসবাসাদির জন্য রোগ। এমন শিরঃরোগসহ পানিতে ভিজে দন্তশূল। উদ্ভেদাদি উঠে মস্তিষ্কাবরণীর প্রদাহ অথবা মস্তকে বিসর্প ও সেই সাথে অসম্ভব মাথার যন্ত্রণা হতে থাকে। ঠান্ডায়, ঋতু পরিবর্ত্তনে, বর্ষা ঋতুতে অথবা মাথার ঘাম রুদ্ধ হয়ে বাতজ মাথাধরা।

চোখের অসুখ।–বাতগ্রস্ত রোগীর ঠান্ডা বাতাসে বা বর্ষাকালীন বায়ুতে চোখের প্রদাহ ঘর্মাদি অবরুদ্ধ হয়ে চোখের প্রদাহ। ছটফটানি থাকলে রাস-টক্স ফলপ্রদ; কর্ণিয়ার উপর পুঁজবটী জন্মায়; আলোকাত ও পুঁজোৎপত্তি। চোখপানি উত্তপ্ত, সেটা লেগে রোগীর গন্ডদেশে লালবর্ণের উদ্ভেদ বের হয়। রোগীর চোখের পাতা প্রদাহান্বিত হয়ে অত্যন্ত ফুলে উঠে। পানিতে ভিজে চোখের কনজাংটিভাইটিস রোগের মত। ইউফ্রেসিয়ায় চোখে পিঁচুটি পড়ে এবং প্রচুর পরিমাণে পিচুটি নিঃসৃত হয়। পার্থক্য এই রাস- টক্সের পিঁচুটি অপেক্ষাকৃত পাতলা, ইউফ্রেসিয়ার ঘন। রাস-টক্স গ্লকোমা এবং আইরাইটিস রোগেও উপযোগী।

টাইফয়েড জ্বর।-প্রথম অবস্থার জ্বরে রোগীর হাত-পা কামড়ায়, অস্থিরতা, যাথার যন্ত্রণা, চুপ করে থাকলে যন্ত্রণার বৃদ্ধি; নড়াচড়া করলে যন্ত্রণার উপশম। রোগীল জিহবার অগ্রভাগে লালবর্ণের লেপ। জিহবা শুষ্ক ও ফাটা ফাটা। কখনও জিহবা দেযুক্ত থাকে এবং জিহবায় দাঁতের দাগ পড়ে; মার্ক-সলের সাথে অনেকটা সাদৃশ্য দেখা যায়, কিন্তু সাবধান টাইফয়েড জ্বরে মার্কারি ব্যবস্থেয় নয়। রাস-টক্স রোগীর পেটের দোষ এবং প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্গন্ধ বাহ্যে থাকে, বাহ্যে অসাড়ে নিঃসৃত হয়। রাস-টক্স রোগীর প্রলাপ বকা তত প্রচন্ড নয়। রোগী প্রলাপের সাথে অনবরত বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে। টাইফয়েড রোগী কখনও রোগের ভিতর খেয়াল দেখে যেন কেউ তাকে বিষ খাওয়াইতে চায়। পথ্যাদি কিছুই খেতে চায় না। রোগের বর্দ্ধিত অবস্থায় রোগী একেবারে আচ্ছন্ন, অসাড়ে মলত্যাগ করে এবং অবিরত বিড়বিড় করে ভুল বকিতে থাকে। দুর্বলতার মধ্যে তখনও অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়। টাইফয়েড জ্বরে রাস টক্সের সাথে ব্যাপটিসিয়া ও আর্ণিকা তলনীয়। রাস টক্সের ছটফটানি বাতজনিত এবং পানিতে ভিজে বা স্যাঁতসেঁতে স্থানে বসবাস জন্য হয়, ব্যাপটিসিয়ার ছটফটানি পেশীর টাটানির জন্য, আর্ণিকার ছটফটানি সর্বাঙ্গে থ্যালান বেদনার মত। রাস-টক্স রোগী বিড়বিড় করে বকে, ব্যাপটি রোগী মনে করে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চতুর্দিকে ছড়ান অবস্থায় আছে; প্রলাপ আর্ণিকায় মস্তিষ্কে কঞ্জেসন জন্য, ডাকলে সাড়া পাওয়া যায়, কিন্তু পরক্ষণেই ঘুমিয়ে পড়ে। রোগীর গায়ে কালশিরার দাগ পড়ে। রাস টক্সের মলত্যাগের দুর্গন্ধ তত অধিক নয়, ব্যাপটির সমস্ত স্রাবই অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত, আর্ণিকার মল হতে পচা ডিমের মত গন্ধ বের হয়।

ম্যালেরিয়া জ্বর।-পানিতে ভিজিবার জন্য, স্যাঁতসেঁতে স্থানে বসবাস জন্য ম্যালেরিয়া জ্বর। রোগীল সর্বাঙ্গে ব্যথা থাকে। অনবরত ছটফট করতে থাকে। রাস-টক্সের জ্বর সাধারণতঃ বৈকালের পর হতে রাত্রি ৭টায় আসে। জ্বর আসিবার সময় একপ্রকার শুষ্ক পীড়াদায়ক কাশি দেখা দেয়।

বিসর্প। উদ্ভেদ ফোস্কার মত; সেটা বড় বড় এবং শীঘ্রই পুঁজ জন্মে। সেটাতে অত্যন্ত জ্বালা, চুলকানি ও যন্ত্রণা এবং সেই সাথে অত্যধিক গাত্রতাপ বৃদ্ধি ও প্রলাপ থাকে। আক্রান্ত স্থান ঘোর লালবর্ণের দেখা যায়, প্রদাহ বামদিক হতে অন্যদিকে যায়, এপিসের প্রদাহ ডানদিক হতে বামদিকে যায়। রাস-টক্স গরম চায়। ক্যান্থারিসের উদ্ভেদ ও ফোস্কা কিন্তু ঠান্ডাপ্রিয়।

বিষফোঁড়া বা কার্যাঙ্কল।- আক্রান্ত স্থানে ভয়ানক বেদনা ও যন্ত্রণা এবং ঘোর লালবর্ণ হয়। কার্বাঙ্কলের প্রথম অবস্থায় রাস-টক্স প্রয়োগ করতে পারলে উপকার হয় নচেৎ অপর ঔষধ ব্যবস্থেয়।

কোমরে বেদনা। -রাস-টক্সের বেদনা রাত্রে বেশী হয়, বেদনার জন্য রোগী অনবরত ছটফট করে; এপাশ-ওপাশ করলে বেদনার উপশম বোধ। ব্রাইওনিয়ার বেদনা সঞ্চালনে বৃদ্ধি; বিশ্রামে উপশম। কেলি আয়োডে যতই অধিক সঞ্চালন করা যায় ততই বেদনার হ্রাস। কোমরের বেদনা সকালে ঘুম হতে উঠবার পূর্বে বৃদ্ধি পেলে পেট্রোলিয়াম ও রুটা উপযোগী। নাক্স-ভূমিকা- কটিবাত বা কোমরে বেদনার উৎকৃষ্ট ঔষধ। বেদনা এত বেশী যে কেউ না ধরলে রোগী বিছানা হতে উঠতে পারে না অথবা পাশ ফিরেও শুইতে পারে না।

পক্ষাঘাত।-সন্ধিস্থলে যদি বেদনা থাকে ও সময় সময় অসাড়তা অনুভব করে, তবে এটা উপযোগী। ঠান্ডা পাথরের উপর বসে বা ঠান্ডা পানিতে দাঁড়িয়ে কাজ-কর্ম করে নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত। হ্যানিমান বলেন, যে সকল বালকদের নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত হয়, তাদের পক্ষে রাস-টক্স বিশেষ ফলপ্রদ। মধ্যে মধ্যে ২/১ মাত্রা সাঙ্কার প্রয়োগ করলে রোগ সহজে আরোগ্য হয়।

চর্মরোগ।-নানাজাতীয় চর্মরোগ। একজিমার চতুর্দিকে লালবর্ণের মন্ডল, সেখানে অতিশয় চুলকানি জন্য অস্থিরতা; গরমে উপশম। ডাঃ হিউজেস বলেন, রাস-টক্স ১-৩০ শক্তি ব্যবহার করে আমি শতকরা ৭৫ জন বালকের একজিমা রোগ আরোগ্য করেছি। পানিতে ভিজে বা স্যাঁতসেঁতে স্থানে বসবাস করে আমবাত বের হলে রাস উত্তম। পোড়ানারাঙ্গা, ফোঁড়া বিষ্ণুণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অত্যন্ত অস্থিরতা থাকলে প্রযোজ্য।

বসন্ত।-জল-বসন্ত রোগে রাস-টক্স একটি অমূল্য ঔষধ। বসন্তগুটি উঠে যদি বিকারাবস্থা উপস্থিত হয় এবং রাত্রে ছটফটানি বেশী দেখা যায়, তবে রাস-টক্স ফলপ্রদ।

কর্ণমূল-প্রদাহ।-রাত্রে কানের ভিতর দপদপ করে, রোগী মনে করে যেন তার কানে ফুঁ দিচ্ছে বা শীষ দিচ্ছে, শুইলে কানের পর্দা ফেটে যাবে বোধ।

আমাশয়।-সাধারণতঃ পানিতে ভিজে আমাশয় রোগে ও বর্ষাকালীন আমাশয় রোগে এটা ফলপ্রদ। ডাক্কামারাও এমন অবস্থায় ব্যবহৃত হয়।

আঘাত।– আঘাত ও ভারীদ্রব্য উত্তোলন জনিত কোন রোগ ও সেই সাথে গাত্র বেদনা এবং গা টিপিয়া দিলে বা ছটফট করলে উপশম লক্ষণে এটা ব্যবহাৰ্য্য। আঘাত লাগবার পর প্রথম আর্ণিকা, তাতে উপকার না হলে রাস-টক্স।

ক্ষত। পায়ে ঘা, ঘা হতে প্রচুর রস পড়ে, শোথযুক্ত পায়ের ঘা।

হৃৎপিন্ডের রোগ। যদি কোন ভারী দ্রব্য উত্তোলন বশতঃ হয় বা উৎকট শারীরিক ব্যায়াম বা পরিশ্রম জনিত হয় তা হলে, আর্ণিকা ও ব্রোমিয়ামের মত রাস টক্সও কার্যকরী।

হৃৎপিন্ডের যন্ত্রগত রোগেও এটার প্রয়োগ আছে। এতে হৃত্যন্ত্রে কেউ সূক্ষ্ম শলাকা বিদ্ধ করছে এরূপ বেদনা। রোগীর বাম বাহু অসাড় ও অবশ হয়, ঐ হাতের আঙ্গুলে চিন চিন করে, চলাফেরা করার পর রোগীর হৃৎপিন্ড ক্ষীণ ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং সেটা কাঁপতে থাকে। সকালে বেড়ালে অনেকটা উপশম।

তুলনীয়।– টাইফয়েড জ্বরে- ব্যাপটি, আর্ণিকা, ব্রাইও তুল্য; বাতের বেদনায় -আর্ণিকা, রুটা, কেলি-কার্ব, লেডাম, রডো তুল্য; একজিমা রোগে-মেজেরি, সিপিয়া তুল্য; হৃৎপিন্ডের রোগে- আর্ণিকা, ব্রোমিয়াম, ক্যান্মিয়া তুল্য; পক্ষাঘাতে-কষ্টিকাম তুল্য; পানির মত মলে — কলচিকাম তুল্য; ব্রাইওনিয়া-রাস-টক্সের অনুপূরক। রাস-টক্সের পূর্বে বা পরে এপিস ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু ডাঃ ন্যাস বলেন-“উপযুক্ত লক্ষণ পেয়ে আমি এপিসের পর রাস-টক্স ব্যবহার করে চমৎকার ফল পেয়েছি।”

বৃদ্ধি।– বর্ষাকালে; রাত্রে; বিশ্রাম কালে; ভিজিলে; ডানদিকে শুইলে; আঘাত লাগলে; ঋতু পরিবর্তনে; শীতকালে; ঠান্ডা পানি খেলে (বমি); ভিজা জায়গায় বাস করলে; ভারী জিনিষ উঠালে।

হ্রাস।– গরম শুষ্ক ঋতুতে; নড়াচড়ায়; টিপে দিলে; গরম সেঁক দিলে; হাত-পা ছড়ালে।

শক্তি।– ১x, ৩x, ৬, ৩০, ২০০, ১০০০ বা তদূর্দ্ধ ক্রম।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!