প্ল্যাটিনাম (Platinum)
পরিচয়।-একপ্রকার বহুমূল্য ধাতব দ্রব্য।
ব্যবহারস্থল।-মৃৎপান্ডুরোগ; মূর্ছাবায়ু; কৃত্রিম মৈথুনের ফল; বাধক; মানসিক বিকৃতি; কামোন্মাদ; ডিম্বাধারের রোগ; জরায়ুর কাঠিন্য; স্নায়বিক দুর্বলতা; রজোস্বল্পতা; সীসক বিষাক্ততা; যোনিদ্বারে চুলকানি; অর্শ প্রভৃতি।
ক্রিয়াস্থল।-ডাঃ হিউজেস বলেন- পুরুষদের আত্মহত্যার প্রবল ইচ্ছায় “অরাম” যেমন উপযোগী সেইরূপ স্ত্রীলোকদের কামোত্তেজনা ও ডিম্বাধারের রোগে “প্ল্যাটিনাম” উপযোগী। জরায়ু-বিকৃতিগ্রস্ত রমণীদের মনের উপর এটার ক্রিয়া অত্যধিক। প্ল্যাটিনাম মূৰ্চ্ছাবায়ু, ধর্মোন্মাদ, কামোন্মাদ, সূতিকা ও প্রসবাস্তিক উন্মাদরোগে কার্যকরী। যে সকল স্ত্রীলোকের অল্প বয়সেই শরীর বেশ পরিপুষ্ট হয় এবং কাল চাপ চাপ দুর্গন্ধযুক্ত ও বহুদিন স্থায়ী প্রচুর ঋতুস্রাব হয়, অল্প বয়স হতেই যারা কামোন্মত্ত হয়ে উঠে, সেই সাথে দূরারোগ্য কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে-তাদের পক্ষে প্ল্যাটিনাম উপযুক্ত ঔষধ।
প্রদর্শক লক্ষণ।-মানসিক লক্ষণ ও শারীরিক লক্ষণ পর্যায়ক্রমে আসে। জননেন্দ্রিয়ের মধ্যে অত্যন্ত সুড়সুড়ি বোধ করে। স্নায়বিক বেদনা ধীরে ধীরে বাড়ে, ধীরে ধীরে কমে। কিছুক্ষণ বিমর্ষ ও কিছুক্ষণ আনন্দিত। গোপন অঙ্গ অত্যন্ত (স্ত্রী) স্পর্শকাতর, রতিক্রিয়া সম্ভব হয় না। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হস্তমৈথুন অভ্যাস ও হস্তমৈথুনের কুফল। ঘুমের সময় শরীরে কোন কাপড় রাখে না। কামপ্রবৃত্তি অত্যন্ত বেশী। কোষ্ঠবদ্ধতা, মল আঠার মত চটচটে। মলদ্বারের আশে-পাশে আঠার মত লেগে যায়। অথবা শক্ত মল যেন পোড়া শক্ত দ্রব্য। কোষ্ঠবদ্ধতা, বিশেষতঃ ভ্রমণকালে ও গর্ভাবস্থায়। সকল দ্রব্যই ছোট দেখে। হাই তোলা। অত্যন্ত অহঙ্কার, লোকের দোষ ধরে। নিজের স্বামী বা পুত্রকে মারিয়া ফেলিবার প্রবল ইচ্ছা। মুখের ভিতর ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। জিবে যেন কি চলে বেড়াচ্ছে এরূপ বোধ। মাসিক ঋতুস্রাব প্রচুর, গাঢ়, আলকাতরার মত কাল। অনেকদিন চলতে থাকে। শ্বেত-প্রদর, ডিমের সাদা অংশের মত। প্রস্রাবের পর দেখা যায়। পা ঠান্ডা। মুখের রঙ বার বার বদলিয়ে যায়। রাত্রে রোগী পিঠের উপর শোয়। মাথার উপর বাহু রাখে। গায়ের কাপড় খুলে ফেলে। যতক্ষণ ঘুমায় ততক্ষণ ঘাম। জাগিলেই ঘাম বন্ধ হয়।
মন।-প্ল্যাটিনাম রোগিণী বড়ই অহঙ্কারী, তার কাছে সকল বস্তু ও ব্যক্তিই ছোট এবং বিদ্যা- বুদ্ধিতে সকলেই তা অপেক্ষা হীন মনে করে। ভয়ানক কামোন্মাদ, কামোন্মত্ততায় সে যাহাকে তাকে আলিঙ্গন করতে যায়। সে যেন অহঙ্কারী তেমনি হত্যা করার দুর্দমনীয় ঝোঁক। পরছিদ্রান্বেষী, অশ্লীল ভাষী ও রাগী। প্রত্যেক বিষয়েই বীতশ্রদ্ধা ও কান্না। অবরুদ্ধ ঋতুর জন্য নানাপ্রকার বিশৃঙ্খলা। মানসিক লক্ষণচয় বৃদ্ধি পেলে শারীরিক লক্ষণের উপশম। কোন কারণে রেগে গেলে বা ভয় পেলে তার শরীর কাঁপতে থাকে। মেজাজ পরিবর্তনশীল (ইগ্নে, পালস, নাক্স-ম)। মৃত্যুভয় খুব, মৃত্যু নিকটবর্ত্তী মনে করে হৃৎকম্পন হয় (অ্যাকোনাইট)।
স্ত্রীরোগ।-অল্প বয়সেই কিশোরীদের যৌবন দেখা দেয়। প্রচুর দীর্ঘকালস্থায়ী কাল চাপ চাপ দুর্গন্ধযুক্ত ঋতুস্রাবের সময় রোগিণী ভয়ানক অহঙ্কারী হয়ে পড়ে, তার যোনিতে বেদনা ও জ্বালা এবং প্রসবের বেগের মত বেগ হয়। প্ল্যাটিনামের রক্তস্রাব কোন কোন রোগিণীর ক্ষেত্রে ২০/২৫ দিন স্থায়ী হয়। এতে নিম্নদিকে ঠেলামারা বেদনা আছে। জরায়ুর স্থানচ্যুতির সাথে রোগিণীর কামোদ্রেক সাংঘাতিক আকার ধারণ করে, তার সম্মুখে যাহাকে দেখে তাকেই অত্যন্ত জোরের সাথে আলিঙ্গন করতে যায়। জরায়ুমধ্যে সুড়সুড়ি অনুভব করে। কামোন্মাদ, কিন্তু যোনিদেশে অত্যন্ত স্পর্শাসহিষ্ণতা থাকে। এজন্য সঙ্গম করতে পারে না। সঙ্গমকালে মূর্ছিত হয়ে পড়ে। মূৰ্চ্ছাবায়ুগ্রস্তা রোগিণীদের এমন জরায়ুর সঙ্কোচন থাকলে প্ল্যাটিনামই ঔষধ। একস্থান হতে অন্য স্থানে গেলে রোগিণী প্রসববেদনার মত বেদনা অনুভব করে। যুবতীর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে বা নিয়মিত মাসিক স্রাব বন্ধ হয়ে যায়।
ক্রোকাস রোগিণীরও কাল কাল জমাট রক্তস্রাব হয়, কিন্তু এটার রোগিণীর পেটের ভিতর যেন একটা জীবন্ত পদার্থ নড়ে বেড়াচ্ছে এমন বোধ। ক্যামোমিলা রোগিণীরও অধিক পরিমাণে কাল কাল চাপ চাপ ঋতুস্রাব হয়, তবে ক্যামোমিলা রোগিণী অত্যন্ত রাগী, প্ল্যাটিনামের রোগিণী অত্যন্ত অহঙ্কারী।
আক্ষেপ ও হিষ্টিরিয়া।-প্ল্যাটিনাম আক্ষেপের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কামোন্মাদ ও অহঙ্কারী প্রসূতি। শিশুদের উঠবার সময় তড়কা। শিশু অত্যন্ত জীর্ণ-শীর্ণ এবং তড়কার পর সে নিস্তেজ হয়ে চিৎ হয়ে পড়ে থাকে। মূৰ্চ্ছাবায়ুগ্রস্তা রমণীদেরও উত্তম ঔষধ। মূৰ্চ্ছাবায়ু-পীড়িত রমণীদের মৃত্যুভয় অত্যধিক (অ্যাকোনাইটের মত), রোগিণীর মনে করে এই মূর্ছায় তার মৃত্যু অনিবার্য্য। মূৰ্চ্ছারোগগ্রস্তা রমণী সময় সময় আহ্লাদিত হয়, আবার মুহূর্ত্তেই শোকার্ত্ত হয়ে পড়ে।
ভয়ানক কামপিপাসা। প্ল্যাটিনামের মূর্ছাবায়ু-রোগিণী দেখিলে মনে হয় বদ্ধ পাগল। সূতিকোন্মাদ বা কামোন্মাদ রোগিণীর রোগক্ষেত্রেও প্ল্যাটিনাম উৎকৃষ্ট ঔষধ। উচ্চহাস্য করে, এমন-কি বাড়ীতে হয়ত কেউ মারা গেছে, কিন্তু রোগিণী অস্বাভাবিক হাসিতে সকলকে চমকিত করে দেয়। ডিম্বকোষের প্রদাহ হয়ে যদি পুঁজ জন্মে, আক্রান্ত স্থান ফুলে যায় তখন লক্ষণানুসারে ল্যাকেসিস, সাইলি, হিপার প্রয়োগ করে কোন ফল না পেলে প্ল্যাটিনাম উপযোগী।
জরায়ু–চ্যুতিতেও এটা সিপিয়ার মত ফলপ্রদ ঔষধ। জরায়ু-চ্যুতির সাথে কুঁচকিতে ও কোমরে অত্যন্ত বেদনা থাকলে ও সেখানে হাত দিলে অত্যন্ত যন্ত্রণা অনুভব করলে এটা দ্বারা উপকার দর্শে, কিন্তু প্ল্যাটিনামের মানসিক লক্ষণ সর্বদা লক্ষ্য রেখে প্রয়োগ করতে হবে।
কোষ্ঠবদ্ধ ও উদর পূর্ণ।-নরম কাদার মত মল কষ্টে বের হয়। ঐ মল গুহ্যদ্বারে কাদার মত লেগে থাকে। গর্ভাবস্থায় প্রবল কোষ্ঠবদ্ধতা দেখা দেয়। এটার উদরশূল ধীরে ধীরে বাড়ে ও ধীরে ধীরে কমে।
জননেন্দ্রিয় রোগ। -অল্প বয়সে যারা অস্বাভাবিক উপায়ে ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তি করে এবং এমন কু-অভ্যাসাদির ফলে সদা বিমর্ষভাবে দিন কাটায়। মৃগী দেখা দিলে ও আক্ষেপকালে মুখমন্ডল ফ্যাকাসে হয়। রোগীর অস্বাভাবিক কামোদ্দীপনা হওয়ার জন্য বার বার লিঙ্গোচ্ছ্বাস হয়, রাত্রে কামোদ্দীপক ও প্রেমপূর্ণ স্বপ্ন দেখে। সঙ্গম অতি অল্পক্ষণ স্থায়ী হয়, সেজন্য সুখানুভব হয় না। সন্ধ্যার সময় হঠাৎ মাথাঘোরা আরম্ভ হয়। এবং সেই সময় সে অজ্ঞানের মত হয়ে পড়ে। যে সকল রোগিণী অল্প কাতর বা সামান্যতেই মূর্ছিত হয়ে পড়ে তাদের স্নায়বিক শিরঃরোগে এটা উপযোগী। মুখমন্ডল উত্তপ্ত ও রক্তিমাকার ধারণ করে, মাথার ভিতর ভোঁ ভোঁ করতে থাকে। বেদনা ধীরে ধীরে আসে ও ধীরে ধীরে কমে যায়। চোখের ভিতর ঠান্ডা অনুভব করে, জীবজন্তু ও মানুষ ক্ষুদ্র দেখে। চোখের পাতার অনবরত স্পন্দন।
নিদ্রায় সে নানাবিধ স্বপ্ন দেখে, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও শোণিতপাতের স্বপ্ন ও নানাবিধ কামোত্তেজক স্বপ্ন দেখে। তার নিদ্রাকালে অত্যন্ত ঘাম হয় (চায়না, কোনায়াম, পালসেটিলা)।
সম্বন্ধ।-প্ল্যাটিনাম আত্মম্ভরিতায়-প্যালেডিয়াম তুল্য; কৃত্রিম মৈথুন জন্য আক্ষেপে ষ্ট্যাফি তুল্য; কামোন্মত্ততায়-অরাম, সিপিয়া তুল্য; নির্লজ্জতায় হায়োসায়েমাস তুল্য; মৃত্যুভয়ে-অ্যাকোন, আর্সেনিক তুল্য; রক্তস্রাবে- ক্যামোমিলা তুল্য।
বৃদ্ধি। -স্পর্শে, চাপে, উপবাসে, ঋতুকালে, সঙ্গমকালে বসলে, দাঁড়ালে, সিঁড়িতে উঠলে, সন্ধ্যায়, রাতে, গরম ঘরে।
হ্রাস। নড়াচড়ায়, চললে ও সিঁড়িতে উঠলে (বাত), খোলা বাতাসে গা-ভাঙ্গিলে (stretching)।
শক্তি।– ৩x, ৬, ৩০, ২০০, ১০০০ ক্ৰম।