নেট্রাম-সাফিউরিকাম (Natrum Sulphuricum)

পরিচয়। অপর নাম সোডিয়াম-সালফেট। এটা একটি এন্টিসোরিক, এন্টিসাইকোটিক ও এন্টিসিফিলিটিক। ঔষধটি কি হোমিওপ্যাথিক, কি বাইওকেমিক-উভয় প্রণালীর চিকিৎসাতেই ব্যবহৃত হয়।

ব্যবহারস্থল। -উদরাময়; হাঁপানি; পৈত্তিক যে কোন রোগ; মস্তিষ্কে আঘাত জনিত উন্মাদ রোগ; বহুমূত্র; মৃগী; নাক দিয়ে রক্ত পড়া; আঁচিল; অসাড়ে প্রস্রাব; প্রমেহ; মাথায় যন্ত্রণা; শোথ; বেরিবেরি; অর্দ্ধ শিরঃরোগ; ক্ষত; নালীক্ষত; ম্যালেরিয়া জ্বর; পুরাতন জ্বর; মূত্রযন্ত্রের প্রদাহ; দুর্বলতা প্রভৃতি রোগে ব্যবহার্য্য।

ক্রিয়াস্থল। -নেট্রাম-সাক্ষের ক্রিয়া পিত্তের উপর অধিক। রোগীর মুখে তিক্তস্বাদ; পিত্ত-বামন, পিত্ত-বাহ্যে, জিহবায় পিত্তজ লেপাদি দেখা যায়। এটা একটি হাইড্রোজেনয়েড ধাতুর ঔষধ, অর্থাৎ যাদের রোগ স্যাঁসসেঁতে ঋতুতে বাড়ে তাদের ঔষধ। সামান্য ভিজা বায়ু লাগলেই রোগী পীড়িত হয়ে পড়ে। এমন কি জলজ শাক-সব্জি ইত্যাদি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

প্রদর্শক লক্ষণ।-বর্ষা বা বর্ষার হাওয়ায় বৃদ্ধি। পানিতে ভিজিলে বা গোসল করলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। যে সকল খাদ্যে পানি বেশী আছে সেই সকল খাদ্য খেলে রোগ হয়। প্ৰত্যূষে রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায়, প্রাতঃকালীন অতিসার। সকালে চলাফেরার পরেই মলবেগ পায়। মাথাধরা ও সেইসঙ্গে ঘুম-ঘুম ভাব; নিদ্রালুতা। মাথায় আঘাত লাগার জন্য মানসিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। গান শুনিলে মানসিক লক্ষণের বৃদ্ধি। বিমর্ষ, আত্মহত্যা করতে চায়। মেজাজ খিটখিটে, সকালে বেশী। পাতলা মলত্যাগ করার পর মন খুব খুসি হয়। মনের প্রফুল্লতা। মলত্যাগের পূর্বে পেট ভুট-ভাট করে। মলত্যাগের সময় পড় পড় শব্দ হয়। দাঁতের যন্ত্রণা, মুখে ঠান্ডা পানি রাখলে উপশম। আলোক সহ্য করতে পারে না (গ্রাফাইটিস)। ম্যালেরিয়াগ্রস্তের হাঁপানি। শিশুদের হাঁপানি। যখনই সর্দি করে তখনি হাঁপানি হয়। অতি প্রত্যুষে হাঁপানি বাড়ে। রাত্রি ৪টায়। মাথার যন্ত্রণার সাথে মুখ হতে লালাস্রাব। কাশির সঙ্গে বুকে হাত দেয়। বুকে দুর্বলতা বোধ। কাশতে কাশতে বুকে উঠে বসে। স্থির হয়ে থাকলে রোগলক্ষণ বাড়ে। বসন্তকাল আসিলেই চর্মরোগ। লিভারের রোগ, খোলা বাতাসে বৃদ্ধি। শুষ্ক জলবায়ুতে ভাল থাকে। বন্ধ হাওয়া পছন্দ করে না। জিহবায়, বিশেষতঃ জিহবার পেছনদিকে বাদামি লেপ। প্রস্রাব ধারণ করলে কোমরে ব্যথা। মেহরোগ চাপা পড়ে যদি কোন রোগ হয়। বাঁ দিকে শুইলে রোগের বৃদ্ধি। পিত্তাধিক্য। মুখে তেতো। পিত্ত বমি।

মন।-পিত্ত বৃদ্ধির জন্য মানসিক উত্তেজনা এমন-কি সময় সময় আত্মহত্যা করার আকাঙ্ক্ষা হয়। মেজাজ অত্যন্ত খিটখিটে হওয়া এটার বিশেষত্ব। মাথায় আঘাতাদি লাগার ফলে মানসিক বিকৃতিও এতে আছে। রোগীর কোন কাজে উৎসাহ নেই, সর্বদাই বিষণ্ণ। রোগী গান-বাজনা শুনিলে বিষণ্ণ হয়। বন্ধু-বান্ধবের সাথে মিশিতে চায় না। জীবনের প্রতি মমতাশূন্য।

ন্যাবা।বেশী মানসিক পরিশ্রম বা ক্রোধ বা বিরক্তি হতে ন্যাবা বা জন্ডিস। লিভারের স্থানে টাটানি, খোঁচা দেওয়ার মত বেদনা। বিষণ্ণতা, আত্মহত্যার ইচ্ছা। সঙ্গীতে ও সকালে বৃদ্ধি। পিত্ত বমি। বাঁদিকে শুইতে পারে না। পেটে বায়ু। লিভারে টাটানি, ছুইতে দেয় না। নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। মল পিত্তের মত ঘোর সবুজ। প্রস্রাবে পিত্ত। নিদ্রালুতা, বিশেষতঃ দুপুরের পূর্বে। তুলনীয়।– চেলিডোনিয়াম যকৃতের বৃদ্ধি, কঠিনতা ও সেটাতে সূচফোটান বেদনা। ন্যাবার জন্য গায়ের চামড়া, চোখের শ্বেতভাগ, প্রস্রাব সমস্তই হলদে রঙের হয়। উষ্ণ পানীয়ে ইচ্ছা এবং কিছু আহারে উপশম এটার বিশেষ প্রয়োগ লক্ষণ। ক্যামোমিলা-ক্রোধ এবং বিরক্তি হতে ন্যাবার উৎপত্তি। মার্ক-সল- যকৃতের প্রদাহ, সেটাতে বেদনা এবং টাটানি। পিত্তনিঃসরণ কমে যাওয়ায় ন্যাবার লক্ষণ প্রকাশ পায়। নাক্স ভমিকা-কোপনস্বভাব, উত্তেজিত, সুরাপানাসক্ত, শ্রমবিমুখ, অর্শ ও অজীর্ণ রোগগ্রস্তদের ন্যাবারোগে বিশেষ ফলপ্রদ ঔষধ।

বাতরোগ।-বর্ষাকালের বাত। রোগী এপাশ-পাশ করে। স্থির হয়ে থাকতে পারে না। ঊরুসন্ধিতে বেদনা। বামদিকে বেশী এবং সামনে ঝুঁকলে বা হেঁট হলে বেশী। হাঁটু আড়ষ্ট। হাঁটুতে শব্দ হয়। সমস্ত শরীরে আঁচিল। জামা-কাপড় খুললে শরীর চুলকায়। গরম কালে পানি থাকে। তুলনীয়।-রাস-টক্স–এটাও বর্ষাকালের বাতে উপকারী। রোগী অস্থিরতা প্রকাশ করে। বিশ্রামে বৃদ্ধি এবং সঞ্চালনে উপশম।

স্পাইন্যাল মেনিঞ্জাইটিস।– শরীর পিছন দিকে বেঁকে যায়। মাথার পিছনে ঘাড়ে দারুণ যন্ত্রণা। কথা বলতে চায় না। কেউ কথা বলে তাও পছন্দ করে না। মাথার উপর উত্তাপ। নাক হতে রক্তস্রাব। আলোক সহ্য হয় না। মুখ তেতো। মুখে গাঢ় হড়হড়ে আঠার মত চটচটে মিউকাস। বামদিকে শুইতে পারে না। লিভার খারাপ। সকালে পাতলা উদরাময়। বায়ু নিঃসরণের সময় অজ্ঞাতসারে বাহ্যে।

মস্তক। -রোগী আহারের পর মাথায় ভয়ানক চাপবোধ করে, দপদপানি মলত্যাগের পর কমে যায়। সন্ধ্যার পর হতে মাথা ঘুরিতে থাকে, সেইসঙ্গে পিত্ত-বমন বা গা-বমি-বমি করা, মুখে তিক্ত স্বাদ। মাথাঘোরার সাথে পিত্তজ উদরাময়। মাথায় আঘাত লাগবার ফলে তীব্র মাথার যন্ত্রণা বা মানসিক বিকার। উন্মাদ রোগ জন্মিলে এটা উত্তম ঔষধ। বহুকাল পূর্বে মাথায় আঘাত লাগার ফলে মস্তকের যন্ত্রণা ঘুরে-ফিরে আসে (আর্ণিকা, হাইপেরিকাম, জিঙ্কাম-ফস)। পৈত্তিক লক্ষণযুক্ত আধ- কপালে মাথাধরা। ডাঃ কেন্ট বলেন, মেরুমজ্জা-ঝিল্লীর প্রদাহের জন্য এটা একটি উত্তম ঔষধ। রোগীর মস্তিষ্কের ভিতর রক্তসঞ্চয়াধিক্যবশতঃ সে প্রলাপ বকে, শরীর ধনুকের মত বক্র হয়ে যায়।

চোখের অসুখ।-চোখের পাতায় বড় বড় ফোস্কার মত মাংসাঙ্কুর বা আঁচিল জন্মিলে ও চোখ হতে পানি পড়লে বা জ্বালা করলে এটা উপযোগী। চোখ হতে পীতবর্ণের পুঁজ বের হয় এবং চোখের ভিতর জ্বালা করে। রোগীর চোখের পাতা অত্যন্ত ভারী বোধ। সন্ধ্যাবেলা অধ্যয়নকালে বৃদ্ধি। চোখ হতে পুঁজ বের হয় হেতু সকালে চোখের পাতা জুড়ে যায়।

কোনায়াম।-লেখাপড়া বা সূচীকাজ করার সময় চোখে চাপবোধ।

ইগ্নেসিয়া।-পড়াশুনা ও সূচীকাজ করলে চোখের যন্ত্রণা বৃদ্ধি।

ম্যাঙ্গেনাম।-প্রদীপের সামনে অধ্যয়ন ও সূচীকাজ করলে বৃদ্ধি।

নাকের রোগ ও সর্দি।-ঋতুর সময় ও ঋতুর পরিবর্তে নাক হতে প্রচুর রক্তস্রাব। সাধারণতঃ এই রক্তস্রাব বৈকালের দিকে বেশী হয়।

ব্রাইওনিয়া, ব্রোমিয়াম ও ডিজিটেলিস রোগীর ঋতুস্রাবের পরিবর্তে নাক হতে রক্তস্রাব হয়। ধাতুগত লক্ষণ দৃষ্টে পার্থক্য নির্ণেয়। ফস্ফোরাস ঋতুস্রাবের পরিবর্ত্তে ফুসফুস হতে রক্তস্রাব হয়। সিপিয়া, সাল্ফার মধ্যে মধ্যে রক্তস্রাব থেমে গিয়া পুনরায় রক্তস্রাব হয়। নেট্রাম-সাল্ফ রোগীর ধাতুগত উপদংশ হেতু নাকয় ক্ষত হয়-সেটাকে ওজিনা বলে; ঐ নাকের ক্ষত গ্রীষ্মের পর বর্ষা ঋতু পড়লেই বেশী হয়। নেট্রাম-সাল্ফ রোগীর সর্দি ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ে। (রাস-টক্স ও অ্যারেনিয়া ডায়েডেমী)।

দন্তশূল।-এটা দন্তশূলে কফিয়ার মত উপযোগী। দন্তশূল বা দাঁতের নানাবিধ রোগ সাইকোসিস দোষের জন্য ঘটিয়া থাকে। দন্তশূল ধূপমানে অথবা তামাকের ধূম লাগলে অথবা মুখে ঠান্ডা পানি রাখলে উপশম।

অজীর্ণ। -ডিস্পেন্সিয়া রোগে পিত্ত-বমন ও পিত্ত-বাহ্যে, জিহবায় পিত্ত লেপ, মুখে পিত্ত-স্বাদ। জিহবায় সবুজাভ বাদামী বর্ণের লেপ পিত্তবৃদ্ধিসূচক। অম্বলের রোগে পেটে বায়ু জমা, বুক জ্বালা করা ও গলা বেয়ে অম্ল-উদ্গার এটার লক্ষণ। রোগী শাক-সব্জি সহ্য করতে পারে না, অথচ রুটী ও মাংসে অরুচি। বৃদ্ধা স্ত্রীলোকদের বংশানুক্রমিক উদরাময়ে এটা একটি উত্তম ঔষধ অত্যধিক অধ্যয়ন বা মানসিক পরিশ্রমাদির ফলে যকৃতের রোগ। যকৃতের স্থানে বেদনা ও অস্ত্র- প্রদাহ। সীসক অপব্যবহার হেতু শূলবেদনায়ও নেট্রাম-সাম্ফ উপযোগী।

উদরাময়।প্রাতঃকালীন উদরাময়। সকালে বিছানা হতে উঠে দুই পা হাঁটবার পর হঠাৎ তার এত মলবেগ হয় যে, সে আর অপেক্ষা করতে পারে না, অমনি ছুটে পায়খানায় যায়। অনেকটা বায়ু নিঃসরণের সাথে তোড়ে মলত্যাগ করে, বাহ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়া এটার মলত্যাগের বিশেষত্ব। এটার মল পিত্তসংযুক্ত। নেট্রাম-সাল্ফ রোগী সকালে হয়তো ২/১ বার মলত্যাগ করে আর সমস্ত দিন বাহ্যেই করিল না, কিন্তু পেটের ভুটভাট করা, গড়গড় করা লক্ষণ সমস্ত দিনই বিদ্যমান থাকে। প্রাতঃকালীন উদরাময়ের জন্য সাক্কার, পডো, অ্যালোজ, রিউমেক্স প্রভৃতি ঔষধ উপযোগী। অ্যালোজ অধ্যায় দ্রষ্টব্য।

নেট্রাম-সাল্ফ কলেরার একটি প্রতিষেধক ঔষধ।– কলেরা মহামারীর সময় এটার ৩x শক্তি প্রত্যহ ২/১ মাত্রা সেবন করলে উপকার দর্শে। কিউপ্রাম-মেটালিকাম-কলেরার অন্যতম উৎকৃষ্ট প্রতিষেধক বলে কথিত হয়ে থাকে। কলেরার এপিডেমিকের সময়ে এক টুকরা তামা বা একটি পয়সা ফুটা করে অঙ্গে ধারণ করলে কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। কারণ এটাও কলেরার উত্তম প্রতিষেধক।

কোষ্ঠকাঠিন্য। -এতে কোষ্ঠকাঠিন্যও আছে। কোষ্ঠকাঠিন্যের মল কঠিন গুটলে গুটলে এবং শ্লেষ্মাজড়িত দেখা যায়। মল খুব কোঁথ দিয়ে বের করতে হয়। কেউ কেউ বলেন-নেট্রাম-সাল্ফ অধিক মাত্রায় সেবন করতে দিলে জোলাপের মত কাজ করে। নেট্রাম-ক্লোরেটামও একটি জোলাপের ঔষধ। প্রত্যহ যাহাতে কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় এজন্য (ক) অ্যাসিড-গ্যালিক ১x, ১০ গ্ৰেণ মাত্রায় প্রত্যহ ৩/৪ বার অথবা (খ) ইলাটেরিয়াম ১x দুই ফোঁটা মাত্রায় প্রত্যহ সকালে একবার কিম্বা (গ) বায়োকেমিক কেলি-মিউর ৬x, ১০ গ্রেণ হিসাবে গরম পানির সঙ্গে ব্যবহার করার বিধি অনেকে দিয়ে গেছেন।

লক্ষণানুসারে এলুমিনা, ব্রাইওনিয়া, হাইড্রাষ্টিস, ম্যাগ্নেসিয়া-মিউর, ওপিয়াম, প্লাম্বাম, প্ল্যাটিনা, ফিউকাস-ভেসিকিউ, সিলিকা-মেরিণা, স্যানিকিউলা প্রভৃতি ঔষধও বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

পিত্তশিলা।-পিত্ত পাথুরী রোগের এটা একটি উত্তম ঔষধ। পিত্ত পাথুরী হয়ে রোগীর পিত্ত – বমন, পিত্ত-বাহ্যে, কোষ্ঠকাঠিন্য, মুখে তিক্ত স্বাদ প্রভৃতি থাকলে এটা ব্যবহার্য্য। চায়না এবং কার্ডয়াস-মেরিয়েনাস নিয়মিত ব্যবহার করলে আর নূতন করে পাথরী জন্মিতে পারে না বলে অনেক বিজ্ঞ চিকিৎসক মত প্রকাশ করে গেছেন। পিত্তপাথরীর প্রবল বেদনা নিবারণের জন্য চায়না, ক্যাঙ্কে-কার্ব, মেন্থা-পিপারেটা প্রভৃতি কয়েকটি ঔষধও বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

বহুমূত্র।-বহুমূত্র রোগে এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রস্রাবে শর্করা দূর করতে নেট্রাম-সাম্ফের ক্ষমতা আছে। যকৃৎ এবং পিত্তের নানা প্রকার বিকৃতি বশতঃ বহুমূত্র হলে উপযোগী। প্রস্রাবে অধিক পরিমাণে লিথিক-অ্যাসিড বের হয়, ইটের গুড়ার মত তলানি (লাইকো)। প্রস্রাবে পিত্ত নিঃসৃত হওয়াও এটার চরিত্রগত লক্ষণ

তুলনীয়। – অ্যাসিড-অ্যাসিটিক-এটার রোগী প্রচুর প্রস্রাব করে অত্যন্ত ফ্যাকাসে হয়। সেইসঙ্গে তীব্র পানিপিপাসা, রোগী দুধের মত সাদা প্রস্রাব করে। সেই প্রস্রাব চিনিপূর্ণ থাকে, আর নেট্রাম-সাম্ফের রোগীর প্রস্রাব পিত্তপূর্ণ ও লিথিক অ্যাসিড পূর্ণ। অ্যাসিড-ফসের প্রস্রাব ধরে রাখলে সেটার ভিতর জেলির মত পদার্থ দেখা যায়, ট্রোমে ঐরূপ দেখা যায় না। অ্যাসিড ফসের রোগী অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে পড়ে। ক্রিয়োজোট-রোগীর প্রস্রাব রাত্রে বহুবার হয়, কখনও অসাড়ে প্রস্রাব হয়ে যায়, প্রস্রাবের পরিমাণ যেমন বেশী সেইরূপ দুর্গন্ধপূর্ণ। ক্রিয়োজোট রোগীর হঠাৎ এত প্রস্রাব পায় যে, উঠবার সময় থাকে না। লাইকোপাস-ভার্জিনিকা-প্রস্রাব করার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর খুব ক্ষুধা পায়, বহুমূত্র হয়ে অতি অল্পকালের ভিতরেই রোগী ভয়ানক দুর্বল ও শীর্ণ হয়ে পড়ে, সেই সাথে হৃৎরোগ থাকা এটার বিশেষত্ব। সিজিজিয়াম – বহুমূত্রের শর্করা দূর করতে অতি চমৎকার ঔষধ। প্রস্রাবের আক্ষেপিক গুরুত্ব কমিয়ে দেয়।

হাঁপানি কাশি।-বহুদিন স্থায়ী সর্দিরোগ হতে হাঁপানি কাশির সাথে গলায় ঘড়ঘড় শব্দ, বর্ষায় বৃদ্ধি। বুকে ব্যথা, কাশির সাথে ঘন সবুজবর্ণের দড়ি দড়ি কিম্বা পুঁজের মত গয়ার বের হয়। শেষরাত্রে বৃদ্ধি।

প্রমেহ।-তরুণ গণোরিয়া রোগে নেট্রাম-সাম্ফ প্রয়োজন হয় না। পুরাতন প্রমেহরোগে যখন সামান্য সবুজ অথবা সবুজাভ হলদে বর্ণের স্রাব নিঃসৃত হয় এবং যখন প্রস্রাব করতে কোনপ্রকার জ্বালা-যন্ত্রণা থাকে না, তখন এটা বিশেষ উপযোগী (পালস)।

স্ত্রীরোগ।– ঋতুস্রাবের পূর্বে ও সময়ে নাক হতে রক্তস্রাব। ঋতুস্রাব অত্যধিক, যেখানে লাগে সেইস্থান জ্বালা করে।

শোধ ও বেরিবেরি।-এই রোগের এটা একটি উত্তম ঔষধ। প্লীহা শক্ত ও বড় এবং ঐ স্থানে বেদনা থাকলে নেট্রাম-সাল্ফ উপযোগী। (বিশেষ অধ্যায় দেখুন)।

চর্মরোগ।-সাইকোসিস দোষের জন্য আঁচিল। দেহের স্থানে স্থানে রসপূর্ণ গুটি উঠে অত্যন্ত চুলকাইলে এবং সেটা হতে পানির মত অধিক পরিমাণে রস বের হলে এটা ব্যবস্থেয়। ম্যালেরিয়া ও ন্যাবা রোগের পর চর্মরোগ বা খোস। এটার বিশেষত্ব এই যে, গায়ের ঢাকা খুললেই চুলকানির উদ্রেক হয়। স্যাঁতসেঁতে স্থানে বসবাস হেতু একজিমা, সেটা হতে পানির মত হলুদাভ পূজ বের হয় (রাস-টক্স)।

জ্বর। -রাস টক্স, বর্ষাকালীন জ্বরের ঔষধ। এতে অত্যন্ত ছটফটানি, গাত্রবেদনা ও পানিপিপাসা থাকে। নেট্রাম-সাম্ফের জ্বরে হাত-পায়ের জ্বালা, মুখে তিক্ত স্বাদ, জিহবায় সবুজবর্ণের বা পাংশুবর্ণের লেপ, পিত্ত-বমন। জ্বর ছাড়িবার সময় প্রচুর ঘাম হয়। জ্বর যে কোন সময়ে আসতে পারে, কখনও বা একদিন অন্তর আসে।

নিদ্রা!-দুপুরবেলা কোন প্রকার লেখাপড়ায় বসলেই ঘুম পায়। ঘুমের ভিতর অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায়।

সম্বন্ধ।-নেট্রাম-সাল্ফ অ্যান্টিসাইকোটিক হিসাবে থুজা, মেডো ও পালস তুল্য; প্লীহারোগে- মার্কারি ও অ্যারেনিয়া-ডায়া তুল্য। চক্ষুরোগে -গ্র্যাফাই, হিপার-সাম্ফ তুল্য; কাশি ও উদরাময়ে- ব্রাইও তুল্য; বহুমূত্র রোগে-লাইকো তুল্য; দন্তশূলে -কফিয়া তুল্য।

বৃদ্ধি।ঠান্ডা দ্রব্য আহার করলে; সকালবেলা; বর্ষা ঋতুতে; স্যাঁতসেঁতে স্থানে বসবাস করলে; অধিক পানি ব্যবহার করলে; ঝড়-বৃষ্টির ভিতর পরিশ্রম করলে; বামদিকে শুইলে; গান- বাজনায়; স্পর্শে; টান করে কাপড় পরিলে; বিশ্রামে; চলাফেরায় (হাঁপানি); সকালে; বেলা ২টা হতে ভোর ৫টার মধ্যে (কলিক, হাঁপানি); খোলা বাতাসে (লিভার); ঝড়ের সময় (কলিক)।

হ্রাস।– টিপিয়া দিলে; কোমরের কাপড় ঢিলা করে দিলে; ব্যায়ামের পর শুষ্ক হাওয়ার ভিতর হাঁটা- চলা করলে; শুষ্ক জলবায়ুতে; হাত দিয়ে চেপে ধরলে (বুকের ব্যথা); শুইলে (মাথা); বেদনাযুক্ত পাশে শুইলে (কলিক); ঠান্ডা পানিতে (দাঁতের যন্ত্রণা)।

শক্তি ১ x, ৩ x, ৬ x, ১২x চূর্ণ; ৬, ৩০, ২০০, ১০০০ বা তদূর্দ্ধ ক্রম।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!