কেলি-কাৰ্ব্বনিকাম (Kali Carbonicum)

পরিচয়।-অপর নাম কার্বনেট-অভ-পটাস। এটা অ্যান্টি-সোরিক, অ্যান্টি-সাইকোটিক ও অ্যান্টি-সিফিলিটিক ঔষধ।

ব্যবহারস্থল। – হাঁপানি, নিউমোনিয়া, পুরাতন ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, প্লুরিসি, হুপিং কাশি, দুর্বলতা, পুরাতন শ্বাসরোগ, পুরাতন সর্দি-কাশি, রক্তাল্পতা, বাধক, নানাবিধ স্ত্রীরোগ, প্রসবান্তিক সর্ববিধ উপসর্গ, পৃষ্ঠে ও কোমরে বেদনা, পেটফাঁপা, চোখে-প্রদাহ, পাকযন্ত্রের নানাবিধ উপসর্গ, রক্তস্রাব, অর্শ, শিরঃরোগ, গর্ভাবস্থায় রোগ, জরায়ুর ক্যান্সার ও বাধক প্রভৃতি।

প্রদর্শক লক্ষণ। হৃত্যন্ত্রের দুর্বলতা; অনিয়মিত, সবিরাম ও দুর্বল নাড়ী। দুর্বলকারী ঘাম, কোমরে ব্যথা ও অত্যন্ত দুর্বলতা। চোখের উপরের পাতা চামড়ার থলির মত দেখায় (এপিস-নিচের পাতা; ফস্ফোরাস-উভয় পাতা)। রোগীর গায়ে হাত দিলেই সে চমকিয়ে উঠে, বিশেষতঃ পায়ের তলায় হাত দিবামাত্র চমকিয়ে উঠবে। রাত্রি ৩টায় লক্ষণের বৃদ্ধি। রতিক্রিয়া বা শুক্রয় জন্য দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। উদগার উঠলে রোগের উপশম। রোগী একলা থাকতে চায় না। পেট বায়ুতে পূর্ণ, হাত লাগালে কষ্ট হয়, মনে ভাবে পেট ফেটে যাবে। যা খায় তাই বায়ুতে পরিণত হয়। সকালে মুখ ধুবার সময় নাক হতে রক্ত পড়ে। কেবলমাত্র খাওয়ার সময় দাঁতের যন্ত্রণা হয়। দন্তপাটি আলগা। প্রায়ই সর্দি করে। ব্যথা সূঁচফোটান প্রকৃতির। বেদনাযুক্ত পার্শ্ব চেপে শুইতে পারে না (বিপরীত -ব্রাইও)। হাঁপানি, ভোর রাত্রে বাড়ে। উঠে বসে থাকতে হয়। গলার মধ্যে কাঁটা ফুটে আছে এমন বোধ। ফুসফুসের ঘা, কেলি-কার্ব ব্যতীত প্রায়ই আরাম হয় না। মাসিক ঋতুর পূর্বে দুর্বলতা ও কোমরে ব্যথা, টিপিয়া দিলে উপশম। কোমর ব্যথায় ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। প্রসবের পরবর্ত্তী যে কোন উপসর্গ (দুর্বলতা, ঘাম, কোমরে ব্যথা, সাবরোধ ইত্যাদি)। কাশি, গয়ারে রক্ত, গয়ার পুঁজের মত ক্ষারজনক, বা হাজাকারক। গয়ার উঠাতে পারে না, গিলে ফেলে। মাসিক ঋতু অত্যন্ত বিলম্বে হয়, অত্যন্ত কম। মাসিক স্রাব অনেক দিন যাবৎ হয়। রক্ত হাজাকর। মধ্যরাত্রের পর আর ঘুম হয় না। খোলা বাতাস পছন্দ করে। শূলবেদনা হঠাৎ আসে হঠাৎ যায় (বেলেডোনা বিফলে)। বৃদ্ধলোকদের পক্ষাঘাত এবং শোথ। মুখক্ষত ও মুখে দুর্গন্ধ। আলজিব বেড়ে কাশি। যক্ষ্মা হওয়ার উপক্রম। ঋতু পরিবর্তন মাত্রেই সর্দি লাগে। ডানদিকে শুইতে পারে না। সামনে ঝুঁকলে বুকের ব্যথা কম হয়। কাশবার সময় ও হাঁচিবার সময় প্রস্রাব বের হয়। কাশলে অর্শে বেদনা হয়। মল আকারে বড় কষ্টে বের হয়। মলত্যাগের প্রায় এক ঘণ্টা পূর্বে সূঁচফোটান ব্যথা হতে থাকে। রোগী অত্যন্ত শীতকাতর। ঘাম অধিক, কিন্তু গাত্রাবরণ ত্যাগ করতে পারে না। মিষ্টিদ্রব্য খেতে ইচ্ছা। মাথাধরার পূর্বে হাই উঠতে থাকে। মাথার চুল অত্যন্ত শুষ্ক। চুল উঠে যায়। নাক হতে হলদে গাঢ় স্রাব। নাকের ভিতর ঘা। বাহিরের ঠান্ডা হতে বদ্ধ ঘরে আসিলেই নাক দিয়ে সর্দি ঝরে। সর্দি শুকিয়ে শিরঃরোগ হয়।

স্বভাব ও গঠন। -ঔষধটি সাধারণতঃ বৃদ্ধ; ঘন কাল চুলবিশিষ্ট মোটাসোটা, শোথ ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির রোগে উপযোগী। রোগী শ্লেষ্মাপ্রধান, কতকটা মোটা, পেশী নরম ও দুর্বল। সে ক্রমশঃই দুর্বল হতে থাকে, তার নাড়ী অসম ও বিরামশীল। মুখমন্ডল ও চর্ম ফ্যাকাসে। রোগী ভয়ানক শীতকাতুরে, শীত তার কিছুতেই যেতে চায় না। রাত্রে জানালার ফাঁকগুলি ন্যাকড়া দিয়ে বন্ধ করে। প্রত্যেকটি ঋতু পরিবর্তনেই অসুস্থ হয়। কিন্তু শীতকাতুরে হয়েও তার ঘাম প্রচুর।

মন। কেলি-কার্ব রোগী প্রথমতঃ ভয়ঙ্কর ক্রোধী ও খিটখিটে, সামান্য ব্যাপারে বা ত্রুটিতে একেবারে মারমুখো হয়ে উঠে। তারপর সে অত্যন্ত ভীতু, ভূতের ভয়, ঠান্ডা লাগার ভয়, চোর ডাকাতের ভয়। সে সামান্য শব্দে চমকে উঠে, সর্বদা অমঙ্গল চিন্তা করে। সর্বদাই ভাবে তার রোগ আরোগ্য হবে না। একাকী থাকতে চায় না।

তুলনীয়। – অ্যান্টিম-ক্রুড – বদমেজাজ, খিটখিটে, রাগী। সর্বদা মনমরা এবং দুঃখিত। শিশুরোগী খুঁতখুঁতে, রাগী। তার দিকে তাকালে বা তার গায়ে হাত দিলে কাঁদে। আর্সেনিক- জীবনে নিরাশ ভাব, সর্বদা বলে চিকিৎসায় কোন ফল হবে না। একাকী থাকতে চায় না, রাতে অন্ধকার ঘরে থাকতে ভয়। মৃত্যুভয়, মানসিক উদ্বেগ ও অস্থিরতা, সর্বদা স্থান পরিবর্তন করে। অরাম মেট সর্বদা নিরাশ ভাব; রোগী কাঁদে, মৃত্যু কামনা করে, রোগ আরোগ্য হবে না এই কথাই বলে। আত্মহত্যা করার অত্যন্ত ঝোঁক। উপদংশ এবং পারদের অপব্যবহারে সমধিক কার্যকরী। কষ্টিকাম—সর্বদা বিমর্ষ দুঃখিত চিত্ত, আশাহীন। সামান্য কারণেই শিশুর মত চীৎকার করে কাঁদে, কিন্তু পরের দুঃখে কষ্ট অনুভব করে। কোনায়াম-সামান্য কারণে উত্তেজিত ও বিরক্ত হয়, প্রতিবাদ সহ্য করতে পারে না, ঝগড়াটে, অলস, যথেচ্ছাচারী, চিত্তের উন্মাদ। সমাজে যেতে ভয়। নাক্স-ভমিকা—খিটখিটে মেজাজ, হিংসুটে এবং ঝগড়াটে, সামান্য কারণে রেগে উঠে।

নিউমোনিয়া। -বুকে সূঁচীবেধবং ব্যথা বক্ষঃ ভেদ করে পৃষ্ঠ পর্য্যন্ত চালিত হয়। হিপাটিজেশন অবস্থায় বিশেষ কাজে আসে। বেদনান্বিত পার্শ্ব চেপে কখনও শুইতে পারে না। সহজে গয়ার উঠে না। অত্যন্ত শ্বাসকষ্ট উপস্থিত হয়। চোখের পাতা ফোলা মত দেখা যায়। তুলনীয়।– ব্রাইয়োনিয়া-বুকে সূঁচফোটান বেদনা, কাশলে বাড়ে। রোগী হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে।

বেদনাযুক্ত পার্শ্বে চেপে শুইলে উপসর্গ কমে। ফেরাম-ফস (বায়োকেমিক) – অ্যাকোনাইট এবং ব্রাইওনিয়ার মিশ্র লক্ষণে ব্যবহৃত হয়। উষ্ণ জ্বর, বুকে বেদনা, গয়ারে রক্তের ছিট্ থাকে। অ্যান্টিম- টার্ট-সর্দি সরল বলে মনে হয়, বুকের ভিতরে ঘড়ঘড় শব্দ অথব কাশলে উঠে না। দুর্বলতা, আচ্ছন্ন, নিস্তেজ ভাব। সেনেগা- শ্বাসকষ্ট, বুকে বেদনা, বেদনার জন্য হাঁচিতে কাশিতেও কষ্ট হয়। বুকে ঘড়ঘড় শব্দ অথচ কাশলে গয়ার উঠে না।

প্লুরিসি। বামদিকের বুকে সূঁচফোটান বেদনা। বুক অত্যন্ত ধড়ফড় করে। শুষ্ক কাশি; ভোর ৩টায় বেশী। নিঃশ্বাস টানিলে বেদনা বেশী। ব্রাইয়োনিয়ার পরে ব্যবহার্য্য।

হাঁপানি। মুখ ফ্যাকাসে। প্রস্রাব অল্প, লালাস্রাব খুব বেশী। শরীরের উপরের অংশে ঘাম। হাঁপানির সময় খিটখিটে হয়ে পড়ে ও উদ্বিগ্ন ভাব দেখায়। একলা খোলা জায়গায় থাকতে চায় না। সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে। ভাবে বুকে আদৌ হাওয়া নেই। ভোরবেলায় বৃদ্ধি। মধ্যরাত্রির পরে বা মধ্যরাত্রি হতে বৃদ্ধি-আর্সেনিক। হাঁপানির টানের জন্য রোগী শুইতে পারে না, তাকে উঠে বসে থাকতে হয়। দমবন্ধের ভাব। বুকে সাঁই সাঁই শব্দ। কেলি-বাই- ভোর ৩/৪ টায় বৃদ্ধি। বর্ষা অথবা শীতে, ঠান্ডা পড়লেই হাঁপানি এবং কাশির টান বাড়ে। কাশতে কাশতে বুকে শ্লেষ্মা যা উঠে তা চটচটে আঠার মত, মুখ হতে দড়ির মত লম্বা হয়ে ঝুলতে থাকে। ক্যানাবিস ইন্ডিকা- হৃৎরোগ জনিত হাঁপানি, আক্ষেপিক ধরণের। বুক ধড়ফড় করে। রোগী বেদনার জন্য বাঁদিকে চেপে শুইতে পারে না। ল্যাকেসিস – ঘুমাতে ঘুমাতে হঠাৎ হাঁপানির টান বেড়ে যায়। রোগী গায়ে কাপড় রাখতে পারে না। মুখের কাছে হাওয়া করলেও তা সহ্য হয় না। গলায় বেদনা এবং দমবন্ধ ভাব। ন্যাজা-হৃৎপিন্ডের রোগের সঙ্গে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট। ঘুমালে দম বন্ধ হয়ে আসে।

ব্রঙ্কাইটিস।-ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়া ফলে উৎপন্ন রোগ; সামান্য ঠান্ডা লাগলেই বুকে বেদনা হয়। ঐ বেদনা সূঁচফোটান প্রকৃতির; রোগী বেদনাযুক্ত পার্শ্বে শুইতে পারে না। দুর্গন্ধযুক্ত থোকা থোকা গয়ার উঠে। তুলনীয়। -নিউমোনিয়া দ্রষ্টব্য।

অজীর্ণ রোগ।-পেটে বায়ু। মিষ্টি খেতে চায়। বৃদ্ধলোকদের অজীর্ণ রোগ। আহারের পূর্বে পূর্ণতা বোধ। আহারের পরেই পেটটি ফুলে উঠে, যেন ফেটে যাবে। গা-বমি-বমির ভাব, শুইলে কম হয়। সর্বদা ভাবে পেট পানিতে পূর্ণ। টক বমি। পেটে দপদপ করে, যন্ত্রণা হয়। খাওয়ার অরুচি। লিভারে সূঁচফোটান ব্যথা। লিভারের স্থান টাটিয়ে থাকে। ন্যাবা ও শোথ লক্ষণ। পেট ঠান্ডা। মল আকারে বড়, কষ্টে বের হয়। পায়খানার এক ঘণ্টা পূর্ব হতে মলদ্বারে ব্যথা। মলত্যাগের সঙ্গে রক্ত পড়ে। অর্শ, বসলে অর্শে লাগে। মলদ্বারে জ্বালা। মলদ্বার স্থানচ্যুত হয়। কাশলে বা হাঁচিলে প্রস্রাব বের হয়ে যায়। জিভ সাদা, মুখে লালাস্রাব ও ক্ষত। দাঁতের গোড়া হতে পুঁজ পড়ে। ভোরে সকল কষ্টের বৃদ্ধি। শরীরের তেজঙ্কর পদার্থ নষ্ট হওয়ার ফলে অজীর্ণরোগ উদরশূল -অজীর্ণরোগগ্রস্ত ব্যক্তির উদরশূল বেদনা, হঠাৎ আসে, হঠাৎ যায়। বেলেডোনা বিফলে সর্বদা কেলি-কার্ব ব্যবস্থেয়।

কোমরে ব্যথা।– কেলি-কার্ব রোগীর কোমরে বেদনা হয়, ঐ বেদনা এত তীব্র যে, রোগী অনবরত “আমার কোমর গেল, আমার কোমর গেল” বলে চীৎকার করতে থাকে। প্রসববেদনার সময় কোমরের এমন তীব্র বেদনায় কেলি-কার্ব অবশ্য ব্যবহার্য্য। সেইসঙ্গে ঘাম ও অসামঞ্জস্য দুর্বলতা থাকে, খুব জোরে রগড়িয়ে দিলে কোমর ব্যথার উপশম হয়।

সর্দি।– সুস্থ ব্যক্তি বাহিরে বেড়াইয়া এসে ঘরে জামা ছাড়িবার সঙ্গে সঙ্গি সর্দি হয়, তারপর সর্দির স্রাব সামান্য কারণে বন্ধ হয়ে গেলেই মাথার যন্ত্রণার সূত্রপাত হয়। কপালে ঘাম হচ্ছে, কোন কারণে ঘাম বন্ধ হয়ে গেলেই মাথার যন্ত্রণা আরম্ভ হয়। নাসারন্ধ্রের ক্ষত বা নাকের পুরাতন সর্দিরোগে ডাঃ জোগ এই ঔষধ প্রয়োগ করতে বলেছেন।

শ্বাসযন্ত্রের রোগ।-কেলি-কার্বের ক্রিয়াস্থল ডান ফুসফুসের নিম্নভাগ। সেখানে সূঁচফোটানবৎ তীব্র বেদনা হয়। পূর্বোক্ত লক্ষণে যক্ষ্মারোগের প্রথম বা পূর্ণাবস্থায় এটা দ্বারা আশ্চর্য্য ফল পাওয়া যায়। বহু যক্ষ্মারোগীকে ডাঃ ন্যাশ কেলি-কার্ব দ্বারা আরোগ্য করতে সমর্থ হয়েছিলেন। রাত্রি ৩টার সময় রোগের বৃদ্ধি এটার একটি প্রধান লক্ষণ। কাশি, যক্ষ্মা, হাঁপানি, হৃৎপিন্ডের শোথ ইত্যাদি যে কোন রোগেই যেখানে এই বৃদ্ধির লক্ষণ পাওয়া যাবে, সেখানেই কেলি-কার্ব ব্যবহাৰ্য্য।

মস্তক।-কেলি-কার্ব রোগীর সকালে ও সন্ধ্যায় এবং মাথা নাড়লে অত্যন্ত মাথা ঘুরে সেই সময় কান দুইটি বন্ধ হয়ে আছে বলে মনে হয়। আধ-কপালে ব্যথায় গা-বমি-বমি ও বমন থাকে, আধ-কপালে ব্যথার সময় মাথা সামান্য ঘুরালে বা নাড়লে অসহ্য বেদনা বোধ করে। মাথার যন্ত্রণার সময় রোগী মনে করে যেন মাথার ভিতর কি একটা পদার্থ ঘুরছে।

চোখের অসুখ। চোখের ভিতর জ্বালা বোধ, সূঁচফোটান ও টাটানি ব্যথা, ভ্রূ ও অক্ষিপুটের মধ্যবর্তী স্থল একটি জলপূর্ণ থলির মত ফুলে যায়। চোখের পাতায় প্রদাহ হয়ে ফুলে উঠে এবং চোখের শ্বেতাংশে লালবর্ণ হয়। সকালে চোখ দুইটি জুড়ে যায়, আলোক সহ্য হয় না, চোখের কোণে ঘা এবং পুঁজ।

হৃদযন্ত্রের রোগ।– হৃত্যন্ত্রের রোগেও কেলি-কার্বের প্রয়োগ আছে। এতে হৃৎপিন্ডে দুর্বলতা খুব বেশী, সেজন্য রোগী জোরে চলতে পারে না, জোরে চলাফেরা করলে তাকে হাঁপেতে হয়, সেজন্য অতি ধীরে ধীরে পথ অতিক্রম করে। বাম পাশে শুইলে বেশী কষ্ট হয়, সেজন্য ডান পাশে শুয়ে থাকতে বাধ্য হয়। তুলনীয়। ক্যাক্টাস-রোগী বাম পাশে চেপে শুইতে পারে না, বেদনা করে। মনে হয় যেন, হৃৎপিন্ড কেউ একবার মুঠা করে ধরে আবার ছেড়ে দেয়। থিয়া- রোগী বামদিকে চেপে শুইতে পারে না, কষ্ট হয়, বুক ধড়ফড় করে। অ্যাকোনাইট-ফেরক্স- অত্যধিক শ্বাসকষ্ট, রোগী ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস লয়। হাঁই-পাঁই করে, শুইতে পারে না, বসে থাকতে হয়। গ্রিন্ডেলিয়া ঘুমাতে ঘুমাতে রোগীর হঠাৎ শ্বাসবন্ধ হয়ে আসে, বুক ধড়ফড় করে, নিঃশ্বাস ফেলিবার জন্য আঁকুপাঁকু করে।

শোথ।-হৃৎপিন্ডের দৌর্বল্য বেশী দিন স্থায়ী হলে, রোগের শেষের দিকে শোথ বা উদরী। হাইড্রোথোরাক্স, নিঃশ্বাসে সাঁই সাঁই শব্দ। চর্ম অত্যন্ত শুষ্ক। ভোর তিনটার সময় বৃদ্ধি। বৃদ্ধ ব্যক্তিগণের শোথ। কেলি-কার্বের শোথ-লক্ষণ হঠাৎ উপস্থিত হয় না, অতি ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। শোথের সাথে হৃৎপিন্ডটি বড়ই দুর্বল হয়ে পড়ে সেজন্য রোগী উচ্চস্থানে উঠতে পারে না। উঠতে গেলে হাঁপিয়ে পড়ে। নাড়ী অসম ও সবিরাম হয় এবং চোখের পাতা জলপূর্ণ থলির মত শোথগ্রস্ত হয়।

তুলনীয়।-অ্যাপোসাইনাম – হৃৎপিন্ডের ধড়ফড়ানি – শ্বাসবন্ধের মত অবস্থা হয়। উদরী এবং শোথ, প্রস্রাবের স্বল্পতা, প্রস্রাবে কষ্ট। ঐফ্যাস্থাস – এটার ক্রিয়া প্রায় অ্যাপোসাইনামের মত -ডাঃ ক্লার্ক এমন মত প্রকাশ করেন। হৃৎরোগজনিত শোথ, হৃৎরোগের জন্য হাঁপানি। হৃৎপিন্ড স্থানে বেদনা (এটা হৃৎপিন্ডের বলবর্দ্ধক এবং মূত্রকারক শোথের উপকার করে। অ্যাসিড-অ্যাসেটিক – উদরী বা শোথ; প্রচুর পরিমাণ প্রস্রাবের সঙ্গে কোমরে বেদনা, উদরাময় এবং বমন। অত্যন্ত পিপাসা। এপিস-শোথে এবং সর্বরোগেই পিপাসাহীনতা ইঁহার বিশেষ প্রয়োগ লক্ষণ। গাত্রত্বক মোমের মত সাদা বা স্বচ্ছ। আর্সেনিক হৃৎরোগহেতু (এবং কিডনী সংক্রান্ত রোগের জন্যও) শোথ। রোগীর সর্বাঙ্গ ফুলে যায়, শ্বাসকষ্ট, রোগী শুইতে পারে না, পিপাসায়, রোগী অল্প অল্প করে ঘন ঘন পানি পান করে। ডিজিটেলিস হৃৎপিন্ডের রোগজনিত শোথ। অ্যাসক্লিপিয়াস-কর্ণিউটি- হৃৎরোগজনিত শোথে বিশেষ উপযোগী, এটা সেবনে ঘাম ও প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়ে শোথ কমে। এপিস-হৃৎপিন্ড, কিডনী অথবা যকৃতের দোষহেতু শোথ। পিপাসা থাকে না, প্রস্রাব অল্প হয়, গাত্রত্বক সাদা অথবা স্বচ্ছ হয়। চোখের পাতা এবং পা বেশী ফোলে, শ্বাসকষ্ট।

রক্তাল্পতা। -কেলি-কার্বে রক্তাল্পতা খুব নির্দিষ্ট। গায়ের চামড়া ফ্যাকাসে ও দুধের মত সাদা হয়ে যায়। অল্প বয়সের মেয়েদের বা যুবতীদের প্রথম ঋতুকালে রক্তাল্পতা ও দুর্বলতা দেখা যায়–এই রক্তাল্পতার জন্য তাদের ঋতুস্রাব ঠিকমত হয় না এবং এমন ক্রমশঃ তারা ফুলে যায়। এই ফুলা সাধারণতঃ মুখে ও চোখের চারিদিকেই বেশী দেখা যায়। চোখের উপরের পাতাটি জলপূর্ণ থলির মত ফুলে উঠে, সেইসঙ্গে কোমরে অসহ্য বেদনা হয়, এমন ফ্যাকাসে মুখ অত্যন্ত দুর্বলতা ফেরাম-ফসেও আছে, তবে ফেরামে কেলি-কার্বের মত চোখের উপরের পাতার ফুলা নেই। ফস্ফোরাসেও খুব রক্তাল্পতা আছে, সেইসঙ্গে সমস্ত মুখটি ফুলে যায়। এপিসেও রোগীর খুব দুর্বলতা ও ফ্যাকাসে ভাব আছে। সেইসঙ্গে চোখের নীচের পাতা ফুলে ঝুলে পড়ে। ডাঃ ফ্যারিংটন বলেন–দুর্বলতাই হোক, রক্তশূন্যতাই হোক বা যে কোন রোগই হোক না কেন যদি সামান্য কারণে প্রচুর ঘাম, কোমরে তীব্র বেদনা ও অত্যধিক দুর্বলতা থাকে তবে কেলি-কার্ব একমাত্র ঔষধ।

উদরাময়। – পুরাতন উদরাময়েই এটা ব্যবহৃত হয়। রোগী বহুদিন পর্য্যন্ত অজীর্ণ রোগে ভুগে দুর্বল ও শোগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, যকৃৎপ্রদেশে সর্বদাই ঘিনঘিনে ব্যথা এবং যকৃৎ হতে একটা সূঁচফোটান ব্যথা ডানদিকের কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, ডানদিকে শুইতে পারে না, কোমরের তীব্র বেদনার জন্য চিৎ হয়ে থাকাও ক্লেশকর; চোখের উপরের পাতা ফুলা প্রভৃতি লক্ষণে, কেলি-কার্ব উত্তম ঔষধ। উদরীরোগের সাথে পুরাতন উদরাময় থাকলে এটা অধিকতর উপযোগী

বাতরোগ।– পুরাতন বাত ও বংশানুগত বাতরোগে এটা উপকারী। বাতাক্রান্ত স্থানে শত শত সূঁচফোটানর মত ব্যথা হয়, সেইসঙ্গে দপদপানি ও কনকনানি থাকে। রোগী শীতকাতুরে, প্রতি বৎসর ঘুরে রোগের আক্রমণ হয়। সেইসঙ্গে ঘুসঘুসে জ্বর, হৃৎপিন্ডটি বড়ই দুর্বল ও চোখের উপরের পাতা দুইটি ফুলে যায়। কোমরে সূঁচফোটান ব্যথা, তা হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে। খাওয়ার পূর্বে পেট খালি ভাব ও খাওয়ার পর পেট ফুলে উঠে।

স্ত্রীরোগ।– স্ত্রীলোকদের সঙ্গমে অনিচ্ছা, সঙ্গমের সময় যোনিমধ্যে হেজে যাওয়ার মত বেদনা। ঋতু অতি বিলম্বে প্রকাশিত হয়, অতি অল্প স্রাব হয়, রক্তের বর্ণ ফিকা। কোন কোন রোগিণীর নির্দিষ্ট সময়ের বহু পূর্বে অপর্যাপ্ত ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। ঋতুস্রাব হওয়ার এক সপ্তাহ পূর্বে রোগিণী অত্যন্ত অস্বস্তি বোধ করে। কোমরে অত্যধিক ব্যথা হতে থাকে। ঋতুস্রাবকালেও সমভাবেই ব্যথা হতে থাকে, স্রাব বন্ধ হলেও কোমরের ব্যথার উপশম হয় না। সৰ্প বিষজাত ঔষধগুলতে দেখা যায়, ঋতুস্রাবের সঙ্গে কোমরের ব্যথা কমে যায়। অ্যাকটিয়া-রেসিমোসায় যত বেশী স্রাব তত বেশী যন্ত্রণা হয়। কেলি-কার্ব রোগিণীর স্রাবের সঙ্গে যাতনা, দুর্বলতা, অবসাদ প্রভৃতি বৃদ্ধি পায়। ঋতুস্রাবের সাথে হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়াও অনিয়মিত হয়। কেলি-কার্ব রোগিণীর জরায়ুটিও অতি দুর্বল, সেইসঙ্গে প্রায়ই তার গর্ভ হয় না, যদিও বা হয়, গর্ভপাত হয়ে যায়। গর্ভের দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাস হতে এরূপ অরুচি ও গা-বমি-বমি আরম্ভ হয় যে, গর্ভিণীর জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে, খেতে না খেতেই তার পেটটি বায়ুতে পূর্ণ হয়ে উঠে এবং বমি করতে থাকে। প্রসব বেদনায়ও এই ঔষধটি ব্যবহৃত হয়-কোমরে অত্যধিক বেদনা হয়, সূঁচফোটান ও কনকনানি বেদনায় কোমরটি যেন ভেঙে যাবে মনে হয়। বেদনা দুই পাশ দিয়ে জঙ্ঘা প্ৰদেশ পর্যন্ত পরিচালিত হওয়ার ফলে প্রসবের কোনরূপ সহায়তা করে না, উপরন্তু রক্তস্রাব চলতে থাকে। কোমর টিপিয়া দিলে রোগী আরাম বোধ করে। প্রসবাস্তিক যে কোন রোগে কেলি-কার্ব উৎকৃষ্ট ঔষধ। প্রসবের পর লোকিয়া স্রাবের লোপ, কোমর-ব্যথা, জরায়ু বের হয়ে পড়া, জরায়ু-প্রদাহ, সূতিকা জ্বর প্রভৃতি সর্ববিধ অবস্থাতেই কেলি-কার্ব ব্যবহার্য্য। বোরিক বলেন- গর্ভরোধ ও তার আনুষঙ্গিক দুর্বলীভূত অবস্থায় এটা বিশেষভাবে কার্যকরী। সূতিকা ক্ষেত্রে আক্ষেপ অন্তে দুর্বলতায় এটা অমোঘ ঔষধ আক্ষেপকালে সংজ্ঞালোপ হয় না।

পুংজননেন্দ্রিয়ের রোগ। -সঙ্গমের ইচ্ছা খুবই প্রবল, কিন্তু সঙ্গমের পরই অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অন্যান্য উপসর্গ বৃদ্ধি পায়। যৌবনে যথেষ্ট হস্তমৈথুনাদি বা অবৈধ উপায়ে শুক্রক্ষয়ই এটার কারণ। সঙ্গমাদির পর কোমরের ব্যথা খুব বাড়ে, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয় এবং রোগী অত্যন্ত আলস্য বোধ করে। কামোত্তেজক স্বপ্ন দেখে শুক্রপাতের পর রোগী অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়লে এটা কার্যকরী।

দন্তশূল।-দাঁত নড়ে কিন্তু সেরূপ বেদনা থাকে না; গরম বা ঠাণ্ডা কোনটাই সহ্য হয় না। আহারকালে খাদ্যদ্রব্য স্পর্শে অত্যন্ত যন্ত্রণা হয়। মুখ দিয়ে দুর্গ” চটচটে লালা পড়ে; মুখ নরম থাকে।

তুলনীয়।-বেদনা বাড়ে ঠান্ডা পানিতে নাক্স ভমিকা, ষ্ট্যাফিসেগ্রিয়া। আক্রান্ত দাঁতে হাত লাগলে – চায়না। খাদ্য ও পানীয় দাঁতে ঠেকিলে — ষ্ট্যাফিসেগ্রিয়া। গরম পানিতে -ক্যামোমিলা, ল্যাকেসিস, পালসেটিলা। বেদনার উপশম ঠান্ডায় ক্যামোমিলা, কফিয়া, ম্যাগ-কার্ব, পালসেটিলা। গরমে-আর্সেনিক, ম্যাগ ফস, নাক্স ভমিকা।

বৃদ্ধি।– ভোর ৬টায়; রতিক্রিয়ার পর শীতকালে; ঝোল খেলে; কাফি সেবনে; বাঁ দিকে শুইলে; আক্রান্ত পার্শ্বে শুইলে; দেহের তেজস্কর পদার্থ নির্গমনের পর; প্রসবের পর; স্পর্শে; গর্ভপাতের পর; হামের পর (দৃষ্টিশক্তি); সকালে মুখ ধুবার সময় (নাক দিয়ে রক্ত পড়া); খাওয়ার সময় (দাঁত ব্যথা); মাসিক ঋতুর পূর্বে (মলদ্বারে ব্যথা); কাশলে (অর্শ); ক্ষুধা পেলে (বুক ধড়ফড় করে), চাপ দিলে।

হ্রাস। গরমকালে; দিনে; চলবার সময়; বসলে বা সামনে ঝুঁকলে বা দোলাইলে (হাঁপানি); ঢেঁকুর উঠলে; উত্তাপে; গরম বাতাসে।

শক্তি – ৩x, ৬x, ৬, ১২, ৩০, ২০০, ১০০০ বা তদূর্ধ্ব শক্তি ব্যবহার্য্য। উচ্চশক্তির কেলি – কার্ব প্রয়োগে অনেক ক্ষেত্রে বৃদ্ধি লক্ষণ দেখা দিতে পারে, এজন্য প্রথমেই উচ্চশক্তি ব্যবহার্য্য নয়।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!