ফেরাম-ফস্ফোরিকাম (Ferum Phosphoricum)
পরিচয়।-ফসফেট-অভ-আয়রণ। ডাঃ সুসলারের টিসু ঔষধের অন্যতম।
ব্যবহারস্থল।-প্রদাহ, আঘাত লাগা, চোট লাগা, শ্বাসনলী-প্রদাহ, মূত্রাধার প্রদাহ, মস্তিষ্কের প্রদাহ, পাকাশয়-প্রদাহ, কর্ণের প্রদাহ, শূলবেদনা, কাশি, ঘুংড়ি-কাশি, বিসর্প, তরুণ প্রদাহ বশতঃ জ্বর, আমাশয়, অজীর্ণ, রক্তবমন, রক্তোৎকাস, দেহের যে কোন দ্বার দিয়ে রক্তস্রাব, নাক দিয়ে রক্তস্রাব, হৃত্যন্ত্রের রোগ, হস্ত স্ফীতি, মূত্রপিন্ডের প্রদাহ, ফুসফুস-প্রদাহ, আঞ্জনি, বমন, হুপিং-কাশি, হৃৎস্পন্দন প্রভৃতি।
ক্রিয়াস্থল। -ফেরাম-ফসের ক্রিয়া অ্যাকোনাইট ও জেলসিমিয়ামের মধ্যবর্তী। ডাঃ ফেরিংটন বলেন, হ্যামামেলিসের মত ফেরাম-ফস রক্তস্রাবের একটি অতি মূল্যবান ঔষধ। রক্তে লোহিত- কণিকার (R. B. C.) অভাব ও শ্বেতকণিকার (W. B. C.) আধিক্যে ফেরাম-ফস ফলপ্রদ।
প্রদর্শক লক্ষণ।-প্রদাহের প্রথম অবস্থায় জ্বর, আমাশয়, উদরাময়। দাঁতের ব্যথার সঙ্গে গাল গরম হয়ে উঠে। সবুজ বমি। পেট ও বুকে কাপড় সহ্য হয় না, রাত্রে কাপড় ফেলে দেয়। মধ্যরাত্রি হতে সকাল পর্য্যন্ত বৃদ্ধি। গর্ভাবস্থায় কাশতে কাশতে বুকে প্রস্রাব হয়ে যায়। অধিক চেঁচানোর জন্য স্বরভঙ্গ। আঘাত লাগার পর পড়ে যাবার পর মুখ দিয়ে রক্ত উঠা। বাতরোগ, একটির পর একটি সন্ধি আক্রান্ত হয়। দুধ ও মাংসে অরুচি। ঘাম বসে রোগ। হার্ণিয়া প্রদাহযুক্ত। মূত্রনলী দিয়ে রক্তস্রাব লাল টকটকে। সূৰ্য্যতাপ লাগার কুফল। মাথায় ঠান্ডা পানি দিলে মাথাধরা উপশম হয়। কানে যন্ত্রণা, বেলেডোনায় ফল না হলে। ডিফরিথরিয়ার প্রথম অবস্থা। বমিতে খাদ্যবস্তু গোটা গোটা থাকে। নিউমোনিয়া, কাশলে তাজা রক্ত উঠে। বেলা ১টায় শীত করে ও জ্বর আসে।
মন।-কারণ যাহাই হোক না কেন, মস্তিষ্কের রক্তাধিক্যের জন্য রোগী উন্মত্তের মত প্রলাপ বকে। রোগী অত্যন্ত বাচাল, সে অনাবশ্যক কথা বলে মানুষকে উত্যক্ত করে। কোন কোন রোগীর নিদ্রার অভাব দেখা যায় আবার কারও নিদ্রাধিক্যও থাকে। তার মস্তিষ্ক অত্যন্ত দুর্বল।
নিউমোনিয়া। -প্রথম অবস্থায়। শক্ত শুষ্ক কাশি, বুক টাটিয়ে থাকে। কাশির সঙ্গে তাজা রক্ত উঠে। রাত্রে কাশি কম থাকে। গ্রীষ্মের গরম দিনে হঠাৎ ঘাম বন্ধ হয়ে নিউমোনিয়া। exudation আরম্ভ হওয়ার আগে। পিপাসা কম। কাশলে রক্ত উঠে বা লাল সফেন মিউকাস।
তুলনীয়। অ্যাকোনাইট – প্রথম প্রাদাহিক অবস্থায় বিশেষ উপযোগী এবং ফেরাম-ফসের তুল্য ঔষধ। শুষ্ক ঠান্ডা হতে রোগের উৎপত্তি। জ্বর, অস্থিরতা, পিপাসা, মৃত্যুভয় এটার প্রধান প্রয়োগ লক্ষণ। বুকে খোঁচামারা বেদনা। বেলেডোনা – মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়, প্রবল মাথাধরা, দুটি রগ এবং ক্যারোটিড ধমনী দপদপ করে, প্রবল জ্বর, সারা মুখমন্ডল, ফুসফুসে চাপবোধ, শুষ্ক আক্ষেপিক কাশি; রাতে বৃদ্ধি। ভিরেট্রাম-ভিরিডি-উচ্চ গাত্রতাপবিশিষ্ট প্রবল জ্বর। ফুসফুসে রক্তসঞ্চয়, নিঃশ্বাসে কষ্ট। ব্রাইওনিয়া – প্রায়ই অ্যাকোনাইট, ফেরাম-ফস, বেলেডোনার পরে ব্যবহৃত হয়। পূর্বাপেক্ষা কাশি কিছু কম কষ্টকর এবং সরল, কিন্তু বুকে ছুঁচ ফোটান ব্যথা, কাশবার সময়ে রোগী হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে। বেদনার দিকে চেপে শুইলে রোগী আরাম পায়।
মেহ।-প্রথম অবস্থায় জ্বালা। ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব।
শিরঃরোগ।– মাথায় রক্তের অতিরিক্ত চাপবশতঃ মাথা দপদপ করে, মাথায় যন্ত্রণা। সূর্য্যের উত্তাপ লাগানর মন্দ ফলের জন্য অতিশয় শিরঃরোগ হলে নেট্রাম-মিউর ও গ্লোনইনের মত ফেরাম কাজ করে। মাথায় এত তীব্র যন্ত্রণা হতে থাকে যে মস্তকের সম্মুখের দিকে অতিরিক্ত রক্তসঞ্চয় হওয়ার জন্য নাক দিয়ে রক্ত পড়ে, নাক হতে রক্ত পড়লে মাথার যন্ত্রণার উপশম। ফেরাম-ফস বালকদের শিরঃরোগে মূল্যবান ঔষধ। বালকগণ রৌদ্রের ভিতর ছুটাছুটি করে শিরঃরোগ দ্বারা যখন আক্রান্ত হয়, তখন এটা অ্যান্টিম-ক্রুড ও ব্রাইওনিয়ার মত কাজ করে। ঋতুমতীর যখন অত্যধিক স্রাব হয়ে মস্তক অত্যন্ত ভারী ও বেদনাযুক্ত হয় তখন এটা দ্বারা উপকার হয়।
তুলনীয়।– বেলেডোনা-রৌদ্রভোগের পরে অথবা ঠান্ডা লাগিয়ে, মাথাধরায়, ঠান্ডা একেবারেই সহ্য হয় না, চুল কাটিলেই সর্দি লাগে, মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়, মুখমন্ডল আরক্ত, গ্রীবা ধমনীর (ক্যারোটিড আর্টারীর) রক্তাধিক্য ও দপদপানি। গ্লোনইন-এটা সর্দিগর্মির একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। ফলতঃ মস্তিষ্কের উপর এটার ক্রিয়া সমধিক। অতিরিক্ত রৌদ্রভোগ করে অথবা অন্য কোন উত্তাপজনিত মাথাধরা। ঘাড় হতে বেদনা আরম্ভ হয়ে সমস্ত মাথায় প্রসারিত হয় এবং দপদপানি তীব্রভাবে প্রকাশ পায় গলদেশের ধমনীতে। নেট্রাম-কার্ব-রৌদ্রভোগে অথবা গ্যাসের আলোকে মাথাধরার উৎপত্তি এবং বৃদ্ধি, সর্দিগর্মির জন্য মাথাধরা এবং মাথাঘোরা। ভিরেট্রাম-ভিরিডি মাথাধরা এবং মাথাঘোরা, বমনেচ্ছা, মস্তকে অত্যধিক রক্তসঞ্চয়। চোখ দুটি রক্তবর্ণ। রগ দুটি দপদপ করে।
সন্ন্যাস বা অ্যাপোপ্লেক্সি রোগের প্রথমাবস্থায় যদি মুখমন্ডলের আরক্ততা, গভস্থলের ধমনীদ্বয়ের দপদপানি থাকে ও মাথার শিরাসকল ফুলে উঠে তখন ফেরাম-ফস অতি প্রয়োজনীয়। এই অবস্থায় বেলেডোনা একটি ফলপ্রদ ঔষধ। প্রাদাহিক রোগে ফেরামের (ক) প্রদাহিক স্থান লালবর্ণ, (খ) উক্ত স্থান উত্তপ্ত এবং (গ) দপদপানিযুক্ত থাকবে।
চোখের অসুখ। চোখ-প্রদাহের প্রথম অবস্থায় যখন চোখ লালবর্ণ ও বেদনাযুক্ত হয় অর্থাৎ চোখপ্রদাহ হয়ে পুঁজ জন্মিবার আগে ব্যবহার্য্য। হাম, বসন্ত বা অন্য কোন উদ্ভেদজাতীয় রোগে চোখ-প্রদাহে রোগী বলে যে তার চোখের ভিতর বালুকণার মত পদার্থ রয়েছে সেজন্য আলো সহ্য করতে পারে না। লক্ষণানুসারে অ্যাকোনাইট ও বেলেডোনা এমন অবস্থায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সর্দি।-ফেরাম-ফসের সর্দিপ্রবণতা খুব, যাদের সামান্য কারণেই সর্দি হয়ে নাক হহতে পানির মত স্রাব বের হয় ও অনবরত হাঁচি হয় তাদের পক্ষে এটা ফলপ্রদ। কারণ যাহাই হোক না কেন হঠাৎ যদি কারও নাক হতে প্রচুর রক্তপাত হতে থাকে তবে ফেরাম উপযোগী। তুলনীয়। অ্যাকোনাইট – ঠান্ডা হাওয়া লাগিয়ে সর্দি, হাঁচি, অল্পাধিক জ্বর, পিপাসা, অস্থিরতা, পানির মত স্রাব, গলা চুলকাইয়া শুষ্ক থকথকে কাশি। অ্যালিয়াম-সিপা-চোখ হতে প্রচুর পরিমাণ স্রাব এবং নাক হতে জ্বালা ও হাজাকর স্রাব। প্রচুর অশ্রুস্রাব। ঘন ঘন হাঁচি। বেলেডোনা-মাথা গরম, চোখ-মুখ লাল, মাথাধরা, শুষ্ক কাশি রাতে শয়নের পরে বৃদ্ধি। ব্রাইওনিয়া শুষ্ক সর্দি। ঠোট শুষ্ক ও ফাটা ফাটা, পিপাসা, মাথাধরা, শুষ্ক কাশি।
প্রানী দত্তরোগ।-মাঢ়ীর ফোঁড়ার প্রথমাবস্থায়, দাঁতের মাঢ়ী ও দন্তমূলের প্রদাহ ও দন্তশূল। আক্রান্ত স্থানে এটার নিম্নশক্তি চূর্ণ লাগালে বা লোশন দ্বারা কুল্লী করলে তৎক্ষণাৎ রক্তপড়া বন্ধ হয়। শিশুদের দাঁত উঠবার সময় জ্বর, আরক্ততা প্রভৃতি ক্ষেত্রেও ফেরাম-ফস উপযোগী ঔষধ। তুলনীয়।-মার্কসল-দাঁতের মাঢ়ী ফোলে, সেটাতে ক্ষত হয় ও রক্ত পড়ে। দাঁত সরেআসে আলগা হয়, মুখে দুর্গন্ধ এবং লালা নিঃসরণ, রাতে এবং বিছানার গরমে বৃদ্ধি। হেক্লা-লাভা – মাঢ়ীতে ক্ষত এবং নালী-ক্ষত, মাঢ়ী ফোলা এবং সেটাতে নানাপ্রকারের বেদনা। ক্রিয়োজোট-দাঁতে পোঁকা লাগে (বিশেষতঃ শিশুদের দুধের দাঁতে), দাঁত খেয়ে যায় এবং ভিতরে গর্ভ হয়। এটার মূল – অরিষ্ট বাহ্য প্রয়োগ চলে। সিষ্টাস-মার্ক-সলের মত দাঁতের মাঢ়ী ফোলে, সেটাতে ক্ষত হয়, মুখে এবং নিঃশ্বাসে পচা দুর্গন্ধ। প্ল্যান্টেগো -মূল-অরিষ্ট, বাহ্য প্রয়োগে দাঁতের নানাপ্রকারের বেদনা ও উপসর্গ দূর হয়।
টন্সিল ও গলক্ষত।-টন্সিল প্রদাহের প্রথমাবস্থায় যদি জ্বর হয়, মুখের আরক্ততা, দ্রুত নাড়ী, টন্সিল লালবর্ণের থাকে তবে ফেরাম-ফস উত্তম কাজ করে। ডাঃ সুসলার বলেন, টন্সিল আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত ব্যাথান্বিত হলে ফেরাম-ফসের কুল্লী দ্বারা অতি শীঘ্র ফল পাওয়া যায়। এই অবস্থায় এবং এমন লক্ষণে বেলেডোনা বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
পাকযন্ত্র ও উদরের রোগ।-ফেরাম-ফস রোগী পালসেটিলা ও ইপিকাকের মত অজীর্ণ ভুক্তদ্রব্য বমন করে। রোগীর ক্ষুধাও প্রবল, সেই সাথে পিপাসাও অত্যধিক। পাকযন্ত্রের উত্তেজনা প্রভৃতি কারণ বশতঃ কখনও রোগীর রক্তবমি হয়, বমির সাথে মাথার যন্ত্রণা ও গা-বমি-বমি। রোগীর জিহবা পরিষ্কার। সাধারণতঃ ফেরাম-ফসের রোগীর হঠাৎ ঠান্ডা লেগে উদরাময় হয়। গ্রীষ্মকালীন উদরাময়, সেই সাথে বমি-বমি ভাব।
প্রদাহ ও স্ফোটক।– সর্বজাতীয় প্রদাহ ও প্রদাহযুক্ত রোগের প্রথম অবস্থায় ফেরামের কথা চিন্তা করা কর্তব্য। রোগের প্রথম অবস্থায় যখন রোগী শীত-শীত বোধ করে, তার অত্যন্ত পানিপিপাসা ও অস্থিরতা থাকে তখন এটাই ঔষধ। তুলনীয়।– অ্যাকোনাইট, বেলেডোনা।
আঘাত।– কোন স্থান হতে পড়ে গেলে, আঘাত লাগলে, মচকাইয়া গেলে বা কাটিয়া গেলে এই ঔষধ আর্ণিকা ও ক্যালেন্ডুলার মত কাজ করে। কোন স্থানে কাটিয়া গেলে এই ঔষধের ১x বা ৩x চূর্ণ কাটাস্থানে ছড়িয়ে বাঁধিয়া দিবে। এতে রক্ত সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে। মচকান স্থানে ফেরামের লোশন তৈরী করে ঘন ঘন প্রয়োগ করা কর্তব্য। কোন স্থান পুড়ে গেলে এই ঔষধের মলম (ভেসিলিন সহযোগে) অথবা জলপাই বা মসিনার তৈলের সাথে ফেরাম-ফসের ৩x চূর্ণ মিশ্রিত করে দগ্ধস্থানে দিলে মন্ত্রের মত ফল পাওয়া যায়। অগ্নিদগ্ধে তুলনীয়। -প্রথমাবস্থায় ক্যান্থারিস এবং আর্টিকা-ইউরেন্স উভয়ই আভ্যন্তরিক এবং বাহ্যিক তুল্য উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাহ্য প্রয়োগ সম্বন্ধে ডাঃ ক্লার্কের মত এই যে-ফোস্কা পড়বার আগে আর্টিকা – ইউরেন্স ও ১ ভাগ, ৪ ভাগ বিশুদ্ধ পানির সঙ্গে প্রয়োগ করা সঙ্গত, কিন্তু ফোস্কা পড়লে ক্যান্থারিস e একভাগ, দশ ভাগ পানির সঙ্গে প্রয়োগ করবেন। ফোস্কা এবং অত্যধিক জ্বালায় ক্যান্থারিস ৬ বা ৩০ সেবন করতে দিবেন, তবে ফোস্কা পড়বার পরেও আর্টিকার বাহ্য লোশন দেওয়া যেতে পারে। অপেক্ষাকৃত কঠিন অবস্থায় যখন জ্বালা-যন্ত্রণা ও ফোস্কা বেশী হয়, সেইসঙ্গে অস্থিরতা প্রকাশ পায় তখন কষ্টিকাম উপযুক্ত ঔষধ হবে। এটার ৩০শ শক্তি দুই-এক মাত্রা প্রয়োগেই জ্বালা-যন্ত্রণা কমে আসিবে।
জ্বর। সর্বজাতীয় জ্বরের প্রথম অবস্থায় উপযোগী। এটার সাথে তুলনীয় অ্যাকোনাইট- অস্থিরতা, কাতরতা, পিপাসা ও মৃত্যুভয় আছে। ফেরামের সেইরূপ কাতরতা ও মৃত্যুভয় নেই। জেনসের রোগীর ঘুম ঘুম ভাব; ফেরামের রোগীর ঐরূপ ঘুম ঘুম ভাব নেই। এপিস রোগীর সংজ্ঞাহীনতার সাথে গাত্রতাপ ও ছটফটানি থাকে, কিন্তু ফেরামের ঐরূপ ছটফটানি থাকে না।
শ্বাসযন্ত্রের রোগ।-স্বরযন্ত্রের অতিরিক্ত চালনা হেতু স্বরভঙ্গ (সেলিনিয়াম)। পুরার প্রদাহ হয়ে সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা (কেলি-বাই, র্যানান-বাল্বো, রিউমেক্স)। ব্রঙ্কাইটিস, ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়া, নিউমোনিয়া ও প্লুরিসি রোগের প্রথমাবস্থা। শ্বাস-প্রশ্বাসে অতিশয় কষ্ট হলে এই ঔষধের ৩x চূর্ণ ঘন ঘন দিলে শীঘ্র ফল পাওয়া যায়। আক্ষেপিক কাশির সাথে রোগীর প্রস্রাব ছিটকাইয়া পড়ে। হুপিং-কাশিতেও ফেরাম ব্যবহার করা চলে, যদি কাশির সাথে শিশুর উঁকি উঠে ও বমন হয়। আঘাতাদি লেগে বা পড়ে গিয়া যদি বুকে চোট লাগে ও কাশির সাথে রক্ত নিঃসৃত হতে থাকে তবে ফেরাম উপযোগী। এরূপ অবস্থায় আর্সেনিক বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ক্ষয়রোগ।-ক্ষয়রোগের সম্ভাবনায় ঔষধটির যথেষ্ট উপযোগিতা আছে। রোগীর শরীর বিশেষ পরিপুষ্ট হয় না, সে সামান্য ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। একটু ঠান্ডা লাগলেই সর্দি-কাশি দেখা দেয়। রোগীর বেশ ক্ষুধা আছে, খাওয়া-দাওয়াও করে, অথচ শরীর শুকাতে থাকে, গয়ার শক্তি লোপ পেতে থাকে। ভুক্তদ্রব্যে হজম হয় না, প্রায়ই অম্ললক্ষণ দেখা দেয়, সামান্য উত্তেজনায় হৃৎকম্প উপস্থিত হয়। নিশাঘাম ও রোগীর কাশির সাথে রক্ত পড়তে থাকে-এরূপ অবস্থায় ফেরাম- ফসের উচ্চশক্তি বিশেষ কাজ করে।
তুলনীয়।– আর্স-আয়োড, ফুসফুস গহ্বরে ফোঁড়া হয়, পুঁজ জ্বর, প্রচুর পরিমাণ পুঁজ মিশ্রিত গয়ার উঠে, রাত্রিকালীন ঘাম, অভিসার, রোগীর শীঘ্র শীঘ্র বলক্ষয় হয়, অ্যাকালাইফা-ইন্ডিকা সকালে তরল লাল রক্ত এবং বৈকালে চাপ চাপ রক্ত উঠে, বক্ষঃস্থলে বেদনা স্যালভিয়া-সদাই গলা খুসখুস করে কাশি হয়, সবসময়ের জন্য জ্বর থাকে। ল্যাকন্যান্থিস-রাত্রিকালীন ঘাম, কষ্টদায়ক কাশি, শরীর ক্রমেই শুকাতে থাকে এবং সবসময়ের জন্য জ্বর থাকে, আয়োডাম-গয়ারে রক্ত, শুষ্ক কাশি, রোগী গরম সহ্য করতে পারে না, অত্যন্ত ক্ষুধা। ক্যাল্কেরিয়া-হাইপোফস- অতিরিক্ত ঘাম, রক্তহীনতা, মুখ দিয়ে রক্ত উঠে। বুকে বেদনা সহ কাশি, অতিসার। ষ্ট্যানাম- আয়োড-যক্ষ্মারোগের শ্রেষ্ঠ ঔষধ বলে কথিত। ষ্ট্যানামের লক্ষণ, অথচ তাতে উপকার হয় না, এমন অবস্থায় ব্যবহৃত হয় (ষ্ট্যানাম-বক্ষঃস্থলে অত্যন্ত দুর্বলতা। গয়ারের আস্বাদ নোনতা বা মিষ্ট, প্রচুর পরিমাণ গয়ার উঠে, রাত্রিকালীন ঘাম)। ব্যাসিলিনাম বা টিউবার্কিউলিনাম-বোভিনাম- রোগের সর্বাবস্থাতেই ব্যবহৃত হয়। হাম, বসন্ত, প্লেগ প্রভৃতি প্রথমাবস্থায়ও এটা ফলপ্রদ।
গর্ভাবস্থা ও প্রসবান্তিক রোগ।-গর্ভিণীর সকালে গা-বমি-বমি ও বমন, বমনে ভুক্তদ্রব্য সমস্তই উঠে যায়। কখনও আহার করার সঙ্গে সঙ্গে তা বমি হয়ে যায়। প্রসব হওয়ার পর ভ্যাঁদাল ব্যথায় সেটা উত্তম ঔষধ।
স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের রোগ।-জরায়ু ও যোনিদ্বারের প্রদাহের সাথে জ্বর ও বেদনা থাকলে ফেরাম-ফস ফলপ্রদ। বাধক বেদনার সাথে অনবরত প্রস্রাব করার ইচ্ছা, জরায়ুতে রক্তাধিক্য হয়ে আক্ষেপিক বেদনার সাথে রোগিণীর মুখ-চোখ লালবর্ণ। ঋতুস্রাব প্রতি তিন সপ্তাহ অন্তর হয়, ঋতুর সময় পেটে ও কোমরে ভয়ানক বেদনা, ঋতুস্রাব অত্যধিক, সেই সাথে মাথার যন্ত্রণা।
মূত্র। – প্রস্রাবদ্বারের মুখ বন্ধকারী স্ফিংচার পেশীর শিথিলতার জন্য প্রস্রাব ধারণে অসমর্থ, সেজন্য রোগীর অনারত প্রস্রাব করার আকাঙ্ক্ষা। সিষ্টাইটিস রোগের প্রথম অবস্থায় প্রস্রাব করতে জ্বালাবোধ। প্রত্যেকবার কাশির সময় মূত্র ছিটকাইয়া বের হয়। শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব করা, এমন কি অনেক স্ত্রীলোক শিশুদের মত বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলে, মূত্রনলীর পেশীর শৈথিল্য হেতু এরূপ ঘটে। প্রবল জ্বরের সময় যখন শিশুদের প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায় তখন সঙ্গে সঙ্গে ফেরাম-ফস দিলে উপকার হয়। আমাশয় অধিক রক্ত, আমের সাথে রক্ত, কিন্তু কোথ অল্প থাকে সদ্যোজাত শিশুর প্রস্রাব বন্ধে -অ্যাকোনাইট। রাতে বিছানায় প্রস্রাব; সদাই প্রস্রাব করার ইচ্ছা; পানির মত অধিক পরিমাণ প্রস্রাব হলেও বেগ দূর হয় না। ইকুইসিটাম। রক্তামাশয়ে রক্ত অধিক এবং কোথ বেশী-মার্ক-কর।
হ্রাস। ঠান্ডায়, ঠান্ডা পানীয় সেবনে; ঠান্ডা পানি লাগালে; বিশ্রামে।
শক্তি।-ডাঃ সুসলার ৩x, ৬x শক্তি প্রয়োগ করতে বলেন। ২০০ ও উর্ধ্বতর শক্তিও ব্যবহাৰ্য্য।