কোকা (Coca)

পরিচয়।– -এটার অপর নাম এরিথ্রিক্সিলন-কোকা। এটার ক্ষারকে “কোকেন” বলা হয়। কোকেন স্পর্শজ্ঞান-লোপকারী ঔষধরূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ব্যবহারস্থল।-বৃদ্ধগণ সামান্য পরিশ্রম করার ফলে অস্থির হয়ে পড়ে, অপরিমিত পরিশ্রমাদির পর বুক ধড়ফড়ানি, শ্বাসস্বল্পতা, অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা প্রভৃতি; ধূমপান ও মদ্যাদি পানের জন্য নানাবিধ রোগ এবং পর্বত আরোহণ অথবা সিঁড়িতে উঠা-নামা করার ফলে রোগী ক্লান্ত হয়ে পড়লে এই ঔষধ তাকে নবজীবন দান করে। এটা সাহিত্যসেবী ও যুবকদের স্নায়বিক দৌর্বল্যের উত্তম ঔষধ (কেলি ফস)।

ক্রিয়াস্থল। -যাঁরা অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করে দিন দিন ক্ষীণ হচ্ছেন তাঁদের পক্ষে উপযোগী। হৃৎপিন্ডের হীনবল এবং হৃৎস্পন্দন এটা সেবনে দূর হয়। শ্বাসকষ্ট কমে, হজমশক্তি বাড়ে, অজীর্ণতার জন্য পেটে বায়ু জন্মিলেও এটা সেবনে উপশম হয়ে থাকে। আক্ষেপিক হাঁপানি শ্বাসকষ্টে এটা উপকারী। কোন কোন প্রকার অনিদ্রাতেও এটা ব্যবহৃত হয়, যেমন রোগীর ঘুম পায়, বিছানায় যায়, কিন্তু স্থির হয়ে শুইতে পারে না।

প্রদর্শক লক্ষণ।-বহুমূত্ররোগ ও সেইসঙ্গে ধ্বজভঙ্গ। ক্ষুধা থাকে না, মিষ্টি খেতে চায়। বুক ধড়ফড় করে ও শ্বাসকষ্ট। পোকাধরা দাঁত। বিষণ্ণ ভাব। পাহাড়ে চড়ার জন্য কষ্ট। কানে শব্দ। জিব ফাটা ফাটা। স্বরভঙ্গ, কথা বলবার পর বেশী। ফুসফুস হতে রক্ত পড়ে। সিঁড়িতে চড়ার সময় কষ্টের বৃদ্ধি। হাত-পা দুর্বল। চলবার সময় বা বসলে অর্শের যন্ত্রণা। ঘুম ভাঙ্গিবার পর মুখের ভিতর শুষ্ক বোধ। প্রথমে ডান নাক দিয়ে পরে বাঘ নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। মাথা ধরে ও সেইসঙ্গে শীত করে। মন।— রোগী স্নায়বিক অবসাদের জন্য সদাই বিমর্ষ, লজ্জিত ও ভীত। নির্জন স্থান ও অন্ধকারপূর্ণ ঘরই পছন্দ করে।

কাশি। -(রক্তোৎকাস)। -কোকা বৃদ্ধ মল্লবীরদের শ্বাসস্বল্পতা ও হাঁপানি রোগে কাজ করে। কাশির সাথে রক্তমিশ্রিত গয়ার উঠে এবং সেই সঙ্গে বুকের ভিতর চাপবোধ করে (ফেরাম- অ্যাসেটিকাম)। তুলনীয়। – অ্যাকোনাইট – খুকখুকে কাশির সাথে বার বার রক্ত উঠে। ফন্চোরাস বার বার অল্প পরিমাণে রক্ত উঠলে। অ্যাকালিফা-ইন্ডিকা – শুষ্ক কাশির সাথে রক্তমিশ্রিত গয়ার। মিলিফোলিয়াম – সামান্য কাশির পরই টকটকে লালবর্ণের রক্ত। ফেরাম- অ্যাসেটিক-ষ্টার্ণামের (বৃক্কাস্থির) পশ্চাতে সুড়সুড়ি এবং ফেনা ফেনা উজ্জ্বল রক্ত। হ্যামামেলিস- কাশির সাথে কাল জমাট রক্ত। ইপিকাক – ষ্টার্ণামের পশ্চাতে পিট পিট করে শব্দ হয় ও গা-বমি বমি করে।

বধিরতা।– কানের ভিতর নানা রর শব্দ হয় ও কানে কম শুনতে পায়। ৩x শক্তি কিছুদিন প্রয়োগ করলে উপকার সম্ভাবনা।

অস্থিরতা। -এতে অস্থিরতাও ‘মাছে-অস্থিরতা স্নায়বিকই বেশী। সে না পায় শুয়ে শান্তি, না পায় বসে শান্তি, ঘুমাবার চেষ্টা করলে মূৰ্চ্ছার ভাব হয়। ঐ জন্য রোগী অন্ধকার ঘরের ভিতর চুপটি করে বসে থাকে। বার বার ঘুম ভাঙ্গে, নানাপ্রকার খারাপ স্বপ্ন দেখে ও ঘুমের ভিতর প্রচুর ঘাম। শিশুদের দাঁত উঠার সময় অনিদ্রা ও অস্থিরতা।

অজীর্ণ।-চা ও কফি পান করার মন্দফলের জন্য অজীর্ণ বা অগ্নিমান্দ্য হয়ে হৃৎস্পন্দন। অহিফেনের মন্দফল। সদৃশ। -এবিস নেইগ্রা -অতিরিক্ত তামাক এবং চা পান হেতু অজীর্ণ। যা খায়, মনে হয় যেন পেটে গোলার মত হয়ে জড়িয়ে থাকে। চায়না-অতিরিক্ত চা পানের মন্দফলে ব্যবহৃত হয়। ফল খেয়ে অজীর্ণ, সেটা আদৌ সহ্য হয় না। নাক্স ভমিকা-অতিরিক্ত মদ্যপান, মাদকদ্রব্য সেবন, রাত্রিজাগরণ ইত্যাদি হতে অজীর্ণ রোগের উৎপত্তি।

শিরোঘূর্ণন।– স্নায়বিক মাথার রোগ। মাথাঘুরে, হাঁটবার সময় টলে পড়বার উপক্রম হয় এবং উপায়ান্তর না দেখে ইচ্ছার বিরুদ্ধে দ্রুত হাঁটতে থাকে।

বৃদ্ধি। সিঁড়িতে উঠলে; পাহাড়ে উঠলে; ঠান্ডা বায়ুতে; চললে।

হ্রাস।- মদ সেবনে; ঘোড়ায় চড়লে; দ্রুত ভ্রমণে।

শক্তি। মূল- অরিষ্ট, ৩x, ৬, ৩০।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!