ক্লিমেটিস্ইরেক্টা (Clematis Erecta)

পরিচয়।-এটার অপর নাম ভার্জিনস-বাউয়ার।

ক্রিয়াস্থল। -প্রধান ক্রিয়া মূত্রযন্ত্রের উপর। স্ট্রিকচারের পূর্ববর্ত্তী অবস্থার ঔষধ।

রুদ্ধ-প্রমেহ জন্য যতপ্রকার রোগ হতে পারে, তার প্রায় সবই ক্লিমেটিস দ্বারা আরোগ্য লাভ করে। পালসেটিলা প্রয়োগে অবরুদ্ধ স্রাব পুনরায় ফিরে আসিবার পর ক্লিমেটিস প্রয়োগ করলে রোগ নির্মূল হয়। প্রমেহ-স্রাব অবরুদ্ধ হয়ে অন্ডকোষ-প্রদাহ হলে, বিশেষতঃ ডান অন্ডকোষের প্রদাহে কাজ করে।

প্রদর্শক লক্ষণ।– মূত্রাধারটি অত্যন্ত সরু, ট্রিকচারের পূর্ববর্ত্তী অবস্থা। অন্ডকোষটি ফুলে পাথরের মত শক্ত হয়ে উঠে। মাথার পিছনদিকে ইরান্সন, রসপূর্ণ ও সেটা চুলকায়, শুকিয়ে মামড়ি পড়ে ও ছাল উঠে। রোগ শুক্লপক্ষে বাড়ে এবং কৃষ্ণপক্ষে কমে বা তদৃবিপরীত। প্রস্রাব পুঁজের মত। প্রস্রাব হতে হতে হঠাৎ বন্ধ হয়, আবার হয়, আবার বন্ধ হয়। ফোঁটা ফোঁটা করে প্রস্রাব হয়। মনে হয় প্রস্রাবনলী সরু হয়েছে। প্রস্রাবনলীর সঙ্কোচন। গণোরিয়া বা মেহ চাপা পড়ে অন্য রোগ হলে। ঠান্ডা পানিতে ধোয়া পছন্দ করে না, কিন্তু দন্তশূলে ঠান্ডা পানি মুখে রাখলে কমে। সঙ্গমকালে শুক্র বের হয় হওয়ার সময় পুরুষাঙ্গের মুখে (penis) জ্বালা। সাব-ম্যাক্সিলারী – গ্ল্যান্ড ফুলে উঠে, শক্ত হয়, দপদপ করে, ছুঁইলে কষ্ট বাড়ে। আইরাইটিস, ঠান্ডা সহ্য হয় না। স্তনে টিউমার, প্রদাহ। গ্ল্যান্ডগুলি ফোলা, গরম, বেদনাপূর্ণ, বিশেষতঃ কুঁচকির গ্ল্যান্ড। গণোরিয়া বা সিফিলিস (পারা, গর্মি)। নিউরালজিক বেদনা। ঘাম হলে কম হয়। অত্যন্ত ঘুম ঘুম ভাব।

মন। ক্লিমেটিস রোগীর চিন্তাশক্তি প্রায়ই রহিত হয়। রোগী একাকী থাকতে ভয় পায়, এমন কি অন্তরঙ্গ বন্ধুর সাথে একাকী দেখা করতে চায় না (কেলি-ফস, সিপিয়া, ষ্ট্যানাম, থুজা)। তার মন অত্যন্ত বিষাদাচ্ছন্ন এবং সদাই বিপদের আশঙ্কা করে।

বাতরোগ। – ঘাড়ে ও পিঠে চাপ বোধ, টাটানি ব্যথা। বাহু ও হাতের মাংসপেশীগুলতে যন্ত্রণা। হাতে বাত। আঙ্গুলের (হাতের) সন্ধিগুলতে বাতের জন্য সুপারীর মত শক্ত শক্ত হয়ে ফোলা। পায়ে বাত পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে ঘাম, ঠান্ডায় বাড়ে। শীতকালে বৃদ্ধি। চাঁদ বড় হতে থাকলে কষ্ট বাড়ে। বিয়ার মদ্য খেতে চায় না। ধূমপান করলে গা-বমি-বমি করে। মুখ হতে লালা পড়ে। প্রস্রাবে শ্লেষ্মা থাকে, পুঁজ থাকে না।

প্রমেহ।-পুরাতন প্রমেহ রোগ। বার বার রোগ দেখা দেয়, কিন্তু খুব কম প্রস্রাব বের হয় এবং প্রস্রাব আরম্ভ হয়ে থেমে থেমে বের হতে থাকে ও প্রস্রাব করতে করতে বন্ধ হয়ে যায়, অত্যন্ত জ্বালা, প্রস্রাবে পুঁজের মত তলানি পড়ে। প্রস্রাব করার সময় মূত্রনলীর গোড়া হতে লিঙ্গমুন্ড পৰ্য্যন্ত অতিশয় বেদনা। মূত্রনলীর সঙ্কোচন (stricture) জন্য অতি কষ্টে ফোঁটা ফোঁটা মূত্রত্যাগ লক্ষণ।

তুলনীয়।– ক্যান্থারিস – তরুণ অবস্থায়, প্রস্রাবের সময়ে এবং পরে অত্যন্ত জ্বালা, বেগ ও কোঁথপাড়া, ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব এবং কখনও রক্তস্রাব। কোপেবা -এটার লক্ষণ প্রায় ক্যান্থারিসের মত। তরুণ অবস্থায় জ্বালা যন্ত্রণা, ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব। ক্যাপ্সিকাম -পুরাতন অবস্থায় ব্যবহৃত হয়। দুই-এক ফোঁটা চটচটে স্রাব, মূত্রনলীর মুখে লেগে থাকে। প্রস্রাবে জ্বালা। নেট্রাম মিউর – পুরাতন অবস্থায় উপকারী। প্রস্রাবের পরে টাটানি এবং কাটাছেঁড়ার মত বেদনা। থুজা -সাধারণতঃ প্রথম অবস্থাতেই ব্যবহৃত হয়। জ্বালা, বেগ এবং ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব। কখনও বা রক্তপ্রস্রাব হয়।

অন্ডকোষপ্রদাহ।-প্রমেহস্রাব বন্ধ হয়ে কোষ-প্রদাহ ও ব্যথাযুক্ত। অন্ডকোষের ফোলার সাথে রেতঃরজ্জুতে বেদনা। অন্ডকোষের বেদনা যখন পালসেটিলা প্রয়োগ করার পর কমে যায় এবং রুদ্ধ স্রাব পুনরায় প্রকাশিত হয়, কিন্তু শক্তভাব ও ফুলা হতে যায় তখন এটা উপযোগী। অন্ডকোষ ফোলে এবং পাথরের মত শক্ত হয়। আঘাত জনিত রোগে অধিকতর উপযোগী। তুলনীয়।– রডোডেনড্রন – অন্ডকোষ ফোলে সেটাতে বেদনা; শক্ত হয়। প্রমেহস্রাব বন্ধ হওয়া রোগে উপযোগী। স্পঞ্জিয়া – অন্ডকোষের ফুলা ও বেদনা; সেটা শক্ত হয়। স্পার্মেটিক কর্ডও ফুলে মোটা হয়। সামান্য নড়াচড়াতে বৃদ্ধি। টুসিলেগো – প্রমেহস্রাব বন্ধ হয়ে অন্ডকোষ আক্রান্ত হলে ব্যবহৃত হয়।

স্ত্রীরোগ। রোগিণীর বাম স্তনের ভিতর ক্যান্সার জাতীয় অর্বুদ ((scirrhus), কঠিন আব, আক্রান্ত স্থানের গ্রন্থিগুলতে বা কাঁধ ও বাহুতে বেদনা। বেদনা ঠান্ডা হাওয়ায়, রাত্রিবেলা এবং শুক্লপক্ষের শেষভাগে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। প্রসবের পর স্ত্রীলোকগণের অজ্ঞাতসারে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব।

চোখের অসুখ। -চোখে গরম বোধ, কিন্তু বাতাস সহ্য করতে পারে না। চোখের উপতারা প্রদাহিত হয়, চোখের সম্মুখে কোন বস্তু দুলিতেছে এরূপ অনুভূতি। ডানদিকের আক্রান্ত চোখের ভিতর লাল হয়, চোখ হতে পানি পড়ে, চোখে এত জ্বালা যেন তার চোখের ভিতর আগুন ধরাইয়া দিয়েছে।

চর্মরোগ।-রোগীর মাথার পিছনে এবং ঘাড়ে রসপূর্ণ পীড়কা বের হয়, সেটাতে অত্যন্ত চুলকায়, ক্রমে সেটার উপর চটা পড়ে। চর্মের যাবতীয় উপসর্গ বিছানায় শুইলে, ঠান্ডা পানিতে ধৌত করলে বাড়ে। তুলনীয়।-অ্যান্টিম-ক্রুড ঘাড়ে, মুখে, পিঠে, বুকে এবং হাতে উদ্ভেদ, আঁচিল বা শৃঙ্গের মত, ফোস্কার মত, মাথায় পামা। রাস-টক্স-ঘাড়ে লালবর্ণের উদ্ভেদ, পুঁজ জন্মে এবং মামড়ি পড়ে। সিকিউটা-মস্তকে পুঁজপূর্ণ ফুস্কুড়ি, সেটাতে চামড়ার মত মামড়ি পড়ে। ভায়োলা- ট্রিকলার-মস্তকে, মুখে এবং কানের পিঠে পামা বা একজিমা, সেটা চুলকায় এবং সেটা হতে রস ঝরে। মেজেরিয়াম-পামা বা একজিমা – পুরু হলদে রঙের বা সাদা মামড়ী, ভিতরে হলদে পুঁজ। চুলকানি, রাতে এবং বিছানার গরমে বৃদ্ধি, চুলকাইয়া দিলে জ্বালা করে। ওলিয়েন্ডার-মাথায় এবং কানের পিঠে উদ্ভেদ, সেটা হতে রস ঝরে, চুলকায়, রক্ত পড়ে, সেটার মধ্যে পোকা হয়। ঘাড়ে হাজা-ক্ষত। নিকোলাম-সমস্ত শরীরেই চুলকানি, কিন্তু ঘাড়েই বেশী হয়। অত্যন্ত চুলকানি; চুলকাইতে চুলকাইতে রোগী যেন সেস্থান ছিঁড়ে ফেলে।

দন্তশূল।-পোকায় খাওয়া দাঁতে বেদনা, ঠান্ডা পানি মুখে নিলে উপশম। ক্রিয়োজোট- পোকায় খাওয়া দাঁত। শিশুদের দাঁত উঠতে কষ্ট, দাঁত উঠবার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষয় পেতে শুরু করে। ঠান্ডা হাওয়ায় এবং ঠান্ডা পানিতে বৃদ্ধি। দন্তশূলে বেদনা ঠান্ডা পানিতে বৃদ্ধি। নাক্স ভমিকা, স্ট্যাফিসেগ্রিয়া। খাদ্য বা পানীয় দাঁতে ঠেকিলেই বেদনার বৃদ্ধি-ষ্ট্যাফিসেগ্রিয়া। গরম পানিতে বৃদ্ধি- ক্যামোমিলা, ল্যাকেসিস, পালসেটিলা। ঠান্ডা পানিতে বা ঠান্ডায় উপশম-ক্যামোমিলা, কফিয়া, ম্যাগ-কার্ব, পালসেটিলা। গরমে উপশম – আর্সেনিক, ম্যাগ ফস, নাক্স ভমিকা। ক্লিমেটিস সাইলিসিয়ার পর বিশেষ ফলপ্রদ বা চর্মরোগে পেট্রোলিয়াম সদৃশ।

সম্বন্ধ।-চর্ম্মরোগে-আর্সেনিক, প্রমেহ জনিত অন্ডকোষ-প্রদাহে – পালসেটিলা।

বৃদ্ধি।-স্পর্শে; নড়াচড়ায়; সন্ধ্যায় শুইলে (মাথা দাঁত); চোখ বন্ধ করলে (চোখের কষ্ট); মাথা পিছনদিকে বাঁকাইলে (মাথাধরা); রাত্রিকালে; ধুইলে; ঠান্ডা পানিতে; ঠান্ডা হাওয়ায়; শীতকালে; বিছানার গরমে; শুক্লপক্ষে; চাঁদ বড় হওয়ার সময়; সিঁড়িতে উঠলে; আক্রান্ত পাশে শুইলে।

হ্রাস।-কৃষ্ণপক্ষে, যখন চাঁদ ছোট হতে থাকে।

শক্তি।-৩x, ৬x, ৩০, ২০০ শক্তি ব্যবহার্য্য।

 

 

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!