কার্লসবাদ (Carlsbad)
পরিচয়।– কার্লসবাড ঝর্ণার জল।
ব্যবহারস্থল। -অত্যধিক হীনবল; মুখমন্ডলের আরক্তিমতা, কোষ্ঠবদ্ধ, বহুমূত্র, বাত, নানাবিধ প্রস্রাবের রোগ, যকৃতের রোগ, বমন, দৃষ্টিশক্তি ও পরিপাকযন্ত্রের বিশৃঙ্খলা প্রভৃতি। P।SS 13. প্রদর্শক লক্ষণ।-রোগী সদাই ক্লান্ত ও অবসন্ন। মুখমন্ডল ফ্যাকাসে; হলুদবর্ণ ও উষ্ণ। মাথায় উত্তাপ। ঘামে কাপড় হলদে হয়ে যায়। নাম ভুলে যায়। অন্যমনস্ক। সিঁড়িতে উঠবার সময় মাথার যন্ত্রণা বাড়ে। মাথা ধরা, ঘরের মধ্যে বৃদ্ধি। খোলা বাতাসে হ্রাস। চোখের কাজ করার সময়, বই পড়া বা সেলাই-এর কাজ করার সময় চোখ হতে খুব পানি পড়ে। মুখের উপর মাকড়সার জালের মত অনুভব করে (ব্যারাইটা, গ্রাফাইটিস, বোরাক্স)। ঋতু বন্ধ থাকার জন্য নাক হতে রক্তস্রাব। দাঁত ব্যথা, ঠান্ডা ও গরমে বৃদ্ধি। প্রস্রাব সরু ধারায় বের হয়। মল নীচের দিকে এসে পুনরায় উপরে উঠে যায় (সাইলিসিয়া, থুজা)। সকল দ্রব্যই লবণাক্ত মনে হয়। একই সময়ে হিক্কা ও হাই উঠা, বিশেষতঃ আহার ও পানের পর। চলবার সময় মলদ্বার হতে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ে। ঘামে কাপড় হলুদবর্ণের দাগ পড়ে। নড়াচড়ায় সকল কষ্টের উপশম। কোনরূপে মানসিক পরিশ্রম করতে চায় না, সেটাতে রোগলক্ষণ বাড়ে।
জ্বর। -পর্যায়ক্রমে শীত, কম্প ও উত্তাপ। বিশেষতঃ মুখমন্ডলে হতে হতে গরম বোধ করে, এইজন্য মুখমন্ডল আরক্তিম ও মাথা গরম অনুভব করে, সময় সময় শরীর কাঁপিয়া উঠে, কপালে ঘাম হয়, সামান্য নড়াচড়ায় শরীরে প্রচুর ঘাম হয়ে কাপড়ে হলুদবর্ণের দাগ লাগে। তখন সকল লক্ষণ এমন কি মাথার যন্ত্রণা পর্য্যন্ত উপশম হয়ে থাকে। শরীরস্থ প্রায় সকল ইন্দ্রিয়ই অত্যস্ত শিথিল। জ্বরের সময় রোগী খুব বেশী কথা বলতে ভালবাসে।
শিরঃরোগ।-শিরোঘূর্ণন, মাথার যন্ত্রণা, মস্তিষ্কের জড়তা। মাথার ভিতরটা যেন ফেটে গেল এমন অনুভব করে; ঐ ভাবটা সন্ধ্যাবেলা শুয়ে থাকলে বেশী হয়, নির্মল বায়ুতে চলাফেরা করলে বা দেহ নাড়লে উপশম। কপালে ও রগে এত ব্যথা হয় যে, শিরাগুলি ফুলে উঠে (বেলেডোনা, স্যাঙ্গিউনেরিয়া, থুজা)। চুল আঁচড়ালেও যন্ত্রণা অনুভব করে।
চোখের অসুখ।-চোখের ভিতর এত জ্বালা হয় যেন তার চোখের ভিতর দিয়ে অগ্নি বহিয়া চলছে (ক্যান্থারিস)। চোখের পাতা শোথের মত ফুলে সকালবেলা চোখ দুইটি জুড়ে যায় (ইউফ্রে, চেলি, কেলি-কাব, ম্যাঙ্গে)। চোখের পাতা অনবরত সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হতে থাকে (ক্রোকাস, প্লাম্বাম, পালস)। রোগী মনে করে যেন চোখের ভিতর কিছু পড়েছে (অ্যাগারি, কোনা, বেল, র্যাটান, সালফার)। সেলাই করার সময় চোখে পানি আসে (পড়বার সময় চোখে পানি আসে-ক্রোকাস, ক্রোটে, গ্র্যাটি, অ্যাসিড-নাই, অ্যাসিড-সাল্ফ)। অক্ষিগোলক বড় মনে হয় (প্যারিস)। দৃষ্টিপথে কাল বিন্দুসকল উড়ে বেড়ায়-কাল্কে, ফেল্যান। যেন ঘোমটার ভিতর হতে দেখছে, ক্রোকাস, হিমাটক্স, ল্যাকে, নেট্রাম মিউর, রাস টক্স, সাইলিসিয়া, সালফার, ভাবাস্কাম।
অজীর্ণ।-অজীর্ণ রোগীর সমস্ত তলপেটে হড়হড় করে, একসঙ্গে হিক্কা ও ঢেঁকুর উঠে। নাভির উপরের দিকে কখন কখনও সঙ্কোচনবৎ বেদনা অনুভব করে, হেট হলে বা বসে পড়লে উপশম বোধ করে। প্রায়ই বুক-জ্বালা করে এবং মুখে পানি উঠে (রোবিনিয়া, অ্যাসিড-সাক্ষ)। পাকস্থলীর ভিতর শূন্য বোধ, অত্যধিক ক্ষুধা।
কোষ্ঠকাঠিন্য। – তিন-চারি দিবস মলত্যাগ হয় না, শক্ত শক্ত গুটলি মল। বড় বড় গুলিসকল মলদ্বারে আটকিয়ে থাকে, মলত্যাগের সময় কোঁথ দিলে নিম্নগামী মল উপরের দিকে উঠে যায়। মলত্যাগের পর মলদ্বারে জ্বালা হয়। সদৃশ। -অ্যালুমেন -কয়েক দিবস ধরে আদৌ মলত্যাগের ইচ্ছা হয় না, মল গোলাকার মার্বেলের মত। মলত্যাগের পরে, মলদ্বারে বেদনা ও চুলকানি। অ্যামন-মিউর দুর্দম মলকাঠিন্য, মলত্যাগের সময়ে মল গুড়াইয়া পড়ে। ম্যাগ্নেসিয়া-মিউর – কঠিন মল-বড় বড় গোলার মত, অথবা ক্ষুদ্র গাঁট গাঁট, ভেড়ার লাদির মত। ওপিয়াম-মলত্যাগের বেগ বা ইচ্ছা আদৌ থাকে না, শক্ত কাল গুটলি মল। ক্যাঙ্কারিলা -শক্ত, গুটলি মল, সেটার গায়ে আম জড়ান থাকে। প্লাম্বাম-শক্ত কাল গুটলি মল মলদ্বারের সঙ্কোচন।
অর্শরোগ। -মলত্যাগ কালে মলান্ত্র বহির্গত হয়। অর্শ হতে রক্তস্রাব হয়। মলত্যাগের পরও ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ে
প্রস্রাব। প্রস্রাব অতি ক্ষীণ স্রোতে আরম্ভ হয় ও প্রস্রাবদ্বারে সামান্য জ্বালা। কোন কোনও রোগীর সমস্ত দিনই বার বার প্রস্রাবের বেগ ও অত্যধিক প্রস্রাব হয়; রাত্রেও বারম্বার প্রস্রাবের বেগ হয়ে থাকে।
স্ত্রীরোগ।– ঋতু শেষ হওয়ার তিন দিন পরে গাঢ় আঠার মত জমাট রক্তস্রাব এবং পরে অত্যধিক প্রদরস্রাব হয়।
চর্মরোগ।– শরীরের স্থানে স্থানে লাল দাগ ও রেখা পড়ে। ঐ সকল স্থানে অত্যধিক চুলকানি ও জ্বালা। রোগীর ঘাম হওয়ার আগে ঐ সকল স্থানে খুব বেশী কুটকুট করে। তুলনীয়। অশ্রুস্রাবাদি লক্ষণে-ব্রাইয়োনিয়া, ওপিয়াম, কার্বো-অ্যানি, লাইকোপোডিয়াম ও ব্যারাইটা কার্ব। অজীর্ণতা লক্ষণে-নাক্স-ভমিকা। নির্মল বায়ুতে বেড়ালে উপশম লক্ষণে- পালসেটিলা, কার্বো-ভেজ ! মাথাব্যথা ক্ষেত্রে-বেলেডোনা, গ্লোনইন।
বৃদ্ধি -সকালে; সন্ধ্যায়; খাওয়ার পর; পান করার পর; সিঁড়িতে উঠলে।
হ্রাস -খোলা বাতাসে; নড়াচড়ায়।
শক্তি।–এটার নিম্নক্রমই বেশী ব্যবহৃত হয়, কদাচিৎ ৬, ৩০, ২০০ শক্তি।