কার্ডয়াস-মেরিয়ানাস (Carduus Marianus)

পরিচয়। অন্য নাম সেন্ট মেরিস্-থিল (St. Mary’s Thistle)।

ব্যবহারস্থল। যকৃতের বেদনা সেইসঙ্গে শোথ, অল্প ও সমুজ্জ্বল প্রস্রাব এবং শ্বাসকষ্ট এটার নির্ণায়ক লক্ষণ। ডাঃ মার্সী যকৃৎ রোগে বা যকৃতের রোগজনিত নানাপ্রকার রোগে এটার ১x শক্তি ব্যবহার করতে উপদেশ দেন। মাথা ঘুরানি, মুখে বিস্বাদ, পান্ডুবর্ণ এবং স্বাভাবিক পিত্তলক্ষণ সহ যকৃতে বেদনা লক্ষণে ডাঃ ন্যাশ এই ঔষধ প্রয়োগ করতে বলেন। কার্ডয়াস রোগী সদাই বিমর্ষ, সকল বিষয়েই উদাসীন ও নিস্পৃহ। গর্ভবতী রমণীদের প্রাতঃকালীন বমনে ভাল কাজ করে।

ক্রিয়াস্থল। -যকৃৎ যন্ত্র।

প্রদর্শক লক্ষণ।–লিভার রোগ, লিভার বড় হয়। শীত শীত ভাব। গায়ের কাপড় খোলা যায় না। নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। লিভারের স্থানে টাটানি, বেদনা, শরীর হলদে। লিভারের রোগের জন্য হাত-পা ফোলা। লিভার রোগের সঙ্গে রক্তস্রাব। নাক ও মুখ হতে রক্তস্রাব। বমি এবং বমিতে সবুজ, টক ও তরল দ্রব্য উঠে, পিত্তপাথরী। কোষ্ঠবদ্ধতা, মল শক্ত, কষ্টে বের হয়। ডেলা ডেলা মল। মূল হলদে। বাঁ দিকে উরু-সন্ধিতে বেদনা, হেঁট হলে বেশী হয়। নাক দিয়ে রক্ত পড়ে, তাতে মাথা ঘোরা কম হয়। লিভারের রোগের সঙ্গে ফুসফুসের রোগ। অর্শরোগ, সেইসঙ্গে অম্লরোগ, বায়ুতে পেট ফোলা। প্রস্রাব খুব হলদে, মল খুব হলদে অতিশয় হাইতোলা। আহারের পর কপালে ও পিঠে ঘাম।

বাত। পিঠে টনিয়া ধরার মত ব্যথা। ডেন্টয়েড মাংসপেশীতে যন্ত্রণা। উরুসন্ধিতে বেদনা, তা পা পৰ্য্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সামনে ঝুঁকলে বৃদ্ধি। মুখের স্বাদ তেঁতো। জিহবা সাদা। ঢেঁকুর উঠে তাতে গলা জ্বালা করে। প্রস্রাব হলদে।

লিভার রোগ।-লিভারের স্থানে চাপ দিলে লাগে। লিভারের সূঁচফোটান ব্যথা, টেনে ধরার মত ব্যথা। বামদিকে শুইলে বাড়ে। লিভারের রোগের সঙ্গে হাত-পা ফোলা। শরীর হলদে। মাথাধরা। মুখ তেঁতো। জিহবার মধ্যস্থল সাদা এবং ডগা ও আশ-পাশ লাল। গা-বমি-বমি করে ও বমি হয়। মল ও প্রস্রাব হলদে। ফুসফুস আক্রান্ত হয়। মুখ দিয়ে রক্ত উঠে। ব্রাইয়োনিয়া ঔষধেও যকৃতের স্থানে ছুঁচ ফোটান এবং টেনে ধরার মত বেদনা আছে, রোগীর ডান দিকে চেপে শুইলে আরাম পায়। সূঁচফোটানো বেদনায় কেলি-কার্বও স্মরণীয়, এটার হ্রাসবৃদ্ধি ব্রাইয়োনিয়ায় বিপরীত। চেলিডোনিয়াম – যকৃৎ স্থানে ছুঁচ ফোটানো বেদনা, সামান্য চাপে অনুভবাধিক্য, যকৃৎ বৰ্দ্ধিত, ন্যাবা, ডান কাঁধে বেদনা, পিত্তপাথুরীর জন্য বেদনা। বহ্যে এবং প্রস্রাব, দুই-ই গাঢ় হলদে রঙের। চিয়োন্যান্থাস -র্যকৃত ও প্লীহা উভয়ই বৰ্দ্ধিত, ন্যাবা, কাদার মত রং বিশিষ্ট মল। ম্যাগ্নেসিয়া- মিউর-দুর্দম কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে যকৃতের দোষ, কয়েক দিন ধরে আদৌ মলত্যাগ করে না, ছাগলের নাদীর মত মল। ন্যাবা, দুধ সহ্য হয় না।

ইনফ্লুয়েঞ্জা।-যকৃতের লক্ষণযুক্ত বহুব্যাপক ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ। রোগীর যকৃতের বামদিকে বেদনা, বুকের পাশে সূঁচফোটান বেদনা, অত্যধিক দুর্বলতা। নাক্স ভমিকা, চেলিডোনিয়াম প্রভৃতি বিফলে প্রযোজ্য। ডাঃ হেল্ বলেন– মার্চ ও এপ্রিল মাসের ইনফ্লুয়েঞ্জায় এই ঔষধ উপযোগী।

পিত্তপাথরী (Gallstone)।-পিত্তাশ্মরী-শূল, তীব্র অসহনীয় যন্ত্রণা, সেই সাথে অল্প অল্প ঘাম। পিত্তকোষের স্ফীতি এবং বেদনা। ডাঃ ন্যাশ পিত্তপাথুরী-শূলে এই ঔষধ প্রয়োগ করতে উপদেশ দেন। পিত্তশূল, এটার মল ফ্যাকাসে, সময় সময় পাতলা মলও বের হয়ে থাকে। যকৃতের সঙ্কোচন, সেইসঙ্গে অঙ্গপ্রত্যঙ্গে শোথ হলেও এটা ব্যবহার্য।

তুলনীয়।-কোলেটেরিন যকৃতে রক্তাধিক্য। যকৃৎ বড় এবং শক্ত, বিশেষতঃ যকৃতের বাঁদিক, ন্যাবা এবং পিত্তপাথরীশূল, অল্প পরিমাণ কাদা বর্ণের প্রস্রাব। চায়না- প্রবল বেদনার সময়ে ব্যবহারে বিশেষ ফল পাওয়া যায় এবং এটা নিয়মিত ব্যবহারে প্রতিষেধকের কাজ করে। ক্যাল্কেরিয়া-কার্ব-বেদনা নিবারণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ন্যাবা। – তীব্র বেদনা, সেইসঙ্গে অল্প অল্প ঘাম। শূলবেদনা, মুখে তিক্ত স্বাদ, জিহবার মধ্যভাগে সাদা লেপ এবং জিহবার অগ্রভাগ ও ধারগুলি লাল। বমন, বমিতে হলুদ রঙের অম্লাক্ত পদার্থ। পৈত্তিক মল, হলুদবর্ণের প্রস্রাব এবং যকৃৎ স্থানে বেদনা। খনির মজুরগণের যকৃতের পুরাতন রোগ ও পান্ডুরোগ (চেলিডো, মার্ক, লাইকো)।

ক্ষয়রোগ। -যকৃতের রোগের জন্য ফুসফুসের সাংঘাতিক রোগ। রাত্রিকালে অত্যন্ত ক্লেশদায়ক কাশিতে রোগী যখন বিছানায় উঠে বসে, অথবা যকৃতের রোগের জন্য কাশির সাথে টাটকা রক্ত বের হয় বা রক্তমিশ্রিত শ্লেষ্মা বের হয়, তখন এই ঔষধ ব্যবহার্য্য। যকৃতের দোষের জন্য ক্ষয় ও শ্বাসরোগ।

বক্ষঃরোগ। -পুরোডাইনিয়া বা বক্ষঃস্থলের পেশীর বেদনায় এই ঔষধ ব্যবহৃত হয়। কার্ডয়াস কোন রোগই সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য করতে পারে না, তবে রোগের যন্ত্রণা বা ভোগকাল কমিয়ে দিতে পারে (অ্যাকোনাইট)। রোগীর শরীরে চুলকানি আছে, ঐ চুলকানি বেশী হয়। যকৃতের দোষের জন্য শিরা-স্ফীতিতে এবং ঐসকল স্থানে ক্ষত উৎপন্ন হলেও কার্ডয়াস কাজ করে।

জ্বর। – কার্ডকাসে মধ্যাহ্ন হতে আরম্ভ হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুসঘুসে জ্বর হয়। পানিপিপাসার অভাব।

তুলনীয়।-চেলিডো, মার্ক, লরো, লাইকো ও কার্বোনিয়াম-সাঙ্কিউরেটাম।

বৃদ্ধি।– নিঃশ্বাস লবার সময়; চাপ দিলে; ডানদিকে শুইলে; সামনে ঝুঁকলে; খাওয়ার পর; নড়াচড়ায়।

হ্রাস। নাক দিয়ে রক্ত পড়লে (মাথাঘোরা)।

শক্তি। – মূল অরিষ্ট ২x, ৩x, ৬x শক্তি ব্যবহার্য্য।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!