সিষ্টাস–ক্যানাডেন্সিস (Canadensis)
পরিচয়।-এটার অপর নাম রক-রোজ।
একটি গভীর ক্রিয়াশীল-কচ্ছবিষ দোষয় ঔষধ। এটার রোগী ব্রুফুলাধাতু; ক্যাল্কেরিয়া-কার্ব সদৃশ মোটাসোটা ব্যক্তি। এটার রোগী শীতকাতুরে; শরীরের নানাস্থানে শৈত্যানুভূতি এটার নির্দেশক। প্রধান ক্রিয়া ঘাড়ের ও গলদেশের অস্থিগুলির উপর।
ব্যবহারস্থল।-প্রতিশ্যায় লক্ষণ, গডমালা, গলক্ষত, ক্যান্সার, পচনশীল ক্ষত, অস্থিক্ষত, আঙ্গুল-হাড়া এবং অন্যান্য ক্ষত রোগ।
প্রদর্শক লক্ষণ।– রোগী ঠান্ডা হাওয়া বা ঠান্ডা পানি কোনটাই সহ্য করতে পারে না। মুখের ভিতর, গলার ভিতর, আঙ্গুলের ডগ, পেট ও বুকে ঠান্ডার অনুভূতি। ঘাড় ও গলার গ্ল্যান্ডগুলি বড় হয়, ফোলে, পাকে। হাতের চামড়া শক্ত, পুরু, শুষ্ক, ফাঁটা-ফাঁটা। সদৃশ। -অ্যাকোনিটাম- লাইকোটোনাম-গলা ও ঘাড় এবং বগল স্তন প্রভৃতি গ্ল্যান্ডের স্ফীতি। বেলেডোনা – প্ৰথম প্রাদাহিক অবস্থায় যখন গরম ও লাল হয়, বেদনায় স্পর্শদোষ থাকে তখন ব্যবহৃত হয়। ব্রোমিয়াম- গন্ডমালা; গ্ল্যান্ডগুলি শক্ত। কার্বো-অ্যানিমেলিস ও কোনায়াম-গ্ল্যান্ডগুলি যখন পাথরের মত শক্ত হয় তখনই বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হেকলা-লাভা ঘাড়ের গ্ল্যান্ড, অত্যন্ত বড় ও শক্ত। গ্রেফাইটিস – ঘাড় বগল প্রভৃতি স্থানের গ্ল্যান্ড যেমন ফোলে, শক্ত হয়, সেইসঙ্গে দেখা যায় চর্মরোগ। সেইরূপ-হাত-পায়ের চামড়া পুরু ও মোটা হয় এবং ফেটে যায়। সেটা হতে মধুর মত তরল কষ ঝরে। গায়ের চামড়াও ফাটে। আঙ্গুল ও নখ মোটা হয়ে বিশ্ৰী দেখায়। গলার ভিতর ঠান্ডা বোধ, তারজন্য ঘুমাতে পারে না। ঘাড়ের চারিদিকে টিউমার। মাথা বেঁকে যায়। আক্রান্ত স্থান স্পঞ্জের মত নরম। মুখ হতে গন্ধ বের হয়। জিহবা বের করতে কষ্ট হয়। কিছু খেলে মাথাধরা কম হয়। নীচের ঠোঁটে ক্যান্সার, তাতে ঘা ও তা হতে রক্ত পড়ে। টক খেতে চায় বা টক ফল খেতে চায়। হাঁপানি রাত্রে শুইলে বাড়ে। ঠান্ডা সহ্য হয় না। নিম্ন-চোয়ালের হাড়ে ঘা। কানের বাহিরে ও কানের ভিতর দিকে ইরাসন (tetters), নাকে একজিমা।
সর্দি-প্রবণতা। সামান্য ঠান্ডায় সর্দি লাগে, গলায় বেদনা হয়। সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ও গলার গ্রন্থিগুলি ফুলে উঠে; ঐ ফোলা দীর্ঘকাল হতে যায়, ক্রমে যক্ষ্মার সম্ভাবনা দেখা দেয়। সর্দি প্রবণতায় হোমিওপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকার কতকগুলি ঔষধ বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, এটার মধ্যে প্রধান-ক্যাল্কেরিয়া-কার্ব পায়ের তলা অত্যন্ত ঠান্ডা, ঢাকা দিলেও গরম হয় না, শরীরের মধ্যে সদাই ঠান্ডাবোধ। রোগীর সহজেই ঠান্ডা লাগে বিশেষতঃ শ্রুফুলা ধাতুর। হিপার-সালফার – সামান্য ঠান্ডা হাওয়াতেই অসুখ করে, কাশি হয়, শরীর সদাই কাপড়ে ঢাকিয়া রাখতে হয়। ঠান্ডা হাওয়া মোটেই সহ্য হয় না। কেলি-কার্ব-রোগীর সামান্য ঠান্ডা হাওয়াও সহ্য হয় না, সামান্য ঠান্ডাতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রত্যেক ঋতু পরিবর্তনে শরীর অসুস্থ হয়। এটা মাঝে মাঝে ব্যবহার করলে সহজে ঠান্ডা লাগার ধাতু পরিবর্তিত হয় কারণ এটা ঠান্ডা লাগার প্রতিষেধক ঔষধ। নেট্রাম-মিউর শ্লেষ্মাপ্রধান ধাতু, সামান্য ঠান্ডাতেই সর্দি হয়। সোরিণাম – ঋতু পরিবর্তনে শরীর অসুস্থ হয়। ঠান্ডা বা ঠান্ডা হাওয়া রোগীর সহ্য হয় না। সর্দি হয়, টন্সিল বাড়ে। ঠান্ডা লাগার ভয়ে, রোগী গরমকালে গায়ের কাপড় ফেলতে পারে না। সাইলিসিয়া-ঠান্ডায় সমস্ত উপসর্গের বৃদ্ধি।
দন্তরোগ।-দাঁত হতে পুঁজ বের হয়, অত্যন্ত দুর্গন্ধ থাকে, কিন্তু বেদনা থাকে না; সেই সঙ্গে গলা ও ঘাড়ের গ্রন্থিগুলির বৃদ্ধি। তুলনীয়। – মার্ক সল – মাঢ়ী ফোলে, সেটা হতে রক্তপাত হয়; দ্রুত হয়, দাঁত সরেআসে, আলগা হয়, মুখ হতে লালা পড়ে দুর্গন্ধ বের হয়। হেকলা- লাভা-মাঢ়ীতে ফোঁড়া, ক্ষত এবং নালী-ঘা হয়, বেদনা। অ্যাকোনাইট ঠান্ডা লেগে দাঁতের গোড়া ফোলে এবং সেটাতে জ্বালাযন্ত্রণা হয়। কার্বো-ভেজ-ছিদ্রযুক্ত মাঢ়ী, গোড়া বের হয়, দাঁত পানসে, সেটা হতে রক্ত পড়ে। ষ্ট্যাফিসেগ্রিয়া – দাঁতে পোকা লাগে, কাল হয়; ক্ষয় পায়, মাঢ়ী ফোলে, সেটা হতে রক্তপাত হয়; উপদংশগ্রস্ত ব্যক্তিদের সন্তানের রোগে অধিকতর উপকারী।
ক্যান্সার রোগ।-নীচের ঠোটে ক্যান্সার ঘা, তা হতে রক্ত পড়ে। লুপাস – মুখমন্ডলে, নাকে ও মুখের ভিতর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। স্তনের ক্যান্সার, সেইসঙ্গে মাসিক ঋতু বন্ধ থাকে। গন্ডমালা। গ্ল্যান্ডের নানারূপ রোগ। গ্ল্যান্ড বড় হয়, পাকে। রোগী ঠান্ডা হাওয়া বা কোন ঠান্ডা দ্রব্য সহ্য করতে পারে না। টক খাওয়ার ইচ্ছা, কিন্তু টক খেলে উদরাময় হয় ও পেটে যন্ত্রণা হয়। শরীরের নানাস্থানে শীতলতা বোধে। গলগন্ডের সাথে উদরাময়।
অজীর্ণ রোগ।-গা-বমি-বমি করে। ঠান্ডা ঢেঁকুর। খাওয়ার পূর্বে ও পরে পেটে ঠান্ডা-ঠান্ডা বোধ। পেটে বায়ু। টক খেতে চায়, কিন্তু টক খেলে পেটের রোগ বাড়ে। মল গরম, চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পুরাতন উদরাময়। মাথাধরা, খেলে মাথাধরা কম হয়।
গলার ক্ষত।-রোগীর জিহবামূলে প্রদাহ হয়ে আক্রান্ত স্থান নীরস হয়, কিন্তু রোগী শুষ্কতা অনুভব করে না এবং বার বার ঢোক গেলে। প্রায় রোজই সকাল বেলা স্বাদহীন আঠা আঠা গাঢ় শ্লেষ্মা বের হয়। তার গলার ভিতর সামান্য বায়ু ঢুকিলেই গলার ভিতর ক্ষত জন্মে। ঘুমের পর মুখে শুষ্কতা বেশী অনুভব করে।
অপরাপর রোগ।-গন্ডমালা দোষ হেতু পৃষ্ঠে ক্ষত, শীতল বায়ু লেগে মণিবন্ধ ও কব্জিতে বেদনা, উপদংশ-বিষজনিত পদক্ষত রোগ। রোগীর শরীরে কোনপ্রকার উদ্ভেদ বের হয় না অথচ তার সর্বশরীর অত্যন্ত চুলকায়। ডলিকসেও এই লক্ষণ আছে। ধবল রোগেও এটা ব্যবহার্য্য। রোগীর অতিশয় শীতকাতরতা থাকা চাই।
বৃদ্ধি।– সন্ধায়; রাতে; সকালে; ঠান্ডা হাওয়ায়; শুইলে; কফি পানে; নড়াচড়ায়; স্পর্শে।
হ্রাস।-খোলা হাওয়ায় (শ্বাসকষ্ট); গিললে (গলা); গয়ার উঠলে।
শক্তি।— ১x, ৩x, ৬, ৩০, ২০০ শক্তি।