ক্যালকেরিয়া-ফ্লুয়োরিকা (Calcarea Fluorica)

পরিচয়।-এটার অপর নাম ক্যালসিয়াম-ফ্লুয়োরাইড।

ব্যবহারস্থল। -গ্রন্থির বৃদ্ধি ও কাঠিন্য, শিরা-স্ফীতি, ধমনীর অর্বুদ, অস্থি-বিকৃতি স্তনগ্রন্থির কাঠিন্য, ছানি, অস্থি-বৃদ্ধি সর্দির জন্য ক্ষত, রক্তোৎকাস, সন্ধির ভিতর খটখট করা, কটিদেশের বেদনা, প্রসবকালীন ও তৎপরবর্ত্তী উপসর্গ, ভগন্দর, শোথ, উপদংশ প্রভৃতি রোগ।

ক্রিয়াস্থল।-দন্ত ও অস্থির বহিরাবরণ, মাংসপেশীর স্থিতিস্থাপক সূত্রসমূহ, সর্বপ্রকার কোষ এবং রক্তবহা নাড়ীর উপর ক্রিয়া, কোন যন্ত্রের কঠিনতা বা অতি শিথিলতা এটার সিদ্ধিপ্রদ লক্ষণ।

প্রদর্শক লক্ষণ।-গ্ল্যান্ড ফুলে উঠে ও পাথরের মত শক্ত হয় (কার্ব-এনি, কোনায়াম)। ঘা, সেটার ধারগুলি শক্ত ও উঁচু। হাতের তেলোর চামড়া শক্ত বা ফাটা ফাটা। কোমরে বাত। প্রথম চলতে আরম্ভ করলে বৃদ্ধি ও কিছুক্ষণ চলার পর হ্রাস (রাস টক্সের মত)। অর্শরোগ। সেই সাথে পিঠে ব্যথা। কোষ্ঠবদ্ধতা। মলদ্বার ফাটা ফাটা, তাতে টাটানি ব্যথা। বমি হয়, তাতে গোটা গোটা খাদ্যদ্রব্য। গলায় ব্যথা, ঠান্ডা পানিতে বৃদ্ধি ও গরম পানিতে হ্রাস। নাকে সর্দি। ডেলা ডেলা সবুজ বা হলদে স্রাব। বহুদিনের পুরাতন। কানে পুঁজ। মাথার উপর শক্ত উদ্ভেদ। শিশুদের ব্লাড-টিউমার শিরা-স্ফীতি (ভেরিকোজ ভেইন্স)। গলগন্ড (goitre)। হাড়ে ঘা ও পুঁজ। চোখের ছানি। চক্ষে ঝাঁপসা দেখা। দাঁত নড়ে। দাঁতে কিছু লাগলে ব্যথা করে। মাঢ়ীতে ফোঁড়া। গাল ফোলে ও শক্ত হয়। বার বার গর্ভ নষ্ট। পেটে বায়ু। কোন যন্ত্রের শিথিলতা, জরায়ুভ্রংশ, গোগল বের হয় প্রভৃতি। কোষ্ঠবদ্ধ, গুহ্যদ্বারের পেশীর শক্তিহীনতা জন্য মলবেগের অভাব।

মন। -ক্যাল্কে-ফ্লুয়োরের রোগী অতিশয় বিমর্ষ, উৎসাহশূন্য, আর্থিক ক্ষতির ভয়ে ভীত। অনবরত আর্থিক সর্বনাশের চিন্তা করে।

ছানি ও চোখের নানাবিধ রোগ। -ছানি কঠিন হয়েছে এরূপ অবস্থায় এই ঔষধ প্রযোজ্য (কোনা)। চোখের সম্মুখে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত পদার্থ উড়ছে দেখে, কর্ণিয়াতে ছোট ছোট দাগ, কিছুক্ষণ কাজ করার পর দৃষ্টি ঝাপসা, চোখ বুজলে উপশম, সিদ্ধিপ্রদ লক্ষণ। চোখের পাতায় শক্ত অর্বুদ বা আঞ্জনি হলে কর্ণিয়াতে দাগ ও কর্ণিয়ার ক্ষতের প্রান্তভাগ শক্ত থাকলে এটা বিশেষ ফলপ্রদ।

কর্ণ-রোগ।-কর্ণের যে কোন রোগে অস্থি-বেষ্টনী আক্রান্ত হলে বা কর্ণাভ্যন্তরে চূণের মত পদার্থ সঞ্চিত হলে এটা ফলপ্রদ। ম্যাষ্টয়েড-অস্থির রোগে ব্যবহার্য্য।

সর্দি ও পিনস।-নাক হতে চাপ চাপ গাঢ় হরিদ্রা বা সবুজবর্ণের সর্দি বের হলে ও নাকের অস্থি আক্রান্ত হলে ফলপ্রদ (সাইলিসিয়া, অরাম, কেলি-ফস)।

দন্তরোগ।-রোগীর দাঁতের গোড়া শিথিল হয়ে যায়, সেজন্য বেদনা হয়, আবার বেদনার অভাবও দেখা যায়। দাঁত চকচকে থাকে না। দাঁতগুলি ভঙ্গুর, মাঢ়ীর ভিতর পুঁজ সঞ্চিত হয়ে চোয়ালের হাড় ফুলে যায় এবং ঐ ফুলা পাথরের মত শক্ত। বেদনাযুক্ত বা বেদনাহীন, কঠিন, ফাটা ফাটা জিহবার প্রদাহের পর কোনরূপ পুরাতন কাঠিন্য। দন্তরোগে ক্যাল্কেরিয়া-ফ্লুয়োরিকার মত মার্ক- সল প্রভৃতি কয়েকটি ঔষধও বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মার্কসল-মাঢ়ী ফোলে, ক্ষত হয় এবং সেটা হতে রক্ত পড়ে। দাঁতের গোড়া আলগা হয়ে যায়। মুখে দুর্গন্ধ হয়, জিহবা পুরু হয় এবং দাঁতের ছাপ পড়ে; রাতে এবং বিছানার গরমে উপসর্গের বৃদ্ধি। ক্যাল্কে ফস-শিশুর বিলম্বে দাঁত উঠে, আবার শীঘ্র নষ্ট হয়। দাঁতের গোড়া আলগা হয়। কার্বো-ভেজ দাঁতের মাটী স্পঞ্জের মত সচ্ছিদ্র, মাংস সরেদাঁতের গোড়া বের হয়, বেদনা। পানসে দাঁত, সহজেই রক্ত পড়ে। সিষ্টাস-দাঁতের মাঢ়ী ফোলে, সেটাতে ক্ষত হয়, মুখে এবং নিঃশ্বাসে পচা দুর্গন্ধ। হেক্না-লাভা-মাঢ়ীতে ফোড়া, ক্ষত, নালী-ক্ষত, পোকা খাওয়া দাঁত, বেদনা। ষ্ট্যাফিস্যাগ্রিয়া – দাঁতে কাল দাগ, দাঁতে পোকা, দাঁত খেয়ে যায়, মাঢ়ী ফোলা, উপদংশ ও প্রমেহ রোগী বা তাদের সন্তানদের রোগে অধিকতর উপযোগী।

গ্রন্থিরোগ। -গ্ল্যান্ড, যে কোন স্থানের হোক ফুলে উঠে এবং পরে পাথরের মত শক্ত হয়। বগল, কুচকী-গ্রন্থি এবং স্ত্রীলোকদের স্তন এমন শক্ত হলে ক্যাল্কেরিয়া-ফ্লুয়োরিকা যেমন ফলপ্রদ, কার্বো-অ্যানিমেলিস এবং কোনায়ামও তেমনি উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

অর্শ।-রক্তস্রাবী ও স্রাবহীন উভয় প্রকার অর্শের একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। মলদ্বারের পেশীর শক্তিহীনতার জন্য মলত্যাগে অক্ষমতা, সেজন্য প্রচুর মল সঞ্চয় সত্ত্বেও মলরোধ। প্রস্রাবের পর এমন মলরোধ প্রায়ই দেখা যায়। মলদ্বার বিদারণ, গোগল বের হয়, বায়ুসঞ্চয়, ক্ষুদ্র ক্রিমি ইত্যাদিতেও কার্যকরী।

পুংজননেন্দ্রিয়ের রোগ। -অন্ডের শোথ। অন্ডের কাঠিন্য সহ যে কোন প্রকার অন্ডকোষের রোগে ব্যবহার্য্য। অন্ডের শীর্ণতার অবিরাম শুক্র বা প্রষ্টেট-রস নিঃসৃত হতে থাকলে ও কোরন্দ রোগে কার্যকরী। পুরাতন উপদংশ রোগে অস্থি আবরক আক্রান্ত হয়ে অস্থিক্ষয়ে কাঠিন্য লক্ষণ থাকলে উচ্চশক্তি ফলপ্রদ। তুলনীয়। ব্যারোইটা-আয়োডেটা – অন্ডকোষের গ্রন্থি ফোলে এবং শক্ত হয়। ব্রোমিয়াম -অন্ডকোষ ফোলে এবং শক্ত হয়, সেটাতে বেদনা, রোগী নড়াচড়া করতে পারে না। কোনায়াম-অন্ডকোষ ফোলে এবং পাথরের মত শক্ত হয়। ফাইটোলাক্কা -অন্ডকোষ ফুলা, শক্ত, বেদনা ও যাতনা। উপদংশ বা প্রমেহ দোষ জনিত একশিরায় উপযোগী। পালসেটিলা- প্রমেহ-স্রাব রুদ্ধ হয়ে প্রদাহ হয়, অন্ডকোষ এবং রেভরজ্জু ফুলে মোটা হয়। রডোডেনড্রন – ফুলা, শক্ত, বেদনাযুক্ত, প্রমেহের পরের রোগে অধিকতর উপযোগী।

স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের রোগ। জরায়ুর সর্বপ্রকার স্থান-চ্যুতিতে, যথা-জরায়ু সম্মুখে, পশ্চাৎ বা পার্শ্বে বক্র হয়ে গেলে ও জরায়ু-চ্যুতি রোগে কাজ করে। জরায়ু ও কুঁচকি স্থানে টেনে ধরার মত বেদনা হয়ে প্রচুর রক্তস্রাবে এইঔষধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে উৎকৃষ্ট ফল পাওয়া যায়। জরায়ুর অর্বুদে উদরস্থ সমস্ত পদার্থ যোনিপথে নেমে পড়বার অনুভূতি লক্ষণে এই ঔষধ বিশেষ ফলপ্রদ। স্তনগ্রন্থি ফুলে শক্ত হলে ও স্তনদুধের পরিমাণ কমে গেলে। শুলার বলেন-গর্ভবতীকে এই ঔষধ সেবন করতে দিলে জরায়ু সতেজ হয়ে সহজ প্রসব হয়ে থাকে। তুলনীয়।-ফ্রাক্সিনাস- আমেরিকান (Fraxinus American) – জরায়ুর বিবৃদ্ধি এবং যে কোন প্রকারের স্থানচ্যুতিতে এটা একটি বিশেষ ঔষধ। জরায়ুর টিউমারেও এটা উপকারী। লিলিয়াম-টাইগ্রিনাম- জরায়ুর স্ফীতি ও স্থানচ্যুতি। মূত্রনলী ও সরলান্ত্রে চাপ দেয়। তলপেটের সমস্ত পদার্থ যেন যোনিদ্বার দিয়ে বের হয়ে যাবে এমন মনে হয়, সেজন্য রোগিণী পায়ের উপর পা দিয়ে চেপে বসে। সিপিয়াতেও ঠিক ঐ প্রকারের লক্ষণ আছে। রোগের তরুণ অবস্থায় উদর মধ্যস্থ জ্বালা-যন্ত্রণাদি যখন কমে আসে তখন সিপিয়ার প্রয়োজন হয়। সিমিসিফিউগা-প্রসববেদনার মত বেদনা, মনে হয় যেন নাড়ীভুড়ি সমস্ত বের হয়ে যাবে, সেইসঙ্গে জরায়ুতে সূঁচফোটানো বেদনা। মিউরেক্স-জরায়ু যেন বের হয়ে যাবে এমন মনে হয়, সেজন্য রোগিণী আশঙ্কায় উরু চেপে বসে। পডোফাইলাম- গর্ভকালে ভার উত্তোলন বা আঘাত ইত্যাদি কারণে জরায়ু-চ্যুতি ঘটিলে পডোফাইলাম ব্যবহৃত হয়। স্যানিকিউলা- জরায়ু যেন বের হয়ে পড়বে এমন মনে হয়, সেইসঙ্গে শ্বেতপ্রদর-স্রাব, রোগিণী কিছু দিয়ে জরায়ুর মুখ চেপে রাখার চেষ্টা করে।

অর্বুদ।-এটার অর্বুদ অতিশয় শক্ত। শরীরের যে কোনও স্থানের শক্ত অর্বুদে এই ঔষধ ফলপ্রদ।

বৃদ্ধি।-বিশ্রামকালে; ঋতু পরিবর্তনের সময়।

হ্রাস। -গরম সেক বা উত্তাপে।

শক্তি।-নিম্নশক্তি ২x, ৩x, ৬x চূর্ণ; ৩০, ২০০, ১০০০।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!