ক্যালকেরিয়া আর্সেনিক (Calcarea Arsenica)
পরিচয় – অপর নাম আর্সেনাইট-অভ-লাইম।
ব্যবহারস্থল। -হৃৎকম্পন, রক্তের চাপ বৃদ্ধি, মাথা ব্যথা, মৃগী, যক্ষ্মাকাস, হাঁপানি, শিশু যকৃৎ, যকৃতের শীর্ণতা, অন্ডলাল-মূত্র, পাকযন্ত্রের বিকৃতি ও ক্ষত, কোষ্ঠবদ্ধতা, অর্বুদ, শোথ, সান্নিপাতিক জ্বর প্রভৃতি।
ক্রিয়াস্থল।-তরুণ রোগে প্রায়ই ব্যবহৃত হয় না, পুরাতন ও জীর্ণ রোগীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ক্যাল্কেরিয়ার লক্ষণ ও সেই সাথে দুর্বলতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। রোগী ক্লাঙ্কে-কার্বের মত মোটাসোটা এবং অসম্ভব শীতকাতর। বয়ঃসন্ধিকালে অর্থাৎ সুন্দরী নারীদের ৪০/৪৫ বৎসর বয়সে এটা একটি সুন্দর ঔষধ।
প্রদর্শক লক্ষণ।— মাতালরা মদ ছাড়িবার পর রোগ হলে। শিশুদের লিভার ও প্লীহা বড়। মোটা স্ত্রীলোকদের ঋতুকালীন উপসর্গ। নেফ্রাইটিস, সেইসঙ্গে কিডনীর স্থানে বেদনা, হাত দেওয়া যায় না। শোথ-রোগ, প্রস্রাবে এলবুমেন। শীত শীত ভাব, শ্বাসকষ্ট। মাথাধরা, আক্রান্ত পার্শ্ব চেপে শুইলে উপশম। মৃগী রোগ, সড়সড়ানি, হৃৎপিন্ডর কাছে আরম্ভ হয়। ইউট্রাসে ক্যানসার, জ্বালা, জ্বালা নিবারণ করে। পিঠে ভয়ানক বেদনা, দপদপ করে। মাথা নাড়লে মাথা ঘোরে, উচ্চস্থানে উঠতে বুক ধড়ফড় করে। মৃগী ও সেইসঙ্গে হার্টের রোগ। মাথা খুব গরম। মিষ্ট আলু খেয়ে মাঝ রাত্রে উদরাময়। হাত ঠান্ডা
মন। -অত্যন্ত মানসিক অবসাদ, কোন প্রকার মানসিক উত্তেজনায় প্রবল হৃৎকম্পন আরম্ভ হয় (ফস, পালস)। রোগী মনে করে যেন তার মাটিতে পা পড়ছে না, শূন্যের উপর দিয়ে ভাসিয়া চলেছে। কেন্ট বলেন-ক্যাল্কেরিয়া ও আর্সেনিকের মনোলক্ষণ মিলাইয়া এই ঔষধটিকে অধ্যয়ন করতে হবে।
ম্যালেরিয়া জ্বর। –সবিরাম, অবিরাম অথবা বিলাপী জ্বর। অনেক দিন জ্বরে ভুগে বিশেষ দুর্বল হয়ে পড়া, তার সাথে শুষ্ক কাশি, অতিরিক্ত ঘাম, অজীর্ণ অম্লগন্ধযুক্ত মল, সামান্য নড়াচড়ায় বুক ধড়ফড়ানি, হৃত্যন্ত্রের দুর্বলতা, হাতে-পায়ে শোথ। ডাঃ প্রতাপচন্দ্রমজুমদার মহাশয় বলেন- শিশুদের প্লীহা ও যকৃৎ বৰ্দ্ধনে-ক্যাল্কে-আর্স বিশেষ ফলপ্রদ। এটার রোগী ক্যাল্কে-কার্বের মত শীতকাতুরে ও দুধপানে অনিচ্ছুক।
ক্যান্সার রোগ।-ক্যাল্কেরিয়া-আর্স জরায়ু স্ত্রীজননেন্দ্রিয় ও ক্লোমের ক্যান্সার রোগে একটি প্রথম শ্রেণীর ঔষধ। সকল সময় ক্যান্সার আরোগ্য না হলেও অসহ্য জ্বালা কমিয়ে রোগীকে সুস্থ করে। কেন্ট বলেন-ক্যাল্কে-আর্স জরায়ুর ক্যান্সার রোগের একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। আক্রান্ত স্থানে জ্বালা থাকে এবং সেটা হতে দুর্গন্ধ এবং ঝাঁঝাল স্রাব বের হয়। মাসিক ঋতুস্রাব অত্যধিক হোক, কম হোক অথবা অতি শীঘ্র হোক, যদি উপযুক্ত লক্ষণ পাওয়া যায় তবে এটা প্রয়োগে রোগ অতি দ্রুত আরোগ্য হয়ে থাকে। একটি অতি প্রয়োজনীয় লক্ষণ, মূত্রযন্ত্রের নিকট অত্যন্ত টাটানি ব্যথা ও ভয়ানক স্পর্শাসহিষ্ণুতা থাকে। জরায়ুর কর্কট রোগে অন্যান্য সদৃশ ঔষধ।-কার্বো-অ্যানিমেলিস জরায়ু এবং জরায়ুগ্রীবা শক্ত। জরায়ু হতে রক্তস্রাব এবং দুর্গন্ধ স্রাব, ফিউলিগো-লিগ্নী জরায়ুর ক্যান্সার এবং তা হতে রক্তস্রাব, রোগিণী আত্মহত্যার চিন্তা করে। লেপিস-অ্যাল্বা-জরায়ুর ক্যান্সার, জরায়ুতে হুলফোটানো বেদনার সঙ্গে জ্বালা ও রক্তস্রাব।
মূর্ছারোগ। -ধাতুগত লক্ষণের সাথে মিল হলে মূৰ্চ্ছা রোগে এই ঔষধটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হৃৎপিন্ডের বেদনা, সামান্য উত্তেজনায় বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্টতা, মূর্ছার আগে হৃৎপিন্ডে যাতনা।
প্রস্রাব। -মূত্রপিন্ড প্রদেশে তীব্র বেদনা। প্রস্রাবে জ্বালা। অ্যালবুমেন ও ক্রাষ্ট বের হয়, প্রস্রাব অল্প এবং ঘন ঘন প্রস্রাব।
স্ত্রীরোগ।—দুর্গন্ধ ও রক্তমিশ্রিত প্রদরস্রাব, হলুদবর্ণের প্রদরও এতে দেখা যায়। স্রাব যেখানে লাগে সেইস্থান হেজে যায়।
নিদ্রা।-নিদ্রা ভালরূপ হয় না। ঘুমের ভিতর নানা প্রকার স্বপ্ন দেখে, ঘুম ভাঙলেই বুক ধড়ফড়ানি আরম্ভ হয়ে শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। শেষ রাত্রের দিকে রোগী আর ঘুমাতে পারে না, তখন প্রচুর ঘাম হতে থাকে। ক্যাল্কে-আর্স কোনায়ামের পরে ফলপ্রদ।
বৃদ্ধি।– সামান্য মাত্র পরিশ্রমে; খোলা বাতাসে; শীতকালে।
শক্তি।-৬x বিচূর্ণ হতে ৩০, ২০০ শক্তি ব্যবহার্য্য।