ক্যাক্টাস–গ্র্যান্ডিফ্লোরাস (Cactus Grandiflorus)
পরিচয়।-এক জাতীয় ফুল। মেক্সিকো ও ওয়েষ্ট-ইন্ডিজে পাওয়া যায়।
ব্যবহারস্থল। -হত্যন্ত্রের রোগ, হৃৎশূল, সন্ন্যাস, মস্তিষ্কে, রক্তাধিক্য, শোথ, শিরঃরোগ, অজীর্ণ, সবিরাম জ্বর, ফুসফুস হতে রক্তস্রাব, ফুসফুস-প্রদাহ, সর্দি-গর্মি, হাঁপানি, মূত্রাধারে পক্ষাঘাত প্রভৃতি।
ক্রিয়াস্থল। হৃৎপিন্ড ও রক্তসঞ্চালন যন্ত্র।
প্রদর্শক লক্ষণ।-মনে হয় যেন হৃৎপিন্ডটি লোহার দড়ি দিয়ে খুব টান করে বাঁধা আছে। নাড়ী পাওয়া যায় না বা দুর্বল। যথাসময়ে আহার না করলে মাথা ধরে। মুখমন্ডলের ডানদিকে বেদনা, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে হয়। নাক হতে রক্ত পড়ে। হৃত্যন্ত্রে শূলবেদনা। এঞ্জাইনা- পেক্টোরিস। সেইসঙ্গে ক্যারোটিড ধমনী দপদপ করে। বাত হতে হৃদযন্ত্র আক্রান্ত। অর্শ, বলি ফোলে, যন্ত্রণা হয়। মলান্ত্রের ভারবোধ। শক্ত কাল মল। ম্যালেরিয়া জ্বর, সেইসঙ্গে মলদ্বার হতে রক্তস্রাব এবং হার্টের লক্ষণ। প্রস্রাব বন্ধ। মূত্রদ্বার হতে রক্তস্রাব। ডেলা ডেলা রক্ত। সর্বদাই প্রস্রাব হয়। মাসিক ঋতুস্রাব কাল, শীঘ্র জমাট বাঁধে। স্রাব শুইলে বন্ধ হয় চললে অসম্ভব বাড়ে। ফুলা। বিশেষতঃ বামদিকে, পিঠ ঠান্ডা, হাত ঠান্ডা।
মন। রোগী মনে করে যেন হৃৎপিন্ড, বক্ষঃস্থল, জরায়ু, মলাস্ত্র, মূত্রনালী ও গলার ভিতর কেউ সজোরে চেপে ধরে আছে। সে অকারণে কাঁদে, কাঁদিবার সময় সান্ত্বনা দিলে আরও বেশী কাঁদে (হেলিবো, লিলি, নেট্রাম-মিউ, সিপিয়া)। অবসন্নতা ও বিষাদ ভাব অত্যধিক। কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুভয়ও থাকে।
শিরঃরোগ।–রক্তপ্রধান ব্যক্তিদের মাথায় রক্তসঞ্চয়জনিত সন্ন্যাস রোগ। মাথার উপরে যেন একটা ভারী দ্রব্য চাপান আছে। সুন্দরী নারীদের বয়ঃসন্ধিকালে (৪০/৪৫ বৎসর বয়সে) শিরঃরোগে এই ঔষধটি বিশেষ উপযোগী। মদ্যপানে, গানে, উজ্জ্বল আলোকে অথবা আহারে বিলম্ব হলে মাথার যন্ত্রণার বৃদ্ধি হয়। ঠিক একই সময় মাথার যন্ত্রণা হয় (সিড্রন)।
হৃদ্যন্ত্রের রোগ। রক্তসঞ্চালনের অসমতা এবং কোন কোন অংশে রঙের আধিক্য দেখা যায়। দিবারাত্রি হৃৎপিন্ডের স্পন্দন হয়-চলাফেরায়, রাত্রে বামদিকে শুইলে বুক ধড়ফড়ানি বাড়ে। কেউ যেন হৃৎপিন্ডটি চেপে রেখেছে বোধ হয়। এমন কি যদি ভারী কাপড়ে বুক ঢাকা থাকে তাতেও রোগীর কষ্ট বোধ হয়। ক্যাক্টাস রোগীর মুখমন্ডল নীলবর্ণ হয়, সেইসঙ্গে শ্বাসকষ্ট, পুরাতন হৃৎপিন্ড প্রদাহে রোগীর মুখমন্ডল ফুলে যায়, হৃদযন্ত্রে অবিশ্রান্ত মৃদু যন্ত্রণা অনুভূত হয়, হাত-পা ঠান্ডা হয়, সর্বশরীরে বিশেষতঃ বাম হাতে ও পায়ে শোথ, হৃৎপিন্ডের শূলেও এই ঔষধ বিশেষ কার্যকরী, হৃৎপিন্ডের শোথ ও হৃৎকম্পন। তীব্র বেদনা বাম বাহু বেয়ে নিম্নদিকে ছড়িয়ে পড়ে ! ডাঃ হেল বলেন যেমন, মস্তক, চোখ ইত্যাদি যে কোন যন্ত্রেরই রোগ হোক না কেন, যদি হৃৎপিন্ডের অসুস্থতা না থাকে, তবে ক্যাক্টাস প্রয়োগ কৰ্ত্তব্য নয়। সদৃশ। অ্যাকোনাইট – উদ্বেগ; অবসন্নতা ও ঝিঁ ঝিঁ ধরা বেদনা। ডিজিটেলিস-নড়িতে পারে না। নড়িতে গেলেই মনে হয় বুঝি হৃৎপিন্ডটি বন্ধ হয়ে যাবে। আয়োডিয়াম -রোগী মনে করে তার হৃৎপিন্ডটি যেন নিষ্পেষিত হচ্ছে। লিলিয়াম- টিগ্-রোগী মনে করে যেন হৃৎপিন্ডটি বারবার ধরতেছে ও ছেড়ে দিচ্ছে। স্পাইজেলিয়া – হৃৎপিন্ডের দৃশ্যমান কম্পন। ল্যাকেসিস – ঘুম ভাঙ্গিবার পর হৃৎপিন্ড আকুঞ্চিত হয়, সেজন্য গায়ের ঢাকা ফেলে দেয়। আর্সেনিক হাঁটতে গেলেই সঙ্কোচন ভাব বাড়ে।
নাক ও ফুসফুস হতে রক্তস্রাব। -এটার রোগীর নাক হতে প্রচুর পানির মত রক্তস্রাব হয়, ফুসফুস হতে রক্ত উঠার সাথে বুকে অত্যন্ত দপদপানি ব্যথা থাকে। নাক হতে রক্তস্রাবে এই সকল ঔষধ স্মরণীয় – রক্তস্রাব সকালে হলে – বোডিষ্টা, ব্রাইয়োনিয়া, হ্যামামেলিস, কেলি-কার্ব। সকালে মুখ ধুবার সময়ে নাক হতে রক্ত পড়লে – অ্যামন- কার্ব, অরাম-মেটালিকাম, কেলি-কার্ব। অর্শের রক্ত অথবা স্ত্রীলোকগণের মাসিক ঋতু বন্ধ হয়ে নাক হতে রক্তস্রাব হলে -হ্যামামেলিস, পালসেটিলা।
স্ত্রীরোগ।– জরায়ু ও ডিম্বাধার সঙ্কুচিত বোধ। তীব্র যন্ত্রণা ও দপদপানি, রোগিণী যন্ত্রণায় অস্থির হন। এটার ঋতু নির্দ্ধারিত সময়ের আটদিন পূর্বে প্রকাশিত হয় ও শয়ন করলেই ঋতুস্রাব বন্ধ হয়। সাবিত রক্ত কাল ও শীঘ্র জমাট বাঁধে।
বেদনা ও স্নায়ুশূল।-বেদনা তীব্র, চিড়িকমারার মত, দ্রুত। এক স্থান হতে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, বেদনাক্রান্ত স্থান দপদপ করে, নির্দিষ্ট সময়ে আহার না করায় স্নায়ুশূল বেদনা উপস্থিত হয়।
বাত–বেদনা। -রোগীর বাম বাহু ফুলে যায় ও বাম বাহু অসাড় হয়ে যায়। ডাঃ ফ্যারিংটন বলেন-আকুঞ্চন লক্ষণের উপর নির্ভর করে ক্যাক্টাস প্রয়োগে তিনি একটি ডায়েফ্রামের বাত রোগী আরোগ্য করেছেন।
নিদ্রা।– শরীরের নানাস্থানে দপদপ করে, সেজন্য মোটেই ঘুম হয় না।
জ্বর। -প্রত্যহ বেলা ১১টা বা রাত্রি ১১টার সময় জ্বর আসে। রোজ একই সময়ে জ্বর লক্ষণ অ্যারেলিয়া, সিড্রন, স্যাবাডিলা ও জেলসিমিয়ামে আছে, কিন্তু ক্যান্টাসে কেবল দিনে ১১টায় বা রাত্রি ১১টায় জ্বর আসে। শীতাবস্থায় পিপাসার অভাব, গাত্রতাপ প্রায় ২৪ ঘণ্টার উপর স্থায়ী থাকে। জ্বরের সময় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে মনে হয়, যেন কেউ বুক চেপে ধরেছে, এইজন্য টেনে টেনে নিঃশ্বাস ফেলে। সেইসঙ্গে হৃৎপিন্ডে ব্যথা। উত্তাপাবস্থার শেষের দিকে রোগী পানি পান করতে চায়। ক্যাক্টাস রোগীর প্রচুর ঘাম হয় এবং ঘাম হতে হতে বন্ধ হয়ে গেলে বনি হতে থাকে।
সম্বন্ধ।– মানসিক লক্ষণে- ডিজিটেলিস ও ল্যাকেসিস তুল্য। মস্তকে রক্তাধিক্য ক্ষেত্রে বেলেডোনা ও গ্লোনইন তুল্য। হৃৎপিন্ডের রোগে – অ্যাকোনাইট, অ্যাকটিয়া, অ্যামিল-নাই, ক্যালুমি ল্যাকেসিস, ন্যাজা, ও স্পাইজিনিয়া তুল্য।
বৃদ্ধি।– বেলা ১১টায়; রাত্রি ১১টায়, বাঁদিকে শুইলে; সিঁড়িতে উঠলে ও হাঁটিলে।
হ্রাস। – খোলা বাতাসে। শক্তি।-মূল-আরক, ৩, ৬, ২০০, ১০০০ ক্রম।