বোরাক্সভেনেটা (Borax Venata)

পরিচয়।এটার অপর নাম সোহাগা।

ব্যবহারস্থল।-শিশুদের মুখে ঘা, পুঁয়ে পাওয়া। দাঁত উঠবার সময় শিশুদের রোগ, উদরাময়, কাণের পুঁজ, চোখের বিভিন্ন রোগ, স্তনের বোঁটায় ক্ষত, নৌকা বা গাড়ীতে উঠলে বমন বা গা-বমি-বমি, একজিমা, প্রস্রাবের উগ্র গন্ধ, প্রদর, মাথাঘোরা প্রভৃতি। }

ক্রিয়াস্থল।-স্নায়ুমন্ডল, বিশেষতঃ পাকস্থলী, অস্ত্রাদির কোমল আবরণীর উপর উত্তেজনা জন্মায়। রোগিণীর নাসাগ্র লাল দেখায় (অরাম, সিফিলিনাম)।

প্রদর্শক লক্ষণ।– নিম্নগতিতে অত্যন্ত ভয়। নীচে নামিবার সময় মাথাঘোরে। শিশুকে কোল হতে বিছানায় শোয়াবার সময় ভয় পেয়ে কাঁদিয়ে উঠে। আকস্মিক শব্দ বা বজ্রধ্বনিতে বা বন্দুকের শব্দে ভয় পেয়ে জাগিয়া উঠে। মাথার চুল ডগের দিকে জড়িয়ে যায়, খোলা যায় না। মুখের উপর মাকড়সার জাল জড়িয়ে আছে মনে করে। হাতে মাকড়সার জাল লেগে আছে মনে করে। শিশুদের মুখে ঘা। মুখ গরম। মুখে টাটানি ব্যথা। প্রস্রাব গরম। শিশু প্রস্রাবের পূর্বে কাঁদিয়ে উঠে। প্রস্রাব করতে সে ভয় পায়। কাশির সঙ্গে নিঃশ্বাস ভিতরে টানিবার সময় বুকে সূঁচ-ফোটান ব্যথা। হাতের ও পায়ের আঙ্গুলে একজিমা। সেইসঙ্গে নখ উঠে যায়। ঘুমাতে ঘুমাতে ভয় পেয়ে কাঁদিয়ে উঠে। শ্বেত-প্রদর। ডিমের সাদা অংশের মত, মনে হয় খানিকটা গরম পানি বা মাড় বের হইল। শিশু ঘুমাতে ঘুমাতে চমকিয়ে উঠে ও কাঁদিয়ে উঠে। স্ত্রীলোকের স্তনের বোঁটায় ঘা, রক্ত পড়ে। ঋতুকালে প্রসববেদনার মত বেদনা, একটা চামড়ার মত শক্ত রক্ত বা ঝিল্লীখন্ড বের হলে নিবৃত্তি। স্তনদুধ বিস্বাদ ও দড়া দড়া; সন্তান সেটা পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। গলায় সাদা আঠার মত গয়ার, অনেক চেষ্টা করে তা বের হয়। কাণ হতে পুঁজ পড়ে। সেইসঙ্গে কালা। কাণে ভো ভো শব্দ। শিশুর মাথা গরম। মুখ গরম। হাত গরম। বেলা ১০টার সময় মাথাধরা। গা-বমি-বমি করে ও শরীর কাঁপে। চোখের পাতায় ঘা হয়ে সেটার চুলগুলি সকালে একসঙ্গে জড়িয়ে যায়। চর্মরোগে বড় বড় মামড়ি পড়ে, সেটার নীচে শুষ্ক। (মেজেরিয়ামে মামড়ীর নীচে ঘন পুঁজপূর্ণ)।

মন।ডাঃ অ্যালেন বলেন, রোগী অত্যন্ত স্নায়বিক প্রকৃতির। নিম্নগতিতে ভয় ও শব্দমাত্রেই ভয়; সামান্য শব্,ে চীৎকার করে উঠাই ঔষধটির সিদ্ধিপ্রদ লক্ষণ। বজ্রপাতের শব্দেও ভয়। স্নায়বিকতা অত্যধিক বলে রোগী কোনপ্রকার শব্দই সহ্য করতে পারে না, কেউ কাশলে, হাঁচিলে, চীৎকার করলে, এমন-কি দিয়েসলাইয়ের কাঠি জ্বালিলেও শিশুরোগী ভয়ে অস্থির হয়ে উঠে। তারা বিনা কারণেই নিদ্রা হতে জাগিয়া বিছানা বা নিকটে যে থাকে তাকে জড়িয়ে ধরে। নাক্স ভমিকা, রোগীও স্নায়বীয় প্রকৃতির এবং সে শব্দ, স্পর্শ, সহ্য করতে পারে না।

বক্ষরোগ, প্লুরিসি পুরাতন কাশি। ডানদিকের বুকের উপরের অংশে সূঁচ-ফোটান ব্যথা তার জন্য রোগী নড়িতে পারে না। নিঃশ্বাস নিতে পারে না। গয়ারে ভ্যাপসা গন্ধ, নরম মাটী বা ধূলার গন্ধ। শুইলে দম বন্ধ হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ লাফাইয়া উঠে। হাতে যেন মাকড়সার জাল আটকিয়ে আছে এমন বোধ। ছুঁচ ফোটান ব্যথা, বিশেষতঃ বক্ষঃরোগে ব্রাইওনিয়া ও কেলি- কার্ব ঔষধেও আছে। ব্রাইওনিয়া রোগীরও নড়াচড়ায় বৃদ্ধি, চুপ করে থাকলেই ভাল বোধ করে আক্রান্ত অঙ্গ চেপে শুইলে উপশম হয়। কিন্তু কেলি-কার্বের বেদনা ব্রাইওনিয়ার বিপরীত, বিশ্রামে এবং ব্যথিত অঙ্গে চেপে শুইলেই বেদনা বাড়ে।

কর্ণ-রোগ।-কাণ হতে দুর্গন্ধ পুঁজ বের হয়। মাথার যন্ত্রণা। কাণে কম শোনে। যতবারই যন্ত্রণা আক্রমণ করে ততবারই শিশু যন্ত্রণায় চমকিয়ে উঠে। মুখ ফ্যাকাসে। নীচের দিকে নামতে ভয়।

ইরিসিপেলাস।-মুখের। মনে হয় মুখের উপর মাকড়সার জাল জড়িয়ে আছে বা ডিমের সাদা অংশ মুখে লেগে সেখান শুকিয়ে গেছে। চড়চড় করে।

চুলে জটা বান্ধা।-চুলে জটা পাকাইয়া গেলে এটা দ্বারা উপকার হয়। জটা কাটিয়া দিলেও পুনরায় জটা পাকাইবে।

মুখের ক্ষত।-জিহবায়, ঠোঁটে এবং তালুর সর্বশেষ ভাগে ক্ষত বা ঘা হয়, ঘায়ের জন্য শিশুর মুখের ভিতর অত্যন্ত গরম। মুখের ভিতর ঘায়ের জন্য স্তন্যপায়ী শিশু মাতৃস্তন্য পান করতে পারে না, স্তন্যপান করার জন্য একবার সেটা ধরে, কিন্তু মুখের ব্যথার জন্য সেটা ছেড়ে দেয়। এরাম- ট্রাইফির শিশু অনবরত সেটা খুঁটিতে থাকে, খুঁটিয়া খুঁটিয়া রক্ত বের করে তথাপি তার খোঁটার বিরাম নেই; ব্রাইয়োনিয়ার শিশুর মুখে অত্যন্ত শুষ্কভাব, মুখের শুষ্কতার জন্য সে দুধ পান করতে পারে না, কিন্তু একটু ভিজিলেই সে দুধ পান করে। মার্কারিতেও ঐপ্রকার ক্ষত আছে, সেইসঙ্গে মুখ হতে প্রচুর লালাস্রাব হয়, আমাশয় থাকে। অ্যাসিড-নাইট্রিকের মুখক্ষতও অত্যধিক, শিশুর মাতৃপিতৃকুলে উপদংশের ইতিহাস থাকলে এবং শিশুর মুখ দিয়ে অনর্গল লালাস্রাব হতে থাকলে কাজ করে।

পুঁয়ে পাওয়া উদর রোগ। শিশুদের দাঁত উঠার সময় উদরাময় সহ জিহবায় ও মুখে ক্ষত, এবং উদরাময়ের সাথে পেটে শূলবেদনা, নিম্নাভিমুখী গতিতে ভয় ইত্যাদি এটার নির্ণায়ক লক্ষণ। বাহ্যে তরল, ফিকা ও সবুজ বা হরিদ্রাবর্ণের, আমময়, কখনও বা দুর্গন্ধযুক্ত ও বিনা বেগে বের হয় বোরাক্সের লক্ষণ। রোগীর মুখমন্ডল ফ্যাকাশে, পাংশুবর্ণ। মুখের ভিতর এবং গলার ভিতর সাদা। শিশু প্রস্রাবকালে চিৎকার করে।

প্রস্রাব রোগ। -শিশু প্রস্রাব করার সময় বড়ই কাঁদে, ঘন ঘন প্রস্রাব করে এবং প্রতিবার কাঁদিয়ে আকুল হয়। এই লক্ষণ লাইকো, সার্সাপেরিলা ও স্যানিকিউলার শিশুতেও আছে। লাইকোপোডিয়ামে নিম্নগতিতে ভয় নেই এবং প্রস্রাবে লাল লাল গুড়া তলানি থাকে, সার্সাপেরিলা শিশুর যন্ত্রণা, প্রস্রাব হয়ে যাবার পরে আরম্ভ হয়, শিশু দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে, বসে প্রস্রাব করতে পারে না। স্যানিকিউলার বাহ্যে-প্রস্রাব অসাড়ে হয়ে যায় এবং শিশুকে বৃদ্ধের মত দেখায়।

সর্দি।-শিশুর নাকের দুইটি ছিদ্রেই চটা পড়ে এবং প্রদাহযুক্ত হয়, ঐজন্য তার নাসাগ্র লাল ও চকচকে হয়। শিশুর প্রথমে ডান নাক শেষে বাম নাক বন্ধ হয়ে যায়। রীতিমত শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলিবার জন্য সর্বদাই নাকের ভিতর আঙ্গুল দিয়ে পরিষ্কার করে থাকে। কাণের পুঁজরোগেও এটা কখন কখনও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ডাঃ ন্যাশ ১৪ বৎসরস্থায়ী কাণের পুঁজরোগ ইহাদ্বারা আরোগ্য করেছিলেন।

স্ত্রীরোগ।– ঋতুস্রাব উপযুক্ত সময়ের বহু পূর্বে আবির্ভাব হয়, এটার স্রাব পরিমাণে যথেষ্ট এবং তলপেট ব্যথা ও বিবমিষা থাকে, চর্মখন্ডের মত জমাটবাধা পদার্থ বের হয়ে উপশম হয়। সিঁড়ি দিয়ে নীচের দিকে নামিতে মাথাঘোরে। শ্বেত প্রদর প্রচুর ঠিক ডিমের সাদা অংশের মত চকচকে এবং গরম। হতে হতে খানিকটা পানির মত বের হয়। তুলনীয়।-বোডিষ্টা ডিমের লালার মত হড়হড়ে স্রাব, কিন্তু বোরাক্সের মত এটার স্রাব গরম নয়। ক্যাল্কেরিয়া ফস-ডিমের লালার মত স্রাব। ঋতুস্রাব যখন কমে আসে, তখনই এটার স্রাব বৃদ্ধি হয়। ফেরাম-আয়োডেটাম- মন্ডের মত স্রাব। যোনিতে ফোলা ফোলা এবং চুলকানি। অ্যারেলিয়া- পানির মত অথবা চটচটে শ্লেষ্মার মত স্রাব, হাজাকর। অত্যধিক স্তন-দুধ, শিশু যে স্তনটি পান করে তার বিপরীত স্তনটি ব্যথা করতে থাকে। বোরাক্সের স্তনদুধ অতিশয় ঘন ও বিস্বাদ। পানির ভিতর ফেলিলে সেটা ডুবিয়া যায়। স্তনে ক্যান্সার রোগ। মাতার স্তনদুধের দোষে শিশু পীড়িত হয়ে পড়ে।

চর্মরোগ।-সামান্য একটু স্থান আঁচড়াইয়া গেলে সেখানে পুঁজ জন্মায় (হিপার, ক্যালেন্ডুলা, মার্কারি)। পুরাতন ক্ষতগুলি পেকে উঠে (অ্যাসিড-ফ্লু, কষ্টি, গ্র্যাফা)। মুখের উপর বিসর্প রোগেরও এটা ঔষধ। ক্ষতের উপর খুব শীঘ্র শীঘ্র চটা পড়ে কিন্তু চটার নীচে পুঁজ জমে না।

চোখের অসুখ।-চোখের পদ্মগুলতে জটা বাঁধে, একপ্রকার শুল্ক আঁইসবৎ পদার্থ বের হয়।

নিদ্রা।– বোরাক্স-রোগীর রাত্রি ৩টার সময় ঘুম ভেঙে যায় এবং মস্তিষ্কের উত্তাপ জন্য তার আর ঘুম হয় না। শিশু ঘুমাতে ঘুমাতে মধ্যে মধ্যে চীৎকার করে উঠে এবং মাতাকে জড়িয়ে ধরে। স্ত্রী-রোগিণী সঙ্গম বিষয়ক স্বপ্ন দেখে।

বৃদ্ধি।– নিম্নগতিতে; শব্দে; তামাকের ধূমপানে; ঋতুকালে; প্রস্রাবের পূর্বে বর্ষাকালে; সকাল ১০টায় (মাথা ধরা); খাওয়ার সময় (মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে)।

হ্রাস। চাপ দিলে; সন্ধ্যাকালে; ঠান্ডা আবহাওয়ায়; যন্ত্রণার স্থান হাত দিয়ে ধরলে।

শক্তি।– ৩x, ৬x, ৬ শক্তি, প্রদর বা স্ত্রীরোগে উচ্চশক্তি।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!