ব্যারাইটা–কার্ব্বোনিকা (Baryta Carbonica)
পরিচয়।-এটা এক প্রকার খনিজ দ্রব্য। এটা অ্যান্টিসোরিক ও টিউবারকুলার ঔষধ।
ব্যবহারস্থল। -মস্তিষ্কের বিকৃতি, মস্তিষ্কের খর্বতা, স্মৃতিশক্তির অভাব ও দুর্বলতা, টন্সিল প্রদাহ, অর্বুদ, সন্ন্যাস, টাকপড়া, কোষময় অর্বুদ, পায়ে ঘাম, আঁচিল, হৃত্যন্ত্রের রোগ, আঙ্গুলহাড়া, পক্ষাঘাত, গলক্ষত, কর্ণমূল-গ্রন্থি-প্রদাহ রোগে উপযোগী।
ক্রিয়াস্থল। টন্সিলের উপর প্রধান ক্রিয়া। ডাঃ অ্যালেন বলেন -বৃদ্ধদের ধমনীর অর্বুদাদি দাদ রোগে এবং সন্ন্যাস রোগে এটা চমৎকার ঔষধ। মস্তিষ্কের ক্ষীণতাবশতঃ পক্ষাঘাত রোগে ও জিহবার পক্ষাঘাত রোগে উপযুক্ত ঔষধ। ডাঃ অ্যালেন বৃদ্ধদের ছানিরোগে এবং অতিরিক্ত সম্ভোগলিপ্সা থাকা সত্ত্বেও শক্তিহীনতা রোগে এটার প্রয়োগ ব্যবস্থা দেন। ব্যারাইটা-কার্ব বৃদ্ধ ও শিশুদের রোগে ব্যবহৃত হয়। খর্বাকৃতি মূৰ্চ্ছাবায়ুগ্রস্তা স্ত্রীলোকদের ঋতুস্রাব খুব কম হলে এবং তাদের গাত্রতাপের অভাবের জন্য সর্বদা শীত-শীত ভাব থাকলে উপযোগী ঔষধ।
প্রদর্শক লক্ষণ।-শিশু ও বৃদ্ধদের রোগে উপযোগী। ক্রফিউলা ধাতুগ্রস্ত শিশু। মন ও শরীরের স্বাভাবিক বিকাশের অভাব। আকারে বেঁটে। বৃদ্ধ। প্রষ্টেট গ্ল্যান্ড বড় ও শক্ত। ঠান্ডা সহ্য হয় না। পায়ে দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম। বালকের মত কথাবাৰ্ত্তা কহে (Childishness)। শিশু অপরিচিত লোকের সামনে যেতে চায় না। এপোপ্লেক্সি। স্মৃতিশক্তির হ্রাস। মুখের উপর যেন মাকড়সার জাল জড়িয়ে আছে। ঘুম ভাঙ্গিবার পর দেখে মুখ বড় শুষ্ক। টন্সিল পাকার প্রবণতা। গিলবার সময় গলায় ব্যথা, শুধু ঢোঁক গিলবার সময় বেশী ব্যথা। তরল পদার্থ ছাড়া অন্য কিছু গিলতে পারে না। একটু ঠান্ডা লাগলেই গলায় ব্যথা। গ্ল্যান্ডগুলি বেড়ে উঠে। অতিরিক্ত বক্তৃতা করার জন্য বা গান করার জন্য গলার রোগ। কোষ্ঠকাঠিন্য, মল শক্ত ও ডেলা ডেলা। অর্শের বলি। প্রস্রাব করার সময় বলি ঝুলে পড়ে। বাঁদিকে শুইলে বুক ধড়ফড় করে। বুক ধড়ফড় করার বিষয় চিন্তা করলে বুক ধড়ফড় করা বাড়ে। পায়ে দুর্গন্ধ ঘাম। পায়ের ঘাম রুদ্ধ হয়ে (suppressed) হৃৎরোগ। ঘাড়ের নিকট টিউমার (fatty)। হাতের কব্জীতে টিউমার (cystic), টিউমারে জ্বালা। হাঁটু হতে অন্ডকোষ পর্যন্ত শূন্যভাব, অসাড় ভাব (numbness)। মনে হয় যেন হাঁটুর উপর ভর দিয়ে হাঁটতেছেন। মাথার চুল উঠে যায়। মাথার মধ্যস্থল হতে চুল উঠে যায়। হাতের পিছন হতে ছাল উঠে। আঙ্গুলের ডগা হতে ছাল উঠে। রাত্রে ঘুমাবার সময় মুখ হতে লালা পড়ে। ঋতুর পূর্বে নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। খাওয়ার পর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময়েই বাম অঙ্গ আক্রান্ত হয় (পক্ষাঘাত)।
গঠন ও মন।-ব্যারাইটা-কার্ব শিশু ও বৃদ্ধের রোগে বেশী ব্যবহৃত হয়। শিশুর বয়সের সাথে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হয় না। বুদ্ধি অত্যন্ত স্কুল, মুখ হতে প্রায়ই লালাস্রাব হয়, প্রায়ই সর্দি লেগে থাকে, স্মরণশক্তি মোটেই নেই, বোকাটে ভাবাপন্ন, অপরিচিত লোকের কাছে মোটেই আসতে চায় না, ঘরের কোণে চুপটি করে বসে থাকে। বৃদ্ধদিগকে দেখিলে মনে হবে এদের ভাব বা কথাবার্তা শিশুর মত। মনে করে যেন লোকে তাকে উপহাস করছে। রোগীর ঠান্ডা কোনরূপেই সহ্য হয় না, সামান্য ঠান্ডা লাগলেই টন্সিল আক্রান্ত হয় এবং পেকে পুঁজ জন্মে। তুলনীয়। -আর্জেন্টাম নেইট্রিকাম -শিশুর মর্কটের মত চেহারা। দেহ ক্ষীণ, মুখ চোপ্সানো, চোখ কোটরাগত, মাংস ক্ষয়প্রাপ্ত। ক্যাল্কেরিয়া-কার্ব-শিশু জীর্ণশীর্ণ, বয়স অনুযায়ী পুষ্টি ও বৃদ্ধি নেই, হাড়ের পুষ্টি নেই, মাথার হাড় পাতলা। সোরিণাম-ঠান্ডা হাওয়া সহ্য হয় না, গরমের দিনেও গায়ে কাপড় ঢাকা দিয়ে রাখে। ঋতু পরিবর্তনে অসুস্থ হয়ে পড়ে, প্রায়ই সর্দি লাগে।
শিরঃরোগ।-মাথার যন্ত্রণায় মনে হয় যেন কেউ জোর করে তার কপাটিকে নীচের দিকে চেপে ধরতেছে, মুক্ত হাওয়ায় ও ঠান্ডা হাওয়ায় উপশম লাভ করে, কিন্তু এটার রোগী অত্যন্ত শীতকাতর।
চোখের অসুখ।-ডাঃ এলেন ছানিরোগে (বিশেষতঃ সন্ন্যাস রোগের পর) এটা ব্যবহার করতে উপদেশ দেন : সে মনে করে ধোঁয়ার ভিতর হতে দেখছে, এটা ব্যতিরেকে কর্ণিয়ায় ক্ষত, চোখের পাতায় দানা দানা পড়া, চোখের মধ্যে ক্ষত ইত্যাদি। যে কোন রোগেই এই ঔষধ প্রয়োগ করার সময় এটার ধাতুগত লক্ষণ ও মানসিক লক্ষণ দেখে প্রয়োগ করবে।
শিশু–রোগ।-তার সর্বাঙ্গীণ পুষ্টির অভাব, যতই সে খায়-দায়, কিছুতেই শরীর ভাল হয় না, মনোবৃত্তির বিকাশের অভাব সকলের চাইতে বেশী, যা শিখান যায়, সকলই ভুলে যায়। ভয়ানক শীতকাতুরে, কোনপ্রকার ঠান্ডা লাগলেই গাল-গলা ফুলে যায়, টন্সিলে ব্যথা হয়। মুখ হতে অত্যন্ত লালাস্রাব হতে থাকে, শুইতে বসতে লালা পড়ে জামা, বিছানা, বালিশ প্রভৃতি ভিজে যায়। তারপর শরীরের সাথে তুলনায় এটার রোগীর মাথাটি বড়, তার পায়ে অত্যন্ত দুর্গন্ধ ঘাম হয়। সাইলিসিয়া শিশুরও মাথাটি অত্যন্ত বড়, পায়ে ঘাম হওয়াও আছে, কিন্তু সাইলিসিয়া- শিশুর মাথায় প্রচুর ঘাম হয়, আর ব্যারাইটার মাথায় ঘাম মোটেই হয় না।
সন্ন্যাস রোগ। -বৃদ্ধদের সন্ন্যাসরোগে ব্যারাইটা কার্ব বিশেষ উপযোগী ঔষধ। সন্ন্যাস – রোগের পর বৃদ্ধদের স্মৃতিশক্তির হ্রাস, বৃদ্ধ হয়েও চপলমতি বালকের মত মতিগতি, ছোট ছোট ছেলেদের সঙ্গ পছন্দ করে। এটার বৃদ্ধগণ স্থূলকায় এবং সহজেই ঠান্ডা লাগে।
টন্সিল প্রদাহ।– সামান্যমাত্র ঠান্ডা লাগলে যাদের টন্সিল আক্রান্ত হয়, এমন কি পেকে পুঁজ হয়, টন্সিল আক্রান্ত হয়ে ফুলা ভাব কমে গিয়াও কতকটা গ্রন্থিস্ফীতি হতে যায় এবং পুনরায় ঠান্ডা লাগলে ঐস্থান আক্রান্ত হয়ে পড়ে, তাদের পক্ষে ব্যারাইটা উপযোগী। রোগের বৃদ্ধিকালে অন্য লঘুক্রিয় ঔষধ দিয়ে, পরে ব্যারাইটা-কার্ব ব্যবহারে প্রবণতাটি দূর হয়। সদৃশ।-ব্যারাইটা-মিউর- টন্সিলের স্ফীতি এবং এমন বার বার হয়, টন্সিলে পুঁজ হয়। কোনায়াম টন্সিল বড় এবং শক্ত হয়, সহজে পাকেও না, ফাটেও না। হিপার সালফার – টন্সিল বড় হয়, পুঁজ হওয়ার উপক্রম এবং পুজ হলে, সেটা ফাটাবার জন্য ব্যবহৃত হয়।
মুখের রোগ ও গলার ক্ষত। –ডাঃ অ্যালেন বলেন, যাদের মধ্যে মধ্যে গলায় ক্ষতরোগ হয়, ঘা হয়ে মুখ হতে দুর্গন্ধ বের হয়, তাদের রোগে এটা উপযোগী !
পক্ষাঘাত।-বৃদ্ধদের পক্ষাঘাত, বিশেষতঃ সন্ন্যাস রোগের পর জিহবার ও মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত। পক্ষাঘাত শরীরের নিম্নদিকে আরম্ভ হয়ে ঊর্ধ্বদিকে চালিত হয়। মনে করে যেন মুখে মাকড়সার জাল লেগে আছে, সেটা ক্রমাগত মুছিয়া ফেলিলেও যায় না। মুখ আংশিক খোলা থাকে এবং লালা পড়ে। সবসময় শুয়ে থাকতে চায়। মুখের মাংসপেশীর পক্ষাঘাত।
বৃদ্ধি।– বসে থাকবার সময়; যে দিকে ব্যথা সেইদিকে শুইলে; ভোজনের পর আক্রান্ত স্থান পানিতে ধুইলে; ঠান্ডা হাওয়ায়; বর্ষাকালে; গরম খাদ্যে; মানসিক উত্তেজনায়; অনেক লোকের মধ্যে। হ্রাস।-খোলা হাওয়ায় বেড়ালে; একলা থাকলে; ঠান্ডা খাবারে। ব্যারাইটা কার্ব- সোরিণাম, সাল্ফার এবং ব্যাসিলিনামের পূর্বে ও পরে উত্তম কাজ করে। ক্যাল্কেরিয়ার পরে এই ঔষধ প্রয়োগ করা কর্ত্তব্য নয়।
শক্তি।– ৩x, ৬, ৩০, ২০০ ক্রম।