অ্যাসারাম-ইউরোপিয়াম (Asarum Europaeum)
পরিচয়।—ইউরোপ-জাত স্নেক-রুট বৃক্ষ।
ব্যবহারস্থল। —উদরাময়, বাধক, মূৰ্চ্ছাবায়ু, সান্নিপাতিক জ্বর, মাদকতা, সরলান্ত্রের স্থানচ্যুতি, সর্দি, নানাবিধ মানসিক বিকৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে উপযোগী।
প্রদর্শক লক্ষণ।— কাপড় বা কাগজের উপর আঁচড়ালে করকর শব্দ হয়, রোগী সে শব্দ সহ্য করতে পারে না। শরীর হাল্কা বোধ, ভাবে বায়ুর মধ্যে চলছে বা ভাসছে। দৃষ্টিশক্তির হ্রাস, বিশেষতঃ উজ্জ্বল আলোকে। মাসিক ঋতুকালে পিঠে ভয়ানক ব্যথা, নিঃশ্বাস ফেলতে পারে না। মদ খাওয়ার উগ্র আকাঙ্ক্ষা। বগলের ঘামে টক গন্ধ। যক্ষ্মারোগীদের অনবরত খুকখুকে কাশি। গর্ভ অবস্থায় গা-বমি-বমি। প্রদরস্রাব হলদে, চটচটে, দড়ির মত বেড়ে যায়। উদরাময়, মলে চটচটে মিউকাস। মলের সঙ্গে ঘন কাল রক্ত; সর্দি, সেই সঙ্গে হাঁচি। কানে কম শোনে। ধূমপানের সময় ধূমে তিক্ত আস্বাদ।
মন। —এটার রোগী কোন প্রকার শব্দ সহ্য করতে পারে না, এমন কি একখন্ড কাগজের ঘষার শব্দেও বিমর্ষ ও উত্তেজিত হয়ে উঠে। রোগী স্নায়ুপ্রধান ও উদ্বেগশীল। রোগীর শরীর কাঁপিয়া কাঁপিয়া উঠে এবং সর্বদা শীত বোধ করে। আবার কখনও শ্রবণশক্তিও ক্ষীণ হয়। ভাবে কানে ছিপি আটা রয়েছে। নাক্স ভমিকার সঙ্গে এটার অনেকাংশে তুলনা চলে। নাক্স ভমিকার মেজাজ খিটখিটে স্নায়ুপ্রধান এবং রোগী উদ্বিগ্ন, শব্দ এবং স্পর্শ সহ্য করতে পারে না। অ্যাসারামে শরীর হালকা বোধ হয়; মনে হয় সে বায়ুর মধ্যে চলছে বা ভাসছে, ভ্যালেরিয়ানার রোগীও নিজেকে হালকা মনে করে, সে যেন বাতাসে উড়ছে।
শিরঃরোগ। মাথার যন্ত্রণার সময় রোগী মনে ভাবে তার দুইদিকের রগ বা শিরা যেন মাথার ভিতর আকৃষ্ট হচ্ছে। মাথার যন্ত্রণা দুপুর বেলা, শুয়ে থাকলে বা হাওয়ায় বসে থাকলে উপশম বোধ করে।
চোখের অসুখ।— পড়বার সময় চোখে চাপবৎ বেদনা হয়। মনে হয় যেন চোখ দুইটি বের হয়ে যাবে। সেই সময়ে চোখ ঠান্ডা পানিতে ধুইলে আরাম বোধ করে। দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা বা দৃষ্টিহীনতা দূর করতে এই ঔষধ নেট্রাম-মিউর ও ফাইজসটিগমার মত ফলপ্রদ।
কর্ণ-রোগ।–অত্যধিক স্নায়বিক উত্তেজনার জন্য রোগী কোন প্রকার শব্দ সহ্য করতে পারে না, কাগজের সামান্য খড়খড় শব্দেও বিরক্ত হয়। আবার শ্রবণশক্তির হীনতায়ও এটা কার্যকরী, রোগী মনে ভাবে কেউ তার কানের ভিতর ছিপি আঁটিয়া রেখেছে। ইল্যান্সের রোগী প্রথম বেশ স্পষ্টভাবে শুনতে পায় শেষে হঠাৎ রাত্রে কালা হয়ে যায় –কিছুই শুনতে পায় না, কানের ভিতর খটখট শব্দ হতে থাকে। ফেরাম-মেটাসিকামের রোগী সামান্য প্রতিবাদও সহ্য করতে পারে না, সামান্য কারণে রাগান্বিত হয়, সামান্য শব্দও তার নিকট অসহ্য। নাক্স ভমিকা (মানসিক লক্ষণ দেখুন)।
সর্দি। শুষ্ক সর্দির জন্য বাম নাকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং নাকের ভিতর সুড়সুড় করে এবং হাঁচিতে পানির মত শ্লেষ্মা বের হয়। হাঁচি হতে আরম্ভ হলে অনবরত হাঁচি হতে থাকে।
অজীর্ণ। —ইপিকাকের মত অনবরত গা-বমি-বমি করে, ঐ গা-বমি-বমি খাওয়ার পর বৃদ্ধি হয়, যতই গা-বমি-বমি বাড়িতে থাকে ততই তার মদ্যপান করার প্রবল ইচ্ছা হয়। রাত্রে খুব মাতলামী করে, তারপর ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙ্গিবার পর পেটে ভয়ানক যন্ত্রণা হতে থাকে। গর্ভবতীদের বিবমিষাতেও এটা কার্যকরী। মাঝে মাঝে অম্ল ও হলুদবর্ণের বমি করে। অজীর্ণ রোগ, গন্ধহীন, দড়ির মত লম্বা ও শ্লেষ্মাময় মলত্যাগ করে। কখন কখনও তরল মলের ভিতর শক্ত শক্ত শ্লেষ্মা বা ছোট ছোট ক্রিমিও দেখা যায়। মলত্যাগের পূর্বে ও সময়ে পেটে কর্ত্তনবৎ বেদনা। প্রচুর বায়ু নিঃসরণ বেদনার উপশম। (রাত জাগা, মাতলামী করা, গর্ভবতীদের বমি ও পেটে বেদনায় এটাকে নাক্স ভমিকার সঙ্গে তুলনা করা যায়)।
কাশি। —এটার রোগীর গলায় প্রচুর শ্লেষ্মা জমে থাকে, ঐ শ্লেষ্মা তুলতে ভয়ানক কষ্ট হয়, কাশবার পূর্বে গলার ভিতর খুব সাঁই সাঁই করে। যক্ষ্মারোগীদের খুকখুকে কাশির জন্য কেউ কেউ এই ঔষধ অনুমোদন করেন। অ্যান্টিম-টার্ট এবং জ্যাষ্টিসিয়ার সঙ্গে তুলনীয়।
স্ত্রীরোগ। অত্যন্ত স্নায়বিক দৌর্বল্যগ্রস্তা স্ত্রীলোকদের গর্ভপাতের উপক্রম হলে অ্যাসারাম দেওয়া ভাল। ঋতুস্রাব শীঘ্র শীঘ্র হয় এবং এটা অনেকদিন পৰ্য্যন্ত থাকে। ঋতুস্রাবের সময় কোমরে এরূপ সাংঘাতিক বেদনা হয় যে, রোগিণী নিঃশ্বাস ফেলতে পৰ্য্যন্ত পারে না।
স্নায়বিক দৌর্বল্য।–সন্ধ্যাবেলা এত দুর্বল ও অবসন্ন হয়ে পড়ে এবং বমি-বমি হতে থাকে যে কিছুতেই উঠে বসতে পারে না।
জ্বর। —জ্বরের সময় সর্বদা শীত বোধ করে; এত শীত যে, রোগিণী গরম ঘরের ভিতর কাপড় চাপা দিয়ে রাখলেও শীতের হ্রাস হয় না। জ্বর হওয়ার সময় একটি অঙ্গ যেন বরফের মত ঠান্ডা হয়ে যায়। মিনিয়্যান্থিস—শীত প্রবল এবং বহুক্ষণ স্থায়ী, অতিরিক্ত শীতলতা, পেটে, পায়ে ও নাকের মাথায় বেশী অনুভূত হয়। নাক্স ভমিকা—শীত, উত্তাপ, ঘাম—জ্বরের সকল অবস্থাতেই শীত শীত ভাব।
বৃদ্ধি। শীতকালে; শব্দে; বিকালে; উজ্জ্বল আলোকে; ঠান্ডা শুষ্ক বায়ুতে; ঋতুর পূর্বে ও পরে।
হ্রাস। শুইলে; বর্ষাকালে উষ্ণ বায়ুতে।
শক্তি। ১x, ৬, ৩০, ২০০।