আর্জেন্টাম-মেটালিকাম (Argentum Metallicum)

পরিচয়। বিশুদ্ধ রৌপ্য হতে প্রস্তুত হয়।

ব্যবহারস্থল। —পারদের মন্দ ফলের জন্য উপাস্থি, অস্থিবন্ধনীর রোগ, বাম বক্ষঃস্থলের দুর্বলতা, গায়ক ও রক্তাদের স্বরভঙ্গ, স্বরযন্ত্র-প্রদাহ ও গলার ভিতর বেদনা প্রভৃতি রোগে প্রধান ব্যবহার। রাত্রিকালে হৃদপিন্ডে অত্যন্ত স্পন্দন, মাথাঘোরা, মাথায় শূন্যতা বোধ, চোখের প্রদাহ, শয্যামূত্র, বহুমূত্র, মৃগী, অস্থি-সন্ধিতে অর্বুদ; যক্ষ্মাকাশি, স্বপ্নদোষ, জরায়ুর ক্যান্সার প্রভৃতি রোগে ব্যবহৃত হয়।

প্রদর্শক লক্ষণ।—লম্বা, পাতলা চেহারা। কোপন স্বভাব, খিট্‌খিটে, রাগী। পারদের অপব্যবহার জনিত রোগসকল। হস্তমৈথুনের কুফল ও তার জন্য কোন রোগ। স্বপ্নদোষ, প্রতি রাত্রেই হয়। উত্তেজনা না হয়েই স্বপ্নদোষ। অন্ডকোষে যন্ত্রণা, ঘন ঘন প্রস্রাব ও মূত্রনলীতে জ্বালা। পুরুষের ডান অন্ডকোষ ও নারীর বাম ডিম্বাধার ফোলা ও বেদনাযুক্ত হয়। জরায়ু ভ্রংশ (prolapsus uteri), এটার সাথে বাঁ দিকের ওভেরীতে যন্ত্রণা ও কোমরে ব্যথা। তলপেটে টাটানি ব্যথা। নড়াচড়ায় বেশী।

স্বরভঙ্গ। যারা প্রতিদিন গান করে, যারা বেশী বক্তৃতা করে তাদের স্বরভঙ্গ। কালির সঙ্গে বা কিছু গিলবার সময় গলায় ব্যথা বোধ। বক্তা এবং গায়কের স্বরভঙ্গে কষ্টিকামও তুল্য উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, স্বরভঙ্গের এটা একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। গলার মধ্যে টাটানি বেদনা এবং জ্বালা, স্বরভঙ্গের বৃদ্ধি সকালে। ফস্ফোরাসের স্বরভঙ্গের বৃদ্ধি সন্ধ্যাকালে, কষ্টিকামে কথা বলায় স্বরভঙ্গের উপশম, কিন্তু ফস্কোরাসে কথা বললে স্বরভঙ্গ বেড়ে যায়। পুরাতন স্বরভঙ্গে কষ্টিকামের পরে সালফার বিশেষ ফলপ্রদ হয়ে থাকে। হাসিলে কাশি হয়। বুকে দুর্বলতা বোধ, বাঁদিকে বেশী। চেঁচাইয়া পড়বার সময় হুম্ হুম্ শব্দ করে, গলা খেঁকারী দেয় ও গয়ার তুলিবার চেষ্টা।

কাশি। গয়ার সহজে উঠে। গয়ার চট্‌চটে। দেখতে সিদ্ধ শ্বেতসারের মত। হাঁচিবার সময় নাক হতে পানির মত সর্দি ঝরে। সর্বদা তাড়াতাড়ির ভাব। সময় বড় ধীরে ধীরে কাটে। (আর্জেন্টাম-নাইট্রিকাম এবং ক্যানাবিস ইন্ডিকার রোগীও মনে করে, তার সময় খুব ধীরে কাটিতেছে কিন্তু ককুলাসের রোগী মনে করে তার সময় খুব তাড়াতাড়ি কাটিতেছে (time passes too quickly) অধিকন্তু আর্জেন্টাম-মেটালিকামের মত নেইট্রিকাম রোগীও অত্যন্ত ব্যস্তবাগীশ, সমস্ত কাজ তাড়াতাড়ি করতে চায়, রাস্তায় দ্রুত চলে)। বিষণ্ণ ভাব। মাথার বাঁদিকে বেদনা, ধীরে ধীরে বাড়ে এবং হঠাৎ বন্ধ হয়। মাথায় টাটানি। ব্যবসায়ীগণের মাথার যন্ত্রণা, হাত দেওয়া যায় না। জ্বর দুপুরে হয়। শরীর গরম। মাথা গরম নয়। বুকে বা পেটের উপর ঘাম হয় কিন্তু শরীরের অন্য কোন স্থানে হয় না। পেটের বাঁদিকে হড়হড়, গড়গড় করে।

বহুমূত্র। ঘন ঘন প্রস্রাব যায় ও প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব হয়। মুখ শুষ্ক। জিহবা তালুতে লেগে যায়। গোড়ালী ফুলা। উদরাময় ও আমাশয়। মলত্যাগের সময় মল ফডুডু শব্দে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মৃগী। রোগী লাফাইয়া উঠে। কাছে যাহাকে পায় তাকে মারে। গাঁটে গাঁটে বাত। কনুই ও হাঁটুতে বাত। পা কাঁপে। গোড়ালি ফুলা। লেখকদের আঙ্গুল কাঁপে। নিম্নাঙ্গ দুর্বল ও বেদনাযুক্ত। পুরাতন গণোরিয়া। স্রাব গাঢ়। হলদে বা সবুজ। ঠিক দুপুরের সময় কাশি ও অন্য লক্ষণ বাড়ে। রোগী শীতকাতর

মন। —রোগীর মনে সর্বদাই একটা ভয়, এই বুঝি তার সংন্যাস রোগ বা সর্দি-গর্মি রোগ হইল ও সেইসঙ্গে বুক ধড়ফড়ানি থাকে। নানাপ্রকার দুশ্চিন্তার জন্য এবং অস্থিরতার জন্য রোগী এক স্থানে থাকতে পারে না (ক্যাল্কে, আর্স, জেলসি, ট্যাবেকাম), অত্যন্ত খিট্‌খিটে স্বভাব, কারও সাথে কথাবার্তা বলতে চায় না (ক্যালো, জেলস, গ্লোন) এই ঔষধটি দীর্ঘকায় শীর্ণ এবং খিটখিটে মেজাজের রোগীর জন্য বিশেষ উপযোগী। গায়ক, বুদ্ধিজীবী ব্যক্তি ও ছাত্র যাদের অল্প বয়সেই বৃদ্ধের মত দেখায় এরূপ ব্যক্তি। স্বরভঙ্গ হতেই রোগের প্রসার আরম্ভ হয়।

শিরঃরোগ।—রোগী মধ্যরাত্রের কিছু পূর্বে ভাবে যেন তার মাথা বালিশ হতে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে, অত্যধিক শিরোঘূর্ণনে মনে হয় যেন সে মদ্যপান করেছে (আর্জ-নাইট্রি, বেল, ক্যামো, চিনি-সা, সাইকিউটা, নাক্স, ওপি, ষ্ট্যানাম)। জলস্রোতের দিকে তাকালেও তার মাথা ঘুরিতে থাকে (লিসিন)। সর্দির জন্য বার বার হাঁচি হয় (সাইক্লেমেন, অ্যালিয়াম-সেপা) ও পানির মত শ্লেষ্মা বের হতে থাকে।

গলরোগ। —পেশাদার, গায়ক ও বক্তাদের স্বরভঙ্গের জন্য এটা মূল্যবান ঔষধ (অ্যারাম-ট্রি, সেলিনিয়াম, ষ্ট্যানাম)। সদৃশ। -অ্যারাম-ট্রিফাইলাম — বক্তাদের গলক্ষত, স্বরভঙ্গ, কথা বলতে গেলে নানাপ্রকার স্বর বের হয়। সেলিনিয়াম —অনেকক্ষণ উচ্চৈঃস্বরে কথা বলবার পর স্বরলোপ, বার বার কাশিয়া গলা পরিষ্কার করতে হয়। আর্জেন্টাম-মেটালিকামের রোগী কিছু গিলতে গেলে স্বরনলীর ভিতর বেদনা হয়। উচ্চৈঃস্বরে কিছু পড়বার সময় বার বার গলা পরিষ্কার করে নিতে হয়। স্বরভঙ্গ লক্ষণ থাকলে ফ্যারিঞ্জাইটিস, লেরিঞ্জাইটিস এবং পুরাতন ব্রঙ্কাইটিস রোগের এটা একটি চমৎকার ঔষধ। দেশীয় কন্টিকারী হতে প্রস্তুত সোলেনাম-জ্যান্থো : সকল প্রকার স্বরভঙ্গেই উপকারী। স্বরভঙ্গসহ শিশুদের সর্দি-কাশিতে এটা অধিকতর উপযোগী।

কাশি। —হাসতে গেলে, কথা বলবার সময়, গান গাইবার সময় বৃদ্ধি হয়। (ড্রসেরা, ফস, স্ট্র্যান)। সহজেই চটচটে গয়ের উঠে. রোগী শীতকাতর।

হৃদযন্ত্রের রোগ। -রোগী চিৎ হয়ে শুইলে তার হৃদযন্ত্রের স্পন্দন, কম্পন, ধড়ফড়ানি ইত্যাদি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়; তবে স্পন্দন যতই হোক না কেন, সেটা বেদনাহীন; রোগীর ভয় হয় যেন তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া এখনই বন্ধ হয়ে যাবে’। তুলনীয়। ক্যাক্টাস – রোগী বামপার্শ্বে শুইতে পারে না, তাতে উপসর্গ বাড়ে, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়ানি। ডিজিটেলিস – সামান্য সঞ্চালনেও প্রবল হৃদ্‌স্পন্দন হয়, রোগী মনে করে সামান্য নড়াচড়া করলেই তার হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। নাড়ী দুর্বল, সামান্য সঞ্চালনে দ্রুত হয়। জেলসিমিয়াম (ডিজিটেলিসের বিপরীত অনুভূতি) – রোগী মনে করে একটু নড়াচড়া করলেই তার হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। গ্রিন্ডেলিয়া—ঘুমাতে ঘুমাতে রোগীর শ্বাসবন্ধের মত অবস্থা হয়, উঠে বসে, নিঃশ্বাস ফেলিবার জন্য তাকে আঁকুপাঁকু করতে হয়। লেপিডিয়াম –মনে হয় যেন কেউ হৃৎপিন্ডের মধ্যে ছুরি বিধাইতেছে, অথবা বক্ষঃস্থলের চারিদিক জোরের সঙ্গে শক্ত করে বাঁধা রয়েছে। থিয়া— রোগী বামদিকে শুইতে পারে না (ক্যাক্টাসের মত) হৃৎপিন্ডস্থানে বেদনা, বুকের মধ্যে যেন পার্শ্ব ঝপট্ করছে এমন মনে হয়। (পাখী ঝট্‌ পট্ করার লক্ষণটি ইউফর্বিয়াম ঔষধেও আছে)।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গাদির বেদনা।—এতে শরীরের সর্বস্থানে বেদনা দেখা যায়, সন্ধিসকল দুর্বল এবং ব্যথাযুক্ত। কোন উচ্চস্থান হতে নামিবার সময় হাঁটু ও কনুই, কোমর এবং মেরুদন্ডে বাতের বেদনা, সেই সাথে রোগীর পদদ্বয় ক্ষীণ ও কম্পনশীল ।

মৃগীরোগী অত্যন্ত প্রলাপ বকে উন্মত্তের মত ব্যবহার করতে থাকে। যাহাকে সম্মুখে পায় তাকেই মারিবার চেষ্টা করে। তুলনীয়। —বিউফো—মৃগীর ফিট আরম্ভ হওয়ার পূর্বে রোগী চিৎকার করে উঠে, ফিটের পরে ঘুমিয়ে পড়ে। অ্যাবসিন্থিয়াম প্রথমে মাথাঘোরে, সম্মুখে মূর্ত্তি দেখে, পরে খেঁচুনী আরম্ভ হয়, দাঁতে জিহবায় কামড় লাগে বলে মুখ দিয়ে রক্তমিশ্রিত ফেনা বের হয়।

পুংজননেন্দ্রিয়ের রোগ। -ইন্দ্রিয়ের অস্বাভাবিক ব্যবহারের জন্য অতি অল্পতেই বীর্য্যপাত হয়, প্রায় প্রতি রাত্রেই স্বপ্নদোষ হয়। অতিরিক্ত বীর্য্যপাত হওয়ায় জননেন্দ্রিয় শীর্ণ ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ডান অন্ডকোষটি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও বেদনান্বিত হয়। সদৃশ। —ক্যালেডিয়াম – বহুদিন ধরে স্বপ্নদোষ হেতু বজভঙ্গ। প্রবল সঙ্গমেচ্ছা সত্ত্বেও ক্ষমতাশূন্য। সঙ্গমের সময় লিঙ্গ শিথিল হয়ে যায়। অ্যাগ্লাস-ক্যাষ্টাস –অতিরিক্ত শুক্রক্ষয় করে অকালে ধ্বজভঙ্গ এবং ধাতুদৌর্বল্য। কোনায়াম— সঙ্গমেচ্ছা সত্ত্বেও রোগীর আদৌ ক্ষমতা থাকে না। স্ত্রীলোক দেখিলে অথবা তার কথা চিন্তা করলেও অসাড়ে বীর্য্যপাত হয়। জেলসিমিয়াম – অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ অথবা হস্তমৈথুনের জন্য ধ্বজভঙ্গ, লিঙ্গ শিথিল। ফস্ফোরাস – অতিরিক্ত কামেচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ধ্বজভঙ্গের জন্য লিঙ্গের উত্থান ঠিকমত হয় না। বেলিস-পেরেনিস – অতিরিক্ত হস্তমৈথুন হতে নানাবিধ উপসর্গ। ট্ৰিবিউলাস— অতিরিক্ত হস্তমৈথুন অথবা অপরিমিত স্ত্রীসহবাস করে ধ্বজভঙ্গ।..

প্রস্রাব। —বার বার মিষ্ট গন্ধযুক্ত প্রস্রাব। বহুমূত্র রোগীদের ঘোলা এবং প্রচুর স্রাব।

স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের রোগ। – রোগিণীর বাম ‘ডিম্বকোষ খুব বড় হয়েছে’ এরূপ বোধ। ডিম্বকোষে ব্যথা, ঐ ব্যথা পেটের সম্মুখ হতে নিম্নদিকে পরিচালিত হয়। জরায়ু-চ্যুতি, জরায়ুর ক্যান্সার, জরায়ুগ্রীবার ক্ষত, সেটা হতে দুর্গন্ধ হলুদ রংয়ের স্রাব নিঃসরণ হয় এবং যেখানে স্রাব লাগে সেই স্থান হেজে যায়।

পক্ষাঘাত। উপরের বাহুর (upper arm) আংশিক পক্ষাঘাত, অতিরিক্ত সুরা পানের জন্য পক্ষাঘাত। নানাবিধ দৌর্বল্যের জন্য ডাঃ এ্যালেন এই ঔষধের প্রশংসা করেন। হ্রাস। রাত্রে শুইলে (কাশি)। বৃদ্ধি।–স্পর্শে; নিদ্রাকালে, চাপ দিলে; গাড়িতে চড়লে; গরমে; গান করলে, শুক্রক্ষয় হলে।

শক্তি।–৩০, ২০০, ১০০০।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!