অ্যাপোসাইনাম-ক্যানাবিনাম (Apocynum Cannabinum)

পরিচয়।— একপ্রকার আমেরিকান সিদ্ধি হতে প্রস্তুত।

ব্যবহারস্থল।-শোথ ও উদরী রোগে এটার ব্যবহার দেখা যায়। এটা ছাড়া জরায়ু হতে রক্তস্রাব, বমনেচ্ছা, স্নায়ুশূল, তামাক সেবনের কুফলের জন্য হৃদরোগ, মূত্রকৃচ্ছতা প্রভৃতি রোগেও উপযোগী।

প্রদর্শক লক্ষণ।—নাড়ী ধীরে ধীরে চলে। শোথ-রোগ, সেইসঙ্গে প্রস্রাবের দোষ, ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব অতি কষ্টে বের হয়। অত্যন্ত পিপাসা, গা-বমি-বমি ও উদরাময়। স্ত্রীলোকের ঋতুলোপ কালে রক্তস্রাব। ডেলা-ডেলা রক্ত বের হয়। রোগী ছট্‌ফট্ করে। ঘুম হয় না। সর্বদা একটি বাহু ও একটি পা নাড়ে। বাঁ দিকে পক্ষাঘাত। শিরোঘূর্ণন, যেন মাথাটি টলিতেছে সেইসঙ্গে দৃষ্টিহীনতা। খাওয়ার পর বমি পায়। ঘুমের পর বৃদ্ধি। ডাঃ ক্লার্ক বলেন – এটা পাকযন্ত্রের বিকৃতি জন্মাইয়া হৃৎপিন্ডে ক্রিয়ার অবসাদ আনয়ন করে। এজন্য যকৃৎঘটিত উদরী রোগে সমধিক উপযোগী। ডাঃ বোরিক বলেন—উদরী, শোথ এবং মূত্রযন্ত্রের বিকৃতিতে উত্তম কাজ করে। হৃৎপিন্ডের ধড়ফড়ানি শ্বাসরোধ হওয়ার উপক্রম, সুরাপানের মন্দ ফলের জন্য অসাড়ে মলত্যাগ এবং শোথের সাথে যকৃতের দোষ থাকলেও কার্যকরী।

শোথ।—হৃদরোগ ও মূত্রকৃচ্ছতা রোগের জন্য উদরী ও শোথরোগ। শোথরোগে এপিস রোগীর পিপাসার অভাব, গরম বোধ ও জ্বালা থাকে। অ্যাপোসাইনাম রোগীর প্রচুর পানি পান করার ইচ্ছা, গোসল করতে চায় না—গোসল করলে রোগলক্ষণের বৃদ্ধি হয়। এপিস রোগী গোসল করলে ভাল থাকে। অ্যাপোসাইনাম রোগীর পাকযন্ত্রের উত্তেজনাও দেখা যায়, এইজন্য বমন, গা-বমি-বমি, অক্ষুধা ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়। অ্যাপোসাইনামের রোগী প্রচুর পানি পান করলেও পানি সহ্য হয় না, বমি হয়ে যায়। শোথ বা উদরী রোগে অ্যাপোসাইনামের সাথে আর্সেনিকের লক্ষণেও সাদৃশ্য আছে। উভয় ঔষধেই পিপাসা খুব বেশী। প্রভেদ এই —আর্সেনিক রোগীর মৃত্যুভয়, ছট্‌ফটানি ও অন্তর্দাহ অত্যধিক, যা অ্যাপোসাইনামে নেই। আর্সেনিক রোগী অল্প অল্প পানি পান করে, জিহবা ও ঠোট মাত্র ভিজিয়ে নেয়, কিন্তু অ্যাপোসাইনাম রোগী প্রচুর পানি পান করে। সদৃশ। – অ্যাসেটিক অ্যাসিড— এটার রোগীর হাতের ও পায়ের চর্মের রং মোমের মত ফ্যাকাসে। সেইসঙ্গে অত্যধিক পিপাসা; কিন্তু প্রস্রাবও হয় অত্যধিক। শোখের সাথে উদরাময়, বমন, অ্যাসেটিক অ্যাসিডের নির্ণায়ক লক্ষণ। চায়না—বহুদিন রোগ ভোগের পর বা বেশী রক্তস্রাবাদির পর দুর্বল হয়ে শোধ হলে চায়না কার্যকরী। ব্রাইয়োনিয়া—পা দুটিতে শোথ, দিনে বেশী থাকে, রাত্রিকালে কম পড়ে। কোষ্ঠবদ্ধ ও বার বার প্রস্রাব করার ইচ্ছা। অত্যধিক পিপাসা। ডিজিটেলিস হৃৎপিন্ডের রোগের সাথে শোথ, নাড়ীর স্পন্দন অতি ধীর, আবার সামান্য চলাফেরায় অত্যন্ত দ্রুত বা অনিয়মিত স্পন্দন। রোগী মনে ভাবে তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বুঝি বন্ধ হয়ে গেল। হেলিবোরাস—মূত্রগ্রন্থির দোষের জন্য শোথ, প্রস্রাবে প্রচুর অ্যালুমেন এবং আমাতিসার ইত্যাদির সাথে শোথ। সালফার–কোন চর্মরোগ বসে শোথ হলে বা প্রাচীন শোথ রোগে অথবা ফুসফুসের কোন রোগের জন্য শোথ হলে এবং সেইসঙ্গে বেদনাহীন উদরাময় থাকলেও এটা ফলপ্রদ। ফেরাম —রক্তশূন্যতা বশতঃ শোথ। দেশীয় গাছড়া হতে প্রস্তুত পুনর্নবা বা বোরাভিয়া-রিপেন্স – যাবতীয় শোথ, উদরী এবং বেরিবেরি রোগের একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। মূত্রকৃচ্ছতা এবং অল্প পরিমাণ প্রস্রাব এটার বিশেষ লক্ষণ। হৃদরোগজনিত শোথে বিল্বপত্র হতে প্রস্তুত ঈগলফোলিয়া উৎকৃষ্ট ঔষধ, অপরাহ্ন এবং সন্ধ্যাকালে সমস্ত উপসর্গের বৃদ্ধি।

হাইড্রোসিফেলাস – ছোট ছোট শিশুদের মাথায় পানি জমে শোথ হলে এবং সেইসঙ্গে তন্দ্রাভাব ও নিদ্রালুতা থাকলে এই ঔষধ ফলপ্রদ। অ্যাপোসাইনাম রোগী ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না, ঠান্ডা লাগলেই ফোলা বেশী হয়; এপিস রোগী ঠান্ডা পছন্দ করে। অ্যাপোসাইনাম রোগী পিপাসায় অত্যধিক পানি পান করে, কিন্তু পানি সহ্য হয় না। এপিস রোগীর পিপাসার অভাব এবং বিকারের ভিতর তীব্র চীৎকার করে উঠে।

রক্ত-প্রদর। —স্ত্রীলোকদের অন্ত্রাশয়, হাত ও পায়ের শোথসহ জরায়ু হতে রক্তস্রাব। রক্তস্রাব সবিরাম ও অবিরাম দুই রকমই হতে পারে, অথবা কখনও নির্দিষ্ট সময়ে রক্তস্রাব হতে দেখা যায়। রক্তস্রাবের সঙ্গে বমন, বুক ধড়ফড়ানি এমন-কি বালিশ হতে মাথা তুলতে গেলে মূৰ্চ্ছা হওয়ার উপক্রম।

রজঃলোপ।— অল্প বয়স্কা স্ত্রীলোকদের পেটে পানি জমে বা শোথে হাত-পা ফুলে যাবার পর রজঃলোপে এই ঔষধ ব্যবহার্য্য।

উদরাময়।—ভোরের বেলায় সামান্য উদরাময়, আহারের পর প্রচুর পীতবর্ণের মল। বার বার মলত্যাগের ফলে মলদ্বার হেজে যায়। অর্শ-রোগের সাথে উদরাময়, অর্শরোগী মনে করে মলদ্বারটি যেন কেউ কাঠি দ্বারা ঘুটিতেছে।

সম্বন্ধ —তুলনীয়। অ্যাসেটিক অ্যাসিড, এপিস, আর্স, চায়না, ডিজিটেলিস, ব্রাইয়ো, কলচি ‘হাইড্রোসিফেলাস, হেলিবোরাস। বৃদ্ধি। শীতকালে; ঠান্ডা দ্রব্যে। গাত্রবস্ত্র খুললে; কুইনাইন খাওয়ার পর, রাত্রে; খাওয়ার পর; ঘুমের পর

শক্তি।–মূল-অরিষ্ট ব্যবহার করতে অনেকে উপদেশ দেন। কিন্তু ডাঃ ক্লার্ক বলেন – এটার মূল-অরিষ্ট সাবধানতার সাথে প্রয়োগ করা কর্তব্য, কারণ তাতে রোগী হিমাঙ্গ হয়ে পড়বার সম্ভাবনা। সাধারণতঃ– ৩, ৬, ৩০, ২০০ শক্তি ব্যবহাৰ্য্য।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!