অ্যামোনিয়ামকার্বনিকাম (Ammonium Carbonicum)

পরিচয়। কার্বনেট-অভ-অ্যামোনিয়া।

ব্যবহারস্থল। —শীতকাতুরে ও রক্তস্রাবপ্রবণ রোগীদের পক্ষে এবং বলিষ্ঠ মাংসল দেহবিশিষ্ট ব্যক্তি, বিশেষতঃ স্ত্রীলোক, যাঁরা আলস্যে দিনাতিপাত করেন, যাঁরা অল্পেই কাতর হয়ে পড়েন, তাঁদের নানা প্রকার রোগে এটা কার্যকরী। কফ-প্রধানধাতু ব্যক্তি, সহজেই মূৰ্চ্ছা যান বা যাঁহাদের কথায় কথায় স্মেলিং-সল্ট বা নস্য ব্যবহার করেন ও শীতকালে অতি সহজেই ঠান্ডা লাগে। যে সুন্দরী নারীদের ঋতুর পূর্বে বা প্রারম্ভে কলেরার মত ভেদ-বমি লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে আরম্ভ হয়। যাদের সকালে হাত-মুখ ধুবার সময় নাক হতে রক্তস্রাব হয় ও সর্দিতে নাক বুজে যায়। দিনের বেলা যে শিশুর নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে। ডাঃ ক্লার্ক বলেন – অ্যামন-কার্ব — হাঁপানি; শ্বাসনলী -প্রদাহ; কাশি; অস্থি-বৃদ্ধির জন্য বেদনা; অসাড়ে প্রস্রাব; বিসর্প; অর্শ; মৃগী; ফুসফুসের স্ফীতি ও শোথ; হাম; নাকের বিভিন্ন রোগ;দকর্ণমূল-প্রদাহ; বালাস্থি – বিকৃতি; আরক্ত-জ্বর; আঘাতাদি; মচকান; বক্ষাস্থিত বেদনা; দন্তশূল; মূত্রবিকার; আঙ্গুলহাড়া প্রভৃতি রোগে ব্যবহার্য্য।

প্রদর্শক লক্ষণ।— মেঘাচ্ছন্ন দিনে বা বাদলা আবহাওয়ায় খুবই বদমেজাজী বা খিট্‌খিটে হয়ে পড়ে। বুকে সর্দি জমে অক্সিজেনের অভাববশতঃ নিদ্রার মধ্যে নিঃশ্বাসের জন্য হাঁপিয়ে উঠে। মাথাধরা ও সেইসঙ্গে মনে করে মাথার মধ্যে পানি বা অন্য কোন পদার্থ আছে। চোখ দুর্বল। কেবলই চোখ খুলে ও বন্ধ করে। চোখ হতে খুব পানি পড়ে, সেলাই করা, বই পড়া ইত্যাদি কাজের পর চোখ দুর্বল হয় ও চোখ হতে পানি পড়ে। সাদা জিনিষের দিকে চাইলে চোখের সামনে হলুদে হলুদে বিন্দু (spots) দেখা যায়। সমস্ত দিনই চক্ষে জ্বালা। কানে কম শুনে, কানের মধ্যে চুলকায় ও কান হতে পুঁজ বের হয়। সকালে, খাওয়ার পর, মুখ ধুবার পর নাক হতে রক্ত পড়ে। মুখমন্ডলে সাদা সাদা দাগ। সর্বদাই মুখের চামড়া উঠে। স্রাব ক্ষতকর। সাবিত রক্ত সহজে জমাট বাঁধে না। শিশু গোসল করতে চায় না। দাঁতের যন্ত্রণা, রাত্রের বিছানায় শোয়ার পর। গরম পানিতে অথবা ঠান্ডা হাওয়ায় বৃদ্ধি। টনসিল বড় নীলাভ, তাতে প্রচুর দুর্গন্ধ শ্লেষ্মা বা মিউকাস। গলার মধ্যে জ্বালা, খসে ভাব। নিদ্রিত হলেই হঠাৎ শ্বাসবন্ধের মত অবস্থা হয়, তাড়াতাড়ি উঠে বসতে হয়; এস্থলে গ্রিডিলিয়া-রোবাষ্টা এবং ল্যাকেসিসের সাথে এটার তুলনা করা যেতে পারে। গ্রিন্ডিলিয়ার রোগী নিদ্রিত হইবামাত্র তার শ্বাসের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আসে, “খাবি খায়” আর নিদ্রা যেতে পারে না। ল্যাকেসিসের লক্ষণ নিদ্রার উপক্রমে এবং অনেক সময়ে নিদ্রার পরে বৃদ্ধি হয়। ডিথিরিয়া রোগে নাক বন্ধ থাকে, শিশু মুখ খুলে নিঃশ্বাস লয়; নাক দিয়ে নিঃশ্বাস লওয়া সম্ভব হয় না। ক্ষুধা খুব। খাওয়ার ইচ্ছা খুব, অথচ একটু কিছু খাদ্য খেলেই পেট ভরে যায় (লাইকো)। পেটে শূলবেদনা, সেই সাথে দুইটি স্ক্যাপুলা অস্থির মধ্যস্থলে যন্ত্রণা। বাঁদিকে দ্বার্ণিয়া। প্রস্রাব সাদা বালুময়; রক্তাক্ত; ভোর ৩টায় বা ৪টায় কাশি। শ্বাসকষ্টে উপুড় হয়ে শুইতে বাধ্য হয়। ঠোট দুইটি ‘ নীল হয়ে যায়। কপাল ও মুখের চামড়া কুঁচকাইয়া যায়। মানসিক পরিশ্রমের সময় মুখ গরম হয়ে উঠে। মাথা ও মুখ গরম, গাল দুইটি লাল। গা-বমি-বমি করে, তখন মুখ ফ্যাকাসে। মাথাধরার সঙ্গে ও পেটের ব্যথার সঙ্গে মুখ ফ্যাকাসে হয়। শক্ত দাঁত পড়ে যায়। ফুসফুসে অক্সিজেনের অভাববশতঃ অচৈতন্য ভাব; মুখে যেন কালি মাড়িয়া দিয়েছে (মূত্র-বিকার অবস্থা)। মুখে দুর্গন্ধ, সে তা নিজে বুঝতে পারে। সকালে উঠে মুখ তেঁতো বোধ। ক্ষুধা নেই, সর্বদা পিপাসা। বায়ুতে পেট ফুলে উঠে, মলত্যাগ করে না। সর্দি হয় নেই তবু নাক বন্ধ। উপরে উঠতে শ্বাসকষ্ট। হাত-পা ঠান্ডা মনে হয়। সদৃশ ঔষধ। –কেলি-কার্ব-রাত্রি ২টা হতে ৪টার মধ্যে কাশির বৃদ্ধি, শুষ্ক আক্ষেপিক; কাশতে কাশতে বুকে বমন বা বমনোদ্রেক। অ্যামন-ব্রোম—গলা কুট্‌ট্‌ করে শুষ্ক আক্ষেপিক কাশি, শোয়ার পরে আরম্ভ হয়। রাত্রি তিনটায় রোগী কাশির চোটে উঠে পড়ে।

হৃদপিন্ডের রোগ। ——এটা হৃদযন্ত্রের রোগে বিশেষ উপযোগী ! রোগী সামান্য নড়াচড়া করলে বা একটু উপর নীচ করলে হৃদপিন্ডের ভিতর ভয়ানক ধড়ফড় করে এবং সেজন্য হাঁপাতে থাকে। যখন এই লক্ষণ বৃদ্ধি পায় তখন খোলা জায়গায় যাবার জন্য অস্থির হয়। এবং খোলা বাতাসে গেলে অনেকটা শান্তি পায়। নিদ্রিতাবস্থায়ও দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় (ল্যাকেসিস)। ঠোট দুইটি নীল হয়ে যায় যেন কালি মাড়িয়া দিয়েছে।

শিরঃরোগ।– মাথার যন্ত্রণায় মনে হয় যেন মাথাটি বিদীর্ণ হয়ে যাবে, মস্তক যেন নাড়ছে এবং যে পাশে হেঁট হয় মস্তকটি সেই পাশে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়বে মনে হয়। মাথার চুল পর্যন্ত স্পর্শ করলে যন্ত্রণা হয়। তুলনীয়।-ব্যারা-কার্ব-মস্তিষ্ক আগা হয়ে গেছে এমন অনুভব করে। কার্বো-অ্যানিমেলিস-শিরোঘূর্ণন এবং মস্তিষ্কের জড়তা, যেন মস্তিষ্কের ভিতর ঝড় বইছে। চায়না-মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা, রোগী মনে ভাবে যেন তার মস্তক দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যাবে। সাইকিউটা-ভিরোসা মাথা ঘুরে, রোগী মনে করে যেন তার মস্তিষ্কের সকল পদার্থ টলমল্ করছে। ডিজিটেলিস – দিবারাত্র মস্তিষ্কের ভিতর দপ্‌দপ্ করে, যেন ভিতরে ঢেউ খেলছে। হায়োসায়েমাস – মাথার ভিতর চিন্‌ চিন্ ও দপদপ করে। মস্তিষ্কটি মাথার খুলির ভিতর আলগা রয়েছে এরূপ বোধ। কেলি-কার্ব—মাথার যন্ত্রণার সময় রোগী মনে ভাবে, যেন তার মাথার ভিতর কি একটা পদার্থ নড়ে বেড়াচ্ছে। নাক্স-মস্কেটা—মাথার যন্ত্রণা বাম পার্শ্ব হতে ডান পার্শ্বে চালিত হয়।

চোখের অসুখ। —ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি। সম্মুখের জিনিষও পরিষ্কার দেখতে পায় না। চোখের অতিরিক্ত খাটুনির পর দৃষ্টিক্ষীণতায় এই ঔষধটি আর্ণিকা ও রুটার মত উপযোগী। চোখের উপরের পাতাগুলতে আঞ্জনি (পালস, ষ্ট্যাফি)।

যক্ষ্মা।— অতিরিক্ত অ্যামোনিয়া সেবন বা আঘ্রাণ জন্য রক্তকণিকাসমূহ ধ্বংস হয়ে রোগী ক্রমান্বয়ে দুর্বল ও শীর্ণ হতে থাকলে এবং একবার রক্তস্রাব আরম্ভ হয়ে সহজে সেটা বন্ধ না হলে এই ঔষধটি কার্যকরী। মন্দজ্বর, রক্তউঠা, দুর্বলতা, ভোরের দিকে অত্যধিক কাশি, শ্বাসনলীতে শ্লেষ্মা জমে ঘড়ঘড় শব্দ।

ব্রঙ্কাইটিস। পুরাতন ব্রঙ্কাইটিস রোগেও এটা ফলপ্রদ ঔষধ— যদি দেখা যায় গলার ভিতর সাঁই সাঁই বা ঘড়ঘড় করছে অথচ শ্লেষ্মা বা গয়ার কিছুই উঠছে না, আর যদিই বা কিছু বের হয়, তা অতি সামান্য, রোগী মনে করে তার গলায় চুল বা পালক আটকিয়ে আছে এবং সেজন্য কাশি হচ্ছে। কাশির সাথে রক্ত বের না হলেও রোগী রক্তের গন্ধ পায়। শীতকালে ঘন ঘন সর্দি পায়। রোগী শ্বাসরোধের মত বোধ করে নিদ্রা হতে জাগ্রত হয়। জিহবায় দুৰ্গন্ধ। তুলনীয়। — হিপার-সালফার, নেট্রাম মিউর এবং সাইলিসিয়া—এই তিনটি ঔষধেও রোগী মনে করে তার গলার ভিতর চুল বা পালক আটকিয়ে আছে, সেজন্য গলা খুস্খুস করে কাশি হয়। হিপার-সাম্ফার ও সাইলিসিয়ার রোগী শীতকাতর, ঠান্ডা সহ্য হয় না। নেট্রাম-মিউরের রোগী ঠান্ডা ভালবাসে; মুক্ত বায়ু এবং ঠান্ডা পানিতে গোসল পছন্দ করে

মেনিঞ্জাইটিস।— রোগের প্রথমাবস্থায়ও অ্যামন-কার্ব উপযোগী। রোগী অজ্ঞান অচৈতন্য হয়ে পড়ে, সর্বশরীর বরফের মত ঠান্ডা বোধ, গায়ের চামড়া নীল, নাড়ী দুর্বল ও লুপ্তপ্রায়। ঠোট দুইটিতে যেন কালি মাড়িয়া দিয়েছে। তুলনীয়।—এপিস—প্রথমাবস্থায় শিশুর অজ্ঞান ভাব, বালিশে মাথা এপাশ-ওপাশ করে, মাথায় তীব্র বেদনা হতে হতে হঠাৎ চীৎকার করে উঠে। হেলিবোরাস- রোগী অজ্ঞান, পিপাসা থাকে না, অথচ পানির গ্লাস মুখের কাছে ধরলেই আগ্রহের সঙ্গে পান করে। এমনি করে হাত-পা নাড়ে, মাঢ়ী নাড়ে, যেন কিছু চিবাচ্ছে মনে হয়। জিঙ্ক সাক্ষ—এই রোগের শ্রেষ্ঠ ঔষধ। খেঁচুনী ও কম্পন প্রধান উপসর্গ।

হাম ও বসন্ত। —উদ্ভেদ কতক উঠে আর না উঠলে বা ২/১টা বের হয়ে লাট খেয়ে গেলে ব্যবহার্য্য। গুটিগুলি লাট খেয়ে সেপটিক ভাবাপন্ন হয়, রাতে নাক বন্ধ হয়ে যায় ও নিদ্রাকালে হাঁপিয়ে বা চমকিয়ে উঠে, সেই সাথে ঘোর ঘোর ভাব, সর্বাঙ্গ শীতল, শরীরের বর্ণ নীলাভ, নাড়ী অত্যধিক দুর্বল এবং ডান দিকের কানের নিম্নগ্রন্থি ফোলা থাকে। এমন অবস্থায় এপিস, বেলেডোনা এবং ল্যাকেসিসও ভাল ঔষধ। সদৃশ। বেলেডোনা –এটার উদ্ভেদগুলি লাল ও পৃথক পৃথক বের হয়, আর অ্যামন-কার্বের গুটিগুলি সাধারণতঃ গায়ে গায়ে লেপাই বের হয়। বেলেডোনায় অচৈতন্য ভাব আছে এবং মাঝে মাঝে চমকিয়ে উঠে। অ্যামন-কার্বে অচৈতন্যভাব বেশী, নাক বন্ধ হওয়ার জন্য মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠে। এপিস-এপিসেও লেপা লেপা উদ্ভেদ বের হয়, কিন্তু শোথভাব ও মাথাচালা বেশী থাকে, তন্দ্রাবস্থায় চীৎকার করে উঠে। ল্যাকেসিস- ঘুম ভাঙ্গিবার পরই এটার সকল লক্ষণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। উদ্ভেদগুলি একটু নীলাভ। গ্রন্থিস্ফীতি, সেটা বামদিকেই বেশী দেখা যায়।

সর্দি ও নাক হতে রক্তস্রাব। শিশুদের পুরাতন সর্দির জন্য নাক সেঁটে ধরে ও শিশু রাত্রে হাঁ করে নিঃশ্বাস গ্রহণ করে, কারণ রাত্রিকালে নাকের ছিদ্র বন্ধ থাকে। দিনের বেলা তরল সর্দিস্রাব এবং রাত্রিকালে নাকের ছিদ্র বন্ধ, এটাই অ্যামন-কার্বের বিশেষ লক্ষণ। সদৃশ-ঔষধ — অ্যামন- কার্বের মত নাক্স ভমিকার রোগীরও দিনের বেলায় তরল সর্দিস্রাব হয় এবং রাতে নাক বন্ধ হয়ে থাকে, সকালে নাক দিয়ে রক্তপাত হয়। অ্যামন-কার্ব-সকালে মুখ ধুবার পরে নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। স্যাম্বুকাস – শুল্ক সর্দি, শিশুদের নাক সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়, মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস লয়, সাধারণতঃ রাতেই এমন হয়। এটার একটি বিশেষত্ব এই রোগী সহজেই শ্বাস নিতে পারে, কিন্তু ত্যাগ করতে কষ্ট হয়। ষ্টিষ্টা— বার বার নাক পরিষ্কার করার চেষ্টা, কিন্তু শুষ্কতার জন্য শ্লেষ্মা বের হয় না, এমন অবস্থায় ষ্টিক্টা বিশেষ উপকারী। এই লক্ষণ রাতে বাড়ে। এমন শুল্ক কাশিতেও এটা বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কয়লার ধোঁয়ার ফলে রোগ-কয়লার ধূমে দমবন্ধ হয়ে গেলে বা অপর কোন রোগ হলে, অ্যামন-কার্ব একটি চমৎকার ঔষধ। এই অবস্থায় আর্ণিকা, বোভিষ্টা এবং ওপিয়ামও ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য লক্ষণ দেখে পার্থক্য নির্ণয় করবেন।

স্ত্রীরোগ।—স্ত্রীলোকদের ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে বা পূর্বে কলেরার মত লক্ষণ প্রকাশিত হওয়া এটার একটি বিশিষ্ট লক্ষণ। ঋতুস্রাবের সঙ্গে দন্তশূল ও হৃৎকম্পন দেখা যায়। বোভিষ্টা – এতে ঋতুর পূর্বে ও সময় কলেরার মত লক্ষণসকল প্রকাশিত হয় কিন্তু ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পরও ৫/৭ দিন অন্তর রক্তস্রাব হয় এবং প্রতি দুই সপ্তাহে রক্তস্রাব হতে দেখা যায় (নাক্স, ‘সাঙ্কার)।

প্রদর।—এটার প্রদর স্রাব পানির মত তরল, যখন প্রদর স্রাব বের হতে থাকে তখন জ্বালা করে। প্রচুর স্রাব হয় এবং যেখানে লাগে সে স্থান হেজে যায়। সদৃশ ঔষধ।— অ্যালুমিনা – প্রচুর পরিমাণে বিদাহী ক্ষতকর প্রদরস্রাব, পা বেয়ে গড়িয়ে পড়ে, জ্বালাকর, ঠান্ডা প্রয়োগে উপশম। ‘বোভিষ্টা—ডিমের সাদা অংশের মত বিদাহী ক্ষতকর প্রদরস্রাব, চলাফেরা করলে বাড়ে। যাদের দুই সপ্তাহ অন্তর বা মাসে দু’বার করে ঋতুস্রাব হয়, তাদের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। গ্র্যাফাইটিস—সাদা অথবা পাতলা ফ্যাকাসে প্রচুর পরিমাণ স্রাব, হাজাকর, দিন-রাত্রি স্রোতের বেগে বের হয়। মোটা স্ত্রীলোকদের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। ক্রিয়োজোট—হলুদে রঙের হাজাকর অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব। দুই মাসিক ঋতুর মাঝখানে বৃদ্ধি। সাম্ফার। —জ্বালা এবং হাজাকর সাব, বাহ্য স্ত্রীঅঙ্গে জ্বালা, রোগিণীর মাথার তালু এবং তেলোর জ্বালা।

কলেরা।— কলেরার শেষাবস্থায় যখন হৃদ্‌পিন্ডে রক্ত জমে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া লুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়, তখন এই ঔষধটি উপযোগী। মূত্ররোধ হয়ে বিকার হলে এবং বিকারের ভিতর গলায় ঘড়ঘড়ানি, অচৈতন্যবস্থা, নিজের চুল নিজে টানা, সেইসঙ্গে ঠোঁট ও শরীর নীলবর্ণ ও জিহবা পাটলবর্ণের হলে, এটা ফলপ্রদ ঔষধ। অ্যান্টিম-টার্টে শ্লেষ্মা সঞ্চয়জনিত এরূপ অবস্থা হয়, কিন্তু অ্যামন-কার্বের এরূপ অবস্থার কারণ বুকে অক্সিজেনের অভাব।

প্রস্রাব।—রোগীর বার বার প্রস্রাবের বেগ হয়, রাত্রে অজ্ঞাতসারে বিছানায় প্রস্রাব করে, প্রস্রাব অত্যধিক দুর্গন্ধযুক্ত, রক্তমিশ্রিত এবং ঘোলা ঘোলা। প্রস্রাবে বালুর মত তলানি পড়ে। মূত্রে লাল – বালুকার মত তলানি-লাইকোপোডিয়াম। রাতে অসাড়ে প্রস্রাব এবং বার বার প্রস্রাবের বেগ—ইকুইসিটাম-হাইমেন। শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব কৃমিজনিত হলে এবং প্রস্রাব ধরে রাখলে যদি সাদা দুধের মত দেখায়—সিনা। প্রস্রাবে অতিরিক্ত উগ্রগন্ধ – অ্যাসিড-বেঞ্জোয়িক।

অর্শ।– অর্শ হতে রক্তস্রাব, বিশেষতঃ ঋতুর সময় অর্শ হতে প্রচুর রক্তস্রাব হলে তা রোধ করতে ব্লুমিয়া-ওডোরেটা, ফিকাস-রিলিজিওসা, মিলিফোলিয়াম প্রভৃতি ঔষধ বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রক্তস্রাবী অর্শে, সেইসঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং গুহ্যদ্বারে ছোট ছোট কাঠি দিয়ে খোঁচাইতেছে এমন অনুভূতি থাকলে কলিন্সোনিয়া বিশেষ ফলপ্রদ হয়ে থাকে। প্রচুর পরিমাণ রক্তস্রাবে হ্যামামেলিস বিশেষ উপকারী, কিন্তু এটার রক্ত কাচে, লাল নয়, এবং মলদ্বারে যন্ত্রণা থাকে।

আঙ্গুলহাড়া। -আঙ্গুল-হাড়া হয়ে হাতের শিরাসকল স্ফীত ও নীলবর্ণের হয়, হাত ঝুলাইয়া রাখলে হাতের ফুলা বেশী অনুভূত হয়ে থাকে।

সম্বন্ধ – তুলনীয়। গ্যাস দ্বারা রক্ত বিষাক্ত হলে – অ্যামন-মিউর, অ্যামন-ফস এবং অ্যান্টিম- টার্ট তুল্য। প্রদাহ ক্ষেত্রে —আর্ণিকা ও আর্সেনিক তুল্য। হৃৎপিন্ডের রোগে – অরাম তুল্য। বিসর্প রোগে—হিপার, কেলি-বাই ও ল্যাকে তুল্য। এটার বিষক্রিয়া ক্যাঙ্কার, আর্ণিকা ও হিপার দ্বারা নষ্ট হয়। দোষম।—এটা রাস টক্সের বিষক্রিয়া নষ্ট করে, কীটাদি দংশন জন্য বিষ ও কাঠকয়লার ধূমজনিত অসুস্থতা নাশ করে। সদৃশ।—অ্যান্টিম-টার্ট, আর্স, অরাম, ফস, সাম্ফার। ল্যাকেসিস— এটার শত্রু।

বৃদ্ধি।ঠান্ডা, ভিজা ভিজা বা সোঁৎসেঁতে আবহাওয়ায়; ঋতুর সময়; মুখ ধুবার সময়; ভোর ৩টা বা ৪টায়।

হ্রাস।—পেটের উপর শুইলে; ডানদিকে শুইলে; যেদিকে ব্যথা সেইদিকে শুইলে; শুষ্ক আবহাওয়ায়; বের হতে চাপ দিলে; গরমে।

শক্তি।–৩, ৬, ৩০, ২০০।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!