অ্যাকটিয়া রেসিমোসা (Actaea Recemosa)
অপর নাম।-“ব্ল্যাক-স্নেক-রুট”।
ব্যবহারস্থল।–বাতপ্রধান স্ত্রীলোকদের জরায়ু প্রদাহ, মূৰ্চ্ছারোগ, বাচালতা, কৃত্রিম প্রসব- বেদনা, প্রত্যেক তৃতীয় মাসে গর্ভপাত আশঙ্কা এবং মৃতবৎসাগণের জন্য চমৎকার ঔষধ।
প্রদর্শক লক্ষণ।-সাধারণতঃ স্ত্রীলোকদের রোগে উপকারী। মাথা ব্যতীত ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। রোগিণী মোটাসোটা ও বাতগ্রস্তা। মাংসপেশীগুলি খুব টাটিয়ে থাকে। কাশি রাত্রে বেশী, কথা বলতে গেলেই কাশি আসে। গর্ভাবস্থার শেষ দুই-এক মাস এই ঔষধ ব্যবহার করলে সহজে প্রসব হয়। কৃত্রিম প্রসববেদনা। কলিক, দুমড়াইয়া পড়লে (bending double) এবং মলত্যাগের পর উপশম। পেটে টাটানি। কপাল ঠান্ডা, ফ্যাকাসে। ভাবে সে পাগল হয়ে যাবে। অনবরত কথা বলে। বক্তব্য বিষয় বার বার বদলিয়ে যায়। জরায়ুর জন্য হৃদরোগ, একটু নড়াচড়ায় বুক ধড়ফড় করে। চোখে যন্ত্রণা, সিঁড়িতে উঠলে বেশী, শুইলে কম। চেয়ারের নীচে ইঁদুর আছে মনে হয়। প্রসবের পর বেদনা, কুঁচকির কাছেই বেশী। ভাবে একটা কাল মেঘ তার চোখের উপর আছে। ঋতুকষ্ট, বিলম্বে হয় বা বন্ধ থাকে। এই সময় হিষ্টিরিয়া হয়। প্রসববেদনার সাথে শীত করে কাঁপে ও মূৰ্চ্ছা হয়। সদৃশ ঔষধ।-কলোফাইলাম স্বল্পস্থায়ী বেদনা সেটার অবস্থিতি তলপেটে নীচের দিকে। বেদনার নিস্তেজতা এবং পোয়াতির অবসন্নতা, জরায়ুমুখের কাঠিন্যে এটা বিশেষ উপযোগী। এই লক্ষণে জেলসিয়ামও ব্যবহৃত হয়ে থাকে (rigidity of uteri)। শিরদাঁড়া স্পর্শকাতর, ছোঁয়া যায় না, ঘাড় ও পিঠ শক্ত ও সঙ্কুচিত। যুবতীদের মুখে কলঙ্কের দাগ। ঋতুকালে বা তৎপূর্ব হতে পেটের ব্যথা একদিক হতে অন্যদিকে যায়। এক উরু হতে অন্য উরুতে যায়। স্রাব যত অধিক বেদনা তত বেশী (বিপরীত-ল্যাকেসিস জিঙ্কাম)। জিহবা বের হয়ে থাকে ও কাঁপে।
মন। এই ঔষধটি প্রায়ই স্ত্রীলোকদের রোগে ব্যবহৃত হয়। এটার রোগিণী অতিশয় বিষণ্ণ অবস্থায় দিন কাটায় ও দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। সকল বিষয়েই সন্দেহ, কারও হাতে ঔষধ খেতে চায় না। সর্বকার্য্যেই উদাসীন। মানসিক লক্ষণটি বিশেষ প্রয়োজনীয়। ডাঃ হেল বলেন-তিনি বহু বিষাদাচ্ছন্ন রোগীকে এই ঔষধ দ্বারা আরোগ্য করেছেন। মেরুদন্ডের উত্তেজনার জন্যও এটা উপযোগী ঔষধ। চেয়ারে বা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসতে পারে না। নেট্রাম মিউর – তক্তাপোশ বা বেঞ্চে হেলান দিয়ে বা কোন শক্ত দ্রব্যের উপর চিৎ হয়ে শুইলে উপশম হয়। ঘাড়ে পেশীর উপদাহ (Stiff neck) রোগে (পুরুষের পক্ষেও) এটা বিশেষ উপযোগী, কদাচিৎ ব্যর্থ হয়।
সেরিব্রো-স্পাইনাল মেনিঞ্জাইটিস।– এই সাংঘাতিক রোগে ঔষধটি নিম্নশক্তি বিশেষ ফলপ্রদ। ঘাড় ও শিরদাঁড়া অত্যন্ত আড়ষ্ট। শিরদাঁড়ায় হাত দিলে বমি হয় বা গা-বমি-বমি করে উঠে। মুখ হতে দুর্গন্ধ বের হয়। জিহবা ফোলা। গলার মধ্যে শুষ্কতা, সর্বদা ঢোক গিলবার ইচ্ছা। চোখতারকা বিস্ফারিত। চোখ লাল ও চোখ হতে পানি পড়ে। চোখে চাপ দেওয়া যায় না। মাথায় যন্ত্রণা, সেই যন্ত্রণা কাঁধে ও শিরদাঁড়ায় নামে। প্রলাপ। মাথা খুব বড় এবং ভারীবোধ হয় (পরবর্তী ঔষধ বেলেডোনা, লাইকোপোডিয়াম প্রভৃতি)।
স্ত্রীরোগ ও জরায়ুর নানাবিধ রোগ। জরায়ুর নানাবিধ রোগ ও গর্ভাবস্থায় বহু প্রকারের উপসর্গের জন্য ঔষধটি উপযোগী। জরায়ুর ভিতর তীব্র বেদনা, সেটা পেটের একদিক হতে আরম্ভ হয়ে অন্যদিক পান্ত বিস্তার লাভ করে। ঐ বেদনা সূঁচফোটানবৎ জরায়ুর বেদনা থেমে থেমে হতে থাকে। অনেক সময় রোগিণী মনে ভাবে তার পেটের সমস্ত যন্ত্রগুলি (জরায়ু প্রভৃতি) যোনিপথে বের হয়ে আসছে (সিপি, লিলিয়াম-টিগ)। ঋতুর গোলযোগ দেখা যায়। কখনও কম কখনও অত্যধিক। বাধক বেদনা -মাসিক স্রাবের পূর্বে ও স্রাবকালে ভয়ানক যন্ত্রণা হয়। পিঠে, ডিম্বাশয়ে, উরুতে এবং পেটে প্রসববেদনার মত তীব্র বেদনা। এই সময় রোগিণীর হিষ্টিরিয়া বা অপস্মারের মত ফিট হতে পারে। স্রাব যত অধিক, বেদনা তত অধিক। জ্যান্তকজাইলাম – বেদনা অত্যধিক, বেদনার জন্য রোগিণী ভয়ানক ছটফট করে, বেদনার প্রকোপে রোগিণী মূর্ছিত হয়ে পড়ে। জরায়ুর নানা প্রকার বিকৃতির জন্য হিষ্টিরিয়া, মানসিক অস্থিরতা, বাম স্তনের নীচে তীব্র বেদনায় অ্যাটিয়া উৎকৃষ্ট ঔষধ। গর্ভপাত। বার বার গর্ভস্রাব ও গর্ভপাত বা মৃতবংনা-বোধ এই ঔষধ সেবনে দূরীভূত হয়। তৃতীয় মাসে গর্ভস্রাব-প্রবণতা। সদৃশ ঔষধ।– স্যাবাইনা -গর্ভাবস্থায় কৃত্রিম বেদনা, অনিদ্রা, তৃতীয় মাসে গর্ভস্রাবের উপক্রম। আর্নিকা। – কোনরূপ আঘাত ইত্যাদির পর গর্ভপাত। মার্ক-কর-উপদংশ জনিত বার বার গর্ভপাত। ক্যামোমিলা-ক্রোধাদির জন্য গর্ভপাত উপক্রম। ক্যাল্কে-কার্ব-শ্লেষ্মাপ্রধান ধাতুবিশিষ্ট রোগিণীদের গর্ভপাত সম্ভাবনা। ব্যাসিলিনাম – যক্ষ্মাদির রোগের জন্য গর্ভপাত। সিপিয়া-পঞ্চম বা সপ্তম মাসে গর্ভপাত অভ্যাসগত হলে। সালফার নানা প্রকার সোরাদোষ, লুপ্ত চর্মরোগের ফলে গর্ভপাত আশঙ্কায়।
গর্ভাবস্থায় রোগ। -গর্ভাবস্থায় অনিদ্রা, গা-বমি-বমি, কৃত্রিম প্রসববেদনা, বেদনা সদা স্থায়ী। ঐ বেদনা অতীব তীব্র ও সঞ্চরণশীল। বেদনার সময় সর্বাঙ্গে কম্পন, কখনও কখনও মূৰ্চ্ছা বা ধনুষ্টঙ্কারের ভাব হয়। বেদনাটি ঠিক স্থানে না হওয়ায় প্রসূত হতে পারে না। কলিন্সোনিয়া প্রভৃতির কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এতে পেট পরিষ্কার করে সুপ্রসব করায়। কলোফাইলাম – প্রসববেদনা অসম বেগযুক্ত। পাল্টা বেদনা বা বেদনা হতে হতে হয়। অজীর্ণ থাকলে পালসেটিলা বিধেয়। প্রসবের পরবর্ত্তী ভ্যাদাল ব্যথায় অ্যাকটিয়া উৎকৃষ্ট ঔষধ। প্রথমে দুই মাত্রা আর্ণিকা দিয়ে তৎপরে ব্যবহার্য্য। প্রসবান্তিক বা ভ্যাদাল ব্যথায় জ্যান্থকজাইলাম (Xanthoxylum) নামক ঔষধটিও বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ভাইবার্নাম-অপুলাসও সদৃশ ঔষধ, প্রায় একই লক্ষণে ব্যবহৃত হয়, জ্যান্থজাইলাম-এর রোগিণী স্নায়ুপ্রধান এবং মানসিক অবসাদগ্রস্ত। এসবাস্তিক বেদনায় কিউপ্রাম-মেটালিকামও অন্যতম ঔষধ। এটার বেদনা আক্ষেপিক (spasmodic) ধরণের হয়।
সূতিকা-জ্বর ও প্রসবের পর নানাবিধ রোগ-প্রসবের পর প্রসবাস্তিক স্রাব (লোকিয়া) বন্ধ হয়ে প্রসূতির উন্মাদের অবস্থা হলে এটা একটি মূল্যবান ঔষধ। স্মৃতিকোন্ডাদ অবস্থায় নিজের শরীর নিজে আঘাত করে ক্ষণে ক্ষণে মেজাজের পরিবর্তনও দেখা যায়। কল্পনায় বিভিন্ন ভয়াবহ দৃশ্য দেখে। কাল্পনিক জীব দেখে ভয়ে চীৎকার করে উঠে, সেই সাথে প্রবল জ্বর। স্মৃতিকা-জ্বরে উন্মাদের ভাব ও বিকার অবস্থায় ইঁদুর ছুটে বেড়াচ্ছে বোধ একটি প্রদর্শক লক্ষণ। ল্যাকেসিস রোগিণী ভয়বিহ্বলতা সহ খাট হতে লাফাইয়া পড়ে। আর ক্যাল্কে-কার্ব রোগিণী চোখ মুদিলেই ইঁদুর দেখে।
শিরঃরোগ।– ঋতুর গোলযোগের জন্য শিরঃরোগ। বাতরোগের সাথে মাথায় যন্ত্রণার অ্যাকটিয়া ব্যবহৃত হয়। রোগী মনে ভাবে যেন তার মাথার ব্রহ্মতালু ফেটে যাবে। মাথাটি বড় বোধ হয়। সদৃশ। -ব্যাটিসিয়া মনে হয় মাথাটি যেন প্রকাণ্ড বড় হয়েছে, সেজন্য খুলি উড়ে যাবে। ক্যামোমিলা – তীব্র মাথার যন্ত্রণা, ভাবে কেউ ভিতর হতে তার মস্তিষ্ক উপরের দিকে ঠেলছে। কোব্যান্টাম – মলত্যাগকালে ভাবে মাথা বড় হয়েছে, ব্রহ্মতালু উড়ে যাবে।
নেট্রাম-ক্লোরেটাম – অত্যন্ত মাথা ঘুরে, মাথাটি পানির উপর ভাসছে অনুভব করে। ইউক্কা- ব্রহ্মতালুতে এত অসহনীয় বেদনা যে, সে বলে তার মাথার খুলি উড়ে যাবে।
চোখের অসুখ। -অক্ষিপুটের স্নায়ুশূল, চোখতারকার ভিতর অসহ্য বেদনা। মনে হয় যেন একটি সূচীবৎ তীক্ষ্ণ শলাকা বিদ্ধ করছে। যন্ত্রণায় রোগী পাগলের মত হয়ে যায়। স্পাইজেলিয়ার বেদনা সূর্য্যাস্তের পরে কমে; সিড্রনের বেদনাটি ঘড়ি ধরে আসে; ক্যালমিয়ার বেদনা অক্ষিগোলকের ঊর্ধ্বে ও অবশকারী।
উদরাময়।– পর্যায়ক্রমে উদরাময় ও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। ভয়ানক দুর্গন্ধ থাকে ও বারংবার পাতলা মলত্যাগ করে। নাভীর নিম্নদিকে বেদনা। গা-বমি-বমি, উদ্মার, কম্প এবং শিরঃরোগ হয়। সাধারণতঃ জরায়ুর দোষের জন্য এই সকল লক্ষণ।
কাশি। -গর্ভাবস্থায় জরায়ুর রোগের সাথে এবং স্নায়বিক দুর্বলতার জন্য কাশি। রাত্রিকালে বৃদ্ধি।
হৃদযন্ত্রের রোগ।-জরায়ুর বা ডিম্বকোষের রোগের জন্য হৃপিন্ডের শূল, হৃদকম্প, বেদনা ও সেই সাথে আমবাত। একটু নড়াচড়ায় হৃদপিন্ডের দ্রুত স্পন্দন (ডিজিটেলিস), হৃদপিন্ডের চতুর্দিকে বেদনা সহ উৎকণ্ঠা ও বিষণ্ণভাব। বেদনা বাম বাহু হতে আঙুল পৰ্য্যন্ত চালিত হয়, কখন কখনও বাম হাতখানি অবশ হয়ে যায়।
বাতরোগ।-জরায়ুদোষ হতে ও টাইপ করা, পিয়ানো বাজান ইত্যাদি জনিত মাংসপেশীর বাত। জ্বালা, খালধরা, সূঁচফোটান ব্যথা। মাংসপেশীর টাটানি ও অসাড় ভাব। রাত্রে ও ঠান্ডা আর্দ্র জলবায়ুতে বৃদ্ধি। পায়ের গাঁটে বাত। আক্রান্ত স্থান খুব ফোলা ও গরম। নড়াচড়ায় বাড়ে, চীৎকার করে এবং ছট্ফটানি। কলোফাইলাম- ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সন্ধিই অধিক আক্রান্ত হয়।
বৃদ্ধি।– মাসিক ঋতুকালে; সকালে; ঠান্ডায়; প্রসবের পর; স্পর্শে; রাত্রে।
হ্রাস।– গরম সেঁকে; খাওয়ার পর; বিশ্রামে; খোলা বাতাসে (মাথা); রাত্রে (দাঁত)।
শক্তি।-৩, ৬, ৩০, ২০০।