অ্যাসিড-হাইড্রোসিয়ানিক (Acidum Hydrocynicum)

অপর নাম। -হাইড্রোজেন-সায়েনাইট, একটি অত্যুগ্র বিষ

ব্যবহারস্থল। কলেরার পতনাবস্থা, আক্ষেপ, পক্ষাঘাত, হাঁপানি, হুপিং-কাশি, মৃগী, অর্দ্ধাঙ্গের পক্ষাঘাত, ধনুষ্টঙ্কার, মূত্ররোধ জনিত আক্ষেপ ও প্রসবকালে আক্ষেপাদি।

ক্রিয়াস্থল।ডাঃ ক্লার্ক বলেন—এই ঔষধ সিলিয়ারী-গ্রন্থিতে ক্রিয়া প্রকাশ করে অস্ত্রের আক্ষেপ ও শূল উৎপাদন করে। কোন সাংঘাতিক রোগের আক্রমণে যখন জীবনী-শক্তির ক্রিয়া লোপ পেতে বসে, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস যখন অতি দীর্ঘ ও ধীরে বহিতে থাকে মল-মূত্রাদি যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন কার্যকরী।

প্রদর্শক লক্ষণ।— পানি খেলে তা গলা ও পাকস্থলী দিয়ে গড়গড় শব্দে নীচে নামে (এই প্রকারের লক্ষণ পাওয়া যায়, কিউপ্রাম-মেটালিকানে; পানি পান করলে গড়গড় শব্দ করে তা নীচে নেমে যায়)। অচেতন, মুখে ফেনা; ঠোঁট ফ্যাকাসে নীল। জিহবা ও হাত-পা ঠান্ডা। শ্বাসক্রিয়া দীর্ঘ, হতে হতে বহিতে থাকে, শ্বাস যেন আটকিয়ে যায়। নিঃশ্বাসের সঙ্গে রক্ষঃস্থল নড়িতে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসকালে গলায় ঘড়ঘড় শব্দ। কোন জিনিষ গিলতে পারে না— বুকে বাধে। বুকে যন্ত্রণা। পেট ঢুকে যায়। পেটে খ. লি খালি ভাব। কলেরায় হঠাৎ ভেদ-বমি বন্ধ হয়ে পতন অবস্থা। কঠিন রোগে ভড়কা। তড়কায় র শক্ত, পিছনে বেঁকে যায়। ঘাড়ে খাল ধরে। চোয়াল বন্ধ। হৃদরোগ। ত্বক নীল, ঠান্ডা। নাড়ী, পাওয়াই যায় না। যন্ত্রণায় বুকে হাত দেয়। রাত্রে শুষ্ক কালি (হৃৎপিন্ডের রোগের সাথে)। চোখ শুল্ক। প্রস্রাব বন্ধ বা অসাড়ে হয়। কাল পানির মত বমি।

অজ্ঞানতা ও আক্ষেপ।— ডাঃ হিউজেস বলেন—হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়া, হাত-পা বাঁকা হয়ে যাওয়া, দাঁত লাগা, মুখে ফেনা উঠা প্রভৃতি লক্ষণে যে কোনপ্রকার অজ্ঞানতায় ঔষধটি আশু উপকারক। সুতরাং মৃগীরোগ জনিত আক্ষেপেও ঔষধটি উপযোগী।

তুলনীয়। ভয় পেয়ে মূৰ্চ্ছা গেলে বা অজ্ঞান হয়ে পড়লে অ্যাকোনাইট, আঘাতের পরে অজ্ঞানতায় আর্ণিকা এবং অতিরিক্ত রক্তস্রাবের পরে অজ্ঞানতা, সেইসঙ্গে অতিশয় দুর্বলতার জন্য কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ, হিমাঙ্গালস্থা (কোলান্স), দৃষ্টিক্ষীণতা থাকলে চায়না ব্যবস্থেয়। ওপিয়াম—দুইটি ফিটের মাঝখানে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় এবং মৃগী বা যে কোন ফিটের পূর্বে রোগী জোরে চীৎকার করে এটা বিশেষ লক্ষণ। এটা ব্যতীত আরক্ত বা বেগুনে রংয়ের মুখমন্ডল। আধবোজা চোখ, গাত্রচর্মে উত্তপ্ত ঘাম এবং ঘড়ঘড় শব্দযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস—এই চারিটি ওপিয়ামের বিশেষ প্রয়োগ লক্ষণ। কার্বোনিয়াম-অক্স -অজ্ঞানতার সঙ্গে দাঁত লাগা, মাঢ়ী খুব শক্ত, কিছুতেই মুখ খোলা যায় না, চোয়াল ধরা। মৃগীরোগে অ্যাসিড-হাইড্রোর সঙ্গে আর্টিমিসিয়া, আসিন্থিয়াম, এমিল-নাইট্রেট এবং বিউফো প্রভৃতি ঔষধের তুলনা চলে। প্রায় একই প্রকারের লক্ষণ। অন্যান্য বিশেষ লক্ষণ দেখে প্রভেদ নির্ণয় করতে হয়।

ধনুষ্টঙ্কার। মাথাটি পিঠের দিকে বেঁকে যাওয়া (সাইকিউটা), থেমে থেমে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস, সমস্ত শরীর নীল হয়ে যাওয়া, মুখে ফেনা উঠা, বুকের ভিতর একটা কষ্ট অনুভব ইত্যাদি লক্ষণে হাইড্রোসিয়ানিক-অ্যাসিড চমৎকার। ডাঃ মুর ধনুষ্টঙ্কার রোগে এই ঔষধের খুব সুখ্যাতি করেছেন। সাইকিউটায় বক্ষঃদেশে খেঁচুনি হয়ে ফিট হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলতে কষ্ট অনুভব করে, রোগী এক দৃষ্টে চেয়ে থাকে। ষ্ট্যামোনিয়ামে ধনুষ্টঙ্কারের রোগী আলো দেখলেই পুনরায় ফিট হয়, আলোকে ঘুম হতে উঠলেই ভয় পায়। রোগী সর্বদাই বিষণ্ণ থাকে।

শিরঃরোগ।-যন্ত্রণা অতিশয় ক্লেশদায়ক, যন্ত্রণার জন্য অচৈতন্য হয়ে পড়ে। রোগী মোটেই চিন্তা করতে পারে না। মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত অবস্থায় এই ঔষধের প্রয়োজন হয়।

কলেরার পতনাবস্থায় হঠাৎ নাড়ী ছেড়ে গিয়া রোগীর সমস্ত শরীর বরফের মত ঠাডা সেই সঙ্গে স্থির-দৃষ্টি, চক্ষের তারা প্রসারিত, একদৃষ্টে তাকাইয়া থাকা, শ্বাস-প্রশ্বাসে ভয়ানক কষ্ট লক্ষণে ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার এই ঔষধ প্রয়োগ করতে উপদেশ দিয়েছেন। এই ঔষধ সেবনে সামান্য উপকার হয়ে যদি আর উপকার না হয় তখন ল্যাকেসিস ৬x বা কোৱা বা কেলি- সায়েনাইড ৬x প্রয়োগে সুফল পাওয়া যায়। ডাঃ সালুজার বলেন –কলেরায় কয়েকবার বাহ্যে-বমি হওয়ার পর যখন নাড়ী লোপ পায়, তখন ক্যাঙ্কার উপযুক্ত ঔষধ বটে, কিন্তু অ্যাসিড- হাইড্রোসিয়ানিক সর্বশ্রেষ্ঠ। কেলি-সায়েনাইড- কলেরার পতনাবস্থায় হঠাৎ নাড়ী লোপ, শ্বাসকষ্ট,  দমবন্ধ হওয়ার উপক্রমে অ্যাসিড-হাইড্রোর সমগুণ। কার্বো-ভেজও কলেরার পতনাবস্থায় উপযোগী। নিঃশ্বাস ফেলতে খুবই কষ্ট হয় এবং অনবরত পাখার বাতাস চায়। কোব্রা – রোগীর সমস্ত শরীর বরফের মত শীতল, নাভিশ্বাস আরম্ভ হয়েছে, এমন অবস্থায়ও কোব্রা উত্তম। কোব্রার শ্বাসক্রিয়া হ্রস্ব, অ্যাসিড-হাইড্রোর শ্বাসক্রিয়া বিলম্বিত। ক্লোরোফরম – ঘোরতর অজ্ঞান অবস্থা, মোহ ভাঙ্গিলে বমনেচ্ছা, বমিতে শ্লেষ্মা ও জলীয় পদার্থ থাকে। অজ্ঞান অবস্থায় রোগীর চক্ষের ভিতর আঙ্গুল ঢুকাইয়া দিলেও কোনপ্রকার যন্ত্রণাসূচক শব্দ করে না। ১ম শক্তির ১০ ফোঁটা ঔষধ প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর প্রয়োগ করা কর্ত্তব্য। ক্যাঙ্কারও কলেরার পতনাবস্থায় বিশেষ কার্যকরী। দুই-চার বার ভেদ – বমি হওয়ার পরই রোগীর পতনাবস্থা উপস্থিত হলে অবিলম্বে ক্যাঙ্কার প্রয়োগ করা কত্তব। রোগীর সমস্ত শরীর বরফের মত ঠান্ডা হয়ে যায়, কিন্তু সে গায়ের কাপড় ফেলে দেয়।

শ্বাসরোধ। —হঠাৎ শ্বাসরোধ হয়ে তড়কার মত হলেও সেইসঙ্গে ঘাড় বেঁকে গেলেও অ্যাসিড-হাইড্রো ব্যবহার্য্য। কলেরা রোগীর ইউরিমিয়া (মূত্র-বিকার) হয়ে তড়কা হলে, এটা উপযোগী।

হৃদরোগ :— হৃদপিন্ডের রোগের সাথে শুষ্ক কার্লি হলে এটা কার্যকরী। রোগের পুরাতন অবস্থায় নাড়ী অত্যন্ত ক্ষীণ ও অনিয়মিত এবং সেই সঙ্গে হাত ও পায়ের অগ্রভাগ ঠান্ডা হয়ে যায়। সদৃশ ঔষধ। কেলি-নাইট্রিকাম – এটাতেও হৃদ্রোগের সঙ্গে শুরু কাশি আছে, কিন্তু সকালে বুকে বেদনার সঙ্গে কাশি হয়, গয়ারের সঙ্গে রক্ত উঠে। মার্টস্-কমিউনিস—হৃপিন্ড স্থানে বেদনা বিশেষতঃ সূচফোটানো বেদনা ও জ্বালা এবং সেই সঙ্গে প্রবল কাশি – শুষ্ক ঘ-ঘ শব্দযুক্ত।

জ্বর। —কঠিন জাতীয় জ্বর। হঠাৎ জ্বর ছেড়ে নাড়ী লুপ্ত হয়ে গিয়া পতনাবস্থা উপস্থিত হলে এবং হৃৎপিন্ড স্থানে সঙ্কোচন ও আক্ষেপ থাকলে এটাই একমাত্র ঔষধ।

তুলনীয় হিমাঙ্গ অবস্থায় – ক্যাঙ্কার, কোব্রা, কার্বো-ভেজ, সাইকিউটা; শুল্ক কাশিতে —লরোসি 1 প্রতিবিষ। -ক্যাফর, কফিয়া, ইপিকাক, নাক্স, ভেরেট্রাম।

বৃদ্ধি।— আহারের পর; রাত্রে; খোলা বাতাসে। শক্তি।– ৩x হতে ২০০।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!