কোনায়াম-ম্যাকুলেটাম (Conium Maculatum)
পরিচয়।-এটার অপর নাম হেমলক। এই রস পান করিয়ে সক্রেটিসের প্রাণনাশ করা হয়েছিল। একটি গভীর সোরাদোষ-নাশক ঔষধ। ক্রিয়া এত ধীর যে রোগীর উন্নতি হচ্ছে কিনা বুঝা শক্ত।
ব্যবহারস্থল।-মাথার যন্ত্রণা, মাথা ঘুরা, আঘাত লাগা, ক্যান্সার, চোখের অসুখ, হাঁপানি, ছানি, স্তনে ও অন্ডকোষে প্রদাহ এবং কঠিন। কোমরে ও পৃষ্ঠদেশে নানাপ্রকার ব্যথা, রক্তাল্পতা, ঋতুরোগ, স্ত্রীরোগ, পুরুষত্বহীন, পক্ষাঘাত অম্লশূল, কাশি ও জ্বররোগে ফলপ্রদ।
ক্রিয়াস্থল।-গতিবিধায়ক স্নায়ুম লীর উপর এটার প্রধান ক্রিয়া। স্নায়ুর প্রান্তদেশে ক্রিয়া দেখা দিয়ে পক্ষাঘাতের মত অবস্থা উৎপন্ন হয় বং গ্রন্থিসকলে রক্তাধিক্য হয়ে কঠিন হয়। বৃদ্ধ, চিরকুমার বা যাদের স্ত্রী-বিয়োগ হয়েছে, তার জন্য এই ঔষধ ফলপ্রদ। স্ত্রী বা পুরুষ উভয়েরই বৃদ্ধ বয়সের রোগ। দৃঢ় মাংসপেশীবহুল ব্যক্তি অলসভাবে দিনযাপন করে। আঘাত ও পতনের ফলে কোন রোগ, অত্যধিক ইন্দ্রিয়সেবা বা ইন্দ্রিয়-পরিতৃপ্তির অভাবের জন্য রোগ।
প্রদর্শক লক্ষণ।-মাথাঘোরা, বিশেষতঃ মাথা নাড়লে, শয়নাবস্থায় পাশ ফিরলে, মাথা বাঁকাইয়া কোন পাশে চাইলে বা নড়াচড়ায়। মস্তিষ্কের রক্তাল্পতা। গ্ল্যান্ডগুলি ফোলা ও শক্তভাব, বিশেষতঃ আঘাত লাগার পর। প্রস্রাব বহে, বন্ধ হয় এবং আবার বহে; প্রষ্টেট-গ্ল্যান্ডের রোগ বা ইউট্রাসের রোগ। মাসিক ঋতুকালে স্তন টাটায়, শক্ত হয় ও সেখানে যন্ত্রণা হয়। চোখের অসুখ, প্রদাহের তুলনায় আলোক অসহিষ্ণুতা অত্যধিক। অন্ধকারে ভাল থাকে চাপ দিলে ভাল থাকে। চোখের পাতা ঝুলে পড়ে। ঘুমালে বা চোখ বুজলে ঘাম হয়, আর চোখ খুললেই ঘাম শুকিয়ে যায়। চেয়ারের উপর পা তুলিলে যন্ত্রণা কম হয়। শুইলে ও কথা বললে কাশি। মলত্যাগের পর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। খাওয়ার পর মাথাধরা। কোন কাজে বা লেখাপড়ায় মন নেই। কোন কাজেই আগ্রহ নেই। প্রস্রাব করার পর শ্বেতস্রাব। গ্ল্যান্ডগুলি শুকিয়ে যায়। চামড়া হলদে। বেদনাশূন্য পক্ষাঘাত। শারীরিক পরিশ্রমকালে আমবাত। সকালে শরীর খুব দুর্বল মনে হয়। বহুমূত্র ও সেইসঙ্গে খুব যন্ত্রণা। সুন্দরী নারীদের স্তন ন্যাকড়ার থলির মত শুষ্ক (আইওডিন)। বেদনা অবশ করা প্রকৃতির
মন।-কোনায়াম রোগীর স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ, সামান্য মানসিক পরিশ্রমও হয়। বড়ই বিষণ্ণ; সামান্য কারণেই অসন্তুষ্ট হয় ও সকল ব্যাপারেই শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চায়। প্রতিবাদ সহ্য করতে পারে না। ভিড়ে যেতে চায় না। পড়াশুনা অথবা বিষয়কার্য্যে ইচ্ছা থাকে না। অত্যন্ত অলস ও উদাসীন।
অজীর্ণরোগ।– খাওয়ার দুই-তিন ঘণ্টা পরে পাকস্থলীতে বেদনা। রাত্রে পেটবেদনা। হাঁটু ও কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে শুইলে যন্ত্রণা কম হয়। আমাশয়ের পরবর্ত্তী কর্কটরোগ। কফির গুঁড়ার মত কাল পদার্থ বমি হয়। টক বমন, ক্ষারজনক বমি। মলবেগ পায়, কিন্তু মলত্যাগ করে না। বেদনাহীন উদরাময়। মলত্যাগ করার পর অত্যন্ত দুর্বলতা, হাত-পা কাঁপে। মলদ্বার দিয়ে যে বায়ু বের হয় তা ঠান্ডা। মুখ তেঁতো, লবণ বা টকদ্রব্য খাওয়ার ইচ্ছা। তুলনীয়।— নাক্স ভমিকা – আহারের কয়েকঘণ্টা পরে উপর পেট ফুলা, বেদনা এবং চাপবোধ। আহারের পরে পাকস্থলীতে বেদনা, ভারবোধ বমনেচ্ছা বা অম্লের আস্বাদ। নিষ্ফল মলবেগ, পূনঃ পুনঃ মলত্যাগের বেগ অথচ বাহ্যে খোলসা হয় না। ক্যাডমিয়াম-সাক্ষ- কাল এবং রক্ত-বমন। পাকস্থলীতে জ্বালা ও বেদনা। অ্যাসিড- কার্বলিক-সবুজ বা কাল রঙের বমন, ঘোলাটে কাল বা সবুজ রঙের প্রস্রাব।
যকৃতের রোগ।– যকৃৎ ফুলে শক্ত হয়; নিঃশ্বাস টেনে লবার সময় সূঁচফোটান ব্যথা বা ছিঁড়ে ফেলার মত ব্যথা (ব্রাইওনিয়া); পেট ভর্ত্তি মনে হয়; মেসেন্ট্রিক-গ্ল্যান্ড ফোলার জন্য গেট খুব শক্ত হয়; ক্ষুধা কম ও সেইসঙ্গে লবণাক্ত দ্রব্য খাওয়ার ইচ্ছা; উদরাময় ও কোষ্ঠবদ্ধতা পৰ্যায়ক্রমে প্রকাশ পায়; কাশি, শুইলে বাড়ে; শরীরে চুলকানি; তা শরীরের নানাস্থানে চলে বেড়ায়। বায়ু নিঃসরণের আগে ও সময় সমস্ত পেটে ব্যথা; কলিক; চাপ দিলে বাড়ে; রাত্রে বাড়ে; দুধ খেলে কোষ্ঠবদ্ধতা; শুইলে মাথা ঘোরে; বৃদ্ধদের পুরাতন উদরাময়; মলত্যাগের পর বুক ধড়ফড় করে।
হাঁপানি রোগ।– সন্ধ্যার সময় হাঁপানি, বিশেষতঃ বর্ষাকালে। সকালে জাগিবার পর হাঁপানি; অল্প চলাফেরায় বৃদ্ধি; কাশির সঙ্গে খুব গয়ার উঠে, গ্ল্যান্ড বড় ও শক্ত; বৃদ্ধদের হাঁপানি; চোখ বুজলে ঘাম ; গয়ার উঠাতে না পারিয়া গিলে ফেলে; বৃদ্ধদের হৃত্যন্ত্রের দুর্বলতা; মলত্যাগের পর বুক ধড়ফড় করে। বর্ষাকালে বৃদ্ধিযুক্ত হাঁপানিতে নেট্রাম-সাক্ষ বিশেষ উপযোগী। শ্বাসকষ্ট, কাশবার সময়ে রোগী জোরে বুক চেপে ধরে। ডাক্কামারা – বর্ষাকালের হাঁপানি এবং কাশি, শ্বাসকষ্ট, তরল ঘড়ঘড় শব্দযুক্ত কাশি
যক্ষ্মা।– গয়ার উঠান যায় না, গিলে ফেলে। রাত্রে বৃদ্ধি, গলায় ব্যথা, পুঁজের মত অল্প গয়ার . . . . .
প্রস্রাবের রোগ।– প্রস্রাব থেমে থেমে হয়, অতি সরু ধারে হয়, প্রস্রাবত্যাগে অতিশয় কষ্ট। মূত্রাশয় গ্রন্থির বৃদ্ধিবশতঃ ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব। তুলনীয়। -ক্যানাবিস ইন্ডিকা – প্রস্রাব শেষ হওয়ার পরেও আবার ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হয়, প্রস্রাবের আগে, সময়ে এবং পরে মূত্রনলীতে জ্বালা ও হুঁচফোটানো ব্যথা। নাক্স ভমিকা-ঘন ঘন বেগ, প্রস্রাব খোলসা হয় না, ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হয়। কাহিনকা-সদাই প্রস্রাব করার ইচ্ছা, ভ্রমণের সময়ে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, কিডনীতে ফোলা। ক্যান্থারিস।-প্রস্রাবের আগে, সময়ে এবং পরে জ্বালা, ঘন ঘন বেগ, ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব।
ঘাম।-রোগীর নিদ্রা আসিলেই ঘাম হয়, অথচ ঘুম ভাঙ্গিলে আর ঘাম হয় না (চায়না)। কিন্তু ঘুমন্ত অবস্থায় ঘামের পরিবর্তে শুষ্ক উত্তাপ এবং জাগরিত হলে প্রচুর পরিমাণে ঘাম হয় স্যাম্বুকাস।
মাথাঘোরা।– ডাঃ ন্যাশ বলেন-মাথা এপাশ-ওপাশ করলে, তা সোজা ভাবেই হোক বা আড় ভাবেই হোক, কিম্বা মাথা নাড়লেই যদি মাথাঘোরা বাড়ে, তা হলে কোনায়ামই একমাত্র ঔষধ। শয়নাবস্থায় মাথা ঘুরিলে রোগীর মনে হয় যেন বিছানা, ঘর, বাড়ী সমস্তই যেন টলিতেছে। মস্তিষ্কের জড়তা ও রক্তাল্পতা। অতিরিক্ত সম্ভোগের ফলে বা ইন্দ্রিয়-লালসা দমন করার পর অথবা ডিম্বকোষ ও জরায়ুর রোগের সাথে স্ত্রীলোকদের উপরোক্তরূপ মাথাঘোরা। তুলনীয়।-মাথা ফিরালে শিরঃঘূর্ণন-ক্যাল্কে-কার্ব, কোনায়াম, কেলি-কার্ব। বামদিকে ফিরালে-কলোসিন্থ। মাথা নাড়লে -কোনায়াম। ঊর্ধ্বদিকে তাকালে -পালস, সাইলি। নিম্নদিকে তাকালে -ফস্কো, স্পাইজি, সাম্ফ। ফুলের গন্ধ শুঁকিলে নাক্স ভম, ফস্কো। রাত্রিজাগরণ বা অনিদ্রার জন্য-ককিউলাস। সামান্য শব্দ শুনিয়া-থেরিডিয়ন। চলাফেরার সময় নেট্রাম-মিউর, নাক্স, ফস, পালস। পড়াশুনার সময়- নেট্রাম-মিউর। খাওয়ার সময় ও পরে গ্র্যাটি, নাক্স, পালস। মাথা যেন চাকার মত ঘুরিতে থাকে – ব্রাইও, কোনা, সাইক্লা, পালস। উপরের দিকে উঠবার সময়-ক্যাল্কে। নীচে নামিবার সময়- বোরাক্স, ফেরাম। পতনাবস্থা হতে উঠবার সময়-বেলেডোনা। মাথাঘোরার সাথে রোগীর বিছানা যেন ঘুরছে-কোনায়াম। মাথাঘোরার জন্য রোগী শুয়ে থাকতে বাধ্য হয়-ব্রাইও, ককিউ, ফস, পালস। আসন হতে উঠবার সময় -ব্রাইও, ফস। মাথাঘোরার সাথে রোগী টলে পড়লে -আর্জ- নেই, জেলস, নাক্স, ফস। ঘুরে মূর্ছিত হয়ে পড়লে-নাক্স-ভম। ঋতুবন্ধ হয়ে-সাইক্লা, পালস। চোখ বুজলে বা অন্ধকারের ভিতর মাথা ঘুরিলে আর্জ-নাই, ট্র্যামো, জেলস। মাথাঘোরার সাথে দৃষ্টিশক্তির ক্ষীণতায় -সাইক্লা, জেলস, নাক্স। শয্যায় পার্শ্ব পরিবর্তনে – কোনায়াম।
চোখের অসুখ। -প্রধান লক্ষণ আলোক-ভীতি। সামান্য আলোকও অসহ্য। হানেমান বলে গেছেন-স্ক্রফিউলা ধাতুগ্রস্ত লোকের চক্ষুরোগে যেখানে আলোক অসহনীয়তা অত্যধিক, অথচ চোখে কোন প্রকার প্রদাহ নেই, সেখানে কোনায়ামই একমাত্র ঔষধ। চোখের পাতা ঝুলে পড়ে (জেলস, সিপি)। ঘুমাবার জন্য রোগী যখনই চোখ বোজে তখনই তার খুব ঘাম হয়, আবার যে মুহূর্ত্তে চোখ মেলিয়া চায়, ঘাম শুকিয়ে যায় এবং রোগী ভিতর হতে ভয়ানক গরম অনুভব করে। সিফিলিস দোষ হতে পুরাতন আইরাইটিস।
পুংজননেন্দ্রিয়ের রোগ। -পুরুষত্বহানি। সঙ্গমের তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকে অথচ সঙ্গমশক্তি খুব কম। অতি সহজেই রেতঃপাত হয়, এমন কি স্ত্রীলোক দেখিলে (ক্যালেডি) রেতঃপাত হয়। সঙ্গমের আগেই রেতঃপাত, পুরুষাঙ্গ রীতিমত শক্তও হয় না। শক্ত হলেও অল্পক্ষণ স্থায়ী হয় ও সম্ভোগের সময় সঙ্কুচিত হয়ে যায়। রোগীর মনের অবস্থা নিতান্ত খারাপ এবং এজন্য নিজেকে ও কর্মফলকে ধিক্কার দিতে থাকে। মাথাঘোরা লক্ষণটি থাকে। আঘাত বা ঘষা লেগে অন্ডকোষ ফুলে শক্ত হয়ে গেলে এটা আর্ণিকার পরে কাজ করে। ফুলা ইঁটের মত শক্ত হয়, কিন্তু বিশেষ বেদনা থাকে না।
তুলনীয়।-ক্যালেডিয়াম – সঙ্গমেচ্ছা প্রবল, কিন্তু ক্ষমতাশূন্য। সঙ্গমের সময় শিথিল হয়ে যায়, লিঙ্গোত্থান হয় না। আর্জেন্টাম-নাইট্রিকাম-সঙ্গম ইচ্ছার লোপ; সঙ্গমের সময় লিঙ্গ শিথিল হয়। লাইকোপোডিয়াম -লিঙ্গ শীতল এবং শিথিল; উত্থান একেবারেই হয় না অথবা সামান্য হয়। ফস্ফোরাস -কামেচ্ছা প্রবল, কিন্তু ধ্বজভঙ্গ জন্য লিঙ্গের উত্থান ভালমত হয় না। ইউরেনিয়াম- নিট-লিঙ্গ শিথিল, শীতল ও ঘর্মাক্ত, ধ্বজভঙ্গ। অ্যাগ্লাস-ক্যাষ্টাস – অতিরিক্ত শুক্রক্ষয় জন্য ধ্বজভঙ্গ, অল্পবয়সে বৃদ্ধের মত অবস্থা প্রাপ্ত। সেলিনিয়াম – আলিঙ্গন সময়ে লিঙ্গের উদ্রেক বা বীর্যপাত হয় না।
স্ত্রীরোগ। ঋতু অতি বিলম্বে আরম্ভ হয় এবং অতি অল্প স্রাব হয়ে দুই-এক দিন পরে থেমে যায়, জরায়ু-গ্রীবা শক্ত, গায়ে একপ্রকার রক্তাক্ত গুটিকা বের হয় এবং ঋতু শেষ হওয়ার পরই মিলাইয়া যায় (ডাল্কা); ঠান্ডা লাগলে বা ঠান্ডা পানিতে কাজ করলে ঋতুবন্ধ (ল্যাক-ডিফ্লোর)। ঋতুর সময় ডিম্বকোষে হুলফোটান ব্যথা হয় এবং শয়ন করতে গেলেই মাথা ঘুরায়। জরায়ু-প্রদেশে নিরন্তর বেদনা ও জ্বালাবোধ, যেন জরায়ুর ভিতর ঘা হয়েছে। ঋতুর সময় অস্ত্রাদি যেন নীচের দিকে ঠেলে আসছে এরূপ বোধ। জরায়ুর ক্যান্সার; স্তন যেন শুকিয়ে কুঁকড়াইয়া যায় কিন্তু ঋতুকালে সেটা বড় হয়ে বেদনাযুক্ত ও শক্ত হয়। ক্যান্সার রোগে শক্ত এবং সেটার ভিতর বিদারণবৎ বেদনা, স্তনের গ্রন্থিসকল ব্যথাযুক্ত ও স্পর্শাসহিষ্ণু। কোনায়াম এবং সাইলিসিয়া উভয় ঔষধই স্তনের কাঠিন্যতায় উপযোগী; কোনায়াম ডানদিকের ও সাইলিসিয়া বামদিকের স্তনের কাঠিন্যে কাজ করে।
প্রদর।-প্রদরস্রাব ঋতুর ঠিক দশ দিন পরে আরম্ভ হয়। স্রাব ঝাঁজাল ও ক্ষতকর কখন রক্তমিশ্রিত, আবার কখনও বা দুধের মত সাদা। অত্যধিক গাঢ় ও হাজনশীল। তুলনীয়। আর্সেনিক -হাজাকর স্রাব, যেস্থানে লাগে হেজে যায়, জ্বালা করে। দুর্গন্ধযুক্ত প্রচুর পরিমাণ স্রাব। অ্যালুমিনা-চটচটে প্রদরস্রাব, পায়ের গোড়ালি পর্য্যন্ত গড়িয়ে পড়ে। বোরাক্স – ডিমের সাদা লালার মত হড়হড়ে গরম স্রাব, ঋতুর আগে ও পরে প্রকাশ পায়। বোডিষ্টা বোরাক্সের মত সমস্ত লক্ষণ প্রকাশ পায়, কিন্তু বোরাক্সের মত স্রাব গরম নয়। ক্যাল্কেরিয়া-আর্স-রক্তযুক্ত শ্বেত-প্রদরে অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত। অ্যারেলিয়া-পানির মত অথবা হাজাকর, চটচটে শ্লেষ্মাস্রাব, যোনি হেজে যায়। গ্র্যাঙ্কাইটিস-ঋতুস্রাবের পরিবর্তে প্রদর। ঋতুর আগে এবং পরে দেখা দেয়, দুধের মত সাদা স্রাব। ইউলইন-হলদে রং এবং প্রদরস্রাব, ঋতুর পরে প্রকাশ পায়, কোমরে বেদনা যোনিমুখে জ্বালা। পুনঃ পূনঃ প্রস্রাব লক্ষণটি থাকে।
গ্রন্থিস্ফীতি। বগল, ঘাড়, কুঁচকি বা যে কোন গ্রন্থি ফুলে শক্ত ও ঐ স্থানে মধ্যে মধ্যে সূঁচফোটান ব্যথা হয়। আঘাত লেগে গ্রন্থিস্ফীতি। আক্রান্ত পার্শ্বের বাহু অসাড় হয়ে যায়, সেইসঙ্গে সমস্ত শরীরের চামড়া নীলাভ হয়। আঘাত জনিত টিউমার আক্রান্ত স্থানটিতে সূঁচফোটান ব্যথা থাকে ও ইঁটের মত শক্ত হয়ে যায়, সেইসঙ্গে আলোকাতঙ্ক, থেমে থেমে প্রস্রাব। সিফিলিস ক্ষত কিছুতেই আরোগ্য হয় না, সেই সাথে শক্ত গ্রন্থি। তুলনীয়। – অপারকিউলিনা – লসিকা গ্রন্থি বড় এবং শক্ত (এটা প্লেগেরও একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। জ্বর-বিকার, ভূলবকা এবং গ্রন্থিস্ফীতি লক্ষণ থাকে),
কার্বো-অ্যানিমেলিস – বগলে কুঁচকি, স্ত্রীলোকদের স্তন ইত্যাদি গ্রন্থিস্ফীতি, শক্ত, এমন-কি পাথরের মত শক্ত হলে উপযোগী হয়ে থাকে। সিষ্টাস-ঘাড়ে এবং গলার ভিতরের গ্ল্যান্ড ফোলে এবং শক্ত হয়, একটি দড়িতে পর পর গাঁট দিলে যেরূপ দেখায় সেই প্রকারের অবস্থা। অ্যালনাস- অত্যন্ত বড় গ্ল্যান্ডে বেলেডোনা, মার্কুরিয়াস ও হিপার-সান্কারের পরে ব্যবহৃত হয়। ল্যাপিস- অ্যাম্বা-ঘাড়ে এবং গলায় ছোট ছোট গ্ল্যান্ডে উপযোগী, স্ফীতিযুক্ত গ্ল্যান্ড। হেক্সা-লাভা-ঘাড়ের গ্ল্যান্ড যখন অত্যন্ত বড় ও শক্ত হয়, তখন এটা বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। থাইরয়ডিন-পাথরের মত শক্ত গ্ল্যান্ডে উপকারী।
পক্ষাঘাত।-পূর্বোক্তরূপ ঘাম ও মূত্র লক্ষণে পক্ষাঘাত রোগী আরোগ্য হয়। ডাঃ লিপিও এটা সমর্থন করেন। নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত -পাদদেশ হতে আরম্ভ হয়ে ঊর্ধ্বদেশে প্রসারিত হয়। ডিফথিরিয়ার পর পক্ষাঘাত এবং সন্ন্যাস রোগের পর পক্ষাঘাত। বার্দ্ধক্য বশতঃ ইন্দ্রিয় নিরোধহেতু স্নায়ুমন্ডলের অসাড়তা। স্পর্শজ্ঞান অব্যাহত থাকে, কিন্তু শরীর অনবরত কাঁপে। হাঁটবার সময় সম্মুখের দিকে পড়ে যাবার ভাব হয়; সহসা শিরোঘূর্ণন হয়ে রোগী অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। রোগীর কব্জিতে মটমট শব্দ হয় (কনুই মটমট করে- ক্যালমিয়া; হাত নাড়লে মণিবন্ধ সভ্ৰিষ্ট হয়ে গেছে বোধ-ব্রাইও, রুটা), হাঁটবার সময়ও জানুসন্ধি মটমট করে।
অবসাদবায়ু রোগ। -রোগী সদাই বিমর্ষ, ব্রহ্মচর্য্য বা ইন্দ্রিনিরোধ জন্য এই অবস্থা। তুলনীয়।– অরাম-মেটালিকাম, ইগ্লেসিয়া, নাক্স ভমিকা, কেলি-ফস ইত্যাদি। অবসাদ বা বিষাদবায়ুর আরও কয়েকটি বিশিষ্ট ঔষধ আছে, লক্ষণের সঙ্গে অনেকাংশে মিল থাকলেও কারণ ভিন্ন। অরাম-মেটালিকাম।-জীবনে বিপিপাসা এবং আত্মহত্যা করার দুর্দম্য প্রবৃত্তি, মনে করে সংসারে সে অযোগ্য ব্যক্তি, সদাই আত্মহত্যার চিন্তা, উপদংশ এবং পারদ অপব্যবহারের ইতিহাস। অ্যানাকার্ডিয়াম-ওরি-অতিরিক্ত অধ্যয়ন এবং ইন্দ্রিয় দোষের জন্য মস্তিষ্কের ক্লান্তি, সন্দিগ্ধমনা, আত্মবিশ্বাস লোপ। অ্যাসিড-পিক্রিক- মস্তিষ্কে ক্লান্তি (brain fag) এবং ইন্দ্রিয়ের উত্তেজনা, স্নায়বিক দুর্বলতা, কোন কাজ করতে ইচ্ছা হয় না এবং সকল বিষয়ে তাচ্ছিল্যভাব। অ্যান্টিম-ক্রুড- কোপন স্বভাব এবং খিটখিটে মেজাজ, জীবনে বিপিপাসা এবং বিষণ্ণতা, সদাই মনমরা ভাব। ভগ্নপ্রেম জনিত মানসিক রোগ। ইগ্নেসিয়া – পিত্তপ্রধান স্ত্রীলোকদের পক্ষে অধিকতর উপকারী (যেমন পিত্তপ্রধান পুরুষদের পক্ষে নাক্স ভমিকা), সদাই বিষণ্ন, নির্জনে বসে বিলাপ করে, সদাই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে, দুঃখ চেপে রাখতে চেষ্টা করে। পরিবর্তনশীল মেজাজ-এই হাসি, এই কান্না। ক্রোধ, ভয় অথবা ভগ্নপ্রেমজনিত মানসিক রোগ। কেলি ফস – স্নায়বিক অবসাদ এবং দুর্বলতা, মাথাঘোরা, মস্তিষ্কে রক্তের অভাব, উৎকণ্ঠা এবং অবসাদ। সর্ববিষয়েই একটা হতাশ ভাব। নাক্স- ভমিকা-আত্মহত্যার প্রবৃত্তি, কিন্তু রোগী মরিতে ভয় পায়, অতি সামান্য কষ্টে অভিভূত হয়ে পড়ে। উৎকণ্ঠার সঙ্গে অস্থিরতা, ব্যাধিশঙ্কাযুক্ত, হিংসাদ্বেষপূর্ণ খিটখিটে মেজাজ; ঝগড়াটে প্রকৃতি। নেট্রাম- মিউর-শোক, দুঃখ, ভয়, ক্রোধ ইত্যাদি হতে মানসিক রোগের উৎপত্তি। সান্ত্বনা দিলে রোগীর রোগলক্ষণ বাড়ে
উন্মাদ।-রোগী ধীর প্রকৃতির, নিজের বিষয় ব্যক্ত করতে পারে না।
জ্বর। -জ্বরে কদাচিৎ ব্যবহৃত হয়। জ্বর ৩টা হতে ৫টার ভিতর আসে, রোগী অনবরত রৌদ্রের ভিতর থাকতে চায়। ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে, বিশেষতঃ চোখ বুজে শুয়ে থাকলেই ঘাম ও ঘাম হতে দুর্গন্ধ। তুলনীয়।— ঘামে পেঁয়াজের গন্ধ-বোভি, ল্যাকে, লাইকো। ঘামে গন্ধকের গন্ধ -ফস্কোরাস। ঘামে মূত্রের গন্ধ -বার্বে, ক্যান্থা, ক্যাঙ্কে, অ্যাসিড-নাই। ঘামে ঘোড়ার মূত্রের গন্ধ-অ্যাসিড-নাইট্রিক।
কাশি। রাত্রে শয়ন করলে বা হাস্য করলে বৃদ্ধি। তুলনীয়।-গর্ভাবস্থায় মাথা নীচু করে শুইলে কাশি – অ্যামন-মিউর। গর্ভাবস্থায় বামপাশে শয়নে -ইপি, প্যারিস। গর্ভাবস্থায় ডানদিকে শয়নে-অ্যামন-মিউর, ষ্ট্যানাম। গর্ভাবস্থায় চিৎ হয়ে শুইলে -নাক্স, ফস। গর্ভাবস্থায় বায়ুনলীতে পিট পিট করে কাশি–নাক্স-মস, স্যাবাইনা। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কাশির জন্য গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনায় -ল্যাকেসিস। কোনায়ামের কাশি শুষ্ক ও আক্ষেপিক, কাশির সময় বোধ হয় যেন স্বরযন্ত্রের কোন এক স্থান শুষ্ক হয়ে গেছে। প্রথম শয়নের সময় কাশি আরম্ভ হয়, রোগীকে উঠে বসে কাশিতে হয়, শ্লেষ্মা উঠলে কাশির ধমক কমে যায়। বৃদ্ধদের রাত্রিকালীন কাশি। হামের পরবর্তী শুষ্ক কাশি (ক্যাপ্সিকাম বিফলে)।
সম্বন্ধ।-স্তনের স্ফীতিতে-সাইলিসিয়া। ঋতুর অল্পতায়-গ্র্যাফাইটিস। আঘাত ইত্যাদির পর স্তন ফুলে শক্ত হলে – আর্ণিকা ও রাস-টক্স। গ্রন্থিস্ফীতি রোগে -ল্যাকে, সোরিণাম। প্রসবের পর সাবরোধে-নাক্স, হায়ো, পালস, সিকেলি। ঊর্ধ্বগামী বা ক্রমবর্দ্ধনশীল পক্ষাঘাতে-অ্যাসিড- হাইড্রো, ম্যাঙ্গে তুল্য।
বৃদ্ধি।– শুইলে, বিছানায় পাশ ফিরলে; সঙ্গম ইচ্ছা দমনে; ঋতুর আগে ও সময়ে; মানসিক ও দৈহিক পরিশ্রমে; আহারকালে; আহারের পর; আলোকে; বিশ্রামকালে; দুধ খেলে; ঘর্ষণে; আঘাত লাগলে।
হ্রাস। -উপবাস করলে; অন্ধকারে; চাপ দিলে; চেয়ারের উপর পা তুলিলে।
শক্তি। কেউ কেউ নিম্নশক্তির পক্ষপাতী। সচরাচর ৬, ৩০, ২০০ বা তদূর্ধ্ব শক্তি।