চিনিনাম– সালফিউরিকাম (Chininum Sulphuricum)
পরিচয়।-এটার অপর নাম কুইনিন-সাম্ফ।
ব্যবহারস্থল। ম্যালেরিয়া বা সবিরাম জ্বরে স্বল্পবিরাম জ্বর, স্নায়ুশূল, হৃৎশূল, প্রলাপ, হাঁপানি, যকৃৎ ও প্লীহার বৃদ্ধি, শোথ, নানাজাতীয় ক্ষত, এমন কি ক্যান্সারের ক্ষত, সূতিকাক্ষেপ, শীত-পিত্ত, বাধক, বাত প্রভৃতি রোগ।
প্রদর্শক লক্ষণ।-জ্বরের সময় শিরদাঁড়া অত্যন্ত স্পর্শকাতর, সেখানে হাত দেওয়া যায় না। প্রতিদিন একই সময় লক্ষণ প্রত্যাবৰ্ত্তন করে অথবা একঘণ্টা আগাইয়া আসে। সমস্ত শরীরে লাল উদ্ভেদ, হুলফোটান বেদনা। তারপর ছাল উঠে যায়। রাত্রে ক্ষুধা। শিশুদের মলদ্বার স্থানচ্যুত হয়। প্রস্রাব দ্বার হতে রক্ত পড়ে। নড়াচড়া করলে শীত করে। হেঁট হলে মাথা ঘোরে। মাথাধরা সেই সঙ্গে কানে কম শোনে। মুখ হতে লালাস্রাব। গলার মধ্যে শুষ্কতা। রুটি তেঁতো লাগে। মাংসে অরুচি। বেলা ৪টার সময় স্বরভঙ্গ। শোথ রোগ।
ম্যালেরিয়া।– ম্যালেরিয়া জ্বরে তীব্র শিরঃরোগ, স্নায়ুশূল, শারীরিক দুর্বলতা ও সামান্য কারণে বুক ধড়ফড়ানি, অতিরিক্ত ঘাম, মেরুদন্ডে অসহ্য বেদনা; প্রত্যহ একই সময়ে জ্বর উপস্থিত হওয়া, জ্বর আসিবার সময় বেলা ১০টা হতে ১১টা, সেই সাথে শীত কম্প কিম্বা বৈকাল ৩টা হতে রাত্রি ১০টায় জ্বর এবং জ্বর প্রত্যহ আগাইয়া আসে। প্রথমে শীত-কম্প পরে উত্তাপ, তারপর ঘাম, শেষে সম্পূর্ণ বিরাম। প্লীহার বৃদ্ধি ও বেদনা, ফ্যাকাসে মুখ, নীলবর্ণ ঠোট, প্রবল পানিপিপাসা, কানের মধ্যে নানাবিধ শব্দ, হাত-পা কম্পন। উত্তাপাবস্থার পর প্রচুর ঘাম, এই ঘামের সাথে রাত্রিকালে উদরাময়ও থাকে। জ্বরের মধ্যে হাই তোলা ও হাঁচি হওয়া প্রভৃতি লক্ষণযুক্ত জ্বর। তুলনীয়।– চায়না- চিনিনাম-সালফ বা কুইনাইন চায়নার উপক্ষার, তা হলেও জ্বরে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য এবং প্রভেদ আছে, যা জানিয়া রাখা দরকার। চায়নায় জ্বরের পূর্বাবস্থায় পিপাসা ও ক্ষুধা। কুইনাইনে বিশেষ কোন লক্ষণ নেই। চায়নায় শীতাবস্থায় পিপাসা হয় না, কুইনাইনে পিপাসা। চায়নায় উত্তাপাবস্থায় পিপাসা নেই, কুইনাইনে অ’ছে, চায়নায় ঘর্মাবস্থায় অতিরিক্ত পিপাসা, প্রচুর পরিমাণ ঘাম, কুইনাইনেও ঘর্মাবস্থায় পিপাসা অধিক। চায়নায় বিজ্বরাবস্থায় পিপাসা নেই, কুইনাইনে বিজ্বরাবস্থায় অতিরিক্ত পিপাসা। চায়নায় ঘাম বেশী না হলে অথবা শীত ও উত্তাপাবস্থায় অতিরিক্ত পিপাসা থাকলে ব্যবহারে কোন ফল পাওয়া যায় না, সেইরূপ কুইনাইনে শীত ও উত্তাপাবস্থায় পিপাসা না থাকলে অথবা উত্তাপাবস্থার পরে ঘর্মাবস্থা নিয়মিত না হলে এটার প্রয়োগ নিস্ফল হয়ে যায়।
শিরঃরোগ।-শিরঃরোগের রোগী মনে করে, যেন তার মাথার ভিতর কলের চাকা ঘুরছে। ম্যালেরিয়া জ্বর তীব্র ও যন্ত্রণাদায়ক শিরঃরোগ। মাথার যন্ত্রণা দুপুরবেলা আস্তে আস্তে বাড়িতে আরম্ভ করে সন্ধ্যার সময় অত্যধিক জ্বর (ষ্ট্যানাম) শিরাসকল দপদপ করতে থাকে। কুইনিন অপব্যবহার জনিত শিরঃরোগ, বধিরতা, কর্ণের ভিতর নানারূপ শব্দ ও দৃষ্টিবিকার। নাক হতে রক্তস্রাবের সাথে শিরঃরোগে ডাঃ হেল এই ঔষধ প্রয়োগ করতে উপদেশ দেন।
স্নায়ুশূল।– অক্ষি-কোটরের উপর স্নায়ুশূলে এই ঔষধটি বিশেষ কাজ করে। ডাঃ রিঙ্গার এই মত সমর্থন করেন।
প্লীহারোগ।– ম্যালেরিয়া রোগজনিত প্লীহার বৃদ্ধি ও সেখানে বেদনাসহ শোথ এবং প্লীহাদেশে সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা। চিনিনাম-সালফ রোগীর মুখমন্ডল উজ্জ্বল, উত্তপ্ত, ফ্যাকাসে ও রোগব্যাঞ্জক। সন্ধ্যাবেলায় শরীরের নানাস্থানে বেদনা। রোগীর প্রস্রাবের সাথে অধিক পরিমাণে রক্তস্রাব হয়, কিন্তু যন্ত্রণা মোটেই থাকে না।
বাত রোগ।-বাত রোগের ফলে সন্ধিস্থলের ক্ষীণতা, হস্ত-পদাদি দুর্বল হয়ে পড়া, হস্ত-পদের কম্পন এবং হাত-পা নিজের আয়ত্তের বহির্ভূত। ছিড়িয়া ফেলার মত বেদনা। পক্ষাঘাত।
সদৃশ। – চায়না, সিড্রন, ল্যাকে, আর্ণিকা, নাক্স, পালস।
বৃদ্ধি। – স্পর্শে; নড়াচড়ায়; হেঁট হলে।
হ্রাস — সামনে ঝুঁকলে; চাপ প্রয়োগে।
শক্তি।– ১x, ৩x, ৬x বিচূর্ণ; ৩০, ২০০ শক্তি ফলপ্রদ।