সিড্রণ (Cedron)
পরিচয়। এটা এক জাতীয় ভূত বৃক্ষ।
ব্যবহারস্থল। -সবিরাম জ্বর, স্বায়ুশূল, মূর্ছাবায়ু, শিরঃরোগ, মস্তিষ্ক ও মেরুমজ্জা আবরণের প্রদাহ, তান্ডব, মৃগী, সর্প-দংশন, দন্তশূল প্রভৃতি। আমেরিকা অঞ্চলে সর্প-সংশনে সিড্রণ উত্তম ঔষধরূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
প্রদর্শক লক্ষণ।– সবিরাম জ্বর ও স্নায়ুশূল। বেদনা নির্দিষ্ট সময়ে ঘড়িধরা ভাবে উপস্থিত হয়। মাথাধরা, সেইসঙ্গে সমস্ত শরীর অসাড়। চোখ লাল, হাত-পা অসাড়। প্রমেহ বা গ্লীট, সেইসঙ্গে রোগী ভাবে যে, তার শরীরের সর্বত্র কি যেন সড়সড় করে চলছে। হাই তুলে ও গা-ভাঙ্গে। ঋতুকালে প্রতি রাত্রে দাঁতব্যথা। রতিক্রিয়ার পর তোৎলামী (নারী)। ঋতুকালে মুখ হতে দুর্গন্ধ। অত্যন্ত পিপাসা। ঋতুর পর লালাস্রাব। একদিন অন্তর বেলা ১১টায় মাথা ধরে। ম্যালেরিয়া বা সবিরাম জ্বর। জ্বর যেখানে ঘড়িধরা সময়ে উপস্থিত হয় সেখানে সিড্রণ ও অ্যারেনিয়া ডায়েডেমা উৎকৃষ্ট ঔষধ রোগী ঘড়ি ধরে উৎকণ্ঠিতভাবে আক্রমণের অপেক্ষা করে। পার্থক্য-অ্যারেনিয়া হাইড্রোজেনোয়েড “তুর ঔষধ, সেটার রোগলক্ষণ বর্ষাকালে বাড়ে। রোগীর শীতভাব অত্যন্ত প্রবল। সিড্রণে কিন্তু রূপ শীতভাব থাকে না। সিড্রণের জ্বর প্রায়ই রাত্রি ৩টায় বা বেলা ৩টায় আসে। জ্বরের আগে তার মানসিক অবসাদ বা উত্তেজনা প্রকাশ পায়। শীতাবস্থায় তার নাকের ডগাটা বড়ই ঠান্ডা হয়ে যায়।
স্নায়ুশূল।– শূলবেদনা ঠিক ঘড়িধরা ভাবে একই সময়ে আসে। চোখের স্নায়ুশূলে এই ঔষধ স্পাইজিলিয়ার তুল্য। এটার শূলবেদনা বামদিকে হতে আরম্ভ হয়, সিড্রণেরও তাই; তবে এটার শূলবেদনা নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হয় এবং সাধারণতঃ ম্যালেরিয়া জ্বরের পরই বেশী দেখা যায়। চোখের স্নায়ুশূল প্রায়ই বেলা ৯টার সময় উপস্থিত হয়ে থাকে। সিড্রণ মুখের স্নায়ুশূলেও কাজ করে। এই জাতীয় শূলের বেদনা প্রত্যহ ঠিক ৭টা হতে ৮টার ভিতর উপস্থিত হবে এবং প্রায় ৪ ঘন্টা পৰ্যন্ত থাকবে।
বাত।– বাতের বেদনা প্রত্যহ রাত্রি ১০টার সময় উপস্থিত হয়; প্রত্যেক সন্ধিতে তীব্র বাতের বেদনা। সমস্ত ডানদিকের হাতখানা অসাড় ও নিষ্ক্রিয় হওয়ার ফলে রোগী কোন কিছু ধরতে পারে
না।
স্ত্রীরোগ। ঋতুর সময় রোগিণীর মুখ ও জিহবা অত্যন্ত শুষ্ক বোধ, অত্যধিক পিপাসা, পিপাসায় প্রচুর পানি পান করে। ঋতুস্রাবের সময় বা তার আগে রোগিণীর মৃগীর মত ফিট হয়, প্রতিমাসে ঋতুর পাঁচ-ছয় দিবস আগে নিয়মিতভাবে প্রদরস্রাব উপস্থিত হয়, ঋতুর পরে মুখে প্রচুর পরিমাণে লালা সঞ্চয় হওয়া। যে সকল রমণীর প্রায় প্রতিবারই গর্ভপাত হয়, তাদের গর্ভপাত নিবারণের জন্য সিড্রণ উৎকৃষ্ট ঔষধ। প্রত্যেক বারেই ঠিক একই মাসে গর্ভপাত হয়, বিশেষতঃ যারা ম্যালেরিয়া এবং অতিরিক্ত কুইনিন ব্যবহার করেছেন। গর্ভপাতের আশঙ্কায় নিম্নলিখিত ঔষধগুলিও বিশেষ ফলবত্তার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে থাকে :
সিমিসিফিউগা। – তৃতীয় মাসে গর্ভস্রাব হয়ে বাতরোগগ্রস্তা রোগিণীদের পক্ষে উপযোগী। পেটে বেদনা, একদিক হতে অন্যদিকে আড়াআড়িভাবে চালিত হয়, বেদনার জন্য রোগিণী পেট টেনে উপুড় হয়ে থাকে। দারুচিনি হতে প্রস্তুত -সিনামোমাম মূল-অরিষ্ট এবং নিম্নশক্তি। পড়ে গিয়া বা চাড় লেগে জরায়ু হতে রক্তস্রাব হতে থাকলে, গর্ভপাত নিবারণার্থ এই ঔষধ এবং ঠিক এই লক্ষণে আর্ণিকা বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। স্যাবাইনা – তৃতীয় মাসে জরায়ু হতে রক্তস্রাব আরম্ভ হলে গর্ভপাতের আশঙ্কা করে তৎক্ষণাৎ এটা ব্যবহার করা উচিত, এটার রক্ত কালো বা উজ্জ্বল লালবর্ণের হতে পারে, কতক তরল, রক্তচাপ চাপ। ঔষধ নির্বাচনের জন্য এটার বেদনার প্রকৃতি মনে রাখা দরকার। কোমর হতে বিটপদেশ বা পিউবিস পর্য্যন্ত ছেড়া কাটার মত বেদনা, এই বেদনাই এটার বিশেষ প্রয়োগ লক্ষণ।
ভাইবার্ণাম।- মূল-অরিষ্ট এবং নিম্নশক্তি। গর্ভপাত নির্ধারণের এটা একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ এবং এটার বেদনার উপরই ঔষধ নির্বাচন নির্ভর করে। এটার বেদনা আরম্ভ হয় প্রথমে কোমর হতে, ক্রমে জরায়ুতে এবং শেষে উরুদেশে চালিত হয়। সিকেলি-কর–গর্ভপাত নিবারণের আর একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। এতে প্রচুর পরিমাণ কাল চাপ চাপ রক্তস্রাব হয়, হাত-পায়ে ঝি ঝি ধরে, চোখ- মূখ বসে যায়।
বৃদ্ধি -ঘুমের পর; ঋতুকালে (মৃগী); শুইলে; রাত্রে; খোলা বাতাসে; ঝড়ের আগে; বেলা ১১টায়; রতিক্রিয়ার পর।
হ্রাস। দাঁড়ালে।
শক্তি।–মূল-অরিষ্ট, ৩x, ৩, ৬, ৩০ এবং ২০০। উচ্চশক্তিই বেশী ব্যবহৃত হয়।