ক্যানাবিস ইন্ডিকা (Cannabis indica)

পরিচয়।– গাজা।

ব্যবহারস্থল। -প্রমেহ; অলীক-দৃষ্টি; মৃগী; উন্মাদ; তোলামী; মূত্রবিকার; শিরঃরোগ। ক্রিয়াস্থল। মস্তিষ্ক ও জননেন্দ্রিয়।

প্রদর্শক লক্ষণ।– মেহরোগ, কর্ডি, অত্যন্ত লিঙ্গোচ্ছ্বাস সহ মূত্রস্বল্পতা। মূত্র হাত দিয়ে টেনে বের করতে হয়। বুক ধড়ফড় করে সেজন্য ঘুম ভেঙে যায়। পক্ষাঘাত। আক্রান্ত স্থানে ঝিনঝিনে ব্যথা। ঘুমাতে ঘুমাতে চমকিয়ে উঠে। দাঁতে আওয়াজ করে। তোলায়। হাসিবার সময় কিডনীতে ব্যথা। সর্বদা ভয় করে সে পাগল হয়ে যাবে। সময় ও দূরত্ব সম্বন্ধে ভুল করে। এক মিনিট যেন এক ঘন্টা এবং ১ মাইল রাস্তা যেন ১০০ মাইল রাস্তা মনে হয়। সামান্য কারণে অত্যন্ত হাসে। মাথাধরা, সেইসঙ্গে পেটে বায়ু। বায় নিঃসরণে উপশম। লালাস্রাব, সাদা চটচটে, ফেনা-ফেনা গাঢ়। দারুণ ক্ষুধা; দারুণ পিপাসা। নাড়ী খুব আস্তে আস্তে চলে (৪৬)। ডিজিটেলিসেও নাড়ীর গতি মৃদু। সব বিষয়ে ভুল। একটি বাক্যও শেষ করতে পারে না। কাঁধের আশে-পাশে ও শিরদাঁড়ায় যন্ত্রণা। হেঁট হয়ে থাকে। সোজা হয়ে চলতে পারে না। যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাব, সেই বঙ্গে রতিক্রিয়ার ইচ্ছা। রোগী খুব বেশী কথা বলে। মনে করে, হৃৎযন্ত্রের স্থানে ফোঁটা ফোঁটা করে কি পড়ছে (ক্যানাবিস স্যাট)।

মন। -রোগীর মনে সর্বদাই একটা আনন্দের ভাব দেখা যায়, সে অনেক রকমের অদ্ভুত কল্পনা করে এজন্য তাকে পাগলের মত দেখায়। তার নিকট সময় অতি দীর্ঘ মনে হয়, দশ হাত দূরের স্থান বহুদূর মনে হয়, অনেক সময় অতিরিক্ত কথা বলে, নানাপ্রকার অলঙ্কার ও রূপরস দিয়ে কথা বলে। কথা বলতে বলতে হঠাৎ কি বলেছে ভুলে থেমে যায়। যেখানে গাম্ভীৰ্য্য বজায় রাখতে হবে সেখানে হেসেই অস্থির আবার যেখানে হাসি-তামাসার কথা হচ্ছে সেখানে কাঁদিয়ে ফেলে। মাথার খুলিটি একবার খুলছে একবার বন্ধ হচ্ছে এরূপ বোধ করে। ভাবে যেন চলন্ত বলের উপর বসে আছে। রোগী মৃত্যু আসন্ন ভেবে ভীত হয়ে পড়ে। সে মনে করে, যেন সে ক্রমশঃ মোটা হয়ে যাচ্ছে; আবার কখনও মনে করে যেন ভয়ানক ক্ষীণ হয়ে গেছে, তার পা মাটি স্পর্শ করছে না।

ভ্রান্তি ও উন্মত্ততা। -অতিরিক্ত গাঁজা ও ভাঙ সেবনের ফলে উন্মত্ততায় নিম্নক্রম বিশেষ উপযোগী; প্রলাপের মধ্যে সর্বদা একটা স্ফুর্তির ভাব থাকে। সেই সাথে বিভিন্ন প্রকার ভ্রান্ত অনুভূতি। ষ্ট্যামোনিয়ামও উন্মাদ রোগের একটি উপযোগী ঔষধ। রোগী রহস্যপ্রিয়, বাচাল, সে আলোক ও সঙ্গী চায়। কখন কখনও আবার ভয়ে ব্যাকুল হয়ে উঠে। ক্যানাবিস-রোগীর চোখের দৃষ্টি স্থির, উভয় চোখের কৈশিক শিরাগুলি লাল হয় ও নানারকমের চাকচিক্যময় জিনিস দৃষ্টিপথে উদিত হয়। ছানির জন্য দৃষ্টিহীনতা, সেইসঙ্গে মাথার খুলিটি বার বার খুলছে ও বন্ধ হচ্ছে বোধ।

প্রমেহরোগ প্রস্রাবের রোগ। -ক্যানাবিস ইন্ডিকার অনেক লক্ষণ ক্যানাবিস স্যাটাইভার তুল্য। হাসিলে মূত্রগ্রন্থিতে বেদনা অনুভব করে, বেদনার জন্য রোগী ঘুমাতে পারে না। প্রস্রাবের সাথে ঘন ও হলুদাভ স্রাব হতে থাকে। ক্যানাবিস ইন্ডিকার রোগীর অতিশয় লিঙ্গোদ্গম হয় সেই সাথে জ্বালা। প্রস্রাব করার সময় বহুক্ষণ বসে থাকলে পর প্রস্রাব বের হয়, শেষ কয়েক বিন্দু প্রস্রাব আঙ্গুল দ্বারা টেনে বের করতে হয়। প্রস্রাব কখনও বা বিভক্ত ধারায় বের হয় (ক্যাম্ফে, রাস)। ক্যান্থারিস রোগীরও প্রস্রাবে অত্যন্ত জ্বালা ও যন্ত্রণা আছে, প্রভেদ এই-ক্যানাবিসে বেদনাযুক্ত লিঙ্গোদাম আছে আর ক্যান্থারিসে সেটা নেই। ক্যানাবিসে জ্বালা বেশী আর ক্যান্থারিসে কোথ ও বেগ বেশী। ক্যানাবিস-রোগীর মূত্রপিন্ডে প্রদাহ আছে। প্রধান লক্ষণ মূত্রপিণ্ড হতে কুঁচকি পর্য্যন্ত সেঁটে ধরা এবং সেইসঙ্গে গা-বমি-বমি।

জলাতঙ্ক।-এই রোগের প্রধান ঔষধ-হাইড্রোফোবিনাম, ক্যান্থারিস, বেলেডোনা ও ট্র্যামোনিয়াম। ডাঃ হেল্ বলেন-জলাতঙ্ক রোগে রোগীর অনিবার্য্য মৃত্যু লক্ষণে এই ঔষধের ২০- ৪০ ফোঁটা মাদার-টিংচার সেবন করতে দিলে আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের রোগ। – ৭/৮ মাসের গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের রক্তস্রাব। ডাঃ হার্সেল বলেন- রক্ত-প্রদর এবং অত্যধিক ঋতুস্রাবে এই ঔষধ বিশেষ উপযোগী। এটার রক্ত গাঢ়, যন্ত্রণাদায়ক এবং প্রচুর, কিন্তু জমাট বাঁধে না। এমন রক্তস্রাবের সাথে ক্যানাবিসের চরিত্রগত মাথার যন্ত্রণা থাকলে, এটা একপ্রকার অব্যর্থ।

মাথার যন্ত্রণা ও আধ-কপালে মাথাব্যথা।--মাথার যন্ত্রণায় রোগীর মনে হয় তার মাথার খুলির হাড়খানা একবার উঠছে আবার পড়ছে। মাথায় দপদপকারী বেদনা; যেন কেউ তার মাথার পিছনে জোরে আঘাত দিচ্ছে। অবরুদ্ধ মূত্রজনিত মাথার যন্ত্রণা। মাথা কাঁপতে থাকে। সপ্তাহ অন্তর বা ১৫ দিন অন্তর আধ-কপালে ব্যথা। রোগী যন্ত্রণায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে, কখনও বা প্রলাপ বকে। ডাঃ হেল্ বলেন-তীব্র আধ-কপালে ব্যথা আরম্ভ হলে এই ঔষধের মূল-অরিষ্ট ৫ ফোঁটা মাত্রায় সেবন করতে দিলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

হাঁপানি।– তরল শ্লেষ্মার সাথে হাঁপানির টান, বুকে চাপবোধ, সেজন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাঘাত। হাঁপানির সময় রোগী দীর্ঘশ্বাস গ্রহণ করলে আরাম বোধ করে। খোলা হাওয়ায় ও পাখার বাতাসে আরাম বোধ করে। হাঁপানির সময় এই ঔষধের নিম্নশক্তি প্রয়োগে অতি অল্প সময়ের মধ্যে হাঁপানির টান কমে যায়। কার্ডিয়াক অ্যাজমা – আক্ষেপিক হাঁপানি, হৃৎপিন্ডে যাতনা, রোগী বামদিকে চেপে শুইতে পারে না (ক্যাক্টাসের মত)। বুক ধড়ফড় করে। হাঁপানির টান শীঘ্র কমাবার জন্য ক্যানাবিস-ইন্ডিকার মত আরও ঔষধ ব্যবহৃত হয়-ব্ল্যাটা ওরিয়েন্টালিস, অ্যাকোনাইট, আর্সেনিক, যার্বাস্যান্টা, সেনেগা, এফিড্রা-নেব্রুডেন্সিস্ সবই নিম্ন শক্তিতে।

মেনিঞ্জাইটিস।– ডাঃ হেল মেনিঞ্জাইটিসের প্রথম অবস্থায় এই ঔষধ প্রয়োগ করতে উপদেশ দেন।

সূতিকা-ক্ষেত্রে।-বিকার ও প্রলাপে উপযোগী। রোগী প্রলাপে হাসে, নানা কথা বলে, কখনও বা অল্প জ্ঞান থাকে, কখনও থাকে না। জ্ঞান হওয়ার পরই মাথায় একটা বিদ্যুৎ প্রবাহ হলে এমন অনুভব করে। দৃষ্টি স্থির, চোখের কোন লালবর্ণ, মাথা কম্পনশীল। মুখ বরফের মত ঠান্ডা। তড়কা বা মূৰ্চ্ছাকালে মাথা বুকের দিকে নুয়ে পড়ে।

প্রত্যঙ্গাদি। -মেরুদন্ডে বেদনা অনুভব, সেজন্য মাথা হেঁট করে চলে, সোজা হয়ে চলতে পারে না। বাহুর উপর হতে নীচ পর্যন্ত এবং জানু হতে পদতল পর্য্যন্ত অনবরত চিনচিনে ব্যথা, নিম্নাঙ্গের পূর্ণ পক্ষাঘাত, সেজন্য রোগী সামান্য দুই -এক পা হাঁটিলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে; শুয়ে থাকতে প্রবল ইচ্ছা।

নিদ্রা।– রোগীর অত্যধিক ঘুমের ভাব, কিন্তু ঘুমাতে পারে না, যখন ঘুমায় তখন হাত দুইটি উপরের দিকে তুলে রাখে, ঘুমের ভিতর কথা বলে, এবং হাত-পা নড়ে উঠে। প্রতি বারে ঘুমের ভিতর শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। ঘুমের ভিতর মৃত ব্যক্তির স্বপ্ন দেখে এবং কামোদ্দীপক স্বপ্ন দেখে রেতঃপাত হয়।

বৃদ্ধি।-সকালে; কফি পানে; মদ খেলে; তামাক সেবনে; ডানদিকে শুইলে ঋতুকালে; রতিক্রিয়ার পর।

হ্রাস। -মুক্ত বাতাসে; ঠান্ডা পানিতে; বিশ্রামে; গভীর শ্বাস গ্রহণে; ঢেঁকুর উঠলে।

শক্তি। মূল-অরিষ্ট ২x, ৩, ৬, ৩০। ডাঃ ন্যাস ও অ্যালেন ২০০ শক্তি প্রয়োগ করতে বলেন।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!