ক্যাম্ফোরা-অফিসিনেরাম (Camphora Officinarum)

পরিচয়। কর্পূর

ব্যবহারস্থল। – ” এসিয়াটিক কলেরা’ বা সাংঘাতিক কলেরা, সাংঘাতিক ম্যালেরিয়া, সাংঘাতিক আক্ষেপ, সর্দি-গর্মি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্পদংশন, ধনুষ্টঙ্কার, ধূমপানের মন্দফল প্রভৃতি।

ক্রিয়াস্থল। -ক্যাঙ্কার সাংঘাতিক জাতীয় রোগের ঔষধ। সাংঘাতিক জাতীয় কলেরার প্রথম অবস্থায় ও অতিসারে কাজ হয়। অতি দ্রুত জীবনীশক্তির অবসন্নতা দেখা দিলে বিশেষ উপযোগী।

প্রদর্শক লক্ষণ।-সমস্ত শরীর বরফের মত ঠান্ডা, কিন্তু গায়ে ঢাকা রাখা যায় না। যন্ত্রণার বিষয় চিন্তা করলে যন্ত্রণা কম হয়। রোগের বিষয় চিন্তা করলে, সেই রোগের উৎপত্তি এবং রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি হয়। অকস্মাৎ জীবনীশক্তির ক্ষয়। নাড়ী ক্ষুদ্র, দুর্বল ও সময় সময় লোপ। যখন হার্ট খুব দুর্বল মনে হয়, তখন পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর চিনিসহ কয়েক ফোঁটা ক্যাঙ্কার দিলে উপকার পাওয়া যায়। শক্ (shock)। হামের পরবর্ত্তী রোগ। সর্দি, সেইসঙ্গে নাক ঠান্ডা, মাথায় টাটানি, নাক বন্ধ হাঁচি। ঘাম ঠান্ডা। ক্রমাগত নাক হতে রক্ত পড়ে ও সেইসঙ্গে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। এসিয়াটিক কলেরা। পায়ের ডিমেতে (calves) খালধরা। শরীর শীতল। কোলান্স। মুখ বসা। হাত-পা অসাড়, ঝিন্ ঝিন্ করে। ঠান্ডা ঘাম। সর্দি-গর্মি। প্রস্রাবে জ্বালা, ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হয়। জ্বর। সমস্ত শরীর ঠান্ডা ও ফ্যাকাসে। অতিশয় দুর্বলতা। উদ্ভেদ হঠাৎ অদৃশ্য হলে। মাথা ডানদিকে বেঁকে যায়। মৃগী। গলা ঘড় ঘড় করে। মুখ লাল ও ফোলা ফোলা। হাত-পায়ের খেঁচুনি। মাথায় গরম চটচটে ঘাম।

বিশিষ্ট লক্ষণ। মেনিঞ্জাইটিস রোগে সমস্ত শরীর ঠান্ডা হয়ে পড়লে, সাংঘাতিক ম্যালেরিয়া রোগে যখন কলেরার মত অবস্থা ও পতনাবস্থা উপস্থিত হয়, হামের পর অত্যন্ত খারাপ উপসর্গ উপস্থিত হলে, বিস্তার প্রবণ বিসর্পরোগে ধনুষ্টঙ্কারের মত আক্ষেপ হলে ব্যবহার্য্য। ক্যাঙ্কার সকল প্রকার উদ্ভিজ্জ জাতীয় ঔষধের গুণহারক।

কলেরা।-এসিয়াটিক কলেরার প্রথম অবস্থায় যেখানে বাহ্যে-বমি নেই বা ২/১ বার হয়ে রোগীর স্নায়ুমন্ডলী পঙ্গু করেছে, সমস্ত অঙ্গ বরফের মত শীতল, শরীর শুষ্ক অথবা চটচটে ঠান্ডা ঘাম হচ্ছে, জিহবা ঠান্ডা, গলার স্বর ও চোখ-মুখ বসা সেখানেই ক্যাফার ব্যবহার করা কর্তব্য। রোগীর হস্ত-পদ্ নীল হয়ে যায়, হৃৎপিন্ডের পক্ষাঘাতিক অবস্থার উপক্রম হয়ে দমবন্ধের মত শ্বাসকষ্ট উপস্থিত হয়। এক মুহূর্ত্তও গায়ে কাপড় রাখতে পারে না। ডাঃ অ্যালেন বলেন -কলেরায় অত্যধিক ঘাম থাকলে ক্যাম্ফার প্রয়োগ করতে নেই অথবা ক্যাম্ফার প্রয়োগের পর ঘাম বের হতে আরম্ভ করলে ক্যাম্ফার প্রয়োগ করা কর্ত্তব্য নয়।

সদৃশ ঔষধ। অত্যধিক বাহ্যে-বমির জন্য রোগী হিমাঙ্গ হয়ে পড়লে, ভিরেট্রাম নির্দেশিত হয়। কিন্তু এটার সাথে কপালে প্রচুর ঠান্ডা ঘাম ও উদরে বেদনা থাকা চাই। হাত-পায়ের ডিমে ও পেটে অত্যধিক খালধরার জন্য কুপ্রাম উপযোগী। ভেদপ্রধান বেদনাহীন কলেরায় রিসিনাস এবং এপিডেমিকের সময় অথবা ভয় পেয়ে কলেরায় অ্যাকোনাইট উপযোগী। এতে পেটে ব্যথা, অস্থিরতা, মৃত্যুভয় ও পিপাসা থাকে।

ক্যাম্ফরের মত কলেরার হিমাঙ্গাবস্থায় কার্বো-ভেজ ৬ ও সিকেলি-কর ৬ বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কার্বো-ভেজ- অতিরিক্ত ঘামের জন্য রোগী হিমাঙ্গাবস্থায় উপনীত হয়, সমস্ত শরীর বরফের মত ঠান্ডা, ভেদ-বমি প্রায় বন্ধ, নাড়ী লুপ্ত, রোগী অনবরত পাখার হাওয়া চায়। অক্সিজেনের অভাবে দমবন্ধ ভাব। ক্যাঙ্কারে ২।১ বার ভেদ বমি হয়েই হিমাঙ্গাবস্থা উপস্থিত হয়। কার্বো-ভেজে ভেদ-বমি হতে হতে অতিরিক্ত ঘর্ম্ম হয়ে হিমাঙ্গাবস্থা প্রকাশ পায়। সিকেলি-কর হিমাঙ্গাবস্থায় সমস্ত শরীর ঠান্ডা অথচ রোগী গায়ের কাপড় রাখে না, তার গাত্রদাহ প্রবল। আর্সেনিকের রোগীর হিমাঙ্গাবস্থায় অস্থিরতা, অতিরিক্ত পিপাসা, গাত্রদাহ থাকবে, সে গায়ে কাপড় রাখতে চায়।

সাংঘাতিক ম্যালেরিয়া। দুষ্ট জাতীয় বা সাংঘাতিক ম্যালেরিয়া। রোগী অতি শীঘ্র অবসন্ন ও ঠান্ডা হয়ে পড়ে। হঠাৎ শীত করে জ্বর হয়, ঐ জ্বর সবিরাম না হয়ে পরিপূর্ণ জ্বর অবস্থাতে শরীর ঠান্ডা হতে আরম্ভ করে। সমস্ত গাত্রাবরণ ফেলে দেয়। শরীর ঠান্ডা তথাপি খুব হাওয়া চায়, নাড়ী অত্যন্ত সূক্ষ্ম হয়ে যায় বা নাড়ী পাওয়া যায় না। শরীর বরফের মত ঠান্ডা; নাক, মুখ, চোখ বসা, শরীর নীলবর্ণ, কখনও ভয়ানক শীতবোধ, কখনও বা অত্যধিক কম্প, আবার কখনও বা গাত্রদাহ দেখা যায়। রোগী শীতে থরথর করে কাঁপতে থাকে, তথাপি গায়ে কোন আবরণ রাখতে পারে না।

জ্বরের উত্তাপাবস্থায় পানিপিপাসার অভাব, শরীর উত্তপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর শরীরস্থ ধমনীসকল ফুলে উঠে। রোগীর অত্যধিক ঘাম হয়; জামা-কাপড়, বিছানা সব ভিজে যায়। অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার ফলে রোগী নিস্তেজ ও অবসন্ন হয়ে পড়ে। নাড়ী ক্ষীণ, অনেক সময় নাড়ী পাওয়া যায় না, জিহবা কাঁপতে থাকে, সেটা ঠান্ডা ও মোটা, জিহবার উপর একটা পুরু হলদে লেপ। ভিরেট্রাম-অ্যালাম। প্রচুর পরিমাণে ভেদবমন, পিপাসা, রোগী ক্রমে হিমাঙ্গাবস্থায় উপনীত হয়। প্রবল দীর্ঘস্থায়ী শীতাবস্থা, উত্তাপে উপশম নেই। প্রচুর পরিমাণ ঘাম হয়ে হিমাঙ্গাবস্থা উপনীত হয়, এই অবস্থায় অনেক রোগী মারা যায়, কিন্তু এমন অবস্থায় ভিরেট্রাম অনেককে রক্ষা করতে পারে। মহাত্মা হ্যানিমান, ডাঃ চার্জি, ডাঃ এইচ, সি, অ্যালেন পার্নিসাস প্রকৃতির ম্যালেরিয়ায় ভিরেট্রামের কার্যকারিতা বিশেষভাবে উল্লেখ করে গেছেন।

আক্ষেপ।– খেঁচুনি বা আক্ষেপে ক্যাঙ্কার একটি ফলপ্রদ ঔষধ। খেঁচুনি যখন আরম্ভ হয় তখন রোগীর জীবন বিপন্ন হয়। খেঁচুনির সাথে রোগী অত্যন্ত শীতল ও অবসন্ন হয়ে পড়ে। শরীর অত্যন্ত ঠান্ডা হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও গায়ে কোনরূপ আবরণ রাখতে চায় না।

সর্দি। ক্যাঙ্কার সর্দির একটি ভাল ঔষধ। হঠাৎ ঠান্ডা লেগে সর্দি হওয়ার উপক্রমে ক্যাঙ্কার উপযোগী। অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগবার ফলে রোগীর শরীর ঠান্ডাই আছে, প্রতিক্রিয়ায় গরম হয় নেই, সেই সময় এটা ব্যবহার্য্য। শরীর গরম হলে অ্যাকোনাইট।

হাম।– হাম, মিলমিলে বা আরক্ত-জ্বরের উদ্ভেদসকল ভালরূপ বের না হওয়ার ফলে শিশু ঠান্ডা ও অবসন্ন হয়ে পড়লে এবং ঐ সময় শরীরে কোনরূপ আবরণ রাখতে না চাইলে ক্যাম্ফার উপযোগী।

নাক হতে রক্তস্রাব। -নাক হতে রক্তস্রাবের জন্য রোগীর মুখ-চোখ বসে গেলে এবং মুখের রং পান্ডুবর্ণ নিতান্ত অবসন্নের মত হলে এটা উপযোগী। এটার রক্ত ঘন ঘন অথচ চাপ চাপ নয়। ডিফথিরিয়া বা অতিশয় বৃদ্ধ ও দুর্বল লোকদের এমন রক্তস্রাবে ক্যাঙ্কার উপযোগী।

সর্দি-গর্মি।ডাঃ ফ্যারিংটন বলেন যে, সর্দি-গর্মি রোগে জীবনীশক্তি ক্ষয় পেতে থাকলে, অত্যধিক মূৰ্চ্ছা হলে এবং শরীর বরফের মত ঠান্ডা হলে এবং ঐ সঙ্গে ঠান্ডা ঘাম নিঃসৃত হলে ক্যাঙ্কার উপযোগী। সর্দি-গর্মিতে ক্যাঙ্কারের নস্য প্রয়োগে খুব উপকার পাওয়া যায়।

মূৰ্চ্ছা।– মূর্ছাকালে শরীর বরফের মত ঠান্ডা হয়ে যায়।

মূত্রস্তম্ভ।-গর্ভাবস্থায় হঠাৎ, মূত্রস্তম্ভে জ্বালা, যন্ত্রণা, শীত ও কম্প থাকলে এই ঔষধের অরিষ্ট দুই ফোঁটা মাত্রায় ১৫ মিনিট অন্তর সেবন করতে দিলে খুব শীঘ্র ফল পাওয়া যায়। সদ্যোজাত শিশুদের মূত্রস্তম্ভে কপূরের ঘ্রাণ উপকারী।

স্ফোটক বা বিসর্প।-ডাঃ সাইমন বলেন যে, পুঁজ জন্মিবার পূর্বে যদি ক্যাঙ্কার-অরিষ্ট ফোঁড়াদির উপর মর্দন করা যায় এবং মর্দন করার পর জলপাই-তৈলের প্রলেপ দেওয়া হয়, তবে অতি শীঘ্র ফোড়া মিলাইয়া যায়।

ক্যাম্ফর যেমন হিমাঙ্গ অবস্থা দেখতে পাওয়া যায়, সেইরূপ অবস্থা ল্যাপ্পা- অ্যাকিউট্যাঙ্গিউলায় দেখতে পাওয়া যায়। এই ঔষধটি অনেকটা ক্যাঙ্কার ও কার্বো-ভেজ সমতুল্য।

বৃদ্ধি।+ঠান্ডা হাওয়ায়; চলাফেরা করলে; রাতে।

হ্রাস। -গরম বাতাসে; যখন যন্ত্রণার বিষয় চিন্তা করে; উত্তাপে।

শক্তি।-স্পিরিট-ক্যাঙ্কার ১ হতে ৩ ফোঁটা। সর্দি ও সর্দি-গম্মি রোগে ১x ক্রম। ডাঃ সালজার বলেন, স্পিরিট-ক্যাঙ্কার অপেক্ষা দুধ-শর্করার সাথে মিশ্রিত কপূর-চূর্ণ ফলপ্রদ। ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার বলেন – ক্যাঙ্কার পূর্ণবয়স্কদের পক্ষে ১ ফোঁটা মাত্রাই যথেষ্ট, শিশুদের ৪ ভাগের ১ ভাগ মাত্রা। হিমাঙ্গাবস্থায় এই ঔষধ রোগীর ঘাড়ে, বুকে, পিঠে, পেটে, মাথায় উত্তমরূপে মালিশ করা কর্ত্তব্য, তাতে রোগীর শরীর উত্তপ্ত হয়।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!