ক্যালকেরিয়া ফস্ফোরিকা (Calcarea Phosphorica)
পরিচয়। এটার অপর নাম ফসফেট-অভ-লাইম।
ব্যবহারস্থল। -দাঁত উঠবার সময় নানাবিধ রোগ, পৃষ্ঠ ও পায়ের দুর্বলতা, শিশুর অস্থি-বিকৃতি, অস্থি-ক্ষত, অস্থি-ভাঙ্গ, মুখের ব্রণ, শিশুর উদরাময়, শিশু-কলেরা, ক্ষয়রোগ, অজীর্ণ, বহুমূত্র, মৃগী, পুরাতন সর্দি, কমোন্মত্ততা, স্বপ্নদোষ, কৃত্রিম মৈথুন জন্য রোগ, মাথার যন্ত্রণা, তান্ডবরোগ, ঐ। বাস্তম্ভ, গলক্ষত, জরায়ু-চ্যুতি প্রভৃতি বোগে এই ঔষধ প্রায়ই ব্যবহৃত হয়।
ক্রিয়াস্থল।-ঔষধটি অ্যান্টি-সোরিক ও অ্যান্টি-সাইকোটিক। দেহে অন্ডলালার অভাব, অস্থির, কোমলতা, বক্রতা ও সর্বপ্রকার বিকৃতি ক্ষেত্রে ফলপ্রদ। গন্ডমালাধাতু শিশু ও যৌবনোন্মেষ কালে বালক-বালিকা এবং বৃদ্ধদের রোগে এটা বিশেষ ফলপ্রদ।
গঠন ও স্বভাব। -রক্তস্বল্পতাবিশিষ্ট কৃষ্ণবর্ণ কৃশ ব্যক্তি, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ও দেহের তুলনায় যে শিশুর পেটটি বড়। মাথাটি বড়, হাড় বড়ই পাতলা, যেন সামান্য চাপেই হাড়টি ভেঙে যাবে, তালুর হাড়টি সহজে জোড়া লাগে না, মেরুদন্ড দুর্বল ও বক্র। শিশু খায়-দায় প্রচুর অথচ দিন দিন শীর্ণ হয়ে যায়।
প্রদর্শক লক্ষণ।-মাথার ফন্টানেল বহুদিন পর্য্যন্ত জোড়ে না, (ক্যাল্কে-কার্ব)। মাথার খুলি (হাড়) নরম, পাতলা, চাপ দিলে কাগজের মত ভেঙে ছিঁড়ে যাবার উপক্রম হয়। মাথা ও ঘাড় সোজা রাখতে পারে না। দাঁত উঠবার সময় রোগ হয়। শিশু হাঁটতে শেখে না, শিথিলদেহ। শিশু সর্বদাই দুধ পান করতে চায়। মাথার উপর উত্তাপ। বিদ্যালয়ের বালিকাদের শিরঃরোগ ও সেইসঙ্গে উদরাময়। অর্শ, অর্শের বলি হতে সদাই পানির মত একপ্রকার পদার্থ বের হতে থাকে। ভগন্দর বক্ষঃরোগের সাথে পর্যায়ক্রমে দেখা যায়। পেটে বায়ু জন্মে। দুর্গন্ধ, উদর, বায়ুপূর্ণ, পড়পড় শব্দকারী উদরাময়। মায়ের স্তন্যদুধ নীলাভ ও নোনতা, শিশু তা খেতে চায় না। বহুমূত্র রোগ ও সেইসঙ্গে ফুসফুসের কোন রোগ। বাত গ্রীষ্মকালে কম থাকে আবার ঠান্ডা পড়লে বা শীতকালে ও বর্ষাকালে বাড়ে। হাড় ভেঙে গেছে, সেটা কিছুতেই পুনরায় জুড়িতেছে না। মানসিক উদ্বেগ। অল্পবয়স্কা বালিকাদের মুখে ব্রণ। মাথাধরা, খাওয়ার পর উপশম। রোগের বিষয় চিন্তা করলে রোগলক্ষণ বাড়ে। কিছু আহার করামাত্র পেটে ব্যথা। ঘুমের ভিতর হতে হতে কাঁদিয়ে উঠে। শিশুরা রাগী ও খিটখিটে। হরিদ্রা বা সবুজ রঙের মল, মল গরম। শিশু মাতৃদুধ পানের পর ছ্যাকড়া ছ্যাকড়া বমন করে। সামান্য ঠান্ডাতেই বৃদ্ধি। পচা বা ভাজা মাছ-মাংস খেতে ভালবাসে। বৈকালের দিকে রোগলক্ষণ বাড়ে।
মন।–ক্যাল্কে-ফসের শিশুর মেজাজ বড় খিটখিটে। সিনার শিশুর মেজাজও খিটখিটে, পার্থক্য-সিনার শিশু অত্যন্ত মিষ্টপ্রিয় আর ক্যাল্কে-ফসের শিশু নোনতা ও মাংসপ্রিয়। ক্যাল্কে-ফস রোগীর স্মৃতিশক্তি দুর্বল, কোন বিষয়ে চিন্তা করতে পারে না, এক বিষয়ে চিন্তা করতে করতে অপর চিন্তা মনকে অধিকার করে ফেলে। হস্ত-মৈথুনকারীদের স্মৃতিশক্তিক্ষীণতায় এটা বিশেষ উপযোগী (অ্যানাকার্ড)। শোক, ক্রোধ, হতাশ-প্রেম, ভগ্নোদ্যম প্রভৃতি ক্ষেত্র।
শিশুরোগ।-ব্রহ্মরন্ধ্রটি পাতলা, মেরুদন্ড দুর্বল, শিশু ক্রমশঃ শীর্ণ হয়। পুঁয়ে পাওয়া ‘ বাহ্যে সবুজ, পিচ্ছিল, উত্তপ্ত পানির মত শীতল দ্রব্য পানাহারে বাহ্যে বমি বেশী হয়। শিশু প্রচুর খায়-দায়, সদাই খাই খাই করে কিন্তু শরীর ক্রমশঃ শুকিয়ে যায়। শিশুর মাথায় প্রচুর ঘাম হয়, শরীরের তুলনায় পেটটি খুব বড়, মেজাজ খিটখিটে, জড়বুদ্ধি। শিশুর মাথাটি গরম, চুলের গোড়ায় সর্বদা কুটকুট করে। শিশুর ঘাড় এত দুর্বল যে মাথার ভার বহন করতে পারে না, চলবার সময় মাথা টলমল করে (অ্যাব্রো-আয়োড)।
দন্তোদ্গামকালীন রোগ। শিশুর দাঁত উঠতে বিলম্ব হয়। দন্তাস্থি নির্মাণে ফস্কেট-অব্-লাইম বিশেষ প্রয়োজনীয়; এজন্য দাঁত উঠবার আগে এই ঔষধের ৩x বিচূর্ণ ব্যবহারে উপসর্গ নিবারিত হয়। দন্তোদ্গামকালীন উদরাময়ে শিশু পিচ্ছিল, অজীর্ণ, শেওলা-শেওলা, দুর্গন্ধ ও উত্তপ্ত মলত্যাগ করে; মল সশব্দে বের হয় ও ছড়িয়ে পড়ে। মাই খাওয়ার পরই ছানার মত দুধ তুলে ফেলে। ক্যামোমিলা – অস্থিরতা ও অনিদ্রা সহ গরম তরল ও সবুজ হলুদাভ পিত্ত-মিশ্রিত মল। বেলেডোনা-মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়, শিশু উত্তপ্ত তরল মলত্যাগ করে ও তড়কা দেখা দেয়, সেই সাথে জ্বর ও অত্যধিক উত্তাপ। হতে হতে চমকে উঠে।
শিশুর মাথায় জলসঞ্চয় (হাইড্রোসিফেলাস)।-হাইড্রোসিফেলাসের সাথে প্রায়ই পেটের অসুখ থাকে। বাহ্যে পিচ্ছিল, সবুজ ও পানির মত, ঠান্ডা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের পর বমন ও উদরাময়ের বৃদ্ধি। এইভাবে ক্রমাগত বাহ্যে ও বমি করে শিশু যখন নিঝুমভাবে পড়ে থাকে। মস্তিষ্কে জলসঞ্চয়ে এপিসও বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়। এটার লক্ষণ-শিশু ঘুমাতে ঘুমাতে হঠাৎ চীৎকার করে উঠে। মাথা বালিশের উপর এপাশ-ওপাশ করে। মাথায় পানি জমিলেই এপিস উপযোগী হয়ে থাকে। এটার পরে ব্যবহৃত হয় অ্যাপোসাইনাম। হেলিবোরাস- শিশু মাঝে মাঝে চীৎকার করে এবং মাথা বালিশে এপাশ-ওপাশ করে (এপিসের মত লক্ষণ, কিন্তু হেলিবোরাসে কিছু চিবানোর মত মাঢ়ী নাড়া দাঁত কড়মড় করা ও অত্যন্ত পিপাসা [ এপিসে পিপাসা নেই] প্রভৃতি লক্ষণ থাকে)।
শিরঃরোগ।-ক্যাল্কে-ফসের রোগীর মাথা খুব ঘুরে আসন হতে উঠতে গেলে টলে পড়ে। বায়ু সেবনকালে, ঝড়-বৃষ্টির দিনে, কোষ্ঠবদ্ধ অবস্থায়, বৃদ্ধবয়সে ও স্কুলের বালক- বালিকাদের শিরঃরোগে এটা বিশেষ কাজ করে (নেট্রাম-মিউর, সোরিণাম)। রোগীর মাথাটি খুব শীতল মনে করে। যুবতী রমণীদের মস্তকের শীর্ষদেশে অত্যধিক বেদনা। মস্তক অবনত করলে ও ঋতুপরিবর্তনকালে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। চুপ করে থাকলে ও ধূমপানে উপশম।
চোখের অসুখ।-ক্যাল্কে-ফস রোগী কোনপ্রকার কৃত্রিম আলো সহ্য করতে পারে না। ছানির প্রথম অবস্থায় ক্যাল্কে-ফস প্রয়োগ করলে ছানি পড়তে পারে না। প্রথম ডান চোখে ছানি, সেইসঙ্গে চোখে বেদনা থাকে। ডাঃ সুরার বলেন -ছানিরোগে কিছুদিন ক্যাল্কে-ফস ব্যবহার করার পর কেলি – মিউর ও ক্যাল্কে-ফ্লুয়োর প্রয়োগে ছানি ভাল হয়ে যায়।
সর্দি।– পুরাতন সর্দিরোগ। এটার নাকের স্রাব গাঢ়, অন্ডলালবৎ ও চটচটে। শীতল ঘরে পানির মত সর্দিস্রাব হয়, গৃহের বাহিরে গমন করলে সর্দিস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। স্ক্রুফিউলাগ্রস্ত শ্লেষ্মাপ্রধান ধাতুবিশিষ্ট শিশুদের নাক ফুলে যায় এবং নাসারন্ধ্রের মুখে ক্ষত হয়। ক্যাল্কে-ফস নাকের পলিপাস বা নাসার্বুদের একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ (পুজা, টিউক্রিয়াম, টিউবার্কিউলিনাম, স্যাঙ্গুইনেরিয়া)।
মুখমধ্য ও মুখমন্ডলের রোগ।-ক্যাল্কে-ফসের রোগীর মুখের চেহারা ফ্যাকাসে ও রক্তশূন্য, সেইসঙ্গে মুখে ঠান্ডা ঘাম হয়, যৌবনকালে মুখে প্রচুর বয়োব্রণ হয়ে থাকে, ক্যাল্কে-ফস লোশনে (ক্যাল্কে-ফস ২x এক ড্রাম+পরিত পানি ৪ আউন্স) মুখ ধুইলে বয়োব্রণ সত্বর আরোগ্য হয়। ক্যাল্কে-ফস রোগীর মুখ হতে ভয়ানক দুর্গন্ধ বের হয়। জিহবার অগ্রভাগ হেজে যায় এবং ছোট ছোট ফোস্কার মত উদ্ভেদ বের হয়। সকালবেলা মাথায় যন্ত্রণা ও মুখের স্বাদ তিক্ত হয়। বয়োব্রণে ক্যাল্কেরিয়া-পিক্রেটা ও একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। কেলি-মিউর-ব্রণ টিপলে ভাতের মত সাদা গ্যাজ বের হয়, এমন ব্রণে কেলি-মিউর বিশেষ উপযোগী হয়ে থাকে।
টন্সিলাইটিস।-পুরাতন আজিহবার প্রদাহ এবং পুরাতন টন্সিলাইটিস রোগ। বালক ও রক্তহীন ফ্যাকাসে রোগীদের রোগে উৎকৃষ্ট। ঢোঁক গিলতে গলায় খোঁচা বেঁধার মত বেদনা অনুভব করে, কথা বলবার সময় গলা খেঁকারী দিয়ে কথা বলতে হয়, যেন গলার ভিতর শ্লেষ্মা জমে আছে। বক্তা, গায়ক ও ধর্মযাজকদের পুরাতন স্বরভঙ্গ রোগেও এটা কাজ করে (কষ্টিকাম, কার্বো-ভেজ, ফস্ফোরাস, সেলিনিয়াম)। কষ্টিকামের স্বরভঙ্গ শীতকাল এবং সকালে বাড়ে, গলার স্বর কর্কশ, গলায় বেদনা; পানাহারের পরে বা কথাবার্তা বললে কিছু কমে। কার্বো-ভেজ-সন্ধ্যাকালে স্বরভঙ্গের বৃদ্ধি, সেইসঙ্গে শুষ্ক কাশি। ফস্ফোরাস সন্ধ্যাকালে জোরে কথা বললে বা হাসিলে বাড়ে। সালফার – পুরাতন স্বরভঙ্গ সকালে বাড়লে এবং সেইসঙ্গে সাফারের বিশিষ্ট লক্ষণ থাকলে ব্যবহৃত হয়। জেলসিমিয়াম -গলার স্বর বসে যায় বলে রোগী জোরে কথা বলতে পারে না, চুপি চুপি ফিস ফিস করে কথা বলে। হেলিনিয়াম -গায়ক ও বক্তাদের স্বরভঙ্গ, গান ও বক্তৃতা করার পরে গলা ধরে যায়। গলায় আঠার মত শ্লেষ্মা জমে, বার বার খেঁকার দিতে হয়।
ক্ষয়রোগ ও শ্বাসযন্ত্রের রোগ। -নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি ও কাশি ইত্যাদি। কাশির সাথে অন্ডলালার মত পদার্থ ও শ্লেষ্মা সকালেই বের হয়। যখনই কথা বলে তখনই গলা খেঁকারী দিয়ে কথা বলে, কাশির চোটে স্বরভঙ্গ হয় ও গলার ভিতর সুড়সুড় করে কাশি হয়। যক্ষ্মার প্রথমাবস্থায় যখন শরীর ক্রমশঃ শীর্ণ হতে থাকে, অথচ ক্ষয়কাশির লক্ষণ পাওয়া যায় না। ক্ষয়রোগে গলা শুকিয়ে যায়, গলায় ক্ষতবৎ বেদনা, ঐ সঙ্গে প্রচুর নৈশঘাম, ঘাম মাথা ও গলায়ই বেশী হয়, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। কাশির সময় বুকের ভিতর সূঁচবিধার মত বেদনা এবং বক্ষঃস্থলের নিম্নাংশে উত্তাপ বোধ ও বক্ষঃ-সঙ্কোচনবশতঃ শ্বাসকষ্ট হয়।
রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া। -রক্তসঞ্চালনের অসম্পূর্ণতা হেতু সাংঘাতিক দুর্বলতা। এটা পার্নিসাস অ্যানিমিয়া এবং ক্লোরসিস রোগের শ্রেষ্ঠ ঔষধ। এই রোগে নির্বাচিত ঔষধের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন মত ১/২ মাত্রা ক্যাল্কে-ফস প্রয়োগ করা ভাল। ডাঃ হিউজেস বলেন রক্তের শ্বেত-কণিকার আধিক্য বশতঃ রক্তাল্পতা হলে ক্যাল্কে-ফস সেবনে উপকার হয়। পরিপাক যন্ত্রের রিকলতাহেতু রক্তাল্পতা জন্মিলে; একাধিকক্রমে বহুদিন রোগে ভোগার পর রক্তাল্পতায়; বার বার গর্ভধারণ জন্য রক্তাল্পতায়; প্রসবের পর জীর্ণ-শীর্ণ রমণীর রক্তাল্পতায় ও শিশুকে স্তন্যদান করাবার ফলে রক্তাল্পতায় এটার ৩৪, ৬x, ১২x বিচূর্ণ ব্যবহাৰ্য্য।
ভগন্দর। পর্য্যায়ক্রমে কাশি ও ভগন্দর রোগ। যখন কাশি বাড়ে তখন নালী-ঘা কম পড়ে, আবার যখন নালী-ঘা বৃদ্ধি পায় তখন কাশি কম পড়ে। ভগন্দর অস্ত্রোপচারের পর যদি অন্য কোন রোগ হয়, সেখানেও এই ঔষধ কাজ করে। মলদ্বারের বেদনাহীন নালী-ঘা এবং মলের সাথে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ নিঃসরণ। পর্য্যায়ক্রমে রোগ-গেঁটেবাত ও হাঁপানি-সালফার। চামড়ারোগ ও হাঁপানি- হিপার-সাক্ষ, সাম্ফার। বাত ও আমবাত – আর্টিকা-ইউরেন্স। বহুমূত্র ও ঋতুস্রাব -বাত ও অর্শ বা উদরাময় -অ্যাব্রোটেনাম, অ্যান্টিম-ক্রুড, সিমিসিফিউগা। ইউরেনিয়াম-নাইট্রি। স্বরভঙ্গ ও বুক ধড়ফড়ানি-অ্যাসিড-অজ্যালিক। শীতকালে ক্রূপ ও গ্রীষ্মকালে সয়েটিকা-ষ্ট্যাফিস্যাগ্রিয়া।
অর্শ।–শিশু এবং বৃদ্ধদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে বমিসংযুক্ত অর্শরোগ। সরলান্ত্রের শূলবেদনা, মলত্যাগের পরও বিদ্যমান থাকে।
প্রস্রাবের রোগ।-রোগী অনবরতই প্রস্রাব করতে চায়, শিশু বিছানায় প্রস্রাব করে, মূত্রযন্ত্রের পেশীর অত্যধিক শিথিলতা। বৃদ্ধ বা রমণীর হাসিবার সময় বা কাশির সময় প্রস্রাব করে ফেলে।
শয্যামূত্র– এই ঔষধ সিনা, কষ্টিকাম ও কেলি-ফসের সমতুল্য। বার বার প্রস্রাবের বেগ এবং শিশুদের বিছানায় প্রস্রাবে ইকুইসিটাম বিশেষ উপযোগী। সিপিয়া দুর্গন্ধ প্রস্রাব, শিশু প্রথমে ঘুমেই বিছানায় প্রস্রাব করে। শয্যামূত্রে ভার্বাস্কামও ব্যবহৃত হয়; কিন্তু অন্যান্য ঔষধ ব্যর্থ হলে, ব্লুমিয়া- ওডোরেটা নিম্নশক্তি ব্যবহার করা উচিত।
বহুমূত্র। -জীর্ণশীর্ণ রোগীর ক্ষুধার অভাব, নোনতা খাবার ও মাংস খেতে ইচ্ছা থাকলে এই ঔষধ ব্যবহার করা চলে। শর্করাযুক্ত বহুমূত্রে ফুসফুস আক্রান্ত হলে এই ঔষধ নির্দিষ্ট হয়। এটার রোগীর পিপাসা খুব বেশী। রোগী প্রস্রাব করতে করতে অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়ে। কোনরূপ ভারী দ্রব্য তুলিবার সময় কিডনী (মূত্রপিন্ড) প্রদেশে বেদনা অনুভব করে। শর্করাযুক্ত বহুমূত্রে (অবশ্য অন্যান্য যন্ত্র আক্রান্ত না হলে) – অ্যাসিড-ফস, অ্যাসিড-ল্যাকটিক, আর্স-ব্রোম, অ্যামন-অ্যাসিটেট, ইউরেণ-নাইট্রি এবং দেশীয় ঔষধ অ্যাব্রোমা-অগষ্টা (জরায়ুরোগগ্রস্তা স্ত্রীলোকদের পক্ষে অধিকতর উপযোগী)। সিজিজিয়াম-জ্যাম্বো, সেফালেন্ড্রা-ইন্ডিকা (পিত্তাধিক্য জন্য শরীরে জ্বালা-যন্ত্রণা অধিক)। বায়োকেমিক-কেলি-ফস, কেলি-মিউর, এবং নেট্রাম-সাল্ফও বিশেষ ফলবত্তার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
পুংজননেন্দ্রিয়ের রোগ। -হস্তমৈথুনের কুফল নিবারণ করতে এই ঔষধ চমৎকার। বহুদিন যাবৎ শুক্রক্ষয় হতে হতে রোগী ক্রমশঃ এত দুর্বল ও অবসন্ন হয়ে পড়ে যে, মলত্যাগকালে কোঁথ দিবার সময়ও তার শুক্রপাত হয় (অ্যাসিড-ফস, চায়না)। তুলনীয়।-বিউফো – হস্তমৈথুনের দারুণ ইচ্ছা, সেজন্য নির্জন স্থান খোঁজ করে। অসাড়ে অজ্ঞাতসারে শুক্রস্থলন হতে হতে ধ্বজভঙ্গ প্রকাশ পায় এবং রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে।
স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের রোগ। -ক্যাল্কে-ফসের বালিকাদের অতি শীঘ্র শীঘ্র ঋতুর আবির্ভাব হয়, স্রাব প্রচুর ও উজ্জ্বল লাল। বয়স্কদের দীর্ঘকাল অন্তর ঋতু প্রকাশিত হয়। ঋতুর সময় কোমরে অত্যধিক বেদনা এবং ঋতুর পূর্বে জননেন্দ্রিয়ের ভিতর প্রবল সুড়সুড়ি সেজন্য সহবাসে প্রবল ইচ্ছা হয়। যুবতীদের ঋতুকালে মুখমন্ডল আরক্ত ও হাত-পা শীতল হয়ে যায়। শিশুকে স্তন্যদানকালে কামোদ্রেক হয়, রক্তস্রাবও হয়। যুবতীদের বাধক-বেদনায় ক্যাল্কে-ফস একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ 1 দিবারাত্রি অন্ডলালবৎ স্রাব এটার নির্দিষ্ট লক্ষণ। তুলনীয়।– প্রদরস্রাব, রমণান্তে-নেট্রাম-কার্ব। পাদচারণকালে -ম্যাগ-কার্ব, ম্যাগ-সালফ। রাতে – কষ্টিকাম, অ্যাব্রাগ্রিসিয়া। প্রস্রাবকালে- অ্যামন-মিউর, ক্যাল্কে-কার্ব, সিলিকা। ক্যাঙ্কে-কার্ব-ক্যাল্কে-কার্বের রোগী থলথলে মোটা, কুচিৎ কখনও পাতলা হয়, আর ক্যাল্কে-ফসের রোগী ঠান্ডা জিনিস পছন্দ করে না। নেট্রাম-মিউর-খায় – দায় অথচ শুকিয়ে যায়। উভয় ঔষধেই নোনতা জিনিস পছন্দ করে, কিন্তু নেট্রাম-মিউরের রোগী সমস্ত খাবার ঠান্ডা চায়, সেইসঙ্গে অত্যধিক কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়, আর ক্যাল্কে-ফসের শিশু গরম খাবার চায়, সঙ্গে উদরাময় বেশী থাকে। সোরিণাম-ক্যাল্কে-ফসের শিশুর মত সোরিণামের শিশুও গরম গরম খেতে চায়। সোরিণাম সাধারণতঃ পুরাতন রোগে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এটার ত্বরোগ – প্রবণতা আছে। দেহের চামড়া কদর্য্য ও তৈলাক্তবৎ। সাইলিসিয়া – সাইলিসিয়া ও ক্যাল্কে-ফস উভয় ঔষধেই মাথায় ঘাম হয়, কিন্তু সাইলিসিয়ায় মাথায় ঘাম অত্যধিক এবং মাথাটি বড়। এটার রোগীর পায়ের তলায় প্রচুর দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম হয়। ব্যারাইটা-কার্য-ক্যাল্কে-ফসের মত এটার রোগীও দেরীতে চলতে ও কথা বলতে শিখে, কিন্তু ব্যারাইটা-কার্ব রোগীর মস্তিষ্ক দুর্বল, খর্বাকার ও বোকাটে মাথা।
গর্ভাবস্থায় রোগ।-গর্ভাবস্থায় হাত ও পায়ে বেদনা, প্রসবের পর শীর্ণতা, সন্তানকে অতিরিক্ত স্তন্যদান করার ফলে জীর্ণশীর্ণ, পান্ডুর ও নিস্তেজ হয়ে পড়া লক্ষণে, ক্যাল্কে-ফস কাজ করে। গর্ভাবস্থায় প্রসূতিকে এই ঔষধ মধ্যে মধ্যে সেবন করতে দিলে প্রসূতির হীনতা ও রক্তশূন্যভাব দূরীভূত হয়। (গর্ভাবস্থায় লক্ষণানুসারে সিমিসিফিউগা, কলোফাইলাম, পালসেটিলা এবং বায়োকেমিক কেলি-ফস সেবন করালে প্রসবকষ্ট দূর হয় এবং সময়ে সুপ্রসব হয়ে থাকে)। বায়োকেমিক ক্যাল্কে-ফ্লুয়োরিকা ঐ একই উদ্দেশ্যে তেমনি উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়।
বাতরোগ।-পৃষ্ঠদেশ, হাত-পা প্রভৃতির বাত হয়। এটার বাতের বেদনা শীতল বাতাসে, রাত্রে, পানিতে ভিজিলে, ঝড়বৃষ্টির দিনে ও ঋতুর পরিবর্তনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়; গরম সেঁক ইত্যাদিতে কম পড়ে। হাড়ের কোন রোগ হলেই আমরা সকলেই আগে ক্যাল্কেরিয়ার স্মরণ লই। ঠান্ডা লেগে ঘাড়ের পেশীসমূহ কঠিন এবং সেটাতে বাতের মত বেদনা, অনেক সময় মেরুদন্ডটি বেঁকে যাওয়া ক্ষেত্রে ক্যাল্কে-ফস ফলপ্রদ। তুলনীয়। -রাস-টক্স – পানিতে, বৃষ্টিতে ভিজে, ঠান্ডা লাগিয়ে বাতের উৎপত্তি এবং সেটাতে বৃদ্ধি। বিশ্রামে বৃদ্ধি। উত্তাপে এবং সঞ্চালনে হ্রাস। ডাস্কামারা – আর্দ্র ঠান্ডা হতে বা বৃষ্টিতে ভিজে বাতের উৎপত্তি বা বৃদ্ধি, আর্দ্র বায়ুতে, রাতে এবং এই ঔষধ ব্যবহার করা চলে। শর্করাযুক্ত বহুমূত্রে ফুসফুস আক্রান্ত হলে এই ঔষধই নির্দিষ্ট পৰ্যায়ক্রমে উপস্থিত হয়। রডোডেনড্রণ -বর্ষাকালে, অর্দ্রবায়ুতে বজ্রপাতের পূর্বে, রাতে, বিশেষতঃ শেষ রাতে বৃদ্ধি এবং উত্তাপে সঞ্চালনে উপশম। অ্যারেনিয়া, নেট্রাম-সা, নাক্স-মস্কেটায় বর্ষাকালে বৃদ্ধি এবং নেট্রাম-কার্ব, ফস্ফোরাস, সোরিণাম, সাইলিসিয়ায় ঝড়বৃষ্টি, বজ্রপাতের পূর্বে বৃদ্ধি আছে কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয়, এদের বৃদ্ধি রডোডেনড্রণের বৃদ্ধি অপেক্ষা কম।
চর্মরোগ।-রক্তহীন, বাতগ্রস্ত ও স্ক্রফিউলাগ্রস্ত ব্যক্তিদের একজিমা বা কাউর রোগে এটা একটি চমৎকার ঔষধ। যুবতীদের মুখমন্ডলে বয়োব্রণ কোনরূপ উদ্ভেদ নেই, অথচ শরীরে অত্যধিক চুলকানি। এটার চর্মোদ্ভেদ হতে অন্ডলালার মত স্রাব নিঃসৃত হয়।
নিদ্রা।-ক্রিমির জন্য অস্থির-নিদ্রা (সিনা, নেট্রাম-ফস)। শিশু সমস্ত রাত্রি ঘুমাতে পারে না, কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে ভোরের বেলা ঘুমিয়ে পড়ে। তুলনীয়। – আর্স-আয়োড – মোটেই নিদ্ৰা হয় না, রোগী সমস্ত রাত্রি ছটফট করে। কক্সিনেলা – শিশুর দাঁত উঠবার সময়ে স্নায়বিক অস্থিয়তার জন্য নিদ্রা হয় না। কফিয়া স্নায়ুর উত্তেজনার জন্য, ভবিষ্যতের জন্য নানাপ্রকার চিন্তা ও কল্পনাহেতু অনিদ্রা। সিমিসিফিউগা-দাঁত উঠবার সময়ে শিশুর অনিদ্রা।
জ্বর।-ক্যাল্কে-ফস রক্তহীন দুর্বল ব্যক্তিদের ঘুসঘুসে জ্বরের ক্ষেত্রে কাজ করে। স্ক্রুফিউলাগ্রস্ত শিশুদের পুরাতন সবিরাম জ্বরেও এটা ব্যবহৃত হয়। শিশুর মাথায় রাত্রে খুব ঘাম হয়। বৃদ্ধি। বসে উঠবার সময় (মাথা ঘোরা); ঝড়ের সময় (মাথা ঘোরা); বাহ্যে ও প্রস্রাব করার সময় (ইউট্রাসের স্থানচ্যুতি); প্রতিবার ঋতু পরিবর্তনের সময় (বাত); লালা গিলবার সময় (গলা); গাড়ীতে চড়িয়া ভ্রমণকালে (ইরেকসন); ঠান্ডাকালে (বাত); মানসিক বা শারীরিক পরিশ্রমের পর (মাথা ধরা); রোগের চিন্তায়; বর্ষাকালে; পরিবর্তনশীল ঋতুতে।
হ্রাস। গ্রীষ্মকালে; গরম শুষ্ক বাতাসে।
শক্তি।– ৩x, ৬x, ১২x বিচূর্ণ-৩০, ২০০, ১০০০।