ব্রোমিয়াম (Bromium)
পরিচয়।-এটার অপর নাম ব্রোমিন।
ব্যবহারস্থল। সন্ন্যাস, হাঁপানি, কর্কটিয়া ক্ষত, ঘুংড়ি-কাশি, ক্ষয়-কাশি, গ্রন্থি স্ফীতি, গলগন্ড, অন্ডকোষের বিবৃদ্ধি, গলার ক্ষত, হৃৎপিন্ডের বিবৃদ্ধি, তালুমূল-গ্রন্থির বিবৃদ্ধি, অর্দ্ধশিরঃ-শূল প্রভৃতি রোগ।
ক্রিয়াস্থল।-আইজিন, ব্রোমিও ও স্পঞ্জিয়া এই তিনটি ঔষধকে হ্যালোজেন বলা হয়। প্রত্যেকটি ঔষধই শ্লেষ্মাপ্রধান ও শ্রুফিউলা ধাতুর। গ্রন্থিগুলি আক্রান্ত হওয়াই বিশেষ স্বভাব। গ্রন্থিগুলি বিশেষতঃ কর্ণমূল-গ্রন্থি ফুলে ও আক্রান্ত হয়; স্বরনলী ও শ্বাসনলী প্রদাহযুক্ত হয়। ব্রোমিনের রোগী সুন্দর দেহ, নীল চোখ, কটা চুল ও গ্রন্থি বৃদ্ধিপ্রবণ (আইডিন- কৃষ্ণ চুল, কৃষ্ণ চোখতারকা)। শরৎকালে উত্তপ্ত দিনে হঠাৎ ঠান্ডা লেগে পীড়িত হওয়া এদের স্বভাব।
প্রদর্শক লক্ষণ।-ডিথিরিয়া বায়ুনলীর ঊর্ধ্বভাগে (larynx) আরম্ভ হয় ও উপরদিকে অগ্রসর হয়। গলনলী আক্রান্ত হয়ে কাশি, রোগী হাঁস ফাঁস করে। স্ত্রীলোকদের যোনিদ্বার দিয়ে উচ্চ শব্দে বায়ু নিঃসরণ হয় (লাইকো)। মনে হয় মুখের উপর মাকড়সার জাল আটকিয়ে আছে। নাকের পাতা পাখার মত নড়ে (অ্যান্টিম টার্ট, লাইকো)। গ্লান্ড ফুলা, পাথরের মত শক্ত (নিম্নচোয়াল ও গলা), কিন্তু পাকিবার লক্ষণ নেই। অন্ধকার ঘরে ভূতের ভয়। সমুদ্রতীরে রোগের বৃদ্ধি। আধকপালে মাথাধরা। সামনে ঝুঁকলে বেশী হয়। দুধপানের পর বৃদ্ধি। মাথাঘোরা। স্রোতের পানি ও বর্ষার পানি দেখিলে বাড়ে। নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। ডানদিকের বুকে টিউবারকুলোসিস। গরম ঘরে ঢুকিলে কাশি বাড়ে। সুন্দরী নারীদের বাম ডিম্বাধারের বৃদ্ধি ও শক্তভাব। স্রাব হরিদ্রাবর্ণ। রোগী সাধারণতঃ ঠান্ডা চায়, কিন্তু পীড়িত হলে ঠান্ডাকে ভয় করে। অর্শ, রক্ত পড়ে না, মুখের লালা বা থুথু দিয়ে ভিজাইলে উপশম হয়। ভয়ানক বুক ধড়ফড়ানি। বাঁদিকে শুইলে বাড়ে। ক্রুপরোগগ্রস্ত শিশু কদাপি কোল ছাড়িতে চায় না। নিউমোনিয়া, হাঁপানি প্রভৃতি শ্বাসযন্ত্রের রোগে অনবরত হাই উঠতে থাকে এবং সর্বদাই ঘুম-ঘুম ভাব।
মন। রোগী সন্ধ্যাবেলা একাকী থাকতে পারে না, যদিও থাকে মনে হবে যেন কেউ তার পিছনে রয়েছে। মনে হয় যেন কোন জীব-জন্তু ভূমি ভেদ করে উঠবে। পানির স্রোতের দিকে ভাকাইলে বা কোন পুলের উপর দাঁড়িয়ে নীচের দিকে তাকালে মাথাঘোরে লাইসিন।
ক্রুপ।– কয়েকদিন যাবৎ স্বরভঙ্গ, শিশু ভগ্নস্বরে ক্রন্দন করে, সন্ধ্যাকালে গলার আওয়াজ একেবারে লুপ্ত হয়। কণ্ঠনালীতে ব্যথা। গরম দ্রব্য ও পানীয়ের পর উপশম। গলার মধ্যে ঘড়ঘড় করে। গরম ঘরে বৃদ্ধি। শিশু কোলে উঠে দ্রুত ভ্রমণ করতে ভালবাসে। গলায় ঘড়ঘড়ে সর্দির জন্য দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। স্বরভঙ্গ সন্ধ্যাকালে বৃদ্ধি- ব্রোমিন, ফস্ফোরাস, কার্বোভেজ। সকালে বৃদ্ধি-সালফার, কষ্টিকাম। কষ্টিকাম অধিকন্তু শীতকালের এবং গায়কদের স্বরভঙ্গেও ব্যবহৃত হয়। জেলসিমিয়াম -গলার স্বর বসে যায় বলে রোগী চেঁচাইয়া কথা বলতে পারে না, চুপি চুপি, ফিস ফিস করে কথা বলে।
হাঁপানি। – নাবিকদের হাঁপানি, যখনই তীরভূমিতে অবতরণ করে তখনই হাঁপানি বাড়ে। সমুদ্রের ধারে হাঁপানি। বায়ুনলীগুলি ধুঁয়াভরা এরূপ ভাবে। শ্বাসকষ্ট, রাত্রে বিছানায় উঠে বসে। বুক যেন ছোট হয়ে গেছে। মুখ নীল হয়ে যায়।.
অন্ডকোষের রোগ। অন্ডকোষ ফুলে (বাম), টাটায়, খুব ব্যথা করে বা ঠান্ডা মনে হয়। পুরাতন গণোরিয়া রোগে অন্ডকোষ (scrotum) ফুলে। তুলনীয়।-এপিস–অন্ডকোষে বেদনা, হুল ফুটানবৎ জ্বালা, ফোলা। ইউফর্বিয়াম – অন্ডকোষে বেদনা ও জ্বালা, চুলকানি, অত্যন্ত অধিক পরিমাণে প্রস্রাব হয়। ক্লিমেটিস-ঠান্ডা লেগে বা প্রমেহ স্রাব রুদ্ধ হয়ে অন্ডকোষে বেদনা, ফোলা। হ্যামামেলিস – অন্ডকোষে টাটানি বেদনা, স্পার্মাটিক কর্ড স্ফীত ও বেদনাযুক্ত। ফাইটোলাক্কা – প্রমেহ অথবা সেকেন্ডারী উপদংশ হেতু রোগ, অন্ডকোষের শক্তভাব, যন্ত্রণা ও ফোলা। কোনায়াম- পাথরের মত শক্ত। উপদংশ হেতু রোগ। আঘাত জনিত হলে অধিকতর উপযোগী। টাসিলেগো -প্রমেহ স্রাব রুদ্ধ হয়ে অন্ডকোষ আক্রান্ত।
চোখের অসুখ-নূতন ও পুরাতন কাশির সাথে চক্ষুরোগে এটা উপযোগী ঔষধ।
ডিথিরিয়া। -ডিথিরিয়া ও ঘুংড়ি-কাশিতে রোগীর স্বরনলীর মুখ সঙ্কুচিত হয়। রোগীর জ্বর থাকে না, সে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। কাশি অত্যন্ত আক্ষেপিক, কাশতে কাশতে বুকে দমবন্ধ হয়ে · যাবার উপক্রম হয়, সময় সময় বুকের ভিতর ঘড়ঘড় শব্দ হতে থাকে। ঘুংড়ি-কাশির শিশুর প্রথমে স্বর একটু ভাঙ্গা ভাঙ্গা হয়, ক্রমশঃ সন্ধ্যার মধ্যে ঐ স্বর একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, শিশু ভাঙ্গা গলায় কাঁদতে থাকে। ব্রোমিয়ামের ঘুংড়ি বা ডিথিরিয়া অত্যন্ত গরমের পর হঠাৎ ঠান্ডা লেগে দেখা দেয় (বিশেষতঃ শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসই এই রোগের মুখ্য কাল)। এটার রোগী পীড়িত হলে ঠান্ডা মোটেই ভালবাসে না।
.গ্রন্থি–স্ফীতি।– ব্রোমিয়াম রোগীর গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ডগুলি প্রদাহাৰিত হয়ে শক্ত হয়, কিন্তু মার্কারির মত পেকে যায় না। এটার গতি দ্রুত নয়, ভুগতে ভুগতে ধীরে ধীরে ক্ষয়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
স্তনের ক্যান্সার রোগে ব্রোমিয়াম অনেকটা কার্বো-অ্যানিমেলিসের মত। ব্রোমিয়াম রোগিণীর স্তন টিপলে খুব শক্ত মনে হয়, ভিতরে সামান্য দপদপানি অনুভূত হয়, সময় সময় টেনে ধরার মত বা কাটিয়া ফেলার মত ব্যথা, ঐ ব্যথা স্তনের গ্রন্থি হতে বগল পর্য্যন্ত প্রসারিত হয়। (কার্বো-এনি’র বেদনা জ্বালাকর, ব্রোমিয়ামের বেদনা বিদ্ধকর)।
স্ত্রীরোগ।– রোগিণীর যোনিদ্বার হতে ভয়ানক উচ্চ শব্দে বায়ু নিঃসরিত হয়ে থাকে (ল্যাক- ক্যান), লাইকো, নাক্স-মস্কেটা, অ্যাসিড ফস, স্যাঙ্গুইনেরিয়া)। কৃত্রিম ঝিল্লী-নিঃসারক বাধক। ঋতু অতি শীঘ্রই প্রকাশ পায়, স্রাব প্রচুর ও ঝিল্লীখন্ড মিশ্রিত। বাম ডিম্বাধার শক্ত হয়ে ক্যান্সার-প্রবণতা। হৃত্যন্ত্রের রোগ। হৃত্যন্ত্রটি আকারে বড় হয়। রোগী মোটেই পরিশ্রম করতে পারে না, সামান্য মাত্র নড়াচড়ায় বুকের স্পন্দন অত্যন্ত বাড়িতে থাকে, নাড়ীর গতি ধীর, মোটা ও কঠিন।
পাকযন্ত্রের ক্ষত।-আহারের পরই পেটে বেদনা ও বমন হয় বা মলত্যাগের বেগ হয়। পেটের নানা স্থানের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিসকল ফুলে যায়, শক্ত হয়, মলের সাথে রক্তের ছিট বা তাজা রক্তস্রাব থাকে। গরম পানীয় বা গরম খাদ্য সহ্য হয় না (ফস্কোরাস)। ব্রোমিয়াম সেবনকালে দুধ পান নিষিদ্ধ।
ফোঁড়া ও ভগন্দর।-সেটা হতে হরিদ্রাবর্ণ ঘন পুঁজ বের হয়।
অর্শরোগ।-বলিটি থুতু দিয়ে ভিজাইলে বেদনার উপশম হয়।
বৃদ্ধি।-প্রথম রাত্রে; সমুদ্র তীরে; দুধ পানের পর; স্রোতের পানি দেখিলে; বর্ষাকালে; গরম ঘরে; টক দ্রব্যে; ভোজনের পর (উদরাময়); বাঁদিকে শুইলে (বুক ধড়ফড়ানি); বেলা ১১টায়।
হ্রাস। ঘোড়ায় চড়লে; থুতু দিয়ে ভিজাইলে (অর্শের বলি); অপরাহ্নে।
শক্তি।– ১x, ৩x, ৬, ৩০। ঘুংড়ি প্রভৃতি রোগে নিম্নক্রম ব্যবহার্য্য; অন্য রোগে উচ্চশক্তি উপযোগী। নিম্নক্রম অনেক দিন থাকলে আরোগ্যদায়িনী শক্তি নষ্ট হয়। ব্রোমিয়াম ব্যবহার কালে সর্বদা চেহারার দিকে দৃষ্টি দিবে।