বার্ব্বেরিস ভালগারিস (Berberis Vulgaris)
পরিচয়।-বারবেরি বৃক্ষের ছাল হতে মূল-অরিষ্ট তৈরী হয়।
ব্যবহারস্থল।-মূত্রপাথরী, মূত্রাধারের রোগ, পিত্তশূল, বাধক, কোমরের অত্যধিক বেদনা, যকৃত-প্রদাহ, সন্ধি-প্রদাহ, হাঁটুর বেদনা, শ্বেত-প্রদর, দুধের মত প্রস্রাব, শুক্রবাহী নালীর স্নায়ুশূল, যকৃতের বিভিন্ন রোগ, প্লীহার বিকৃতি, যোনিদ্বারের স্নায়ুশূল, কিডনীর প্রদাহ, কিডনীর শূল প্রভৃতি।
ক্রিয়াস্থল। -বার্বেরিসের প্রধান ক্রিয়াস্থল কিডনী বা বৃক্ককদ্বয় ও পিত্ত-প্রণালী। এটা একটি অ্যান্টি-সাইকোটিক ঔষধ। ডাঃ ন্যাশ বলেন, যে কোন রোগে রোগী তার কিডনীপ্রদেশে অনবরত পানি বুদবুদ উঠছে মনে করে। ডাঃ ভিউই বলেন, কিডনী-শূল বা প্রদাহের জন্য কোমরে অতিরিক্ত বেদনা থাকলে এটাই ঔষধ।
প্রদর্শক লক্ষণ।– প্রস্রাব রক্তের মত লাল। সরিষার তৈলের মত ঘোর হলদে। প্রস্রাব করার পর মনে হয় কিছু প্রস্রাব ভিতরে হতে যায়। বার বার প্রস্রাব হয়, প্রস্রাবের পূর্বে ও পরে বেদনা। কিডনী হতে ব্লাডার পর্য্যস্ত যন্ত্রণা হয়। বেদনা কাটিয়া বা ছিঁড়ে ফেলার মত। কেউ যেন কাঠি দিয়ে খোঁচা দিচ্ছে। প্রস্রাবে তলানি; আঁশ আঁশ স্বচ্ছ জেলির মত; লালচে বা সবুজাভ। সকল কষ্ট নড়াচড়ায় বৃদ্ধি পায়। কিডনীর স্থানে বুদবুদ উঠার মত অনুভূতি। রোগী অতিকষ্টে আসন ছেড়ে উঠে কয়েক পদ খঞ্জবৎ চলতে বাধ্য হয়। চোখ রোগ। চোখে যেন বালি পড়েছে এমন বোধ। বুজ বুজ করে (bubbling) সকালে গা-বমি-বমি। খাওয়ার পর উপশম। চর্মরোগ। চুলকাইলে বৃদ্ধি (scratching) ঠান্ডা পানি লাগালে উপশম। মলদ্বারে ও হাতে একজিমা (Eczema) মলদ্বারের ভগন্দর (fistula-।n-ano) মলদ্বারের চারিদিকে ছিঁড়ে ফেলার মত যন্ত্রণা। সর্বদা মলত্যাগের চেষ্টা। মুখ হতে চটচটে ফেনাফেনা লালাস্রাব। রোগী মাথায় কষিয়া টুপি পড়ে আছে, এমন মনে করে।
মন। -সন্ধ্যার পূর্বে রোগী মনে ভাবে যে, সকল বস্তুই এমন কি তার শরীর পর্য্যন্ত দ্বিগুণ বড় হয়েছে (নাক্স-মস)। সে একমনে কোন বিষয়ের চিন্তা করতে পারে না, কারও সাথে কথা বলতে চায় না, সর্বদাই অসন্তুষ্ট ও জীবনে বীতরোগ।
পিত্ত–পাথুরী ও মূত্র–পাথুরী। – পাথুরী বের হওয়ার সময় অত্যন্ত বেদনা এবং বেদনায় যেন কি বিধিতেছে এরূপ অনুভব। সে পুনঃ পুন্নঃ প্রস্রাব ত্যাগ করে বা নিষ্ফল বেগ। তুলনীয়।– ক্যান্থারিস-মূত্র-পাথরীর একটি বিশিষ্ট ঔষধ, প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া আছে, প্রস্রাবের পূর্বে, প্রস্রাবের সময়ে বা পরে জ্বালা, বেগ ও কোঁথপাড়া। কক্কাস-বেদনা ভীষণ। কিডনী হতে ব্লাডারে যায়। প্রস্রাবের রক্ত, বারবার প্রস্রাবের বেগ হয়। নাক্স ভমিকা- কোমরে বেদনা, ডান কিডনী হতে বেদনা পায়ে যায়, বার বার প্রস্রাবের নিষ্ফল বেগ। হিডিওমা (লাইকোপোডিয়ামের) মত প্রস্রাবে লাল বালুকার মত তলানি। ইউরেটারে ভয়ঙ্কর বেদনা। সার্সাপ্যারিলা-ছোট ছোট পাথরী, এই ঔষধ প্রয়োগে অনেক সময় পাথরী বিনা কষ্টে বের হয়। কিডনীতে ভয়ঙ্কর বেদনা। ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ এবং অল্প অল্প প্রস্রাব হয়। চায়না-পিত্ত পাথরীতে প্রবল যন্ত্রণার সময়ের ঔষধ এবং প্রতিষেধকরূপেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কার্ডয়াস-মেরিয়ানাস এই রোগের একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। ক্যাঙ্কেরিয়া-কার্ব এটা পিত্তপাথরীর প্রতিষেধক, তীব্র বেদনা উপশমের জন্যও ব্যবহৃত হয়। বার্বেরিস, ইউনাইমিন, মেন্থা-পিপারিটা প্রভৃতি ঔষধও অসহ্য বেদনার সময় বিশেষ ফলবত্ত্বার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কটিবাত। ব্যথা পিঠ হতে পাকস্থলী বা পাকস্থলী হতে পিঠে বিস্তৃত হয় এবং তলপেটের চারিদিক ঘুরে ব্লাডারের দিকে যায়। পিঠে টাটানি। সুন্দরী নারীদের ঋতুকালে পিঠে যন্ত্রণা ও অসাড় ভাব। সকালে ঘুম হতে উঠলে বৃদ্ধি।
কোষ্ঠবদ্ধতা। -মলদ্বার সঙ্কুচিত বোধ (constriction)। ভেড়ার মলের মত মল। শক্ত মল। খুব কোঁথ পাড়িবার পর মল বের হয়। সদৃশ। -লাইকোপডিয়াম -মলদ্বারের সঙ্কোচনবশতঃ কোষ্ঠবদ্ধ। ব্রাইওনিয়া-শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর শুষ্কতা হেতু কোষ্ঠবদ্ধ, আদৌ বেগ হয় না, মল শুষ্ক ও কঠিন। নাক্স ভমিকা-অন্ত্রের পেরিষ্ট্যানিক ক্রিয়া (অন্ত্রের গতি) কম হয়ে কোষ্ঠবদ্ধতা বার বার মলত্যাগের বেগ হয় অথচ মলত্যাগ করে না, বা খোলসা হয় না। ওপিয়াম- শক্ত, কাল গুটলে মল, মলত্যাগের বেগ বা ইচ্ছা আদৌ থাকে না। অ্যামন-মিউর-মল কঠিন, গুড়াইয়া বের হয়।
পেট গড়গড় করে, বায়ু জমে। ম্যাগ-মিউর-ভেড়ার লাদির মত, শুষ্ক গাঁট গাঁট মল, কখনও বা বড় গোলার মত ভেঙে ভেঙে বের হয়। প্লাম্বাম- মলদ্বারের সঙ্কোচন হেতু কোষ্ঠবদ্ধতা। মল শক্ত, কাল গুটলে। ক্যাস্কেরিনা – শক্ত গুটলে মল, সেটার গায়ে আম জড়ান থাকে। ভিরেট্রাম-অ্যাল্ব- পেটে বেদনা সহ কোষ্ঠকাঠিন্য, মল শক্ত এবং বড় ন্যাড়।
উদরাময়।-মল হলদে। পেটে হড়হড়, গড়গড় করে। বায়ু বের হয়। পিপাসা। মুখে উত্তাপ। সন্ধ্যায় ক্ষুধা। পানির মত প্রচুর দাস্ত।
গলষ্টোন–কলিক। -গল-ব্লাডার বা পিত্ত-থলতে পাথরী হওয়ার জন্য বেদনা। কলিকের পর শরীর হলদে হয়। গল-ব্লাডারের স্থানে যন্ত্রণা। হড়হড়ে প্রস্রাব, ঘোলা ঘোলা প্রস্রাব। কোমরে ও ঊরুতে বেদনা। লিভার রোগ – লিভারের স্থানে সূঁচফোটান ব্যথা। নাভির চারিদিকে ব্যথা। ন্যাবা। ঐ সঙ্গে ঘন ঘন প্রস্রাব ও মলবেগ পায়। কার্ডয়াস-মেরিয়ানাস পিত্তপাথরীর জন্য তীব্র বেদনা। নিয়মিত সেবনে নূতন পাথরী জন্মায় না। যকৃতের দোষ এবং ন্যাবার লক্ষণ। চায়না-তীব্র বেদনায় বিশেষ উপকারী। কার্চুয়াসের মত নিয়মিত সেবনে, নূতন পাথরী জন্মাইতে পারে না।
মাথাধরা। -সামনে হেঁট হলে বাড়ে। খোলা হাওয়ায় কম হয়। মনে হয় মাথা খুব বড় হচ্ছে।
বাধক বেদনা।– ঋতুস্রাব খুব অল্প, একবার বন্ধ হয়, আবার হয়। দারুণ যন্ত্রণার সাথে ঋতুস্রাব বের হয়। স্রাব অল্প। খুব শীত করে। কোমরে ও উরুতে বেদনা। মূত্রত্যাগকালে কষ্ট হয়। মূত্র ঘোলা।
যকৃতের রোগ।-ডানদিকের পাঁজরার নীচে খোঁচান ব্যথা, ঐ ব্যথা কখন কখনও পাঁজরার ভিতর খোঁচা দেয়। সাধারণতঃ পিত্তপাথুরী রোগীর ঐরূপ খোঁচান ব্যথা থাকে। পূর্ববর্ণিতরূপ প্রস্রাবের লক্ষণ থাকলে বিশেষ উপযোগী।
অর্শ।-চুলকায়। জ্বালা করে, বিশেষতঃ মলত্যাগের পর। মল শক্ত ও রক্তে আবৃত। সদৃশ।-র্যাটাহিয়া -রক্তস্রাবী অর্শ, তীব্রজ্বালা এবং মলত্যাগের পর হতেই তা আরম্ভ হয়। মনে হয় যেন মলদ্বারে ভাঙ্গা কাচ ফুটানো আছে। কলিন্সোনিয়া (রক্তস্রাবী) এবং ইস্কুলাস (প্রধানতঃ অস্ত্রাবী অথবা সময়ে সময়ে সামান্য রক্ত), উভয় ঔষধেই জ্বালা-যন্ত্রণা, মলদ্বারে টাটানি ব্যথা। ইস্কুলাসে কোমরে বেদনা আছে, কলিন্সোনিয়ায় তা নেই। অ্যালো মলদ্বার চুলকায় এবং সেটা গরম, বেদনা। অর্শের যন্ত্রণা ঠান্ডা পানি প্রয়োগে উপশম। আর্সেনিকেও জ্বালা-যন্ত্রণা আছে, কিন্তু তার উপশম, গরম পানি প্রয়োগে। হ্যামামেলিস – অধিক পরিমাণে কালচে বা শৈরিক রক্তস্রাবে (venous blood) উপকারী অত্যধিক টাটানি বেদনা।
ভগন্দর।-ভগন্দর রোগে গুহ্যদেশ ও তার চতুর্দিকে ভয়ানক জ্বালা ও ঘন ঘন মলত্যাগের ইচ্ছা। ভগন্দরের সাথে কাশি বা শ্বাসযন্ত্রের রোগ থাকলেও এটা দ্বারা উপকার দর্শে।
বার্বেরিস নেফ্রাইটিস, নেফ্রাইটিসের কলিক, স্পার্মেটিক কর্ড ও অন্ডকোষের স্নায়ুশূল এবং পিত্তজ উদরাময় ক্ষেত্রেও উপযোগী।
বৃদ্ধি।-চলাফেরা করতে গেলে; ঘোড়ায় চড়লে; পরিশ্রমের পর; রাত্রে; চাপ দিলে; উঠে দাঁড়ালে; সকালে ঘুম হতে উঠবার পর।
হ্রাস। খোলা হাওয়ায়।
শক্তি।— ১x, ৩x, ৩, ৬, ২০০ ক্রম।