অ্যাসক্লিপিয়াস-টিউবারোসা (Asclepias Tuberosa)

পরিচয়। প্রজাপতি-গাছড়া। ক্যানাডাবাসিগণ এটাকে শূলবেদনার শিকড়’ বলে থাকেন।

ব্যবহারস্থল।-এই ঔষধ বাতধাতুবিশিষ্ট লোকদের শ্লেষ্মাজনিত রোগে উপযোগী। প্রচুর ঘাম এবং ঘোর লাল ও উষ্ণ প্রস্রাব হয়।

প্রদর্শক লক্ষণ।— বুকে বেদনা, ভোর ৩টায় বৃদ্ধি। সামনে ঝুঁকলে উপশম। চলাফেরায় বৃদ্ধি। বাত, কোণাকুণিভাবে হয় বাঁদিকের উপর অংশ ও ডানদিকের নীচের অংশে কিম্বা সেটার উল্টা। ল্যাক-ক্যানাইনাম- বাত, বেদনা ও ক্ষীতি একবার একদিকে, আবার অন্যদিকে প্রকাশ পায়। বাতের বেদনা আড়াআড়ি ভাবে এক সন্ধি হতে অপর সন্ধিতে চলে বেড়ায়, অ্যাগারিকাস–বেদনা কোণাকুণি ভাবে চালিত হয়—উপরের বাম হস্ত, নীচের ডান পদ—ডাঃ হেরিং- এর মতে। উপরের ডান অঙ্গ নীচের বাম অঙ্গ–ডাঃ বোণিং হোসেনের মতে। গেঁটেবাত ও মাংসপেশীর বাত। সূঁচফোটানো ব্যথা। প্রস্রাব ঘোর লাল ও গরম। ঘাম। কাশি, সেইসঙ্গে কপালে ও পেটে বেদনা। শরৎকালের আমাশয়। সমস্ত শরীরে বাতের মত বেদনা। মলে পচা ডিমের মত গন্ধ। ফেনা, শেওলার মত। অত্যন্ত দুর্বলতা, চলা শক্ত। শীতকালের উদরাময় সকালে বৃদ্ধি। হঠাৎ মল বের হয়। কাল মল। মলে ক্রিমি। মলত্যাগের পর কলিক বেদনা। অনেকক্ষণ যাবৎ বেদনা চলতে থাকে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলে বেদনা। সমস্ত গাঁটে বাতের বেদনা। হাঁপানি, খাওয়ার পর বেশী। ধূমপানে বৃদ্ধি। দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে কাটিয়া ফেলার মত বেদনা। রোগী ধূমপান সহ্য করতে পারে না। বাম বক্ষে সূঁচফোটানোর মত বেদনা। সেটা স্কন্ধ পৰ্য্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

শিরোবেদনা।—দুই একবার কাশবার পর কপালে বেদনা। মাথার জড়তাবোধ, মনে হয় মাথাটি যেন পানির ভিতর ভাসছে। ব্রহ্মতালুতে ভয়ানক বেদনা, সামান্য নড়াচড়ায় বৃদ্ধি; কিন্তু শুয়ে পড়লে যন্ত্রণার উপশম। ভোরের বেলা ঘুম ভেঙে গেলে মাথার যন্ত্রণা আরম্ভ হয়, গরম পানিতে রোগীর পা ধুইয়া দিলে উপশম হয়।

উদরাময়।—এটার উদরাময় সাধারণতঃ শীতকালেই হয় অথবা যখন দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা থাকে তখন বাড়ে। আহারের পর পেট ফোলে ও পেটে বেদনা হয়, মলত্যাগের পূর্বে পেট গড়গড় করে ডাকে। বাহ্যে অত্যন্ত দুর্গন্ধময়, পাতলা ও হলুদ বর্ণের। মলত্যাগের সঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্রিমি বের হয়। মলদ্বারে জ্বালা, মনে হয় সেখানে অগ্নিশিখা রয়েছে (অ্যালো, এপিস, আইরিস, অ্যাসিড- মিউর, নেট্রাম-সাল্ফ, পালসেটিলা, থুজা, ভেরেট্রাম-ভিরিডি)। ডাঃ মার্টিন একটি ২৫ বৎসরের উদরাময় রোগীকে এই ঔষধ দ্বারা আরোগ্য করেছিলেন। তামাকের অপব্যবহারের জন্য উদরাময় হয়েছিল—এটাই তাঁর বিশ্বাস।

প্লুরিসি। -আমেরিকার জনসাধারণ প্লুরিসি এবং পুরোডিনা রোগে এটার ক্বাথ সেবন করিয়ে থাকেন। ক্বাথ সেবনের পর ঘাম হলেই বেদনার উপশম হয়, এজন্য এটাকে ‘প্লুরিসি-রুট’ বলে। ডাঃ হেল্ সাধারণ প্লুরিসি ও পাঁজরার বাত বা পার্শ্বশূল বেদনায় এটার ১x শক্তি বার বার ব্যবহার করে আরোগ্য করতেন। ডাঃ মার্সি বলেন, বাম দিকের ফুসফুস-আবেষ্টনীর প্রদাহ হয়ে বৈকালের দিকে শুষ্ক ও আক্ষেপিক কাশির বৃদ্ধি হলে এই ঔষধ উপযোগী। ডান ফুসফুসেও এটার ক্রিয়া আছে। রোগীর বুকে অত্যন্ত যন্ত্রণা, শুষ্ক ও যন্ত্রণাপ্রদ কাশি, কাশতে কাশতে বুকে অতি সামান্য গয়ার বের হয়। রোগী হেঁট হলে সকল যন্ত্রণার উপশম এবং দীর্ঘশ্বাসে ও দেহসঞ্চালনে বৃদ্ধি। তুলনীয়।— অ্যাকোনাইট —প্রথম প্রাদাহিক অবস্থা, বুকে সূঁচফোটান ব্যথা। প্রবল জ্বর, অস্থিরতা, পিপাসা। সময়ে সময়ে মৃত্যুভয়ও দেখা যায়। ব্রাইয়োনিয়া— বুকে সূঁচফোটান ব্যথা। নড়াচড়াতে বৃদ্ধি। শুষ্ক কাশি। কাশিতে বুকে ও মাথায় লাগে। কাশতে কাশতে বুকে গয়ার সামান্য উঠে। এপিস পুরার মধ্যে পানি জমিলে সেটা শোষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। র্যানানকুলাস ও সেনেগা—পুরার মধ্যে পানি জমিলে এবং সেইসঙ্গে বেদনা ও যন্ত্রণা থাকলে ব্রাইয়োনিয়ার পরে ব্যবহৃত হয়।

সর্দি-কাশি। -বালকদের কাশি ও উদরাময় রোগে এই ঔষধটি ইপিকাকের সমতুল্য। বালকদের সর্দি-কাশি হয়ে নাক বন্ধ হয়ে যায়, সেজন্য শ্বাসকষ্ট। সর্দিজ্বরে বক্ষঃস্থল ও অস্ত্র আক্রান্ত হয় এবং আঠা আঠা সবুজ মলত্যাগ হয়। বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট রোগেও এটা কার্যকরী। ধূমপান করার পর শ্বাসকষ্টের বৃদ্ধি।

পেরিকার্ডাইটিস। –ডাঃ হেল্ হৃদযন্ত্র-বেষ্টনীর প্রদাহে হৃদৃপ্রদেশে চিমটি কাটার মত বেদনা, বাম স্কন্ধ হতে সেই বেদনার আরম্ভ, সেই সাথে হৃদকম্পন, সঙ্কোচ বোধ লক্ষণে এই ঔষধের প্রশংসা করেছেন। ব্রাইয়োনিয়া –বুকে ছুঁচ ফোটানো ব্যথা, সঞ্চালনে সেটার বৃদ্ধি, শুষ্ক কাশি। পিপাসা।

কেলি-কার্ব—অনেক সময়ে ব্রাইয়োনিয়ার পরে উপযোগী হয়ে থাকে। বুকে ছুঁচ ফোটান ব্যথা। নড়াচড়ায় বৃদ্ধি, স্থির হয়ে থাকলে বেদনা বাড়ে। ঠান্ডায় রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি, রোগী সামান্য ঠান্ডাও সহ্য করতে পারে না।

চর্মরোগ।— সমস্ত শরীরে, বিশেষতঃ বাহু, জঙ্ঘা ও মুখমন্ডলে জলপূর্ণ উদ্ভেদ এবং সেখানে ভয়ানক চুলকানি হয়।

নিদ্রা।— রোগীর মাঝে মাঝে তন্দ্রার ভাব হয়, কিন্তু অস্থিরভাবে সমস্ত রাত্রি কাটায় বিরক্তি- জনক স্বপ্ন দেখে।

বৃদ্ধি।— শরৎকালে; শীতকালে; খাওয়ার পর; রাত্রি ৪টায় ও শেষ রাত্রে; ১টা হতে ভোর ৩টা পর্য্যন্ত (উদরাময়); নড়াচড়ায়; কাশলে; তামাক সেবনে।

হ্রাস। সামনে ঝুঁকলে; শুইলে; ফুট-বাথ নিলে।

শক্তি।— মূল-অরিষ্ট ও নিম্নশক্তি।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!