আর্সেনিকাম-হাইড্রোজেনিসেটাম

(Arsenicum Hydrogenisatum)

ব্যবহারস্থল। –কলেরার হিমাঙ্গাবস্থায় ও হিক্কায় উপযোগী। লক্ষণ হঠাৎ আরম্ভ হয়ে ধীরে ধীরে বাড়িতে থাকে। ব্ল্যাক-ওয়াটার-ফিভার (রক্তস্রাবযুক্ত ম্যালেরিয়া জ্বর), রক্তহীনতা, রক্ত-প্রস্রাব, সেই সাথে সর্বকার্য্যে উদ্বেগ ও নিরাশা প্রভৃতিতেও উপযোগী। কোমরে অত্যন্ত বেদনা সেজন্য রোগী সোজা হয়ে হাঁটতে পারে না। আর্স হাইড্রোর রোগীর অত্যধিক মানসিক উদ্বেগ থাকে, মনে করে মৃত্যু আসন্নপ্রায় (অ্যাকো, আর্স, ল্যাক-ডিফ্লো, হাইড্রো, পেট্রোল)। রোগারোগ্য সম্বন্ধে নিরাশ হয়ে পড়ে (ল্যাক-ক্যান, অ্যাসিড ফস, সিকেলি), ভাবে যেন তার মাথার উপর একটা ভারী দ্রব্য চাপান আছে। সর্দি ও হাঁচি, সেইসঙ্গে নাক এত ঠান্ডাবোধ হয় যে, রোগী গরম কাপড় দ্বারা ঢাকিয়া রাখতে চায় (আর্ণিকা, প্লাম্বাম, ভেরেট)। এটার জ্বর প্রতি তৃতীয় দিনে ৩টার সময় আসে। শীত ও উত্তাপ রাত্রি ৩টা পর্য্যন্ত থাকে। ঘামকালে রোগী ঘুমিয়ে পড়ে (ওপি, পড়ো, রস-টক্স) এবং নিদ্রায় চমকিয়ে উঠে। রাত্রি ১২টার পর আর কোন যন্ত্রণা থাকে না। কলেরার পতনাবস্থায় শরীর ঠান্ডা, নাড়ী লুপ্ত, চোখ কোটরাগত, অত্যন্ত অবসাদ ও প্রস্রাব বন্ধ। ডাঃ ইউনান কলেরার পতনাবস্থায় এই ঔষধ বহু রোগীতে প্রয়োগ করে আশাতিরিক্ত ফল পেতেন। পানি বা পানীয় দ্রব্য মোটেই পেটে থাকে না (আর্স)। রক্তহীনতায়ও এটা ফলপ্রদ ঔষধ। রোগীর মুখমন্ডল বিবর্ণ, চোখ কোটরাগত এবং নীল রেখা পরিবেষ্টিত। কোন রোগিণীর হঠাৎ ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে নানাপ্রকার উপসর্গের জন্য আর্সেনিক প্রয়োগে ফল না পেয়ে ডাঃ অ্যালেন আর্স-হাইড্রো ব্যবহার করে আশাতিরিক্ত ফল পেয়েছিলেন। শরীরের যে অংশ অসাড় হয়, সে অংশের লোম সাদা হয়ে যায়। সদৃশ। দেশীয় উদ্ভিদ হতে প্রস্তুত আসাই রক্তবাহ্যে এবং রক্তপ্রস্রাব লক্ষণযুক্ত ব্ল্যাক-ওয়াটার ফিভারের একটি বিশিষ্ট ঔষধ। অনেক সময়ে মস্তিষ্ক ও হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হয়।

কলেরার হিমাঙ্গাবস্থায় কার্বো-ভেজ, সিকেলি-কর, ক্যাঙ্কার, কোব্রা বা ন্যাজা ইত্যাদি ঔষধের সাথে এটার তুলনা চলতে পারে।

কার্বো-ভেজ—হিমাঙ্গাবস্থা, সমস্ত শরীর ঠান্ডা এমন-কি নিঃশ্বাসও ঠান্ডা, স্বরভঙ্গ, ভেদবমি প্রায় বন্ধ, রোগী কেবল পাখার হাওয়া চায়, নতুবা যেন তার শ্বাসবন্ধ হয়ে আসে। ক্যাখার দুই একবার ভেদ-বমির পরেই রোগী খুব তাড়াতাড়ি হিমাঙ্গাবস্থায় উপনীত হয়, সমস্ত শরীর বরফের মত ঠান্ডা এবং নীলবর্ণ, স্বরভঙ্গ, হৃৎপিন্ড স্থানে বেদনা, রোগী শীতার্ত হলেও গায়ে কাপড় থাকে না। সিকেলি-কর—সমস্ত শরীর বরফের মত ঠান্ডা, অথচ রোগী গায়ে কাপড় রাখতে পারে না, অত্যন্ত জ্বালা, চোখ বসা, শরীর চুপসানো বমি সেরূপ নয় কিন্তু ওয়াক তোলা বা কাঠবমি আছে। কোব্ৰা বা ন্যাজা—হিমাঙ্গাবস্থায় নাভীশ্বাস হয়ে ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস বহিতে থাকে। হৃৎপিন্ড জোরে জোরে চলে। মৃত্যুভয়। ল্যাকেসিস – ন্যাজা বা কোব্রা এবং ল্যাকেসিস, উভয়ই বিষাক্ত সর্পবিষ হতে প্রস্তুত এবং লক্ষণও প্রায় একই প্রকারের, কিন্তু কোব্রায় কেবল রোগীর মৃত্যুভয় থাকে, ল্যাকেসিসে তা থাকে না।

শক্তি।—৩য় হতে ৬ষ্ঠ দশমিক। ডাঃ ইউনান সর্বদা উচ্চশক্তি প্রয়োগ করতে উপদেশ দিতেন।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!