অ্যাঙ্গাষ্টুরা ভেরা (Angustura Vera)

পরিচয়।— গ্যালিপিয়া-ক্যাম্পেরিয়া বৃক্ষের বল্কল হতে তৈরী করা হয়।

ব্যবহারস্থল।—পেশী ও সন্ধিস্থলের সঙ্কোচন, অস্থিতে ক্ষত; অতিসার, আঘাতাদির পর আড়ষ্টতা, পক্ষাঘাত, ক্ষীণদৃষ্টি, ধনুষ্টঙ্কার, হুপিং-কাশি ও জ্বর প্রভৃতি।

প্রদর্শক লক্ষণ।— কফি পান করার অদম্য লালসা। সমস্ত সন্ধিতে চলবার সময় খটখট্ শব্দ। বড় বড় হাড়ের ক্ষত। ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা। মলদ্বারে জ্বালা। পারদ ব্যবহারের কুফল হতে জাত অস্থিক্ষত। শিরদাঁড়ায় বেদনা। ঘাড়ে বেদনা, কোমরে বেদনা, চাপ দিলে বাড়ে। হাঁটুতে বেদনা, হাতের আঙ্গুল ঠান্ডা। বুক ধড়ুধড়ু করে। সামনে ঝুঁকে বসলে বৃদ্ধি ও সোজা হয়ে বসলে উপশম। কাশির সঙ্গে ঢেঁকুর উঠে। অর্শের বলি বের হয়ে পড়ে। শক্ত ডেলা ডেলা মল। বেলা ৩টায় কাশি। মৃগী, শরীর পিছনে বেঁকে যায়। টিটেনাস, স্পর্শে, পানি পানে ও শব্দে বৃদ্ধি। জ্বরের সময় পিপাসা ও পিত্ত-বমি। জননেন্দ্রিয়ের স্থানে অসহনীয় চুলকানি, কামোদ্দীপনা সহ।

মন। এটার রোগী শারীরিক পরিশ্রমে আনন্দ পায়, কিন্তু মানসিক পরিশ্রম করতে হলে মাথা ঘুরে এবং নিদ্রিত হয়ে পড়ে। রোগীর মাথা এত ঘুরে যেন সে নেশা করেছে। খাল, বিল, নদী, পানির উপর পুল দিয়ে গেলে মাথা ঘুরিতে থাকে। (ককুলাসের রোগীর নৌকা বা গাড়ীতে চললে অথবা নৌকা, গাড়ী প্রভৃতি চলতে দেখলে গা-বমি-বমি করে এবং বমি হয়)। অত্যন্ত ক্রোধপ্রবণ, সামান্য কারণেই রেগে যায়।

শিরঃপড়া। — মাথার যন্ত্রণা এত প্রবল যে, তাতে মূৰ্চ্ছার উপক্রম হয়, কপালের ও মাথার শিরার ভিতর কিছু বিধছে এরূপ যন্ত্রণা। যন্ত্রণা সন্ধ্যার সময় বেশী হয়, ঐ সময় রোগীর চোখ দুইটি টকটকে লাল হয় ও জ্বালা করে। রোগী সকল জিনিষই ধোঁয়া ধোঁয়া দেখে। মাথা এত ঘোরে যে, রোগী মনে করে সে নেশা করেছে।

ধনুষ্টঙ্কার। —পৃষ্ঠদেশীয় পেশীর আক্ষেপ হয়ে ধনুষ্টঙ্কার হয়, টঙ্কারের সময় ঠোঁট ও চোয়াল ঝুলে পড়ে। পৃষ্ঠে বৈদ্যুতিক প্রকম্পনের মত স্পন্দন হয়। সাধারণতঃ কোন স্থানের স্রাব বা পুঁজ হঠাৎ বন্ধ হয়ে বা টঙ্কার বা খেঁচুনি হয়। খেঁচুনি ঈষদুষ্ণ পানি পানের পর একটু কম পড়ে। তুলনীয়। আঘাতজনিত রোগে—আর্নিকা; চুঁচ, আলপিন, পেরেক ইত্যাদি হাত-পায়ে ফুটে বা ইঁদুরের কামড় হতে ধনুষ্টঙ্কার বা আঘাতপ্রাপ্ত স্থানের nerve বা স্নায়ু আহত হয়ে ধনুষ্টঙ্কারে হাইপেরিকাম। আঘাত জনিত ধনুষ্টঙ্কারে (আর্ণিকার মত) ফাইজটিগমাও উপকারী। ধনুষ্টঙ্কারে মেরুদন্ড আক্রান্ত হয়ে ঘাড়-পিঠ শক্ত লক্ষণে–ট্যাবেকাম।

হুপিংকাশি—কণ্ঠনালীর নিম্নভাগের প্রদাহের জন্য সকালবেলা অনবরত কাশি হয়, রোগী বহু চেষ্টা করে, কিন্তু কিছুতেই শ্লেষ্মা উঠতে চায় না। কাশিয়া কাশিয়া গলা ভেঙে যায় ও শ্বাসকষ্ট উপস্থিত হয়। এমন শুষ্ক কাশির জন্য হৃদযন্ত্রের আশে-পাশে যেন কেউ বিদ্ধ করছে এমন যন্ত্রণা হয়। সোজা হয়ে বসলে কিছু উপশম হয়।

অস্থি-ক্ষত।— বাহু, ঊরু ও নিম্ন পদের দীর্ঘাস্থির ক্ষতেও এই ঔষধটি ফলপ্রদ। ডাঃ কর্ণন্ডাকার কোন একটি রোগীর নীচের চোয়ালের ক্ষত এই ঔষধ দ্বারা আরোগ্য করেছিলেন। ডাঃ অ্যালোন বলেন—অস্থি-ক্ষতে অত্যন্ত বেদনা থাকলে এবং ক্ষতটি হাড় ভেদ করে অস্থি-মজ্জা পর্য্যন্ত প্রসারিত হলে, স্রাবের সাথে খন্ড খন্ড হাড়ের টুকরা বের হতে থাকলে এবং রোগীর কাফি পানের ইচ্ছা প্রবল থাকলে অ্যাঙ্গাটুরা শ্রেষ্ঠ ঔষধ। সদৃশ। অ্যাসাফিটিডা – এটাও অস্থি-ক্ষতে উপযোগী। অ্যাঙ্গাষ্টুরা দীর্ঘাস্থির ক্ষতে উপযোগী, আর এটা দীর্ঘ ক্ষুদ্রাস্থির ক্ষতে কার্যকরী। অ্যাসাফিটিডায় অস্থি- ক্ষতের স্রাব অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত। অরাম-পারদ অপব্যবহারের পর অস্থি-ক্ষতে উপযোগী। তবে এটা নাকস্থির ক্ষতেই বেশী উপযোগী। ক্যাঙ্কে ফ্লোর – অস্থিতে ক্ষত হয়ে তা হতে স্রাব বের হয়ে বস্তিদেশে ফোড়া হলে কার্যকরী ঔষধ।

জননেন্দ্রিয়।— পুরুষেন্দ্রিয়-মুন্ডে এত অধিক কামোদ্দীপক সুড়সুড়ানি হয় যে, রোগী অতি জোরে ঐ স্থান ঘষতে বাধ্য হয়। স্ত্রীলোকদের ঋতুস্রাব হওয়ার পূর্বদিনে সামান্য একটু সাদা স্রাব হয় এবং জননেন্দ্রিয়ের ভিতর ভয়ানক চুলকানি হতে থাকে। প্রস্রাব হয়ে যাবার পরও মূত্রদ্বারে প্রস্রাবের বেগ রহিয়া যায়।

উদরাময়। —গ্রীষ্মকালীন উদরাময়ে সাদা সাদা মল নির্গমনের সাথে পেটে বেদনা, মলত্যাগের পর ভাবে যেন মলান্ত্রে আরও মল রয়েছে (নাক্স ভমিকা), খাওয়ার পরই মলত্যাগের বেগ হয় (চায়না)।

জ্বর।—অপরাহ্ন ৩টার পর ভয়ানক কম্প, পিপাসা, বমন ও তড়কার সাথে অত্যধিক জ্বর; জ্বরকালে রোগীর কাফি পান করার অত্যন্ত ইচ্ছা হয়। মুখ ও হাত-পা খুব গরম, ঊর্ধ্বাঙ্গে প্রচুর ঘাম। পুরাতন জ্বর। সমগুণে ঔষধ— আর্সেনিক, নেট্রাম মিউর, সিড্রন।

বৃদ্ধি।— সামনে ঝুঁকে বসলে; হাত নাড়লে; বিশ্রামে।

হ্রাস। —ঠান্ডায়; সোজা হয়ে বসলে; ঠান্ডা পানিতে; দেহ বিস্তৃত করলে।

শক্তি।–৩, ৬, ৩০, ২০০।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!