অ্যানাকার্ডিয়াম–ওরিয়েন্টাল (Anacardium Oriental)
পরিচয়। এটার দেশীয় নাম ভেলা বা ভল্লাতক।
ব্যবহারস্থল। —সুরাপান জনিত মন্দফল; সন্ন্যাস; মস্তিষ্কের ক্লান্তি; কাশি; দুর্বলতা; অজীর্ণ; শিররোগ; কোষ্ঠকাঠিন্য; শূলরোগ; উন্মাদরোগ; স্মৃতিশক্তির হ্রাস; নানাবিধ চর্মরোগ; মেরুদন্তে রোগ; গ্রীবাস্তম্ভ; গর্ভিণীর বমন; গোদ; কুষ্ঠরোগ; হৃদযন্ত্রের রোগ; আঁচিল; অর্শ প্রভৃতি ক্ষেত্রে কার্যকরী।
প্রদর্শক লক্ষণ।— স্মৃতিশক্তির লোপ। কোন তরুণ রোগের পর, বসন্ত রোগের পর স্মৃতিশক্তির লোপ বা হ্রাস। বৃদ্ধদের স্মৃতিশক্তির হ্রাস। মনে করে তার দুইটি ইচ্ছাশক্তি, একটি তাকে যা করতে আদেশ দেয়, অপরটি তাতে ঠিক তাই করতে নিষেধ করে। মাথাধরা, সেইসঙ্গে মনে হয় মাথায় গোঁজ পোঁতা আছে। অতিরিক্ত মানসিক শক্তির পরিচালনায় কুফল। রোগী তার আচরণে কতকটা কুৎসিত ও নির্বোধ। শপথ করার প্রবৃত্তি কিন্তু দুর্নীতিবশতঃ নয়। অধিকাংশ সময়ে রোগীর খুব ক্ষুধা। যখন খায় তখন তার কষ্ট কম থাকে, খাওয়ার পর শূলবেদনার উপশম হয়, আবার ২/৩ ঘণ্টা পরে বাড়ে। কোষ্ঠবদ্ধতা, বার বার মলবেগ পায়, কিন্তু যেমন মলত্যাগের চেষ্টা করে অমনি মলত্যাগের ইচ্ছা চলে যায়। রোগী ভাবে মলদ্বারে গোঁজ বা অন্য কোন পদার্থ আটকিয়ে আছে। ইরিসিপেলাস, ফোস্কাযুক্ত, ডানদিক হতে বাম দিকে যায়। স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নে আগুন দেখে। মৃতদেহ দেখে। দেখে সে কবরের নিকট আছে। স্নায়বিক দুর্বলতা (ব্রেন-ফ্যাগ)। বৃদ্ধগণের সামান্য কারণে বুক ধড়ফড়ানি। স্কুল-কলেজের ছেলেরা পরীক্ষার সময় ভয় পায়। সব জিনিস বহুদূরে দেখায়। খাবার বা পানি খুব তাড়াতাড়ি গিলে ফেলে। হাতের চেটোয় আঁচিল। হাতের উপর আঁচিল (warts) গর্ভাবস্থায় গা-বমি-বমি। কিছু খেলেই কম হয়। অনবরত শীত করে। এমন-কি গরম ঘরেও শীত করে। টেন্ডনগুলির আঘাত। মাথা ধরা। আহার করামাত্র উপশম। হাত ंক, গরম। মনে হয় আঙ্গুল ও হাত শুল্ক। যখন বসে থাকে তখন পায়ের তলা জ্বালা করে। শিরঃরোগ ও সর্দিরোগে নাকে মোরগের বিষ্ঠার গন্ধ পায়। উপরে চড়লে বড়ই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
মন। —স্মায়বিক অজীর্ণ রোগীর হঠাৎ স্মৃতিশক্তির লোপ, সকল বিষয় ভুলে যায়, তার কাছে সকলই স্বপ্ন বলে মনে হয়। পরিচিত বন্ধুর নাম পর্য্যন্ত ভুলে যায়। রোগী মনে করে কে যেন সর্বদাই তার সঙ্গে রয়েছে, কে যেন তাকে অনুসরণ করে চলছে। চলতে চলতে দাঁড়িয়ে পেছন দিকে চেয়ে দেখে। রোগীর প্রকৃতি বড় অদ্ভূত ধরণের। অপরকে সন্দেহ ত করেই, নিজেকেও সন্দেহ করে। সন্দেহ করে সকলকে দোষ দেয় এবং কথায় কথায় প্রতিবাদ করে। হাসি-ঠাট্টাদি হাল্কা ব্যাপারে সে হয়ত গম্ভীরভাবে থাকবে, আবার কোন একটা গুরুতর ব্যাপারে হেসে উঠবে। কোন কোন সময় মনে ভাবে যেন সে দুইটি ইচ্ছাশক্তির অধীন, একটি শক্তি তাকে কোন কাজ করার জন্য প্ররোচিত করছে, পরমুহূর্ত্তেই অন্যটি নিবৃত্ত করছে। কিন্তু আহারকালে তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলে বোধ হয়।
উন্মাদ। — স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, রোগী আপন মনে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু চলতে চলতে পেছনে ফিরে দেখে, যেন কেউ তাকে ডাকছে। আহারের সময় কোন লক্ষণ থাকে না, সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তির মত আহার করে।
স্নায়বিক উত্তেজনা।— রোগী মনে করে তাকে যেন লোহার বেড়ের মধ্যে রেখে দিয়েছে।
শিরঃরোগ।— রোগী সর্বদ্রব্যে মলের বা পাখীর বিষ্ঠার গন্ধ পায়। মাথা নোয়ালে বা চলাফেরা করার সময় মাথা ঘুরে, যে চারিদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে এবং ঘরের জিনিষপত্র ও অন্যান্য দ্রব্যাদি টলমল করছে। অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রম করার পর মাথা ধরা বা মানসিক অবসাদ। রোগীর মাঝে মাঝে মনে হয় যেন তার মাথা একটা শক্ত দড়ি দ্বারা বাঁধা রয়েছে বা মাথায় একটা গোঁজ আঁটা রয়েছে। মাথার যন্ত্রণা আহারের পর উপশম, কিন্তু পুায় ঘুরে ফিরে আসে। আহার কালে শিরঃরোগের সম্পূর্ণ নিবৃত্তি হয়, এস্থানে এটাকে সোরিণামের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যারা শারীরিক পরিশ্রম করে না, বসে বসে সময় কাটায় তাদের স্নায়বিক এবং পাকাশয়িক শিরঃরোগে যেমন অ্যানাকার্ডিয়াম ব্যবহৃত হয়, সেইরূপ আর্জেন্টাম-নাইট্রিকাম এবং নাক্স- ভমিকাও উপযোগী হয়ে থাকে।
হৃদযন্ত্রের রোগ।—বৃদ্ধদের সামান্য কোন রোগে হৃদযন্ত্রের স্পন্দন দেখা যায়, যখন হৃদ্স্পন্দন বেশী হতে থাকে তখন বোধ হয় যেন বুকের ভিতর কিছু লাফাতেছে।
সর্দি। নাক হতে পানির মত সর্দি বের হয়, সর্দির সঙ্গে চোখ হতে স্রাব ও বার বার হাঁচিও হতে দেখা যায়। অ্যালিয়াম-সেপা এবং ইউফ্রেসিয়া ঔষধন্বয়েও সর্দির সঙ্গে চোখ হতে স্রাব এবং বার বার হাঁচি আছে কিন্তু অ্যালিয়াম-সেপার সর্দি-স্রাব প্রচুর পরিমাণ পানির মত কিন্তু বিদাহী বা ক্ষতকর (acrid), উষ্ণগৃহে প্রবেশে হাঁচি বেশী হয়, কিন্তু চোখের পানির মত স্রাব অবিদাহী। ইউফ্রেসিয়ার (অ্যালিয়াম-সেপার বিপরীত) নাকয় স্রাব প্রচুর পরিমাণ পানির মত, অবিদাহী এবং চোখ হতে সর্বসময়ের জন্যই যে প্রচুর পরিমাণ পানি ঝরে তা ঘন এবং বিদাহী বা ক্ষতকর (acrid), মার্কুরিয়াসে চোখ হতে পাতলা পানির মত অথচ বিদাহী স্রাব হয়। রোগী যেন সর্বদা পায়রা বা মোরগের বিষ্ঠার গন্ধ পায় (অ্যাগ্নাস রোগী মৃগনাভীর গন্ধ পায়)।
ডিসপেপসিয়া।— আহারান্তে সকল লক্ষণের উপশম হয় (চেলিডো, আয়োড)। গুহ্যদ্বারে একটা গোঁজ আটা আছে বোধ হয়। ডিসপেপসিয়া রোগীর শূন্য উদ্গার উঠে, আবার কখনও কখনও গলায় অতিরিক্ত পানি উঠে শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পেট হতে তালুমূল পৰ্য্যন্ত জ্বালা (কেলি-কার্ব, নেট্রাম-মিউর)।
কোষ্ঠকাঠিন্য। –রোগীর সর্বদাই মলবেগ রয়েছে মনে হয়, কিন্তু মলত্যাগের চেষ্টা করলেই মলের বেগ চলে যায়। রোগী মনে ভাবে তার মলদ্বারে একটা গোঁজ আঁটা আছে। কোষ্ঠকাঠিন্য লক্ষণে এটার সাথে নাক্স ভমিকার বহু সাদৃশ্য দেখা যায়। নাক্স ভমিকায় বার বার মলত্যাগের ইচ্ছা হয় ও সামান্য কিছু মলত্যাগ করে, কিন্তু নাক্সে মলদ্বারে গোঁজ আঁটা আছে মনে হয় না।
অম্লশূল।— অম্লশূলের তীব্রতা, খালি পেটে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, খাবার পরই উপশম লাভ (চেলি, গ্রাফাইটিস, পেট্রোল) এবং পরিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর পুনরায় তীব্র বেদনা আরম্ভ হয়। নাক্স এটার পরিপূরক। সদৃশ।—নাক্স ভমিকার শূল আহারের ২/১ ঘণ্টা পরে আরম্ভ হয়। এতে আহারের উপশম লক্ষণ, নেই। অ্যাবিস-নাইগ্রা—-এটার অম্লশূল খাওয়ার পরক্ষণেই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, রোগী মনে করে একটা শক্ত ডিমের মত জিনিষ দ্রুত পাকস্থলীর উপরিভাগে চাপ দিচ্ছে। অ্যাসিড-হাইড্রো রোগীর পেট খালি হলেই শূল-বেদনা বৃদ্ধি হয়। কলোসিন্থ —অম্লশূল বা কোন প্রকার পেটের বেদনা সামান্য পানাহারে বৃদ্ধি হয় এবং সম্মুখের দিকে ঝুঁকলে বা পেট চেপে শুয়ে থাকলে উপশম হয়। বেলেডোনা—পানি ইত্যাদি গলাধঃকরণ করার সময় বেদনার বৃদ্ধি, সেজন্য বার বার ঢোক গিলবার ইচ্ছা, হিপার – রোগীর সব কাজই তাড়াতাড়ি, কোন দ্রব্য গিলতে গেলে গলায় সূঁচ বিধছে এরূপ যন্ত্রণা।
দন্তশূল।—এটার দন্তশূল গরম পানি বা কোন গরম দ্রব্য সেবনে বেশী হয়। পানীয় বা আহার্য্য দাঁতে আটকিয়ে যাবে ভয়ে রোগী সকল দ্রব্য অতি তাড়াতাড়ি ভোজন করে। সদৃশ ঔষধ। – ষ্ট্যাফিসেগ্রিয়া – খাদ্য বা পানীয় দাঁতে ঠেকলেই বৃদ্ধি, ঠান্ডা পানিতেও বৃদ্ধি কিন্তু অ্যানাকার্ডিয়ামে গরম পানি বা গরম দ্রব্য সেবনে বৃদ্ধি। পালসেটিলা, ক্যামোমিলা, ল্যাকেসিস – গরম পানিতে বৃদ্ধি। গরমে উপশম – অ্যাসেটিক, ম্যাগ ফস, নাক্স ভমিকা। কফিয়ায় ঠান্ডা পানি মুখে রাখলে উপশম, কিন্তু মুখমধ্যে পানি গরম হলেই আবার বেদনা করে। ক্যামোমিলায় মুখে গরম পানি রাখলে, বাড়ে, কিন্তু কফিয়ার মত মুখে ঠান্ডা পানি রাখলে কমে না।
ধ্বজভঙ্গ। ক্রমান্বয়ে বীৰ্য্যপাত হয়ে ধ্বজভঙ্গ, কোন প্রকার স্বপ্ন না দেখেও রেতঃপাত। ডাঃ হিউজেস বলেন – রোগীর জ্ঞাতসারে কি অজ্ঞাতসারে রেতঃপাত হয়ে পুরুষত্বহানি ঘটিলে এটা ফলপ্রদ ঔষধ। তিনি এটার ১২ শক্তি সেবন করতে বলেন। সদৃশ ঔষধ। অ্যাগ্লাস-ক্যাষ্টাস- অতিরিক্ত শুক্রক্ষয় হতে ধ্বজভঙ্গ। নিদ্রিত অবস্থায় রেতঃস্থলন হয়। টার্নেরা (অন্যনাম ড্যামিয়ানা) – ধ্বজভঙ্গের অন্যতম উৎকৃষ্ট ঔষধ। কারণ যাহাই হোক, এটা সেবনে উপকার হবে। স্কুটেলেরিয়া- অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হেতু বা স্বপ্নদোষসহ ধ্বজভঙ্গ, সেই সঙ্গে পেটে বায়ুসঞ্চয়। রোগীর মনে ভয়—তার রোগ সারবে না।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গাদি।— পক্ষাঘাতের পর অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতার জন্য এই ঔষধ ফলপ্রদ। হাঁটু ও মেরুদন্ডের রোগের সাথে কোন একটি বিশেষ অঙ্গের পক্ষাঘাত।
চর্মরোগ। হাতের তলায় আঁচিল (কমোক্লেডিয়া, অ্যান্টিম-ক্রুড)। কুষ্ঠব্যাধিতেও অনেকে এই ঔষধ প্রয়োগ করতে উপদেশ দেন, কুষ্ঠাক্রান্ত স্থান অত্যন্ত ঠান্ডা এবং শক্ত চটাযুক্ত। জানুসন্ধির পুরাতন স্ফীতি, মনে হয় যেন ত্বকের নীচে ক্ষত আছে।
নিদ্রা।— রোগী স্বপ্নে মনে করে যেন পূর্ব সংঘটিত ঘটনাগুলি দেখছে।
সম্বন্ধ। রাস টক্সের দোষ; লাইকো ও পালসের পর প্রযোজ্য; প্ল্যাটিনাম অনুপূরক।
বৃদ্ধি – গরম পানিতে; খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে; মানসিক পরিশ্রমে (মাথাধরা)।
হ্রাস। খাওয়ার সময়; গরম সেঁকে।
শক্তি।—–৬, ৩০, ২০০, ১০০০ বা তদূর্দ্ধ।