অ্যামিল–নাইট্রোসাম (Amyl Nitrosum)
পরিচয়। – (অ্যামিল-নাইট্রেট) নাইট্রিক অ্যাসিড সহ অ্যামিলিক সুরাসারের সংমিশ্রণে প্রস্তুত। ব্যবহারস্থল। সহসা শ্বাসরোধের উপক্রম, উন্মুক্ত বায়ুর জন্য ছট্ফট্ করতে থাকা, হাওয়ার জন্য গায়ের কাপড়-জামা খুলে ফেলে দেওয়া। হৃদপিন্ডের স্পন্দন, হিক্কা, হাইতোলা হাঁপানি, আক্ষেপ, মৃগীর আক্রমণ এবং অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি এটা দ্বারা ক্ষণিক উপশম লাভ করে। শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা হলে, এটার ঘ্রাণে সুফল পাওয়া যায়। নৌকা, জাহাজ ও পাল্কী প্রভৃতিতে ভ্রমণকালে যদি বমি হয় বা মাথা ঘুরে তা হলে এই ঔষধের ঘ্রাণ নিলে তৎক্ষণাৎ উপশম হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জার পরে প্রচুর ঘাম হলেও এই ঔষধ বিশেষ উপযোগী।
ক্রিয়াস্থল। —স্নায়ুপ্রধান, থলথলে ও রক্তপ্রধানা স্ত্রীলোকদেরও বয়ঃসন্ধিকালের রোগে উপযোগী।
প্রদর্শক লক্ষণ।— ঋতুলোপ কালে স্ত্রীলোকদের মাথাধরা, বুক ধড়ফড় করা, উদ্বেগ, উত্তাপ বোধ ইত্যাদি। মুখশ্রী অত্যন্ত লাল। অবিরত হাই তোলে মোড়ামুড়ি ভাঙ্গে। চোখ বিস্তৃত, যেন একদৃষ্টে চেয়ে আছে। হাতের শিরা ফুলে মোটা হয়। সমস্ত শরীর দপ্দপ্ করে। ইনফ্লুয়েঞ্জার পর অতিরিক্ত ঘাম। হিক্কা ও হাইতোলা। প্রস্রাবের পরেই কনভালসন, গলার কাপড় আলগা করে দেয়। মন। অ্যামিল-নাইট্রেটের রোগী সর্বদাই উৎকণ্ঠিত। উন্মুক্ত স্থানে মুক্ত বায়ুতে বেড়াতে ভালবাসে।
শিরঃরোগ।— অর্দ্ধ-শিরঃশূল বা আধকপালে মাথাব্যথা। স্নায়বিক রোগীদের হঠাৎ মাথায় যন্ত্রণা হয়ে মুখ-চোখ অত্যন্ত লাল চকচকে হয়, মাথাবেদনার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার · উপক্রম হয়। মাথার যন্ত্রণায় মুক্ত হাওয়ায় ছুটে যায়। মুক্ত হাওয়ায় যন্ত্রণার কথঞ্চিৎ উপশম হয়। সূর্যতাপ হতে মাথা ধরা। মাথার যন্ত্রণা সূর্য্য উঠবার সঙ্গে সঙ্গে আরম্ভ হয় এবং সূর্যাস্তের পর হ্রাস হয় (নেট্রাম-মি, জলস, স্পাইজি)। নেট্রাম-মিউরের মাথার যন্ত্রণাও সূর্য্যোদয়ের সঙ্গে আরম্ভ হয়, বেলা বাড়িবার সঙ্গে বাড়িতে থাকে এবং বেলা পড়বার সঙ্গে কমে যেতে থাকে। স্পাইজিলিয়ায় সূর্য্যোদয়ের সঙ্গে বৃদ্ধি এবং সূর্যাস্তের সঙ্গে উপশম; যে দিকে ব্যথা সেই দিকের চোখ হতে পানি পড়ে।
হিক্কা।—অত্যধিক হিক্কা যখন কিছুতেই আরাম হয় না, তখন এই ঔষধ শুঁকতে দিলে কতক উপশম হয়ে থাকে।*
* কঠিন হিক্কায় কেঁচোর আঠা আঠা রস বা ‘ছারপোকা’ ভিজান পানি কার্যকরী। ডাবের পানি গরম করে অল্প অল্প পান করলে অথবা ডাবের পানিতে মুড়ি ভিজিয়ে সেই পানি পান করলে হিক্কার উপশম হয়, গোলাপ পানিতে খই ভিজিয়ে মাড়িয়া পাতিলেবুর রস ও কাশীর চিনি দিয়ে অল্প অল্প করে চাটিয়া খেলে হিক্কার শান্তি হয়।
———————————————
দুর্দম্য উচ্চ শব্দবিশিষ্ট হিক্কায় সিকুটা। জিঙ্ক-ভ্যালেরিয়ানা — হিষ্টিরিয়া রোগগ্রস্তা রোগিণীদের দুর্দম্য হিক্কায় বিশেষ ফলপ্রদ, অনবরত একটি বা দুটি পদসঞ্চালন এটার বিশেষ প্রকৃতিগত লক্ষণ। কেলি-ব্রোম – হিক্কার বিরাম নেই, এই প্রকৃতির অবিরাম হিক্কায় বিশেষ উপযোগী।
নাক হতে রক্তস্রাব। নাক হতে উজ্জ্বল রক্তস্রাব, সেই সঙ্গে অত্যধিক মাথার যন্ত্রণা, মুখমন্ডল অত্যন্ত লাল ও রোগী ব্যগ্রভাবে মুক্ত হাওয়ায় যেতে চায়। সদৃশ।—অ্যামন-কার্ব— সকালে হাত-মুখ ধুবার সময় অথবা আহারের পর নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। সিনামোমাম – খুব জোরে নাক ঝাড়বার ফলে বা উঁচু হতে নীচু স্থানে নামিবার সময় নাক হতে রক্তস্রাব। মিলিফোলিয়াম- বেদনাহীন তাজা ও উজ্জ্বল রক্তস্রাব। অ্যাকোন নাক হতে তাজা রক্তস্রাব এবং সঙ্গে উদ্বেগ, ছটফটানি ও পানিপিপাসা। ইরিজিরণ-নাক হতে তাজা রক্তস্রাব, সামান্য নড়াচড়ায় রক্তস্রাবের বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে বাহ্যে ও প্রস্রাবে কোঁথ। ক্রোকাস নাক হতে কাল দড়ির মত আঠা আঠা ও পুরু স্রাব। পালসেটিলা –নাক হতে অনবরত অল্প অল্প রক্তস্রাব হতে থাকে, রক্ত উজ্জ্বল নয় বা জোরে নিঃসৃত হয় না। ঋতু বন্ধ হয়ে নাক হতে রক্তস্রাব।
হৃদযন্ত্রের রোগ। —এটা হৃদ্শূল ও হৃদপিন্ডের ধড়ফড়ানির জন্য বিশেষ ফলপ্রদ। হৃদপিন্ড দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ আছে এরূপ অনুভব এবং সেটার চতুর্দিকে কামড়ানি ব্যথা। সামান্য উত্তেজনায় ভয়ানক দপদপানি এবং কপালে ঘাম ও মুখ অত্যন্ত লাল হয়। অ্যামিল-নাই ১x শক্তির কয়েক ফোঁটা শুঁকতে দিলে উপকার দর্শে। হৃদশূল এবং হৃৎপিন্ডের বেদনায় কষ্ট লাগবে তুলনাযোগ্য ঔষধ :- অ্যাকোনাইট-ফেরক্স – শ্বাসকষ্ট, হাঁসফাঁস করা, শুইতে না পারিয়া উঠে বসে থাকা। কোকা- শ্বাসকষ্ট এবং বুকের অত্যধিক ধড়ফড়ানি সেই সঙ্গে পেট ফোলা। আর্স-আয়োড –হাঁপানির মত টান এবং বুকের ধড়ফড়ানি। ক্র্যাটিপাস –বেদনা, ধড়ফড়ানি ইত্যাদি যাবতীয় উপসর্গেই সঙ্গে সঙ্গে উপকার পাওয়া যায়। এডোনিস-ভার্ণালিস, কনভ্যালেরিয়া, আইবেরিস, স্ট্রোফানন্থাস-ফ্যাসিওলাস (সাংঘাতিক প্রকারের বুক ধড়ফড়ানি) প্রভৃতি ঔষধও বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
হাঁপানি।— শ্বাসকৃচ্ছতা ও হাঁপের টানের জন্য এটা একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। এটা হাঁপানির টান কমায়, হাঁপানি আরোগ্য করতে পারে না। যখন টান অত্যধিক হতে থাকে, তখন এটার ১০/১২ ফোঁটা রুমালে ঢালিয়া রোগীকে আঘ্রাণ নিতে দিলে তৎক্ষণাৎ হাঁপানির টান কমে যায়। হুপিং – কাশির জন্যও এটা ব্যবহৃত হয়। সামান্য মানসিক উত্তেজনা হলেই হাঁপের টানের বৃদ্ধি পরিচায়ক লক্ষণ।
সর্দি-গর্মি।—অতিরিক্ত গরমে বা রৌদ্রে কাজ-কর্ম করার জন্য সর্দি-গর্মি রোগ হয়। সর্দি- গর্মি হয়ে রোগী অজ্ঞান-অচৈতন্য হয়ে পড়লে এবং সেই সঙ্গে মাথায় খুব যন্ত্রণা ও হৃদযন্ত্রের দ্রুত স্পন্দন হতে থাকলে এই ঔষধ ফলপ্রদ। এমিল-নাই—মুখমণ্ডল অত্যন্ত লাল। গ্লোনইন – অজ্ঞানতার উপক্রম, বমি-বমি ভাব ও দপদপানি ব্যথা। বেল–ঘুম ঘুম ভাব, দপদপানি ব্যথা।
মৃগী ও ধনুষ্টঙ্কার।—বারংবার মৃগী বা ধনুষ্টংকারের ফিট হতে থাকলে উপযোগী। ফিটের সময় রোগীর মাংসপেশীগুলি শক্ত হয়ে যায়। আক্ষেপের সময় মানসিক ভীতি ও মুখ অত্যন্ত লাল হয়—এই ঔষধের ঘ্রাণ নিলে সঙ্গে সঙ্গে ফিট কমে যায়।
বহুমূত্র।—বহুমূত্র রোগীর মূত্রে প্রচুর শর্করা থাকলে এবং সেই সঙ্গে সর্বশরীরে জ্বালা ও মুখ আরক্তিম হলে এই ঔষধ কার্যকরী। প্রস্রাবে যদি অতিরিক্ত পরিমাণ শর্করা বের হতে থাকে এবং সইে সঙ্গে পিপাসাও বৰ্ত্তমান থাকে, তা হলে অ্যাব্রোমা অগষ্টা, জিমনেমা-সিলভেষ্টার, সিজিজিয়াম-জ্যাম্বোলেনাম বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেফালেন্ড্রা- ইন্ডিকাও বহুমূত্রের একটি বিশিষ্ট ঔষধ কিন্তু এটার রোগীর পিত্তাধিক্য জন্য শরীরে অত্যধিক জ্বালা থাকে না।
গাত্রদাহ বা জ্বালা।— রোগীর শরীরে ভয়ানক জ্বালা। জ্বালা প্রথমে কোমর হতে আরম্ভ হয়ে পিঠে ও অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। জ্বালার পর অত্যধিক ঘাম হয়। শীতকালেও গাত্রদাহ হয়, গায়ে কিছু রাখতে পারে না। জ্বালার সাথে রোগীর মুখ আরক্তিম হয়। তুলনীয়।—মাথার চাঁদিতে আগুনের মত জ্বালা–আর্সেনিক, কিউপ্রাম, সালফার। আর্সেনিকের জ্বালা উত্তাপে উপশম, সাম্ফারের জ্বালা ঠান্ডায় উপশম। অধিকন্তু সাঙ্কারে হাত-পা, চোখ-মুখ জ্বালা করে শরীরের ভিতর হতে আগুনের ঝলকের মত বের হয় -ক্যাল্কেরিয়া-সাফ। পায়ের তলায় জ্বালা, কিন্তু পায়ে জ্বালা – স্যানিকুলা ও সিকেলি-কর। অধিকন্তু সিকেলি-করে সমস্ত শরীরে জ্বালা আছে, মনে হয় যেন দেহে আগুনের কণা পড়ছে। জ্বরের উপসর্গে অত্যধিক গাত্রদাহে, গরম পানিতে সমস্ত শরীর উত্তমরূপে স্পঞ্জ (গামছা ভিজিয়ে, নিংড়াইয়া মোছাইয়া দিলে) করে দিলে সত্ত্বর দাহের শান্তি হয়। নিমের পাতা বিছানায় বিছিয়ে দিলে অথবা নিমের পাতার হাওয়া করলেও উপকার পাওয়া যায়। পেটের ভিতর জ্বালা করলে নাভীর উপর পাতলা বাটি রেখে উপর হতে পানি ধারাণি করলে অথবা চন্দন বেটে নাভীর গর্ভে প্রলেপ দিলে সত্ত্বর জ্বালার শান্তি হয়। পেট ফাঁপা সহ জ্বালায় পুঁস শাকের পাতা বেটে অথবা কাদার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।
ম্যালেরিয়া।— জ্বরের সময় মুখ অত্যন্ত আরক্তিম হয়ে উঠে। উত্তাপাবস্থায় সর্ব শরীরে জ্বালা ও দপদপানি এবং উত্তাপের পর প্রচুর ঘাম হয়।
স্ত্রীরোগ।—প্রসবের পর ভ্যাদাল ব্যথার সাথে মুখ-চোখ লাল হয়ে উঠলে এবং সেই সঙ্গে রক্তস্রাব থাকলে এটা ফলপ্রদ। জ্যান্থজাইলাম—প্রসবান্তিক ভ্যাদাল ব্যথার অন্যতম উৎকৃষ্ট ঔষধ, প্রসবে পোয়াতি অত্যধিক কষ্ট পেয়ে থাকলে আর্ণিকা ব্যবহৃত হয়, লক্ষণানুসারে কিউগ্রাম- অ্যাসেটিকাম বা মেটালিকাম এবং ভাইবার্ণাম-ওপুলাসও উপকারী। প্রসবান্তিক আক্ষেপেও অ্যামিল-নাইট কার্যকরী। ঋতুকালে শিরঃরোগ সূর্য্যোদয়ের সাথে আরম্ভ হয়ে সূর্য্যাস্ত পর্য্যন্ত বিদ্যমান থাকে। মাথার যন্ত্রণার সময় বমি-বমি ভাব ও মুখ-চোখ আরক্তিম হয়।
সমগুণ। —ক্যাক্টাস, কোকা, ফেরাম, গ্লোনয়েন, ল্যাকেসিস। দোষঘ্ন ও প্রতিবিধ—ক্যাক্টাস, আর্গট, ট্রিকনিয়া।
বৃদ্ধি।— গরম ঘরে; ঋতুলোপ কালে।
হ্রাস। — খোলা ঠান্ডা বাতাসে; ঠান্ডা পানিতে।
শক্তি।– ১x, ২x, ৬, ৩০।