অ্যাম্ব্রাগ্রিসিয়া (Ambragrisea Ambergis)

পরিচয়।—তিমি মাছের পেটের ভিতর প্রাপ্ত সুগন্ধি দ্রব্য হতে প্রস্তুত হয়।

ব্যবহারস্থল। — ঔষধটির প্রধান ক্রিয়া স্নায়ুমন্ডলীর উপর। দুর্বল, বৃদ্ধ বা অকাল বৃদ্ধের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। হাঁপানি; কাশি; শীর্ণতা, গুহ্যদ্বারের উত্তেজনা; কামোন্মাদ; মূৰ্চ্ছা; সূতিকাক্ষেপ; ন্যাবা; মুখব্রণ; জিহবায় অর্বুদ প্রভৃতি।

প্রদর্শক লক্ষণ।— বৃদ্ধদের মাথাঘোরা; শ্রবণ-শক্তির হ্রাস। অতিরিক্ত স্নায়বিকতা ও স্নায়বিক দুর্বলতা; মাথাঘোরে। গান-বাজনা শুনিলে রোগ লক্ষণ বাড়ে। একলা থাকতে চায়। অন্য লোকের সামনে কোন কাজ করতে পারে না। বৃদ্ধ লোকেরা চিন্তা করতে পারে না। সকালে সব লক্ষণের বৃদ্ধি। স্মরণশক্তি বিশ্বাসযোগ্য নয়। অশান্তিজনক বিষয়ের চিন্তা করে। সকালে নাক হতে রক্ত পড়ে। দাঁতের গোড়া হতে প্রচুর রক্ত পড়ে। চুলগুলি অকালে সাদা হয়ে যায়। পরিপাক শক্তির হ্রাস হওয়ায় দেহে রস-রক্তের অভাব হয়। স্নায়বিক কাশির সঙ্গে ঢেঁকুর উঠে মধ্যরাত্রির পর বায়ুতে পেট ফুলে উঠে। মাসিক হওয়ার পূর্বে সামান্য কোঁথ দিলেই রক্ত পড়ে।

প্রদরস্রাব রাত্রে, দিনে থাকে না। হাতে, হাতের আঙ্গুলে ও পায়ে খাল ধরে। হাতে কিছু ধরলে হাতে খাল ধলে। হাত-পা ঠান্ডা। নিদ্রাকালে শরীর শীতল ও হাত-পায়ের মাংসপেশীর নর্ত্তন। ধূমপানের পর হিক্কা। পিপাসার অভাব। বৃদ্ধ ও শিশুদের হাঁপানি। স্ত্রী-সহবাসের পরেই বৃদ্ধের হাঁপানি বৃদ্ধি। সকালে মুখ হতে দুর্গন্ধ বের হয়। প্রস্রাবে টক গন্ধ। দুধ খাওয়ার পর মুখের স্বাদ টক। কেউ নিকটে থাকলে রোগিণী মলত্যাগ করতে পারে না।

মন।—অ্যাম্ব্রার রোগী লোক-সমাজে যেতে সঙ্কোচ বোধ করে, বেশী লোকের ভিতর গেলে কাশির বৃদ্ধি হয়। স্নায়বিক দৌর্বল্যের জন্যও এটা কার্যকরী। ডাঃ অ্যালেন বলেন –যে সকল শিশু ও স্নায়ুপ্রধানা বালিকা সহজেই উত্তেজিত হয়, তাদের রোগের ক্ষেত্রে অ্যাব্রা উপযোগী। সংসার-ক্লান্ত দুর্বল বৃদ্ধ ও শীর্ণদেহ, বিষণ্ণ ব্যক্তির পক্ষেও এই ঔষধ কার্যকরী। এই ঔষধ প্রয়োগ করার পূর্বে স্নায়বিক লক্ষণ দেখে নিতে হবে।

মস্তক।—রোগীর অনবরত মাথা ঘুরে, কোনরূপ দেহ সঞ্চালন করলে বা পদচারণ কালে টলে পড়ে, সেইসঙ্গে পেটের গন্ডগোল। রোগীর যখন মাথা ঘুরে তখন সে শুয়ে থাকতে বাধ্য হয়। ক্রমাগত মথার যন্ত্রণার জন্য রোগীর মাথার চুল উঠে যায়। তুলনীয়। কোনায়াম –বৃদ্ধ বয়সের মাথাঘোরায় অধিকতর উপযোগী। শুয়ে থাকলে বা বিছানায় এপাশ-ওপাশ করলে। মাথা বামদিকে ফিরালে বা চোখ নাড়লেও মাথা ঘোরে। অ্যামন-কার্ব—সকালে বিছানা হতে উঠলেই মাথা ঘোরে। ক্যাডমিয়াম—ঘরবাড়ী সমস্তই যেন চরকার মত ঘুরছে মনে হয়। সময়ে সময়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। ককুলাস—মাথাঘোরার সঙ্গে বমনেচ্ছা বা গা-বমি-বমি, ‍ইয়া উঠতে গেলে বা চলতে গেলে মাথা ঘোরে। থেরিড়িয়ন –মাথা নাড়লে বা পাশ ফিরলেই মাথা ঘুরায়, সেইসঙ্গে গা-বমি-বমি। ফস্ফোরিক-অ্যাসিড—স্নায়বিক দুর্বলতার জন্য মাথাঘোরা। থুজা চোখ বুজলে মাথা ঘুরায়, চোখ মেললে উপশম।

নাক হতে রক্তস্রাব। সকাল বেলা নাক হতে প্রচুর রক্তস্রাব হয়ে থাকে। স্নায়বিক দৌর্বল্যগ্রস্ত রোগীদের নাক হতে রক্তস্রাবে সমধিক কার্যকরী। আঘাত লেগে রক্তস্রাবে আর্ণিকা; ব্যথা ও যন্ত্রণার অভাবে মিলিফোলিয়াম; জমাট রক্তস্রাব হলে, নাক্স-ভূমিকা; রক্তস্রাব টানিলে বেড়ে গেলে, ক্রোকাস উপযোগী। বৃদ্ধব্যক্তির বার বার রক্তস্রাব হলে, কার্বো-ভেজ ব্যবহার্য্য।

স্নায়বিক কাশিহাঁপানি। হাঁপানি, কাশির সাথে ঢেঁকুর উঠে, লোক-সমাজে গেলে হাঁপানির কাশি বেশী হয়। স্নায়বিক দুর্বলতা এবং অকাল-বৃদ্ধদের হাঁপানির টানের জন্য এটা ফলপ্রদ। জোরে কথা বললে, টান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। সাংসারিক চিন্তাক্লিষ্ট বৃদ্ধব্যক্তিদের হাঁপানি-কাশি হলে এবং স্ত্রী সহবাস করতে গেলেই হাঁপানি-কাশির বৃদ্ধি হলে, এই ঔষধ সর্বশ্রেষ্ঠ।

হুপিংকাশি। –কাশির সাথে স্বরভঙ্গ ও উদ্গার। ঘন ঘন আক্ষেপিক কাশি ও পাঁজরায় বেদনা কিন্তু গলার মধ্যে কোঁ কোঁ শব্দ হয় না। কাশিতে কোঁ কোঁ শব্দ থাকলে সিনা।

হৃদযন্ত্রের রোগ। -ভয়ানক হৃদস্পন্দন। স্নায়বিক রোগী বা রোগিণীর হৃদশূল বা “এনজাইনা – পেক্টরিস” রোগে যখন বুক ধড়ফড় করতে থাকে এবং সেইসঙ্গে বুকের ভিতর পিষে ফেলার মত বেদনা হয়। এটার হৃদরোগে রোগীর মুখ কৃশ ও চোখ কোটরাগত এবং ভ্রমণ করলে সর্বলক্ষণ বৃদ্ধি হয়।

কোষ্ঠবদ্ধতা। রোগীর পেট শক্ত বোধ। মলত্যাগের সময় কেউ রোগীর সম্মুখে থাকলে সে কিছুতেই মল-মূত্র ত্যাগ করতে পারে না। বার বার মলত্যাগের ইচ্ছা হয়, অথচ বাহ্যে মোটেই হয় না।

স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের রোগ। -প্রতিবার ঋতুস্রাবের পূর্বে জননেন্দ্রিয়ের ভিতর সূঁচফোটানর মত বেদনা ও চুলকানি। সামান্য পরিশ্রমে বা মলত্যাগের সময় কোঁথ দিলে রক্তস্রাব এবং ঋতুদ্বয়ের মধ্যে রক্তস্রাব –এই ঔষধের বিশিষ্ট লক্ষণ। গাঢ় নীল বা শ্বেত শ্লেষ্মাবৎ এবং প্রধানতঃ রাত্রিকালীন প্রদরস্রাবই এটার নির্দিষ্ট লক্ষণ। স্মৃতিকা ক্ষেত্রে কোষ্ঠবদ্ধতা লক্ষণে ঔষধুটি উপযোগী। কেউ ঘরে থাকলে আর মলত্যাগ হয় না।

স্বপ্নদোষ। —রাত্রে অসাড়ে রেতঃপাত বা স্বপ্ন দেখে রেতঃপাত, লিঙ্গমুন্ডে তয়ানক চুলকানি, চুলকাবার সময় খুব বোধ হয়। তুলনীয়।—ডায়োস্কোরিয়া – এক রাতে একাধিকবার, এমনকি ৩/৪ বার স্বপ্নদোষ হয়, পরদিন রোগী হাঁটুতে অত্যন্ত দুর্বলতা বোধ করে। ডিজিটেলিস- হৃদরোগগ্রস্ত ব্যক্তিদের সর্বপ্রকার স্বপ্নদোষেই এটা বিশেষ ফলপ্রদ। এটার উপক্ষার ডিজিটেলিন্ স্বপ্নদোষে অধিকতর উপযোগিতার সঙ্কিত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফস্ফোরিক অ্যাসিড—অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের কুফল বা স্নায়বিক দুর্বলতার জন্য স্বপ্নদোষে বিশেষ ফলপ্রদ। চায়না – অশ্লীল কল্পনার জন্য উত্তেজনা হয়ে রাতে বার বার ক্ষরণ হয়, তৎপরে রোগী অত্যন্ত দুর্বলতা বোধ করে।

হাতপায়ে ঝিঝিনে ধরা অড়তা। —রোগী রাত্রে যখন নিদ্রা যায় তখন হাত-পা অসাড় হয়ে পড়ে ও সেখানে ঝিঝিনে ধরে। হাত বহুক্ষণ পৰ্য্যন্ত শীতল হয়ে থাকাও একটি লক্ষণ। স্নায়বিক দৌর্বল্য-গ্রস্ত রোগীদের প্রায় প্রতি রাত্রে জানু ও জঙ্ঘাডিমস্থ পেশীতে সেঁটে ধরে (কুপ্রাম, ক্যাঙ্কার, নাক্স)।

জ্বর। —পূর্বাহ্নে ভয়ানক আলস্য ও নিদ্রা। প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর কম্প ও উত্তাপাবস্থার আবির্ভাব। দ্বিপ্রহর রাত্রের পর ভয়ানক ঘাম, আহারের পর উপশম।

নিদ্রাহীনতা।—বিষয়কার্য্যে অশান্তির পর ফলপ্রদ। নিদ্রাহীনতার জন্য রোগী বিছানা ছেড়ে হেঁটে বেড়ায়। হাত ও পায়ের ঝিঝিনে ও অন্যান্য লক্ষণ। তুলনীয় – আর্স-আয়োড রোগী সমস্ত রাত্রি অস্থিরতা প্রকাশ করে, নিদ্রা আদৌ হয় না। অ্যাসিন্থিয়াম্ –টাইফয়েড রোগে মস্তিষ্কে অত্যধিক রক্তসঞ্চয়ের জন্য অনিদ্রায় বিশেষ উপযোগী। ড্যানি-ইন্ডিকা – হাড়ের কামড়ানি জন্য অনিদ্রায় ব্যবহৃত হয়। ককুলাস – বিষয়সংক্রান্ত ব্যাপারে চিন্তা বা উদ্বেগের জন্য অনিদ্রা, অনেক দিন রাত্রি জাগিয়া অনিদ্রা। কফিয়া – আনন্দ বা মানসিক উত্তেজনার জন্য অনিদ্রা, নিদ্রা আদৌ হয় না, সম্পূর্ণ জাগ্রতভাবে। মর্ফিনাম – অত্যন্ত নিদ্রালু অথচ নিদ্রা হয় না, অর্দ্ধেক নিদ্রা, অর্দ্ধেক জাগ্রতভাবে। সাম্বল – দিনের বেলায় নিদ্রালুতা, কিন্তু রাতে অনিদ্রা। বিউট্রিক অ্যাসিড –অনিদ্রার একটি ভাল ঔষধ, কিন্তু রোগী ঘুমালে ভয়ানক স্বপ্ন দেখে।

সম্বন্ধতুলনীয়। প্রদর রোগে অ্যাসিড-নাই, কষ্টি ও মার্ক; হাঁপানি ও স্নায়বিক দৌর্বল্যাদিতে—আর্স, অ্যাটিয়া, ক্যাল্কে, নেট্রাম-কার্ব, ব্রাইয়ো, নাক্স; ঋতুর মধ্যবর্তী সময়ে রক্তস্রাবে – বোভিষ্টা, স্নায়বিকতার জন্য – অ্যাসাফি, কোকা ও ভালেরিয়ানা তুল্য।

বৃদ্ধি।— গান-বাজনায়; অন্য লোকের সামনে; সকালে; গরম ঘরে; উত্তাপে।

হ্রাস।— খোলা হাওয়ায় ধীরে চললে; যে পাশে যন্ত্রণা সেই পার্শ্ব চেপে শুইলে; ঠান্ডা পানীয় সেবনে।

শক্তি।–3x, ৬, ৩০, ২০০ বা তদূর্দ্ধ ক্রম

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!