অ্যামোনিয়াম মিউরিয়েটিকাম (Ammonium Muriaticum)

পরিচয়।—এটার অপর নাম নিশাদল বা অ্যামন ক্লোরাইড।

ব্যবহারস্থল।ডাঃ ক্লার্ক বলেন ডান অঙ্গের পাড়ায় এই ঔষধ অ্যামন-কার্ব অপেক্ষাও অধিক কাজ করে এবং যে সকল ব্যক্তি স্থূলকায় ও অনস অথচ যাদের হাত-পা শীর্ণ এই ঔষধ তাদের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। ডান অঙ্গের রোগে লাইকোপোডিয়াম প্রধান ঔষধ। লাইকোপোডিয়াম রোগীর নিম্নাঙ্গ ভারী, শোথগ্রস্ত এবং ঊর্দ্ধাঙ্গ শীর্ণ। ডানদিকের রোগে অন্যান্য ঔষধ – বেলেডোনা, ব্রাইয়োনিয়া, কলোসিন্থ, চেলিডোনিয়াম, নাক্স ভমিকা প্রভৃতি। (সেইরূপ বাম অঙ্গের রোগে প্রধান ঔষধ —ল্যাকেসিস। অন্যান্য ঔষধ। -অ্যাসাফিটিডা, ক্যান্সিকাম, ক্রোকাস, ইউফ্রেসিয়া, মেজেরিয়াম, ফস্ফোরাস, ষ্ট্যানাম)। অনিদ্রা; শ্বাসনলী-প্রদাহ; নিউমোনিয়া; যকৃতে রক্তসঞ্চয়; কোষ্ঠকাঠিন্য; সর্দি; কাশি; চোখের রোগ, ঋতুর সময় নানাবিধ রোগ; উদরাময়; মাঢ়ী ফুলা ইত্যাদি।

ক্রিয়াস্থল।– ডাঃ বোরিক বলেন – “সমস্ত শ্লৈষ্মিকঝিল্লী হতে প্রচুর শ্লেষ্মাস্রাব ও নাক অবরুদ্ধ হওয়া এটার বিশেষ লক্ষণ। অ্যামন-মিউর সর্দির একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। এটার সর্দিস্রাব ক্ষতকর। অত্যন্ত বিরক্তিকর সর্দি। ডাঃ ডানহাম বলেন –সায়েটিকা বাত, কটিশূলের বেদনা বসলে বৃদ্ধি ও বেড়ালে সামান্য উপশম এবং শুইলে বেদনার সম্পূর্ণ উপশম দেখিলে, অ্যামন-মিউর প্রয়োগে আশ্চর্য্য ভাবে আরোগ্য হয়ে থাকে। ডাঃ গ্যারেন্সি বলেন–জঙ্ঘাস্থির আকুঞ্চন অনুভাবে যদি উল্লিখিতরূপ হ্রাস-বৃদ্ধি থাকে তবে এটাই শ্রেষ্ঠ ঔষধ।

প্রদর্শক লক্ষণ।—শরীর বৃহৎ এবং মোটা, কিন্তু পা গুলি সরু। তরল পানির মত সর্দি, উপর ঠোঁট হেজে যায়। সন্ধ্যাকালে, বিশেষতঃ সন্ধ্যাকালে বিছানায় শুইলে পা গুলি ঠান্ডা হয়। আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে ছাল উঠে যায়। উত্তেজনা মাত্রেই মুখ লাল হয়। ঋতুকালে উদরাময় ও বমি। কোষ্ঠবদ্ধতা, মল শক্ত ও ভেঙে পড়ে। ঠোঁট দুইটি আগুনের মত জ্বালা করে। টন্সিল দপ্ দপ্ করে। সকালে মুখ টক হয়ে থাকে। কন্ডরাগুলির হ্রস্ব হওয়ার ফলে রোগী খুঁড়িয়ে হাঁটে। মলের প্রথা অংশ শক্ত, শেষের দিকটা নরম। সাধারণতঃ মলত্যাগের পূর্বে নাভির চারিদিকে বেদনা। প্রস্রাব ধীরে ধীরে বের হয়। রাত্রি দুইটার সময় পেটে অত্যন্ত যন্ত্রণা, তাতে ঘুম ভেঙে যায়। কোমরে অসহ্য যন্ত্রণার জন্য রাত্রে ঘুম ভেঙে যায়, শ্বেতপ্রদর, পরিমাণে প্রচুর, এলবুমেনের মত দেখায়, ডিমের সাদা অংশের মত দেখায়। সায়েটিকা বেদনা, বসে থাকলে বাড়ে, চলে বেড়ালে কিছু কম থাকে আর শুইলে একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ঋতুর সময় পায়ে যন্ত্রণা। ভেদবমন লক্ষণ। পায়ের ঘামে খুব দুর্গন্ধ। পায়ের গোড়ালতে ব্যথা। শোকের পরবর্ত্তী রোগসকল। (শোক এবং দুঃখ হতে রোগের উৎপত্তি–অ্যান্টিম-ক্রুড, এপিস, ক্যাঙ্কে-ফস, কষ্টিকাম, ককুলাস, হায়োসায়েমাস, ইগ্নেসিয়া, ল্যাকেসিস, ফস্ফোরিক অ্যাসিড, প্ল্যাটিনা। ভয় হতে রোগের উৎপত্তি— অ্যাকোনাইট, অরাম, জেসিমিয়াম, হায়োসায়েমাস, ইগ্নেসিয়া, ওপিয়াম, ভিরেট্রাম-অ্যাথাম। ঈর্যা দ্বেষ হতে রোগের উৎপত্তি—এপিস, হায়োসায়েমাস, ল্যাকেসিস, ষ্ট্যাফিসেগ্রিয়া। অতিরিক্ত আনন্দ বা উল্লাস হতে রোগের উৎপত্তি–কষ্টিকাম, কফিয়া, ক্রোকাস)। যক্ষ্মারোগ, খুব কাশি, কাশতে কাশতে বুকে মুখে লালা জমে। স্কন্ধাস্থি দুইটির মধ্যবর্ত্তী স্থানে (between the soulder blades ) শীতলভাব, লিভারের রোগ, বিষণ্নভাব, মল মিউকাস দ্বারা আবৃত।

মন।—রোগীর কথাবার্তা বলতে অনিচ্ছা, সে সর্বদাই সঙ্কুচিতভাবে ও বিমর্যভাবে দিন কাটায়, এত বিমর্ষ যেন কত দুঃখ-কষ্ট, অন্তরে চাপা আছে। সর্বদাই ক্রন্দন ইচ্ছা।

সর্দি-কাশি ও শ্বাসযন্ত্রের রোগ। – অত্যন্ত শুকনা কাশি, কাশির চোটে মুখে খুব লালা আসে ও স্বর ভেঙে যায়। দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে ঠান্ডা ও বুকে ভারীবোধ থাকলে, এই ঔষধে নিরাময় হবে। কখন কখনও কাশির রোগীর বুকের ভিতর বলের মত একটা জিনিষ যেন ঠেলে উঠে।

শিরঃরোগ।— ভয়ানক মাথা ঘুরে, সময় সময় এত মাথা ঘুরে যে, রোগী একপাশে পড়ে যাবার উপক্রম হয়। মস্তকের বামদিকে বিদ্ধবৎ বেদনা, মাথা নোয়ালে মাথার তালুদেশ ফেটে যাবে মনে হয়, মাথার চুল উঠে যায় এবং মরামাস জন্মে।

চোখের অসুখ। ———-দৃষ্টির সম্মুখে কুয়াশার মত পদার্থ দেখে, তার চোখের সম্মুখে কি যেন একটা উড়ছে। কখন কখনও অ্যামন-কার্বের মত চোখের সম্মুখে কাল কাল বিন্দুর মত দ্রব্যও দেখে।

স্নায়ুশূল।—এটা কটিশূলের একটি চমৎকার ঔষধ। দেহের কোন অঙ্গ কাটিয়া ফেলে দিবার পর (amputation) সেই স্থানে স্নায়বিক শূল হলে এটা বিশেষ উপযোগী। শূলে ঐ স্থানের পেশীসমূহ কুঞ্চিত হয়ে যায় এবং আক্রান্ত স্থানে টেনে ধরার মত যন্ত্রণা হয়, ‘সায়েটিক-শূল’ ব্যথা বসলে বৃদ্ধি, চললে সামান্য উপশম ও শুয়ে থাকলে বৃদ্ধি – কেলি-হাইড্রো। শুইলে উপশম কিন্তু নড়লে এবং বসলে বৃদ্ধি, এবং ডানদিকের সায়েটিকা – ডায়েস্কোরিয়া। কোমর অসাড়, কোমর হতে পায়ের গোড়ালি পর্য্যন্ত কনকনে বেদনা, ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা, নড়াচড়ায় বাড়ে, গরমে এবং জোর চাপে উপশম।

কোষ্ঠকাঠিন্য। -অ্যামন-মিউর কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি চমৎকার ঔষধ। মল ভয়ানক শক্ত এবং বের হওয়ার সময় গুঁড়া হয়ে বের হয়। শক্ত মল আমজড়িত হয়ে নিঃসৃত হয়। সদৃশ। —ম্যাগ- মিউর—এটার মলও কঠিন, গুটলে ও পরিমাণে অল্প। মলত্যাগের ভয়ানক কষ্টানুভব। নেট্রাম- মিউর–মল অত্যন্ত কঠিন। মলদ্বার সঙ্কুচিত ও বিদারিত হয়ে যায়। ওপিয়াম—মলদ্বারের পক্ষাঘাতের ফলে গুটলে গুটলে বলের মত মল বের হয়। প্লাম্বাম—এটার কোষ্ঠকাঠিন্যে মল বৃহৎ, কঠিন ও খন্ড খন্ড হয়ে বের হয়। ক্যাক্টেরিয়া— মল শক্ত, গুটলে, মলের চতুর্দিকে আম জড়ান। প্ল্যাটিনাম – মল খুব শক্ত, গাঁট গাঁট ও বড় মলের চারিদিকে আম জড়ান থাকে। গ্র্যাফাইটিস- ভয়ানক কোষ্ঠকাঠিন্য, মল কিছুতেই বের হতে চায় না। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য। সিপিয়া- গর্ভবর্তীদের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ফলপ্রদ। এটার মল গুটলে, অপ্রচুর; অতি কষ্টে বের হয়। সাইলিসিয়া—প্রতিবার ঋতুর পূর্বে ও সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়; এটার মল অতি কষ্টে বের হয়।

মচকান।–বহুদিন পূর্বের মচ্‌কান ব্যথায় এই ঔষধ কার্যকরী। চমকানো বা আঘাতজনিত বা থেলানো বেদনায় (bruised pains) আর্ণিকাও ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এটাও বহুদিনের পুরাতন ব্যাধিতেও উপযোগী। থেলানো বা মচকানো বেদনায় নিম্নশক্তির বেলিস্পিরেনিস্ অধিকতর উপযোগী বলে অনেক অভিজ্ঞ চিকিৎসক মনে করেন। বাতগ্রস্ত রোগীর মচকানো বেদনায় অথবা ঐ বেদনা যখন পুরাতন অবস্থায় বাতরোগের সঙ্গে যোগ দেয় তখন লক্ষণানুসারে রাস- টক্স প্রয়োগের প্রয়োজন হয়ে থাকে।

অর্শ। স্ত্রীলোকদের শ্বেত-প্রদরস্রাব বন্ধ হয়ে অর্শ হলে এবং সেই অর্শে জ্বালা ও টাটানি থাকলে এটা উপযোগী। রূপান্তরিত বা স্থানান্তরিত ব্যাধি— শ্বেতপ্রদর স্রাব বন্ধ হয়ে অৰ্শ প্ৰকাশ পেলে যেমন অ্যামন মিউর ব্যবহৃত হয়, সেইরূপ শ্বেতপ্রদর বন্ধ হয়ে যক্ষ্মারোগে—ষ্ট্যানাম; ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেঁটে বাতে স্যাবাইনা, জিঙ্কাম; ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে শোথরোগে—কেলি- কার্ব; ঐরূপভাবে চোখপ্রদাহে — পালসেটিলা; ঐরূপভাবে হাঁপানি – পালসেটিলা, স্পঞ্জিয়া; ঘাম বন্ধ হয়ে শোথে—ডালকামারা; পায়ের তলার ঘাম বন্ধ হয়ে শ্বেতপ্রদর বা যক্ষ্মা অথবা কাণে পুঁজ – সাইনিসিয়া। শ্বেতপ্রদর অথবা কাণের পুঁজ বন্ধ হয়ে উন্মাদ হলে-লক্ষণানুসারে কষ্টিকাম অথবা কিউপ্রাম-মেট ব্যবহৃত হবে।

স্ত্রীরোগ। — ঋতুর সময় ভেদ ও বমন অ্যামোনিয়ার নির্ণায়ক লক্ষণ। অ্যামন-মিউরে ঋতুস্রাব দিনের বেলায় মোটেই থাকে না, কিন্তু রাত্রিকালে অত্যধিক স্রাব হয়। ক্রিয়োজোট – কেবলমাত্র শয়ন করলে স্রাব হয়, কিন্তু উপবেশন বা পাদচারণকালে স্রাব কমে যায়। ম্যাগ-কার্ব—রাত্রিকালে বা শয়ন করলে ঋতুস্রাব বেশী হয়, আর চলাফেরা করলে স্রাব বন্ধ হয় (লিলিয়ামের বিপরীত)। বোভিষ্টা—স্রাব রাতে বেশী হয়, দিনের বেলা রক্তস্রাবের চিহ্নও থাকে না।

প্রদর। ডিমের সাদা অংশের মত প্রদরস্রাব (অ্যালুমিনা, বোরাক্স, ক্যাল্কে-ফস), স্রাবের পূর্বে নাভির চতুর্দিকে খামচান ও মোচড়ানো বেদনা। প্রত্যেকবার প্রস্রাবের পর ডিমের সাদা ভাগের মত আঠা, চটচটে ও ফ্যাকাসে প্রদরস্রাব হয়। প্রস্রাবের পরই শ্বেত প্রদরস্রাব এটার নির্দিষ্ট লক্ষণ।

হিক্কা। —এটা অত্যন্ত ক্লেশদায়ক। হিক্কার সময় বুকে অত্যধিক বেদনা হয়। কষ্টকর হিক্কা, যেখানে বিশেষ কোন কারণ পাওয়া না, অথবা অতিরিক্ত আহারের পরে হিক্কা হয়, কবিরাজী বা অ্যালোপ্যাথিক ঔষধের পরে হিক্কা নয়, পেট ফাঁপে, চোঁয়া ঢেঁকুর উঠে— সেখানে নাক্স ভমিকা বিশেষ ফলপ্রসূ হতে পারে। পানাহারের পরে এবং ধূমপানে বৃদ্ধিযুক্ত হিক্কায় – ইগ্নেসিয়া। উচ্চ শব্দবিশিষ্ট হিক্কায় –সিকিউটা-ভিরোসা। হিষ্টিরিয়াগ্রস্তা রোগীদের দুর্দম্য হিক্কায় জিঙ্ক- ভ্যালেরিয়ানা উপযোগী।

ম্যালেরিয়া-জ্বর। —প্রতি সপ্তম দিনে জ্বর, খুব শীত করে জ্বর হয় এবং ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়। রোগীর ঘুম ভেঙে যাবার পরই শীত শীত বোধ, শীতের জন্য গায়ের কাপড় খুলতে পারে না। সাতদিন অন্তর জ্বরে লক্ষণানুসারে চায়না, লাইকোপোডিয়াম, মেরিয়ান্থিস, রাস-টক্স এবং সাল্ফারও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

চর্মরোগ। সন্ধ্যাবেলা সর্বশরীরে চুলকানি আরম্ভ হয়।

সম্বন্ধ। —শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর প্রদাহে — অ্যান্টিম-ক্রুড তুল্য। পেটের নানাবিধ উপসর্গে—অ্যালোজ তুল্য। মাংসপেশীর সঙ্কোচনে – কষ্টিকাম তুল্য। মলক্ষেত্রে — ম্যাগ-মিউর তুল্য। দোষম।—তিক্ত- বাদাম; কফিয়া; নাক্স-ভূমিকা। বৃদ্ধি। সকালে (মাথা ও বুক)। অপরাহ্নে (পেটে)। সন্ধ্যাকালে (চর্ম ও জ্বর)। সন্ধ্যা ৬টায় (কাশি)। রাত্রি ২টা (কলিক)। হ্রাস।—মুক্ত বায়ুতে; ঘর্ষণে (গোড়ালীর ব্যথা); ঠান্ডা পানিতে ধুইলে (মুখের উদ্ভেদ)।

শক্তি।–৩, ৬, ৩০, ২০০ বা তদূর্ধ্ব শক্তি

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!