এইল্যান্থাস্ (Ailanthus )

ব্যবহারস্থল। কঠিন রোগের সাংঘাতিক অবস্থায় যখন জীবনীশক্তি নিস্তেজ হয়ে নাড়ী ক্ষীণ অথচ অত্যন্ত দ্রুত ও গাত্রত্বকে বেগুনে রঙের চাপড়া চাপড়া উদ্ভেদ দেখা দেয়। টাইফয়েড বা সূতিকা-জ্বরে এরূপ অবস্থায় এই ঔষধটি বিশেষ উপকারী। উদ্ভেদ চাপা পড়ে এরূপ অবস্থা হলেও কাজে আসে। ইউরোপ ও আমেরিকাখন্ডে এই ঔষধ লোহিত জ্বরে (স্কারলেট ফিভার) খুব ব্যবহৃত হয়।

প্রদর্শক লক্ষণ।— সাংঘাতিক রোগ, সেইসঙ্গে গায়ের উপর নীল বা কাল চাপড়া চাপড়া উদ্ভেদ। অত্যন্ত দুর্বলতা, রোগের প্রথম হতেই দুর্বলতা। মুখমন্ডল মেহগনি কাঠের মত কাল। কানের পাশে গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিগুলি ফুলে, ছোঁয়া যায় না। আলোক সহ্য হয় না। অজ্ঞান অবস্থা, প্রলাপ, অনুভব শক্তির লোপ। চোখ জলভরা। চোখ লাল, রক্ত জমা (conjested)। জাগালে চক্ষে ভয়ের চিহ্ন, দেখিলে মনে হয় সে ভয় পেয়েছে। নাক হতে পাতলা পানির মত (ক্ষতকর স্রাব) এবং রক্তাক্ত স্রাব। সেটাতে ঠোটদ্বয় হেজে যায়। গলার ভিতর ফুলা, নীল রং, ঘাড় ফুলা, সবুজ পুঁজের মত পদার্থ গলা হতে উঠে। ডিথিরিয়া ও সেইসঙ্গে রোগী খুব দুর্বল। পাতলা পানির মত দাস্ত। প্রস্রাব করতে গেলে মলত্যাগ করে ফেলে। উদরাময় ও আমাশয়, সেইসঙ্গে খুব দুর্বলতা। মুখ, চোখ, কান, ঠোঁট প্রভৃতিতে ঘা ও এই সকল রন্ধ্রপথ হতে রক্ত পড়ে। গলার ভিতর ও বাহিরে অত্যন্ত ফুলা। দাঁতে সর্ভিস। কিছু গিলবার সময় গলায় ব্যথা ও সেই ব্যথা কান পর্য্যন্ত যায়। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ে। রোগী অতিশয় তন্দ্রালু ও সম্পূর্ণ স্থির। (বিপরীত—এরাম-ট্রাই)। ফোস্কা ও তার মধ্যে কাল পদার্থ। সেরিব্রো-স্পাইন্যাল-মেনিঞ্জাইটিস, ডিথিরিয়া, প্লেগ, মাম্পস, সূতিকা-জ্বর, বাত-জ্বর, স্কার্নেটিনা, প্যারা-টাইফয়েড ও টাইফাস জ্বর যখন সাংঘাতিক অবস্থায় উপনীত হয়। পিপাসা, ঠান্ডা পানি চায়। বায়ুতে পেট ফেঁপে উঠে।

ডিপথিরিয়া।—অত্যন্ত দুর্বলতা, রোগের প্রথম হতেই দুর্বলতা, গলা ও ঘাড় ফুলে। শরীরের রঙ বেগুনি। কানের পাশের গ্রন্থি ফুলে। নাক হতে রক্তাক্ত স্রাব। মুখ নীল, গলার ভিতর নীল বা বেগুনি। সাংঘাতিক ডিপথিরিয়া। অজ্ঞানভাব। রোগী স্থির হয়ে পড়ে থাকে। মুখ হতে যে স্রাব বের হয় সেটা দুর্গন্ধযুক্ত ও ক্ষতকর, রোগীর স্বর বসে যায়, গলার মধ্যে সাঁই সাঁই করে, দাঁতে সাদা ময়লা পড়ে।

সদৃশ ঔষধ।— ন্যাজা—শ্বাসপ্রশ্বাসে অত্যন্ত কষ্ট, হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, নাড়ী সবিরাম এবং সূতার মত, পরবর্ত্তী হৎপিন্ডের পক্ষাঘাতেও এটা বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মার্ক-আয়োডাইড—গলায় বেদনা এবং ঢোক গিলতে কষ্ট, পানাহারে বৃদ্ধি, শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট। মার্ক-সায়ানেটাস – হঠাৎ আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই গুরুতর আকার ধারণ করে এটার অন্যতম প্রধান লক্ষণ। এটা অবসন্নতা এবং হিমাঙ্গাবস্থা, সবিরাম দ্রুত নাড়ী, যেখানে গলায় স্ফীতি বেশী, সেইখানে এটা উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

শুষ্ক যন্ত্রণাদায়ক কাশি। -কাশির ধমকে রোগীর মুখ কাল হয়ে যায় (রোগীর মুখ লাল হলে বেলেডোনা)। সর্দি-জ্বরেও এটা ব্যবহৃত হয়, সর্দি-জ্বরের সাথে নাক দিয়ে প্রচুর পরিমাণে রক্তমিশ্রিত ক্ষতকর পাতলা শ্লেষ্মা বের হয় (এরাম-ট্রাইফিলাম)।

টাইফয়েড।— সাংঘাতিক অবস্থা, অসীম দুর্বলতা। গায়ে বেগুনি রঙের চাপড়া চাপড়া উদ্ভেদ। বায়ুতে পেট ভরা। রোগী অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকে। মৃদু প্রলাপ, বিড় বিড় করে বকে। চোখ ঘোলা হয়ে যায়। নাক দিয়ে ক্ষতকর রক্তাক্ত স্রাব বের হয় এবং সেটাতে ক্ষত দেখা যায়। রোগী সম্পূর্ণ স্থির। এরাম-ট্রাইফিলাম ঔষধটি এখানে অতুলনীয়। এরামের রোগী অজ্ঞানতার মধ্যেও অতি অস্থির, যেন তার সর্বাঙ্গ চুলকাইতেছে। এরামের মুখমধ্য বাচ্চা কাকের মুখের অভ্যন্তরের লাল, কিন্তু এইল্যান্থাসের মুখমধ্য বেগুনি বর্ণ। উভয় ঔষধেই নাক দিয়ে শতকর স্রাব বের হয়, ঠোট হেজে যায় এবং মুখাভ্যন্তরে ক্ষত দেখা দেয়।

হাম, বসন্ত প্রভৃতি উদ্ভেদ চাপা পড়ে সাংঘাতিক অবস্থা। রোগী অজ্ঞান, স্থির, সর্বাঙ্গে কাল বা বেগুনি বর্ণ বা মেটে রঙের দাগ। উদ্ভেদগুলি বসে গিয়া ঐরূপ চাপড়া চাপড়া চিহ্ন। পেট ফাঁপা; নাক দিয়ে ক্ষতকর স্রাব। গলা ও মুখের অভ্যন্তরে ক্ষত। নাসাস্রাব লেগে ঠোটদ্বয়ে ক্ষত দেখা দেয়। উদ্ভেদ হঠাৎ বসে গিয়া মস্তিষ্ক অথবা ফুসফুসের উপসর্গ প্রকাশ পেলে, অ্যান্টিম-টার্ট, এপিস, ব্রাইয়োনিয়া, অ্যাসেটিক অ্যাসিড, কিউগ্রাম মেট, জেলসিয়াম, হেলিবোরাস, ওপিয়াম, জিঙ্কাম প্রভৃতি ব্যবহৃত।

প্লেগ।— দুর্বলতা, রক্তস্রাব, নীলাভ চর্ম, মাথা গরম, চোখ লাল, সাংঘাতিক অবস্থা। মাম্পস—দুর্বলতা, অক্রান্ত স্থান বেগুনি রঙবিশিষ্ট। স্পর্শকাতরতা।

তুলনীয়।—এপিস—ফুলা বেশী, স্পর্শদ্বেষ, হাত ছোয়ানো যায় না, হলবিধার মত বেদনা,

উষ্ণতায় বৃদ্ধি এবং ঠান্ডায় উপশম। ল্যাকেসিস প্রধানতঃ বামপার্শ্বের রোগে উপযোগী, এটার স্ফীতি লাল ও বেগুনে রঙ এবং জ্বালা ও স্পর্শদ্বেষ; উত্তাপ সহ্য হয় না। মার্ক-সল – প্রধান ঔষধ। অ্যাকোনাইট, বেলেডোনা –প্রাদাহিক লক্ষণ দূরীভূত হলে ব্যবহৃত হয়, আক্রান্ত স্থান ফুলে মোটা হয়, জিহবা সরস, প্রচুর পরিমাণ লালাস্রাব অথচ পিপাসা, জিহবায় দাঁতের দাগ পড়ে। মার্ক- বিন-আয়োডাইড ও মার্ক-প্রোটো-আয়োডাইড যথাক্রমে বাম ও ডানদিকের রোগে উপযোগী। ফাইটোলাক্কা –গলার ভিতরে জ্বালা, মনে হয় যেন জ্বলন্ত অঙ্গার রয়েছে। কোন কিছু গিললে কানের মধ্যে চিড়িক মারে।

বাত।—শরীরের নানা স্থানে নীল রঙ। তন্দ্রালু। আচ্ছন্ন ভাব।

বৃদ্ধি।—সকালে, বসলে (বমি)।

হ্রাস।—ডানদিকে শুইলে।

শক্তি–৬, ৩০।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!