ঈস্কিউলাস-হিপোক্যাষ্টেনাম (Aesculus Hippocastanum)

পরিচয়।—এটার অপর নাম হর্স-চেষ্টনা বা হিপোক্যাষ্টেনাম-ভাগেয়ার।

ব্যবহারস্থল।—এটা অর্শরোগের একটি মহৌষধ। ঈস্কিউলাস যকৃতের শিরাগুলির উপর ক্রিয়া করে ও যকৃতে রক্তসঞ্চয় করে এবং ঐ স্থান হতে স্থূলান্ত্র, বৃহদন্ত্র ও গুহ্যদ্বারে এটার গৌণক্রিয়া প্রকাশ পায়। স্রাবহীন অর্শরোগেই এটা বেশী উপযোগী।

প্রদর্শক লক্ষণ।—কোমরে ব্যথা, চলবার সময় বাড়ে, সামনের দিকে ঝুঁকলে বাড়ে, সকালে বাড়ে, নড়ন-চড়নে বাড়ে। কোমরে ব্যথা সর্বদাই থাকে। চলে বেড়ান একরকম অসম্ভব। রেষ্টাম বা মলদ্বার অত্যন্ত শুষ্ক, মলদ্বারে উত্তাপ, চুলকানি, মনে হয় মলদ্বারের মধ্যে ছোট ছোট কাঠি ভরা আছে। মলদ্বারের মুখে টাটানি, জ্বালা এবং সেইসঙ্গে মনে হয় এটা ঝুলে পড়েছে। কোষ্ঠবদ্ধতা, শক্ত শুষ্ক মল, সহজে বের হয় না। বড় শক্ত মল কষ্টে বের হওয়ার পর কোমরে ব্যথা। সর্বদাই মনে হয় বাহ্যে হলে ভাল হয়। কদাচিৎ পুরাতন উদরাময়, সেই সঙ্গে কোমরে ব্যথা অথবা অর্শ। অনেকগুলি বড় বড় অর্শ-বলি মলদ্বারকে যেন বদ্ধ করে দেয়। সামান্য রক্তস্রাব হয় অথবা আদৌ রক্তস্রাব হয় না। দাঁড়াতে পারে না বা শুইতে পারে না, হাঁটু গেড়ে বসলে উপশম। ৪০/৪৫ বৎসর বয়স্কা স্ত্রীলোকদের অর্শ। গা, হাত ও পায়ে বেদনা, অর্শ হতে রক্ত বের হলে ভাল থাকে। প্রাচীন গলক্ষত ও সেইসঙ্গে অর্শরোগ। অশজনিত কলিক বেদনা। প্রতিবার মলত্যাগের সময় ও প্রস্রাব করার সময় শুক্রপাত। গরম ঘাম। রোগী খিট্‌খিটে ও বিষণ্ন। গলা গরুম, শুষ্ক, টাটান, কিছু গিলবার সময় গলা হতে সূতার মত লম্বা শ্লেষ্মা বের হয়, তা মিষ্ট ও চটচটে। লিভারের স্থানে টাটানি ও ভারীবোধ। লিভারের রোগজনিত কাশি। বুকে হৃপিন্ডের চারিপাশে যন্ত্রণা, সেইসঙ্গে অর্ণ। বুকে উত্তাপ বোধ। যখন নাক্স এবং সাল্ফার খেয়ে অর্শ অনেকটা ভাল অবস্থায় আসে, কিন্তু একেবারে সারে না। যখন কলিসোনিয়ায় অর্শে উপকার হয়েছে, কিন্তু সারছে না। তলপেটের খুব ভিতর দিকে দপদপ করে (throbbing deepin abdome)। গর্ভাবস্থায় কোমরে ব্যথা, প্রলাপ ও শ্বেতপ্রদর। জরায়ু বেঁকে যায় অথবা ঘুরে যায়, শক্ত হয়, দপদপ্ করে ও ফুলে। মুখের স্বাদ তেতো, মিষ্ট বা তামাটে, সেইসঙ্গে মুখে লালা। মাথাধরা, সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা ও অর্শ।

অশ্বরোগ। —যন্ত্রণাযুক্ত অর্শরোগে, বিশেষতঃ ঐ যন্ত্রণা যদি কোমরেই বেশী হয়, তা হলে সর্বপ্রথম ঈঙ্কিউলাসের কথাই আমাদের মনে পড়ে। অর্শরোগী মলদ্বারে এবং মলদ্বারের চতুর্দিকে ভারবোধ করে, মলদ্বার ও অর্শবলি শুষ্ক (অ্যাসিড-সাম্ফ – মলদ্বার সদাই ভিজা)। মলদ্বারে যেন ছোট ছোট শলাকা ফুটে আছে এরূপ অনুভব। মলদ্বারে টাটান ব্যথা, চুলকানি ও জ্বালা। রোগীর মলবেগ পায় কিন্তু হয় না, মনে হয় যেন তার মলদ্বারটি বন্ধ, এইজন্য মল আটকিয়ে আছে। মলত্যাগের পর মলান্ত্র বের হয়ে পড়ে। ইস্কিউলাসের রোগীর অনেক ক্ষেত্রেই রক্তস্রাবী অর্শ হয় না, যদি কখনও হয়, তবে সেটা রোগের পুরাতন অবস্থায়। সদৃশ ঔষধ। -নাক্স ভমিকা –অর্শরোগে নাক্সের চুলকানি এত বেশী যে, রোগী পাগলের মত অস্থির হয়ে যায়। মলদ্বারে ঠান্ডা পানির ঝাপ্টা দেয়। সেইসঙ্গে রোগীর ঘন ঘন মলবেগ পায় অথচ মলত্যাগ করে না। নাক্সের অর্শ হতে অনেক ক্ষেত্রেই রক্তপাত হয়, ইস্কিউলাসে রক্তস্রাব হয় না। নাক্সের পর সাম্ফার প্রয়োগ করতে হয়। কলিসোনিয়া –কোষ্ঠবদ্ধতাযুক্ত অর্শরোগের একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। কলিন্সোনিয়ায় ও ইঙ্কিউলাস উভয় রোগীই মনে করে গুহ্যদ্বারে ছোট ছোট কাঠি রয়েছে। পার্থক্য –কলিন্সোনিয়ার অর্শরোগে প্রচুর রক্তস্রাব হয়, আর ইস্কিউলাসে সাধারণতঃ রক্তস্রাব হয় না। ব্যাটাহিয়া—সরলান্ত্রের উপরেই এটার বিশেষ ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। নরম অথবা শক্ত সকল প্রকার মলত্যাগের পর অনেকক্ষণ (২-৩ ঘণ্টা) পর্য্যন্ত মলদ্বারে জ্বালা ও বেদনা থাকে। রোগী মনে করে যেন গুহ্যদ্বারে কতকগুলি ছোট ছোট কাঁচখন্ড রয়েছে। অ্যালো—মলত্যাগের পর আঙ্গুরের থোকার মত এক থোকা অর্শের বলি ঝুলে পড়ে। অর্শস্থানে ভয়ানক চুলকায় ও জ্বালা করে, ঠান্ডা পানি লাগালে জ্বালা একটু কম হয়। অ্যাসিড-মিউর—অর্শের বলি আঙ্গুরের থোকার মত ঝুলে পড়ে, জ্বালাও থাকে এবং গরম পানিতে উপশম হয়।

পক্ষাঘাত। —পক্ষাঘাতের ক্ষেত্রেও ইস্কিউলাস উপযোগী। এটার পক্ষাঘাতের রোগীর হাত-পা ও মেরুদন্ড অসাড় হয়ে পড়ে, হাত-পা কাঁপে, কোন জিনিষ উঠাতে গেলে পড়ে যায়, রাত্রে ঘুমের ভিতর ভয় পায় এবং নানা প্রকার ভীতিপূর্ণ স্বপ্ন দেখে।

স্ত্রীরোগ।— জরায়ু-চ্যুতি সহ প্রদররোগ, সেইসঙ্গে কোমরের হাড়ের অসাড়তা থাকলে এটা উপযোগী। জরায়ুগ্রীবা ফুলে, ব্যথা অনুভব করে, জরায়ুটি বেঁকে বা শক্ত হয়ে যায় এবং গুহ্যদ্বার ও জননেন্দ্রিয় মধ্যবর্তী প্রদেশে দপদপ্‌ করে। এটার প্রদরস্রাব গাঢ় পীতবর্ণ ও চটচটে, ঐ স্রাব যেখানে লাগে হেজে যায়। ঋতুর পর স্রাবটি বাড়ে।

ফ্যারিঞ্জাইটিস। পুরাতন ক্ষেত্র। গলায় ক্ষত, কাশি, গলার ভিতর শুষ্ক ও শক্তভাব, জ্বালা এবং দম আটকিয়ে যাবার ভাব, সকালের কাশিতে গলা ধরে যাওয়া প্রভৃতি পরিচায়ক লক্ষণ। যকৃতের রক্তাধিক্য লক্ষণ থাকলে এটা উৎকৃষ্ট ঔষধ।

সম্বন্ধ।—অর্শরোগে অ্যালোজ, কলিঙ্গোনিয়া, ইগ্লেসিয়া, অ্যাসিড-মিউর, নাক্স-ভগ্ন, সাম্ফার সমগুণ। গলরোগে কেলি-বাই ও লাইকো-সদৃশ।

বৃদ্ধি।—–—-ঠান্ডা বাতাসে, পানিতে ধুইলে, শীতকালে, চললে, নড়াচড়ায় ও বিকাল ৪টায়।

হ্রাস— গ্রীষ্মে, অর্ণের স্রাব হলে।

শক্তি।–মূল আরক হতে ৬, ৩০. ২০০ ও তদূর্দ্ধ শক্তি।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!