অ্যাসিড-অক্সালিক (Acid Oxalic)

পরিচয়।—করাতের গুঁড়া হতে বিশেষ রাসায়নিক প্রক্রিয়া দ্বারা প্রস্তুত হয়।

ব্যবহারস্থল। –বেদনা নিবারক ঔষধ। হৃৎশূল; শিশু কলেরা; আক্ষেপ: বিছানায় প্রস্রাব করা; চোখ-রোগ; হার্ণিয়া; অজীর্ণ; মস্তিষ্ক-প্রদাহ; মেরুমজ্জা-প্রদাহ; নাকের রোগ; ধনুষ্টঙ্কার; ক্ষয়কাশি; স্বরভঙ্গাদি রোগে কার্যকারী।

ক্রিয়াস্থল। —এই ঔষধ মেরুদন্ডের কার্যকরী শক্তি নষ্ট করে রোগীকে অচল করে দেয়। পিঠে ও কোমরে অত্যধিক বেদনা। বেদনা স্থানে স্থানে অতি অল্প পরিসর (১ ইঞ্চি) সীমাবদ্ধ স্থানে তীব্র বেদনা হয় (ইগ্নে, কেলি-বাই)। সেটা ঘন ঘন আসে ও ছেড়ে যায়। দেহ সঞ্চালনে ও রোগের কথা চিন্তা করলেই রোগের বৃদ্ধি হয় (ব্যারাইটা-কার্ব, ক্যাল্কে-ফস, কষ্টি, হেলোনি, মেডো, পেট্রো)।

প্রদর্শক লক্ষণ। শরীরের বাঁদিকে রোগ। বাঁদিকের বাত। বাঁদিকের পক্ষাঘাত। বাঁ ফুসফুসের নিম্ন অংশ ক্ষুদ্র সীমাবদ্ধ তীব্র বেদনা। থাইসিস, প্লুরিসি, নিউমোনিয়া প্রভৃতি যে কোন রোগে এই ঔষধ কাজ করবে।

তুলনীয়। — বামদিকের রোগে ল্যাকেসিস যেরূপ সর্বাপেক্ষা প্রধান ঔষধ সেইরূপ ডানদিকের রোগে লাইকোপোডিয়াম। বাঁদিকের রোগে অন্যান্য ঔষধ এসাফিটিডা, আর্জেন্টাম-নাইট্রিকাম, ক্রোকাস, মেজেরিয়াম, ফসফরাস, সাইলিসিয়া, ষ্ট্যামো। তীব্র বেদনা মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়, ঘন ঘন আসে ও যায়। পা অসাড়, দুর্বল ও ঠান্ডা। খোলা বাতাসে চললে গলায় সুড়সুড় করে। রাত্রে ভেতো বা ঢেঁকুর উঠে। কফি খেলে উদরাময় হয়। Spermatic cord-এ অত্যন্ত যন্ত্রণা। পেটের যন্ত্রণায় ভোর তিনটায় ঘুম ভাঙ্গে।

মন:-অক্সালিক অ্যাসিডের রোগী বড় চট্‌পটে, কোন বিষয় মনে হইবামাত্র সেটা কার্য্যে পরিণত করে, রোগ সম্বন্ধে চিন্তা করলেই রোগের বৃদ্ধি হয়। এই অস্বাভাবিক লক্ষণ আরও কয়েকটি ঔষধে পাওয়া যায় এদের মধ্যে ক্যাক্টেরিয়া-ফস, জেলসিয়াম, হেলোনিয়াম, মেডোরিনাম প্রধান।

হৃৎপিন্ডের রোগ।—হৃদৃশূল, হৃদপিন্ডে ও বামদিকে ফুসফুসে তীক্ষ্ণধার অস্ত্রাঘাতের মত বেদনা, বুক ধড়ফড় করে ও শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট। রোগের কথা ভাবিলেই রোগলক্ষণের বৃদ্ধি – প্রদর্শক লক্ষণ।

শিরঃরোগ। জানালা দিয়ে মুখ বের করে বাইরে দেখতে গেলে খুব মাথা ঘুরে; শয়ন করলে মাথাটি পানিতে ভাসছে এরূপ অনুমিত হয়।

কলেরা। ঘোলা পানির মত তরল ভেদ বা রক্ত ও সাদা আমমিশ্রিত ভেদ। কখনও বা ডাবের শাঁসের মত সাদা সাদা আম বের হয়। মলত্যাগের পূর্বে ও সময়ে নাভির চারিদিকে মোচড়ান ব্যথা। মলদ্বারে তীব্র বেদনা, ঐ বেদনা মাথা পর্যন্ত প্রসারিত। মলত্যাগের পর গা-বমি-বমি আরম্ভ হয়, অথচ বমি প্রায়ই হয় না। রোগীর পেটে এত অধিক বেদনা হয় যে, পেটে হাত ছোঁয়াতে দেয় না। স্বর বসে যায়, নিঃশ্বাসে কষ্ট ও হৃৎপিন্ডে বেদনা দেখা যায়।

অম্লশূল বেদনা। -আহারের দুই ঘণ্টা পরে বেদনা। পেট ফুলে উঠে, পেটে বায়ু জমে, উদরের ঊর্ধ্ব অংশে বেদনা, মুখ দিয়ে লালা ঝরে, জ্বালাসহ টক বা তিক্ত বমন হয়।

তুলনীয় :- এবিস্-নাইগ্রা – আহারের পরেই পেটে একপ্রকার যন্ত্রণাদায়ক বেদনা উপস্থিত হয়—বিশেষতঃ যদি পেট ভরে খাওয়া যায়, বেদনা পাকস্থলীর মুখে (Cardiac end of the stomach) অনুভূত হয়, মনে হয় যেন ঐ স্থানে একটা শক্ত সিদ্ধ ডিম বা গোল আলুর মত পদার্থ আটকিয়ে আছে। অ্যানাকার্ডিয়াম-ওরিয়েন্ট—এই প্রকার শক্ত ডেলার মত অনুভূতি কিন্তু এটার পাকস্থলী সংক্রান্ত বেদনা খালিপেটে বাড়ে এবং কিছু খেলে কমে। পেট্রোলিয়াম – অম্লশূল বেদনা খালি পেটে বাড়ে এবং কিছু খেলে কমে; বেদনার সঙ্গে অনেক সময়ে বমনেচ্ছা থাকে। চেলিডোনিয়ামেও এই প্রকারের লক্ষণ আছে, কিন্তু অন্যান্য লক্ষণ দেখে এদের পার্থক্য নির্ণয় করতে হয়, নাক্স- ভূমিকা—এটার পাকস্থলী সংক্রান্ত বেদনা আহারের দুই-তিন ঘণ্টা পরে যখন পরিপাক হতে থাকে তখনই উপস্থিত হয়।

মেরুদন্ডের নিউরালজিক বেদনা। –রোগীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়বার শক্তি লোপ পায়। বিশেষভাবে বামদিক আক্রান্ত হয়। মেরুদন্ড হতে বেদনা হাতে-পায়ে চালিত হয়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষীণ ও অসাড় হয়ে পড়ে। মেনিঞ্জাইটিস রোগের পর পা দুখানি আড়ষ্ট এবং ক্রিয়াহীন হলে এই ঔষধ উপযোগী।

বৃদ্ধি।—স্পর্শে; চিনি, কফি ও মদ খেলে; চলাফেরায়; রোগের কথা চিন্তা করলে; রাত্রি ৩টায়।

হ্রাস। খেলে (পেট-বেদনা); বিশ্রামে (বাঁদিকের ফুসফুসে যন্ত্রণা)।

শক্তি।–৩, ৬, ৩০ ও ২০০।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!