অ্যাব্রোটেনাম (Abrotanum)

পরিচয়।—এটা দক্ষিণ ইউরোপজাত লতাবিশেষ।

ব্যবহারস্থল। – শিশুদের শীর্ণতা বা “গুঁয়ে পাওয়া” এবং রোগান্তরপ্রাপ্তি বা মেটাষ্টেসিস রোগে ব্যবহৃত হয়।

প্রদর্শক লক্ষণ।— শরীরের শীর্ণতা, বিশেষতঃ পা দুইটির শীর্ণতা। অতি ক্ষুধা। উদরাময় বন্ধ হলে বাতরোগ দেখা দেয় (মেটাষ্টেসিস্)। বাতরোগ হ্রাস পেলে অর্শরোগ বাড়ে।

অ্যাব্রোটেনামের মত পৰ্যায়ক্রমে উপস্থিত হয়—বাত এবং আমাশয় বা উদরাময়-এন্টিম-ক্রড, সিমিসিফুগা, কেলি-বাইক্রম। চর্মরোগ চাপা পড়ে উদরাময় – মেজেরিয়াম, সালফার। চর্মরোগ চাপা পড়ে হাঁপানি – এপিস, আর্সেনিক, কার্বো-ভেজ। বালকদের নাক হতে রক্ত পড়ে। বালকদের হাইড্রোসিল। শরীরের চুল উঠে যায়। উদরাময়ের পর শুষ্ক কাশি। শিশুর নাতি হতে রস ঝরে। মলে গোটা গোটা খাদ্যদ্রব্য থাকে। ইনফ্লুয়েঞ্জার পরবর্তী দুর্বলতা। বাতরোগ অন্যস্থান হতে সরে হৃদযন্ত্র আক্রমণ করে। রোগী সাধারণতঃ উষ্ণতাই পছন্দ করে।

প্রকৃতি ও গঠন। অ্যাব্রোটেনামের শিশু শীর্ণ, দেখতে কতকটা মর্কটের মত। পা দুইটি শরীরের তুলনায় অধিকতর শীর্ণ। রাক্ষুসে ক্ষুধা, সারাদিনই খেতে চায়, খায়-দায় কিন্তু শুকিয়ে যায়, কিছুতেই শীর্ণতার উপশম হয় না।

সদৃশ ঔষধ। -আয়োডিয়াম – সর্বাঙ্গীণ শীর্ণতা, বিশেষভাবে নিম্নাঙ্গে নয়। এটার রোগীও সর্বদাই ‘খাই-খাই’ করে, কিন্তু সে শৈত্যপ্রিয়। নেট্রাম-মিউর – এটাও শীর্ণতার উত্তম ঔষধ। এটার শীর্ণতা ঘাড়ের দিকেই বেশী দেখা যায়। এটার রোগীও খায়-দায় প্রচুর, তথাপি শুকিয়ে যায়। সার্সাপেরিলা—শিশুকে দেখতে বৃদ্ধের মত দেখায়, ঘাড়ের চামড়ায় ভাঁজ পড়ে এবং গলা শুকিয়ে যায়। টিউবার্কিউলিনাম —সর্বাঙ্গীণ শীর্ণতা রোগে ফলপ্রদ। প্রচুর পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া সত্ত্বেও শিশু অতি দ্রুত শীর্ণ হতে থাকে। সুনির্বাচিত ঔষধে সুফল না পেলে এই ঔষধটি অমৃতের মত। লাইকোপোডিয়াম রোগীর নিম্নাঙ্গ ফুলা ফুলা, কিন্তু ঊর্ধ্বাঙ্গ শীর্ণ। বেলা ৪টা হতে ৮টার ভিতর সমস্ত রোগলক্ষণের বৃদ্ধি।

ডাঃ কেন্ট বলেন— শীর্ণ শিশুদের নাক দিয়ে রক্ত পড়া, অন্ডকোষ ফোলা ও নাক দিয়ে রস-রক্ত পড়া রোগে ঔষধটি উপযোগী। শিশুদের ইনফ্লুয়েঞ্জার পরবর্ত্তী হেক্‌টিক্ জ্বর ও দুর্বলতায় এটার উপযোগিতা আছে।

মন। —অ্যাব্রোটেনাম রোগী ভয়ানক রাগী, খিটখিটে এবং উৎকণ্ঠাযুক্ত। সামান্য কারণেই উত্তেজিত হয়, নিষ্ঠুর ব্যবহার করে।

বাত।— মেটাষ্টেসিস্ বা রোগান্তর প্রাক্তির এটা একটি চমৎকার ঔষধ। হঠাৎ কোন ধারক ঔষধ সেবন করার পর উদরাময় বন্ধ হয়ে বাত হলে এবং সেই বাতের ব্যথা নীচের দিক হতে উপরের দিকে চালিত হলে ব্যবহার্য্য। যে কোন স্রাব হঠাৎ বন্ধ হওয়ার পর বাত হলে অ্যাব্রোট উপযোগী। উল্লিখিত লক্ষণে লেডাম ও ফলপ্রদ, তবে লেডামের রোগী ঠান্ডা চায়। অ্যাব্রোটেনামের রোগী সকল জিনিষ গরম চায়। ক্যামিয়াও মেটাষ্টেটিক বাতরোগে উপযোগী। এটার বাতের ব্যথা উপর দিক হতে নীচের দিকে চালতে হয়। অ্যাব্রোটেনাম সন্ধিবাতের জন্য উপযোগী। অর্শ ও আমরক্তের সাথে পৰ্য্যায়ক্রমে বাত দেখা যায়, অর্থাৎ একটি ভাল হলে অন্যটি আসে। অ্যাব্রোটেনামে একটি গ্ল্যান্ড ছেড়ে আর একটি আক্রান্ত হয়, সেইরূপ বিশেষ লক্ষণ বর্ত্তমানে কার্বো-ভেজ এবং পালসেটিলাও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

পাকযন্ত্রের রোগ।–রোগী খায়-দায় প্রচুর তথাপি দিন দিন শুকিয়ে যায়। পাকযন্ত্রে বেদনা ও দুর্গন্ধযুক্ত বমন। পর্য্যায়ক্রমে উদরাময় ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে কার্যকরী। বৃদ্ধদের অজীর্ণরোগের সাথে হৃৎপিন্ডের রোগেও এটা ব্যবহৃত হয়।

সম্বন্ধ। বাতরোগে—অ্যাসিড-বেঞ্জো, ব্রাইওনিয়া; পূয়ে পাওয়া রোগে –আইওডিন, সার্সা, নেট্রাম-মিউর, টিউবারকুলিন তুলনীয়।

বৃদ্ধি- শীতল বাতাসে।

উপশম। নড়াচড়ায়।

শক্তি।–৬, ৩০, ২০০।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!