ভ্যারিওলিনাম ও ভ্যাক্সিনিনাম (Variolinum & Vaccininum)
পরিচয়।-ভেরিওলিনাম, ভ্যাক্সিনিনাম এবং ম্যালাড্রিনাম-এই তিনটি রোগজ (nosodes) ঔষধ। তিনটিই বসন্ত রোগের প্রতিষেধক এবং আরোগ্যকারী। ভেরিওলিনাম আসল বসন্তের পুঁজ এবং ভ্যাক্সিনিনাম গো-বসন্তের পুঁজ হতে প্রস্তুত সূতরাং প্রায় সমগুণ। পৃথিবীর সমস্ত সভ্যদেশে গো-বীজে টিকা দিবার প্রথা প্রচলিত আছে। এটা ভাল কি মন্দ তা নিয়া আলোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই, টিকা লওয়া যখন আইনসিদ্ধ তখন গোঁড়ামি না করে টিকা লওয়াই ভাল। অবশ্য বারংবার টিকা লওয়ার কুফলে যে নানাবিধ রোগ জন্মে তাও স্বীকাৰ্য্য।
প্রতিষেধক।-ভেরিওলিনাম ও ভ্যাক্সিনিনাম বসন্ত রোগে প্রতিষেধক ম্যালাড্রিনামও সেইরূপ। কেউ কেউ বলেন ভেরিওলিনাম অপর দুইটি ঔষধ হতে বেশী ক্ষমতাশালী; বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় প্রতি সপ্তাহে এদের যে কোন একটি সেবন করা কর্তব্য। উচ্চশক্তি ঔষধ সপ্তাহে ১ বার সেবন করা বিধি। এই প্রতিষেধক চিকিৎসায় বসন্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই; আবার বসন্ত হলেও তা সাংঘাতিক হয় না। বসন্ত মহামারীর সময় যখন শীত শীত ভাব, গা-বমি-বমি, উদরাময় ও অক্ষুধা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায় তখন ভেরিওলিনাম ৩০ শক্তি প্রতি ৩/৪ ঘণ্টা অন্তর সেবন করতে দিলে বসন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। ভেরিওলিনামের রোগীর জ্বর প্রবল হয়, জ্বরের সাথে মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা, মাথা তুলতে গেলে যেন সে পিছনের দিকে পড়ে যাবে এরূপ ভাব হয়। সেই সঙ্গে কোমরে সাংঘাতিক বেদনা ও সর্ব্বাঙ্গে অসহ্য বেদনা হয়। জ্বরের সাথে বমি হয় বা গা-বমি-বমি করতে থাকে, মুখমন্ডল ভয়ানক গরম ও টস্-টস্ করে। রোগীর জিহবায় পুরু হলুদবর্ণের লেপ পড়ে, রোগী যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন সে জিহবা বের করে ঘুমায়, সেই জিহবা দেখতে কাল লেপাবৃত। তার মুখ হতে অত্যন্ত দুর্গন্ধ বের হয়, কোন জিনিষ খেতে গেলে গলার ভিতর টাটান ব্যথা। কখন কখনও রক্তমিশ্রিত বাহ্যে বা আমাতিসার দেখা যায়। ভ্যাক্সিনিনামেও উপরোক্ত লক্ষণ থাকে তবে ভেরিওলিনামের মত শীত ভাব নেই, অস্থিরতা ও অক্ষুধা এটার বেশী। এই সকল ব্যতিরেকে ক্ষত আরোগ্যের পরবর্ত্তী চিহ্ন দূর করতে এটা একটি উত্তম ঔষধ। পামা, কুষ্ঠ, রক্ত-আঁচিল, স্নায়ুশূল; বহুকালের চর্ম্মরোগ; অগ্নিমান্দ্য; পেটে বায়ুসঞ্চয়; হুপিং- কাশি; নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগেও উপকার হয়।