পালসেটিলা (Pulsatilla Nigricans)
পরিচয়।– অপর নাম অ্যানিমোনি-পাটেন্সিস। স্বয়ং হানেমান এটা গ্রুভিং করে গেছেন। ব্যবহারস্থল। -প্রকৃতিগত লক্ষণ ও মনোগত লক্ষণ দৃষ্টে নাক্স ভমিকা পুরুষের ঔষধ এবং পালসেটিলা স্ত্রীলোকের ঔষধ বলে কথিত। বাস্তবিক সুন্দরী নারীদের অধিকাংশ রোগে এটার উপযোগিতা আছে। অবশ্য পুরুষ রোগীর ক্ষেত্রে যে এটা ব্যবহৃত হবে না এরূপ নয়। পালসেটিলার অধিকার অতি বিস্তৃত ও ক্রিয়া সুগভীর। সুন্দরী নারীদের ঋতুসম্বন্ধীয় বিভিন্ন রোগ, গর্ভকালীন রোগ, প্রসব বেদনা, সূতিকাক্ষেত্রের বিভিন্ন রোগ, জরায়ু রোগ, গর্ভবতীর বিভিন্ন রোগ, প্রদর, বাধক, ডিম্বাধার প্রদাহ, স্তনদুধ অল্প প্রভৃতি বহু রোগে এটা কাজে আসে। আবার সাধারণভাবে জ্বর, ক্ষত, মূত্রাশয় রোগ, চোখের অসুখ, উদরাময়, বাতরোগ, হৃৎরোগ, প্রমেহ রোগ, কর্ণশূল, আঁচিল, দন্তশূল, মূত্রাশয়-গ্রন্থির রোগ প্রভৃতি ক্ষেত্রেও এটার উপযোগিতা অসামান্য।
ক্রিয়াস্থল। পালসেটিলা আমাদের নিত্য ব্যবহার্য্য ঔষধ। প্রধানতঃ শ্লৈষ্মিক ঝিল্পী পাকস্থলী, রক্তবহানাড়ী এবং স্ত্রী ও পুংজননেন্দ্রিয়ের উপর এটার মুখ্য ক্রিয়া। পালসেটিলা কি পুরুষ, কি স্ত্রীলোক সকলের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে, এমন কি শিশুদের রোগেও পালসেটিলাকে বাদ দেওয়া যায় না, তবে লক্ষণ মিলাইয়া নিতে হবে।
গর্ভবতীদের পালসেটিলা উৎকৃষ্ট ঔষধ। কেউ কেউ বলেন, গর্ভাবস্থায় এই ঔষধ মধ্যে মধ্যে ২/১ মাত্রা সেবন করতে দিলে ভ্রূণের কোনরূপ অনিষ্ট হতে পারে না, অথচ জরায়ুর ক্রিয়া বর্দ্ধিত হয় এবং প্রসবও অত্যন্ত সহজ হয়। সুপ্রসবের জন্য সিমিসিগা ঔষধটিও গর্ভাবস্থায় মাঝে মাঝে ব্যবহার করলে উত্তম ফল পাওয়া যায়। গর্ভিণীর বাতের দোষ থাকলে এটা অধিকতর উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাইয়োকেমিক-কেলি-ফস, এই একই উদ্দেশ্যে অনেকে ব্যবহার করে থাকেন।
এই ঔষধ যখনই প্রয়োগ করবে, তখনই এটার হ্রাস-বৃদ্ধি ও মানসিক লক্ষণ উত্তমরূপে দেখে নিতে হবে।
হামের পরবর্ত্তী মন্দফল, প্রমেহ রোগ শেষ অবস্থায় গ্লিটবাত; প্রমেহ-স্রাব বন্ধ হয়ে অন্ডকোষের প্রদাহ প্রভৃতি ক্ষেত্রেও এটা ব্যবহার্য্য।
মন।-পালসেটিলা রোগীর ভ্রম-জ্ঞান অত্যন্ত প্রকট, সে মনে করে তার শয্যায় একজন উলঙ্গ পুরুষ শুয়ে আছে। ঋতু লোপ হয়ে তার উন্মত্ততার বৃদ্ধি ও পরলোক সম্বন্ধে তার বিভ্রান্ত ধারণা। রোগিণী মনে করে যেন যম বা শয়তান তাকে নিয়ে যাবার জন্য আসছে। সে সামান্য কারণে উত্তেজিত হয়ে উঠে, আবার একটুতেই কাঁদিয়ে আকুল হয়, সর্বদাই যেন তার চোখে পানি লেগেই থাকে। তার নিজের কোন রোগ-লক্ষণ অথবা কোন কথা সহজভাবে ব্যক্ত করতে পারে না, কাঁদিয়ে ফেলে। পালসেটিলা রোগিণী অত্যন্ত নম্র, ধীর এবং অভিমানিনী, সহজে কাঁদিয়ে ফেলে, চিকিৎসককে বা কারও কাছে রোগের কথা বলবার সময়ও তার কান্না পায়, সহানুভূতি প্রিয়। সান্ত্বনা দিলে আরাম বোধ করে। কিন্তু নেট্রাম-মিউরের রোগিণী ও ক্রন্দনশীল, সামান্য কারণে কাঁদে কিন্তু পালসেটিলার মত সহানুভূতি চায় না, সান্ত্বনা দিলে তার কান্না বেড়ে যায়। ইগ্নেসিয়া রোগিণীর প্রকৃতি এবং মেজাজ পরিবর্তনশীল, এই হাসি, এই কান্না। কাঁদতে কাঁদতে হাসে আবার হাসিতে হাসিতে কাঁদিয়ে ফেলে। দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে, একাকী থাকতে ভালবাসে। প্ল্যাটিনা রোগিণী অহঙ্কারী, সামান্য কারণেই তার মেজাজ গরম হয়ে যায়। কটু কথা বলে। তাকে যদি ভাল বলা যায়, খুশী হয়। মন্দ বললে চটিয়া যায়। শারীরিক ও মানসিক শক্তিতে নিজেকে খুব বড় মনে করে, অপরকে ছোট ভাবে, মনে করে তারা অনুপযুক্ত পাত্ৰ।
রুচি। পালসেটিলা রোগিণীর মুখ বড়ই বিস্বাদ, বিশেষতঃ সকাল বেলা তার কোন জিনিসই . ভাল লাগে না। সে ঠান্ডা চায়, ঠান্ডা খাদ্যে রুচি, ঠান্ডা স্থানে থাকিবার অভিলাষ; গরম মোটেই সহ্য করতে পারে না, গরম দ্রব্যে অরুচি; ঘৃতপক্ক বা তৈলাক্ত জিনিস খেলেই তার রোগের বৃদ্ধি।
স্বভাব ও গঠন।– পালসেটিলা রোগী মাত্রেই নম্র ও ভদ্র; ধীর, স্থির ও শ্লেষ্মাপ্রধান। রোগিণী সামান্য কারণে কাঁদিয়ে ফেলে বা হেসে ফেলে, তার হৃদয় অত্যন্ত কোমল ও স্নেহপ্রবণ। রোগিণী ছিচকাঁদুনে, একটুতেই কাঁদিয়ে আকুল, না কাঁদিয়ে কোন কথাই বলতে পারে না, এমন কি চিকিৎসকের নিকটও সে কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে রোগলক্ষণ বর্ণনা করে। সে আদর চায়। তাতে খুশী হয় (নেট্রাম-মি আদর চায় না; সিপিয়া উদাসীন)। এটার রোগী মোটা-সোটা দেখিলে মনে হয় না যে তার কোন রোগ আছে। নাক্স ভমিকার রোগী রোগা, পাতলা, ছিপছিপে, রাগী, হিংসুটে ও বদখেয়ালি। পুরাতন রোগীর চিকিৎসার সময়ও এইগুলি থাকা চাই।
পিপাসাহীনতা ও পরিবর্তনশীলতা – পালসেটিলার এটা সর্বপ্রধান লক্ষণ। উদরাময় বা কলেরার রোগীর ও পানিপিপাসা থাকে না; কেবল উদরাময় ও কলেরা কেন, যে-কোন রোগই হোক না, জিহবা শুষ্ক অথচ পিপাসার অভাব, এটাই পালসেটিলার শ্রেষ্ঠ লক্ষণ। কিন্তু মার্ক-সল রোগীর জিহবা সরস, অথচ তার পিপাসা অত্যধিক। নাক্স-মঙ্কেটা রোগী পালসেটিলার মত মেজাজ ও যেমন পরিবর্তনশীল, পর্যায়ক্রমে হাসি ও কান্না, তেমনি মুখ এবং জিহবা অত্যন্ত শুষ্ক, জিহবা তালুদেশে লেগে যায়। এত শুষ্কতা সত্ত্বেও রোগীর পানিপিপাসা নেই। পালেসেটিলা পরিবর্তনশীল লক্ষণের শ্রেষ্ঠ ঔষধ। এটার মল পরিবর্তনশীল; ব্যথার স্থান পরিবর্তন করে, জ্বরে এই শীত এই তাপ।
প্রদর্শক লক্ষণ।-রোগীর পিপাসা থাকে না। লক্ষণ পরিবর্তনশীল। মলের রং প্রতিবারেই বদলিয়ে যায়। পাকা সর্দি। মিউকাস হলদে। রোগী নম্র ও ধীর, সহজে কাঁদিয়ে ফেলে। ঘৃতপক্ক বা চর্বিযুক্ত খাদ্য হজম হয় না, সবুজ রঙের বাহ্যে। কুলপী-বরফ, ফল, ঘি, চর্বি খেয়ে উদরাময়। উত্তাপে ও গরম ঘরে বৃদ্ধি, জ্বালাভাব, খোলা বাতাসে ও ঠান্ডায় রোগী ভাল থাকে। মলত্যাগের পূর্বে পেটে গুড় গুড় শব্দ, পেটে পাথর চাপান আছে এরূপ বেদনা, কোমরে বেদনা। স্রাব মাত্রেই অনুত্তেজক, অর্থাৎ ক্ষতকর নয়, গয়ার ও প্রদরস্রাব গাঢ়, হলদে বা সবুজাভ, মলত্যাগের সময় শীত করে। লক্ষণ বর্ণনা কালে কাঁদে, জিব সাদা, মুখ শুষ্ক অথচ পিপাসা নেই। মুখ হতে দুর্গন্ধ, মুখে চটচটে মিউকাস। সর্বদা তুলার মত ফেনা ফেনা মিউকাস থুথুর সঙ্গে ফেলে। তিক্ত স্বাদ, চর্বি, মাংস রুটী ও দুধ খেতে চায় না। শিরঃরোগ চেপে বাঁধিলে উপশম। হীন, গুরুপাক দ্রব্য আহারের পর উদরাময়, আমবাত। মাসিক ঋতু প্রকাশ না পাওয়ায় আমবাত। গায়ের কাপড় খুললে বৃদ্ধি, উদর লক্ষণ দুপুর রাত্রের পর বৃদ্ধি। মাথার উপর হাত রেখে ঘুমায়, পাগুলি ভারী ও ক্লান্ত মনে হয়। হাত- পায়ে ব্যথা, ছটফটানি, ঘুম হয় না, শীত করে। শরীরের ব্যথা নানা স্থানে ঘুরে বেড়ায়। বাতরোগ স্থান পরিবর্ত্তন করে, মাসিক ঋতুর সময় বা তারপরে উদরাময়। ঋতু খুব দেরীতে হয়; পরিমাণে অল্প; গাঢ় কাল; ডেলা ডেলা, পরিবর্ত্তনশীল। মাঝে মাঝে হয় ও মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে। প্রসববেদনা ক্ষণিক থেমে আবার জোরে দেয়। রোগিণী শীত শীত বোধ করেন। প্রবসান্তিক স্রাব দুধের আকার ধারণ করে। আমাশয়, সেইসঙ্গে শীত শীত ভাব। মলে মিউকাস ও রক্ত; সন্ধ্যায় কলিক, শীত শীত ভাব, অর্কাইটিস, তলপেট হতে অন্ডকোষ পর্য্যন্ত যন্ত্রণা। মেহরোগ, শেষের দিকে যখন প্রস্রাবদ্বার দিয়ে ঘন হলদে পুঁজ পড়ে। মূত্রনালী সঙ্কুচিত হয়। প্রস্রাবের পর যন্ত্রণা, পিঠের উপর শুইলে বৃদ্ধি। রোগী ঠান্ডা চায়, স্নানে ভাল থাকে।
স্ফোটক।-স্ফোটক হতে সহজেই রক্ত পড়ে, তাতে বিধিয়া দেওয়ার মত, কাটিয়া ফেলার মত বেদনা। আশে-পাশে নীলবর্ণের ফোলা, দীর্ঘকালব্যাপী প্রদাহের পর স্ফোটক। পুঁজে রক্ত। প্রচুর হলদে বা সবুজ পুঁজ। ঠান্ডা পানি দিলে ভাল থাকে। উত্তাপ সহ্য হয় না।
হাঁপানি।-কোনরূপ উদ্ভেদ বসে গিয়া শিশুদের হাঁপানি। হিষ্টিরিয়া বা ঋতুবন্ধ থাকার জন্য হাঁপানি। রূপান্তরিত ব্যাধি : তুলনীয়। চর্মরোগ চাপা পড়ে হাঁপানি (পালসেটিলা ব্যতীতও) এপিস, আর্সেনিক, কার্বো-ভেজ, ডাল্কামারা, ইপিকাক, সোরিণাম, সাম্ফার। চর্মরোগ চাপা পড়ে পক্ষাঘাত-কষ্টিকাম, জিঙ্কাম। চর্ম্মরোগ চাপা পড়ে মৃগী -এগারিকাস, কিউপ্রাম, জিঙ্কাম। চর্মরোগ চাপা পড়ে শোথ-ডাল্কামারা। সন্ধ্যায়, বিশেষতঃ খাওয়ার পর শ্বাসকষ্ট ও মাথাঘোরা। পিঠের উপর শুইলে বেশী হয়। রাত্রে বিছানায় বেশী। সকালে শ্বাসকষ্ট, দ্রুত চললে সিড়িতে উঠলে, পরিশ্রম করলে বৃদ্ধি। গলায় ও বুকে চুলকায় এবং সেজন্য কাশি। দিনের গয়ার উঠে। ঠান্ডা বায়ুতে উপশম। উত্তাপে বৃদ্ধি।
কলিক। – ঠান্ডা লেগে কলিক ও সেইসঙ্গে উদরাময়। পা ভিজাইলে কলিক। ফল, বরফ, পিঠা ইত্যাদি খেয়ে কলিক। পেটে বায়ু জমার জন্য কলিক, খাওয়ার পর ও রাত্রে বৃদ্ধি। গা-বমি- বমি। বমির পর কলিক বন্ধ হয়। ছটফট করে। বসলে বা শুইলে কলিক বাড়ে ও সেইসঙ্গে শীত করে। চলে বেড়ালে কম হয়, পরিবর্তনশীলতা। পিপাসার অভাব। ঠান্ডা চায়। গরম সহ্য হয় না।
যক্ষা।-বুকে টাটানি, আক্রান্ত পার্শ্বে শুইলে বৃদ্ধি। বুকে চাপ দিলে বেশী। বাঁ দিকে বৃদ্ধি। ছোট মেয়েদের রোগে, ঘুমের পর শুষ্ক কাশি; বসলে কাশি কমে। গয়ার নোনতা। গয়ারে দুর্গন্ধ। গয়ার তেঁতো। হলদে গয়ার। গয়ারে কাল কাল ডেলা-ডেলা রক্ত। দিনে গয়ার উঠে, রাত্রে গয়ার উঠে না।
মস্তক।-রোগীর মাথা এত ঘোরে যেন সে কোনরূপ নেশা করেছে, কিছুতেই সে নিজেকে সামলাইতে পারে না, মাথাধরা, মাথার তীব্র যন্ত্রণায় রোগীর মাথার ভিতর যেন ধকধক করে, অপরিমিত ভোজনাদির পর বা চর্বিযুক্ত মাংসাদি খাওয়ার পর তীব্র শিরোবেদনায় এটা উত্তম কাজ করে থাকে (অ্যান্টিম-ক্রুড, ইপি, নাক্স, আইরিস)। ক্যামো-ইগ্নে, নাক্স- কফি পান করার পর মাথায় যন্ত্রণা হলে। কার্বো-ভেজ, কফি, নাক্স, পালস-মদ্যপানের পর মাথার যন্ত্রণায়। ক্যাল্কে, নাক্স, সালফ-অতিরিক্ত অধ্যয়নাদির পর শিরঃরোগে। ইগ্নে, অ্যাসিড-ফস, ষ্ট্যাফি-শোকাদির পর মাথার যন্ত্রণায় উত্তম ঔষধ। পালসেটিলা আধ-কপালে মাথার যন্ত্রণার জন্যও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কষিয়া বাঁধিলে উপশম হয়। রজঃলোপে শিরঃরোগ। মস্তিষ্কের উপর টিউমার জন্মিলে এটা ক্যাল্কেরিয়া-ফ্লোর ও সাইলিসিয়ার সমতুল্য।
চোখের অসুখ।-সপুঁজ চোখ-প্রদাহে যখন চোখ হতে শ্লেষ্মা ও পুঁজ মিশ্রিত স্রাব নিঃসৃত হয় (ঐ স্রাব খুব পাতলাও নয় কিম্বা খুব ঘনও নয়), সকালে ঘুম ভাঙ্গিবার পর চোখ জুড়ে যায় তখন এই ঔষধ ব্যবহার্য্য। রোগীর চোখের পাতায় ছোট ছোট ফুস্কুড়ি বের হয়। পালসেটিলার স্রাব কখনও হলুদবর্ণের, কখনও সবুজের সাথে হরিদ্রা রঙ মিশ্রিত। চোখ-ওঠা রোগে পালসেটিলা কখনও প্ৰথম অবস্থায় ব্যবহার করা উচিত নয়। ছোট ছোট শিশুদের বা আঁতুড়ের শিশুদের সপুঁজ চোখ-উঠা। চোখ হতে প্রচুর পরিমাণে হরিদ্রা বর্ণের পুঁজ বের হয়ে চোখ জুড়ে যায় (থুজা, আর্জেন্ট-নাই, অ্যাসিড-নাই, সিফিলিন)। এই ঔষধ প্রয়োগ করে যদি বিশেষ কোন উপকার না পাওয়া যায় তখন আর্জেন্টাম-নাইট্রিকাম-উপযোগী। পালসেটিলা আঞ্জনি রোগেরও উত্তম ঔষধ। সাধারণতঃ এটার আঞ্জনি চোখের নীচের পাতায়ই বেশী হয় এবং রোগী মুক্ত হাওয়ায় ভাল থাকে। ষ্ট্যাফিসেগ্রিয়াও আঞ্জনি রোগের ঔষধ, তবে উপরের পাতায় হলেই বেশী উপযোগী। গ্র্যাফাইটিস রোগীর ঘন ঘন আঞ্জনি হয়ে থাকে। ডাঃ নটন বলেন, চক্ষুরোগে যখন পালসেটিলা প্রয়োগ করবে, তখন আলোক- ভীতি, ঝাপসা-দৃষ্টি, মাথাঘোরা, গা-বমি-বমি, চোখের পাতা ফোলা, আঞ্জনি হাওয়া, মুক্ত হাওয়ায় উপশম এবং চোখ হতে পুঁজ বের হয় দেখে লইবে।
কানপাকা।-কানের মধ্যভাগের প্রদাহে যখন কান হতে প্রচুর পরিমাণে ঘন গন্ধবিহীন হরিদ্রাবর্ণের বা হলুদাভ সবুজবর্ণের পুঁজ বের হয় তখন পালসেটিলা উত্তম ঔষধ। কান পাকার সাথে বধিরতা, কানের ভিতর যন্ত্রণা। সদৃশ লক্ষণ।-সাইলিসিয়া – রোগীর কান হতে পুঁজ পড়ে, ঐ পুঁজ ঘন কিন্তু অতিশয় দুর্গন্ধযুক্ত; রোগীর মাথায় প্রচুর ঘাম হয়। টেলিউরিয়াম – রোগীর কর্ণস্রাব বহে, অত্যন্ত দূর্গন্ধযুক্ত, স্রাব পানির মত পাতলা। গ্র্যাফাইটিস কর্ণের রোগে যখন বধিরতা অত্যধিক, অথচ রোগী যখন গাড়ীর ভিতর বা গন্ডগোলের ভিতর ভাল শুনতে পায়।
কর্ণশূল।-রাত্রে বৃদ্ধি, ঠান্ডা লেগে কান কটকটানি। মধ্যকর্ণের আরক্ততা ও স্ফীততা। হামের পর কর্ণের বেদনা। তুলনীয়। মার্ক সল-বেদনা বেশী এবং সেটা রাতে বাড়ে। কানে পুঁজ, সময়ে সময়ে রক্তমিশ্রিত থাকে। হলদে বা হলদে সবুজ রঙের ঘন পুঁজ। কেলি-বাই-কানে পুঁজ হয়ে অত্যন্ত বেদনা হয়। ঐ বেদনা কান হতে আরম্ভ হয়ে ক্রমে মাথায় এবং ঘাড়ে যায়। ঘাড়ের গ্ল্যান্ড ফোলে। টেলিউমিয়াম – কানে প্রথমে বেদনা ও যন্ত্রণা হয়, পরে পুঁজ হয়ে বেশী দিন স্থায়ী হয়, দুর্গন্ধ হয়। দুর্গন্ধ পুঁজ, কখনও পানির মত, কখন মাছ-ধোয়া পানির মত।
উদরাময়, অজীর্ণ।– পরিপাক যন্ত্রের নানাবিধ রোগে ফলপ্রদ ঔষধ। ঘিয়ের রান্না, পিঠা, রাবড়ী, চর্বিযুক্ত মাংস, বড় মাছের পেটি ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য সেবন করার পর যদি উদরাময়, অজীর্ণ, আমাশয়, প্রভৃতি রোগ হয়। উদরাময় রোগীর জিহবা শুষ্ক, জিহবায় সাদা লেপ পড়ে, কিন্তু পিপাসা মোটেই থাকে না। বাহ্যে ঘন ঘন হয়, মলত্যাগের সাথে পেটে শূলবেদনা দেখা যায়, পেটে যত বেশী বেদনা হবে তত বেশী শীত করতে থাকবে, বাহ্যে এক একবার এক এক রকমের হওয়া এটার বৈশিষ্ট্য। বমিতেও ভুক্তদ্রব্য, শ্লেষ্মা ও পিত্ত উঠে। বহুক্ষণ পূর্বে রোগী যে খাদ্যদ্রব্য আহার করেছে তাও বমি হয়ে উঠে যায়।
তুলনীয়।-সাইক্লামেন, ফেরাম, ট্যারাক্সেকাম-এদের রোগী কেবল ঘৃতপক্ক দ্রব্যাদি খেয়ে উদরাময় বা অজীর্ণ রোগে ভোগে। আর্সেনিক-কুল্পি-বরফ খাওয়ার পর উদরাময়ে ভূগিলে। নাক্স- ভূমিকা-রোগী অধিক মসলাযুক্ত খাদ্য খেয়ে বা রাত্রিজাগরণ ইত্যাদি কারণে উদরাময়ে ভুগিলে। ইপিকাক-নানাবিধ মিষ্ট খাদ্যদ্রব্য আহার করে উদরাময় এবং সেইসঙ্গে বমন ও বিবমিষা থাকলে। পালস, চায়না-কেবল ফল আহার করার পর উদরাময়। কলোসিন্থ-শস্য খেয়ে উদরাময় হলে। ভেরেট্রাম-পেয়ারা খেয়ে উদরাময় হলে। থুজা-পেঁয়াজ খেয়ে উদরাময় হলে। আর্স, ব্রাই, নাক্স -ঠান্ডা পানি পান করে উদরাময় হলে। ক্যাম্ফার, জিজিয়া -অপবিত্র বা নোংরা পানি পান করে উদরাময় হলে। সাম্ফার, ক্যাল্কেরিয়া-দুধ পানের পর উদরাময়ে। সেপা। -পচা মৎসাদি খেয়ে অসুখ করলে। পালসেটিলার উদরাময় প্রত্যহ রাত্রে হয়। উদরাময়ের সাথে বুকের ভিতর কি যেন ঠেলে উঠছে লক্ষণে এটাই ঔষধ। আহারের নামে বা খাদ্যদ্রব্যের গন্ধে গা-বমি- বমি কলচিকামের রোগীতেই বেশী দেখা যায়, কিন্তু এটা পালসেটিলায়ও আছে। পালসেটিলার উদরাময়ের সাথে পেট ডাকা, মলত্যাগের পূর্বে পেটে যন্ত্রণা, দিন অপেক্ষা রাতে মলত্যাগের আধিক্য। পালসেটিলা আমাতিসার, দুরারোগ্য কোষ্ঠকাঠিন্য এবং কোমরের বেদনা সহ রক্তামাশয় ও অর্শরোগে উপযোগী।
স্বল্পরজঃ।-যুবতীদের প্রথম ঋতু আরম্ভ হয়েই যখন অনিয়মিত ঋতু হয়, ক্রমে ক্রমে ঋতুস্রাব একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, তখন এই ঔষধ বিশেষ উপযোগী। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রথম ঋতুস্রাব আরম্ভ হয়েই সেটা বন্ধ হয়ে যায় এবং সেটার ফলে রোগিণী অত্যন্ত রুগ্ন হয়ে পড়ে, রক্তশূন্যতা এসে উপস্থিত হয় এবং ফুসফুসের নানাবিধ রোগ (যথা, টিউবারকুলোসিস) সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই সময় পালসেটিলা সত্যই মন্ত্রৌষধির মত কাজ করে। আবার পালসেটিলায় এরূপ দেখা যায়, ঋতুমতির বেশ রীতিমত মাসিক ঋতু হচ্ছে; কিন্তু হঠাৎ একদিন তার পায়ে ঠান্ডা লেগে বা খুব ঠান্ডা পানিতে পা ধুবার ফলে ঋতু বন্ধ হয়ে গেল, এমন ক্ষেত্রে এই ঔষধ ব্যবহার্য্য। বাধক-বেদনা, ঋতু খুব বিলম্বে প্রকাশিত হয়, ঋতুস্রাবের পরিমাণ অতি অল্প ও অল্পদিন স্থায়ী, ঋতুস্রাব রক্তবর্ণ, পরিবর্তনশীল এবং থেমে থেমে আসে, বেদনার সময় রোগিণী কাঁদিয়ে অস্থির হয়; খোলা বাতাসে, ঠান্ডা স্থানে ও ঠান্ডা জিনিস প্রয়োগে ভাল থাকে এবং এটার সাথে জিহবা শুষ্ক, অথচ পিপাসার অভাব, যত বেশী পেটের ব্যথা তত বেশী শীত শীত ভাব থাকে। ডিম্বাশয়-প্রদাহ ও অনুকল্প-স্রাব দেখা দিতে পারে।
তুলনীয়।-অশোকা (জনোসিয়া-অশোকা)-অতিরজঃ, স্বল্পরজঃ, রজঃলোপ, অনিয়মিত রজঃ প্রভৃতি। মানসিক ঋতুবিপর্যয়ে উদরে দারুণ যন্ত্রণা অনুভূত হয়। ককিউলাস -বাধক-বেদনা, পেট কামড়ানির মত পেটে বেদনা বোধ, পেটে খালধরা; রোগিণী নড়তে চড়তে পারে না, সেইসঙ্গে গা- বমি-বমি বা বমন, মাথাঘোরা এবং চলবার সময় হাত-পায়ের কম্প। পালসেটিলার বেদনা হতে হতে হয়, কিন্তু এটার বেদনা চলতে থাকে। ম্যাগ-ফসের বাধক-বেদনা অত্যন্ত তীব্র; এটার বেদনাও হতে হতে উপস্থিত হয়, পেটে গরম সেক দিলে উপশম। সিমিসিফিউগা -তলপেট হতে কুঁচকি পৰ্য্যন্ত স্থানে বেদনা, বেদনার সময় সে সকলকে গালাগালি করে অস্থির করে।
ওলট-কম্বল-(অ্যাব্রোমা-আগষ্টা)-এটা জরায়ু-সংক্রান্ত সর্বপ্রকার রোগে ব্যবহৃত হয়। এটা ব্যবহারে জরায়ুর ক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রসবক্ষেত্র।– পালসেটিলার প্রসব-বেদনা থেমে থেমে আসে, এটার প্রসব-বেদনা কখনও তীব্র, কখনও মৃদু; যখন বেদনা কমে যায় তখন রোগিণীকে দেখিলে মনে হয় না যে, আবার তার বেদনা আরম্ভ হবে। বেদনার সময় রোগিণী কাঁদিয়ে আকুল হয়, মোটেই পানিপিপাসা থাকে না এবং খোলা হাওয়া পছন্দ করে। এক্যুামসিয়া মূৰ্চ্ছার মধ্যে রোগিণী মুখ চাটিতে থাকে, কিন্তু সম্পূর্ণ পিপাসাশূন্য। প্রসবের পর ভ্যাদাল ব্যথা; প্রসবের ফুল আটকিয়ে থাকা, সূতিকাজ্বর প্রভৃতি রোগে এটা উপযোগী ঔষধ, মানসিক লক্ষণ ও বিশেষ লক্ষণ থাকা চাই। কেউ কেউ বলেন, এই ঔষধ পূর্ণ গর্ভবতীকে মধ্যে মধ্যে সেবন করতে দিলে সুপ্রসব হয়ে থাকে। প্রসবান্তিক লোকিয়াস্রাব ও সূতিকাজ্বরেও পালস ব্যবহার্য্য। পালস রোগিণীর লোকিয়াস্রাব ক্রমশঃ দুধের মত সাদা হতে থাকে। গর্ভাবস্থার পূর্বে, গর্ভাবস্থায় বা পরে স্তনগ্রন্থি আক্রান্ত হলে বা ফুলে উঠলে এটা ব্যবহার্য্য। প্রসবের পর স্তনে কোনরূপ আঘাত লেগে বা অন্য যে কোন কারণে স্তনদুধ হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে পালস সেবনে স্তনে দুধ পুনরায় আসে। স্তনদুধ বন্ধের বিশেষ কোন কারণ জানা না গেলে আর্টিকা- ইউরেন্স প্রয়োগ বিধেয়। মৃতবৎসাদের দুধ কমাইতে বা বহুদিন পৰ্য্যন্ত স্তন দুধ থাকলে ল্যাক- ক্যানাইনাম উপযোগী। হঠাৎ স্তনদুধ শুকিয়ে গেলে, ল্যাক-ডিফ্লোরেটাম খুব ভাল। গর্ভাবস্থায় মূত্রস্থলীর প্রদাহে যখন ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হয়, মূত্ৰনলীতে বেদনা থাকে, প্রস্রাবের সাথে শ্লেষ্মা বের হয়, তখন এটা ফলপ্রদ।
পুংজননেন্দ্রিয়ের রোগ ও প্রমেহ।-যুবক বিবাহ করতে চায় না। মনে মনে ভাবে যে স্ত্রী- সঙ্গমাদি অত্যন্ত পাপের কাজ। তার ধর্মের দিকে খুব মতি। অপরিমিত ইন্দ্রিয়চালনার ফলে মাথায় ও পিঠে ব্যথা, সর্বাঙ্গে ভার বোধ। প্রমেহ রোগের প্রথম অবস্থায় এই ঔষধ কার্যকরী নয়, শেষাবস্থায় অর্থাৎ গ্লীট হলে এটা ফলপ্রদ। এটার স্রাব ঘন এবং শ্লেষ্মা ও পুঁজ মিশ্রিত; হরিদ্রাবর্ণের বা সবুজ মিশ্রিত হরিদ্রাবর্ণের স্রাবের সাথে কুঁচকিতে বেদনা থাকে, সময় সময় পেটে পরিবর্তনশীল বেদনার আবির্ভাব হয়। এটার স্রাব ঘন এবং প্রমেহের মূত্রত্যাগের পর মূত্রনলীতে জ্বালা। স্রাব রুদ্ধ হয়ে যখন রোগীর অন্ডকোষ প্রদাহিত হয়ে ফুলে লালবর্ণের হয়, অত্যন্ত যন্ত্রণা হতে থাকে। অন্ডকোষে পানি জমে গেলে, বিশেষতঃ শিশুর জন্মের পর হতে ঐরূপ হলে এটা ফলপ্রদ। অন্ডকোষ-প্রদাহে অ্যাসিড-অক্সালিক, সাইলিসিয়া, হাইড্রোকোটাইল, রডোডেনড্রণ, কোনায়াম প্রভৃতি ঔষধও আবশ্যক হয়। মূত্রাশয়-মুখশায়ী-গ্রন্থি-প্ৰদাহে পালস প্রয়োগে উপশমিত হয়।
হরিৎ-পান্ডুরোগ বা ক্লোরোসিস।-এই রোগ সাধারণতঃ যখন রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে বা অজীর্ণ রোগে ভুগে দেখা যায়। ঘৃতপক্ক বা তৈলাক্ত দ্রব্য খেলে কষ্ট বৃদ্ধি, মাসিক ঋতু হলে পালস ফলপ্রদ। (ক্যাল্কে-ফস, নেট্রাম মিউর, সিপিয়া ও সাইক্লামেন তুলনীয়)।
নাকে ক্ষত, সর্দি, কাশি ইত্যাদি।-পুরাতন নাক-ক্ষত হতে যখন ঘন হরিদ্রাবর্ণের বা হরিদ্রা মিশ্রিত সবুজ বর্ণের স্রাব বের হতে থাকে, তখন এটা উপযোগী। তরুণ অবস্থায় পালসেটিলা বিশেষ ফলপ্রদ নয়। রোগীর ঘ্রাণশক্তি কমে যায়, নাসাপুটে ক্ষত হয়, রোগী ঘরের ভিতর থাকতে পারে না, অনবরত ঠান্ডা হাওয়া চায়। কাশি ও যক্ষ্মা-কাশির পক্ষেও এটা ব্যবহারোপযোগী। কাশতে কাশতে বুকে যে গয়ার উঠে সেটা ঘন হরিদ্রা বা সবুজাভ হরিদ্রাবর্ণের, রোগী বুকে ভারবোধ করে ও মুখে রক্তের আস্বাদ পায়। রোগীর দেহ একটু গরম হলেই খুকখুকে কাশি হতে থাকে। অবরুদ্ধ ঋতুর জন্য নাক হতে রক্তস্রাব (ব্রাইও, ফেরাম, হ্যামা, ফস, সিনিসিও), যুবতীদের ঋতু হঠাৎ বন্ধ হয়ে যক্ষ্মাকাশিতে পরিণত হলে পালসেটিলা একমাত্র ঔষধ। বিশেষ লক্ষণ ও মানসিক অবস্থা মিলাইয়া ঔষধ প্রয়োগ করা বিধেয়।
ফোঁড়া। ফোঁড়া, বাগী ইত্যাদির জন্য পালসেটিলা উত্তম ঔষধ। ফোঁড়া যখন কিছুতেই ফাটে না, অথচ ভিতরে পুঁজ হয়েছে, তখন এই ঔষধের মূল অরিষ্ট কয়েকবার ফোঁড়ার উপর তুলি করে লাগিয়ে দিলে ফোঁড়া ফেটে যায়।
ৰাত ও সন্ধিবাত। -গণোরিয়ার স্রাব বন্ধ হয়ে অথবা আঘাত লেগে বাত বেদনা একদিক হতে অন্যদিকে বা এক অঙ্গ হতে অন্য অঙ্গে চলে বেড়ায় (কেলি-সাল্ফ)। এটার বেদনা যখন আরম্ভ হয় তখন রোগী আক্রান্ত স্থানে চাপ লাগায়, গরম সেক দেয়, কিন্তু সাধারণভাবে ঠান্ডা উপশম। সাইনোভাইটিস রোগে যখন বেদনা একস্থান হতে অন্যস্থানে চলে বেড়ায়, তখন এটা ব্যবহাৰ্য্য (কেলি-বাই, ব্রাইওনিয়া, সালফার)। আঘাত হতে বাতের উৎপত্তি-আর্ণিকা।
আমবাত।-পেটের দোষ বা ইউট্রাসের রোগের জন্য আমবাত। উদরাময়। রাত্রে চুলকানি বেশী হয়। সর্বদাই শীত করে, এমন কি গরম ঘরেও শীত করে।
হাম।-হামের প্রথম অবস্থায় বেলেডোনা, ব্রাইওনিয়া, জেলসিমিয়াম প্রভৃতি ঔষধ। সাধারণতঃ যখন জ্বর থাকে না অথচ নাক হতে প্রচুর সর্দি ঝরে, চোখ হতে পানি পড়ে, কাশি খুব, কাশতে কাশতে বুকে শিশু উঠে বসে, গরম সহ্য করতে পারে না, অথচ শরীরে চুলকায় তখনই পালসেটিলা প্রয়োগ করার উপযুক্ত সময়। হামের সময় উদরাময় হলেও উপযোগী।
জ্বর (সবিরাম)।-সাধারণতঃ জ্বর বৈকালে বা সন্ধ্যাবেলায় এসে সমস্ত রাত্রি ভোগ করে সকালে ছেড়ে যায়। খাওয়ার দোষে, অতিরিক্ত চর্বি, তৈল, ঘি ও মশলাযুক্ত গুরুপাক খাদ্য খাওয়ার ফলে জ্বর হলে এতে বিশেষ উপক্ষার দর্শে। পালসের শীতাবস্থা অনেকক্ষণ স্থায়ী হয়, শীত আরম্ভ হয়ে উত্তাপাবস্থা না আসা পর্য্যন্ত একটু সময়ও শীতের বিরাম হয় না। শরীরে বেদনা, পিপাসার অভাব, ঘর অত্যন্ত গরম বোধ হয়। হাত-পা অত্যন্ত ঠান্ডা হয়ে যায়। দেখিলে মনে হয় যেন রোগীর শরীরে মোটেই রক্ত নেই। উত্তাপাবস্থাই পালসেটিলার লক্ষ্য করার বিষয়। অধিকাংশ রোগীরই উত্তাপাবস্থায় পিপাসা থাকে না। মুখ, ঠোট, জিহবা শুকিয়ে যায়; তবুও সে পানি পান করতে চায় না – রোগীর শরীর ভয়ানক গরম হয়। ঠান্ডা হাওয়ায় ভাল থাকে। চোখ জ্বালা করে। গরম, ছটফটানি ও গাত্রদাহ রাতেই বেশী হয়। বেশীরভাগ রোগীরই পিপাসার অভাব দেখা যায়, কিন্তু কোন কোন রোগীর ঠিক শীতাবস্থার প্রারম্ভে পানিপিপাসা উপস্থিত হয়। রোগীর বিশেষ ঘাম হয় (জেলস), যখন ঘাম হয় শরীরের একপার্শ্বে বেশী হয় (অ্যাসিড-নাই, চিনিন-সাম্ফ, অ্যাকোন)। সকালে নিদ্রাভঙ্গে সে মুখে তিক্ত বোধ করে এবং বড়ই দুর্বল হয়ে পড়ে। কুইনাইন অপব্যবহার জনিত জ্বরে পালসেটিলা অধিকতর উপযোগী। (লক্ষণানুসারে নেট্রাম-মিউরও ব্যবহৃত হয়)।
জিহবা। সাদা বা হরিদ্রাবর্ণের লেপাবৃত জিহবা, আঠা আঠা; শ্লেষ্মা দ্বারা আবৃত। মনে হয় জিহবা লম্বা ও চওড়া হয়েছে। মুখে দুর্গন্ধ, রোগীর টকদ্রব্য, মদ বা অন্যান্য উত্তেজক দ্রব্য পানে অভিরুচি।
সম্বন্ধ। ক্রন্দনশীলতায়-সিপিয়া ও নেট্রাম-মিউর তুল্য; চোখ-প্রদাহে -আর্জেন্ট-নাই তুল্য; পুরাতন সর্দিতে-সাইক্লেমেন তুল্য; চর্বিযুক্ত খাদ্য খেয়ে রোগ বৃদ্ধিতে-কার্বো-ভেজ, ইপি তুল্য; কুল্পী-বরফ খেয়ে রোগের বৃদ্ধিতে-আর্স, কার্বো-ভেজ, ইপি তুল্য; প্রসবান্তিক ভ্যাদাল ব্যথায়- ক্যামো, কুপ্রাম, জ্যান্থক্স তুল্য; ঋতুবন্ধের জন্য সহসা ঝাপসা দৃষ্টি হলে -সিপিয়া তুল্য; পা ভিজাবার ফলে ঋতুবন্ধে রাস-টক্স, ডাল্কা তুল্য; স্তন্যদুধ না হওয়ায়-অ্যাগ্লাস, আর্টিকা তুল্য।
বৃদ্ধি।-উত্তাপে; গুরুপাক দ্রব্য; ঘি তৈল ও চর্বি খাওয়ার পর; সন্ধ্যায়; গরম ঘরে; বামদিকে শুইলে; ধূমপানে; একদিন অন্তর; বজ্র-ঝটিকার পূর্বে; রৌদ্রে; গরম খাদ্যে; ঋতু পরিবর্তনে; বৃষ্টিতে ভিজিলে; ঝড়ে।
হ্রাস।-খোলা বাতাসে; ঠান্ডায়; ঠান্ডা খাদ্য ও পানীয়ে; মাথা উঁচু করে শুইলে; ধীরে ধীরে চললে; ঠান্ডা পানি মুখে রাখলে (দাঁত)
শক্তি।-৩, ৬, ৩০, ২০০, ১০০০ বা তদূর্ধ্বক্রম ব্যবহার্য্য। পালসেটিলার পরবর্ত্তী ঔষধ সাইলিসিয়া ও সাম্ফার। সেটারা লক্ষণভেদে পালসের ক্রিয়ার পরিপূর্ণতা আনে।