সোরিণাম (Psorinum)

ব্যবহারস্থল। -পুরাতন শিরঃরোগ, চর্মরোগ, পুরাতন রোগে সুনির্বাচিত ঔষধ সেবনেও উপকার না হওয়া, রক্তশূন্য শিশুদের রোগ, শরীর হতে অত্যধিক দুর্গন্ধ বের হয়, প্রতি শীতকালে রোগের আবির্ভাব, সোরা-বিষ-দোষ, গ্রন্থির স্ফীতি, অস্থিক্ষত, শোথ, যক্ষ্মারোগ, পুরাতন যকৃৎ- প্রদাহ, অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত কর্ণরোগ, দুরারোগ্য উদরাময় প্রভৃতি।

ক্রিয়াস্থল।-এটা একটি অ্যান্টি-সোরিক ঔষধ। মনের উপর এটার ক্রিয়া বিশেষরূপে পরিলক্ষিত হয়। জুফুলা ধাতুগ্রস্ত শিশুর পুরাতন রোগে সমধিক উপযোগী

উপযোগিতা।-সেরা-বিষ নষ্ট করতে এটা একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। সাঙ্কারের সাথে বহু লক্ষণে এটার সাদৃশ্য আছে। সাধারণতঃ সাঙ্কার তরুণ রোগে এবং সোরিণাম পুরাতন রোগে সমধিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

মন।-সোরিণামের শিশু অত্যন্ত রুগ্ন। অনবরত কান্নাকাটি করে; দিবা-রাত্রি কখনও শান্ত হয় না, রোগে ভুগে ভুগে ঘ্যানঘেনে স্বভাবের হয়। সাইপ্রিপিডিয়ামের ও জেলেপা শিশুও কান্নাকাটি করে, কিন্তু দিনের বেলায় খেলাধূলা করে, আর রাত্রি হলে চীৎকার করে কাঁদে। লাইকোপোডিয়ামের শিশু সমস্ত দিন কাঁদে ও সমস্ত রাত্রি ঘুমায়। সোরিণাম রোগী সর্বদাই উদ্বিগ্ন ভাবে সময় কাটায়, সর্বদা নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তায় বিভোর ও সেজন্য রোগী আত্মহত্যা করার কথা ভাবে (অরাম, ল্যাকেসিস, পালস); নিজের আত্মার সম্বন্ধেও অত্যন্ত নিরাশ হয়ে পড়ে। তার শরীর ভয়ানক চুলকায়, গায়ের চুলকানির জন্য সে উন্মাদের মত হয়ে যায়। অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন ও শ্রমবিমুখ; রোগীর শরীর হতে এত দুর্গন্ধ বের হতে থাকে যে, সেটার জন্য রোগী নিজে পৰ্য্যন্ত বিরক্ত হয়ে পড়ে; তাঁর মল, মূত্র, ঘাম, প্রদরস্রাব, লালা, থুথু প্রভৃতি সর্বজাতীয় স্রাব হতেই দুৰ্গন্ধ বের হয়। সোরিণাম রোগী সামান্য ঠান্ডাও সহ্য করতে পারে না, ঋতুর সামান্য পরিবর্তনে তার রোগের বৃদ্ধি। এটার রোগী সামান্য ঠান্ডাও সহ্য করতে পারে না, ঋতুর সামান্য পরিবর্তনে তার রোগের বৃদ্ধি। এটার রোগী অত্যন্ত শীতকাতুরে, গরমের রাত্রেও গায়ে ঢাকা দেয়-কেবল এই লক্ষণের উপর নির্ভর করে অনেক পুরাতন রোগ আরোগ্য হয়েছে।

গঠন ও স্বভাব।-শিশু অত্যন্ত শীর্ণ, রুগ্ন ও মলিন। মুখখানা চকচকে দেখায়। শিশুর শরীর হতে অত্যন্ত দুর্গন্ধ বের হয়। রিউম শিশুর শরীর হতে টক গন্ধ বের হয়। সোরিণাম রোগীর আকৃতি অত্যন্ত কদাকার, চোখের কোণে ঘা, কান দিয়ে পচা গন্ধযুক্ত পুঁজ বের হয়, নাক দিয়ে অনবরত সর্দি ঝরিতে থাকে, অনবরত খাই-খাই ভাব, পেটটি বড় ও হাত-পাগুলি সরু সরু; গায়ে পুরাতন ক্ষতচিহ্ন।

প্রদর্শক লক্ষণ।-শীত করে। গ্রীষ্মকালেও গরম কাপড় দরকার হয়। মাথা ঢাকিয়া রাখে, খুলে রাখতে পারে না। কোন তরুণ রোগ হওয়ার পর দুর্বলতা। যখন ঠিক ঠিক ঔষধ দিলেও ফল পাওয়া যায় না, তখন সোরিণাম প্রতিক্রিয়া শক্তি জাগ্রত করে। সর্বপ্রকার স্রাবে পচা গন্ধ। আঁসটে গন্ধ। রোগী হতাশ, ভাবে রোগ সারবে না। মাথা ধরার সঙ্গে ক্ষুধা পায়। মাথার চুল শুষ্ক, শুষ্ক চুলে জটা বাঁধে। মুখের কোণ ফাটা ফাটা। কানের আশে-পাশে একজিমা, তা হতে দুর্গন্ধ স্রাব। কান হতে অত্যন্ত দুর্গন্ধ পুঁজ বের হয়। বার বার টন্সিল পাকে। সর্বদাই খুব ক্ষুধা, মধ্যরাত্রে উঠে কিছু খেতে হয়। গর্ভাবস্থায় গা-বমি-বমি ও বমি। উদরাময়, অত্যন্ত দুর্গন্ধ মল। রাত্রি ১টা হতে ৪টায় বৃদ্ধি। শ্বেত-প্রদর, দুর্গন্ধ, ডেলা ডেলা, পিঠে ব্যথা, দুর্বলতা। হাঁপানি, বসে থাকতে পারে না, শুয়ে পড়ে ও হাত-পা ছড়িয়ে রাখে। বুকে যন্ত্রণা, শুইলে কম থাকে। হাতের আঙ্গুলের চারিদিকে চর্মরোগ। পায়ে ঘাম ও তাতে দুর্গন্ধ। চর্মরোগ, বিছানার গরমে বৃদ্ধি। গায়ে চুলকানি না থাকলেও চুলকায়। কফি খেলে ঔষধে ফল হয় না। শিশু সর্বদা ঘ্যান ঘ্যান করে। ঢেঁকুর উঠে, তাতে পচা গন্ধ। টক খেতে চায়। লিভারে বেদনা, চাপ দিলে বাড়ে। প্রচুর ঘাম হয়। চর্ম নোংরা ও তৈলাক্ত।

হাঁপানি।– খোলা বাতাসে হাঁপিয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে যায় ও শুয়ে পড়ে। হাত- পা যতই ছড়ান থাকে ততই উপশম। বুক অতি কষ্টে প্রসারিত হয়। বুক ধড়ফড় করে। বসলে বৃদ্ধি ও শুইলে উপশম। সাধারণতঃ হাঁপানি রোগে যে সকল লক্ষণ প্রকাশ পায় সোরিণামে বিপরীত লক্ষণই দেখা যায়। হাঁপানি রোগীর বৃদ্ধি সাধারণতঃ শয়নে। রোগী শুইতে পারে না, শুইলে টান বাড়ে। সমস্ত রাত্রি উঠে বসে থাকতে হয়। শুইলেই দম বন্ধ হয়ে আসে, শ্বাসকষ্ট বাড়ে। আর্সেনিক, অ্যারেলিয়া, ক্যানাবিস ইন্ডিকা, ন্যাফথালিন ইত্যাদি ঔষধে এমন লক্ষণ আছে, কিন্তু সোরিণাম এটার বিপরীত। সোরিণামের হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, বসলে বৃদ্ধি, শুইলে এবং দুটি হাত ছড়িয়ে রাখলে উপশম।

যক্ষ্মারোগ।-বুকের ডানদিকে মৃদু চাপবোধ, ক্রমশঃ সমস্ত বুকে ছড়িয়ে পড়ে। সামনে ঝুঁকলে বৃদ্ধি। শুষ্ক কাশি, গয়ারে ছোট ডেলা। হাঁপানি, বসলে বৃদ্ধি, শুইলে কম। মাঝে মাঝে বুকে যন্ত্রণা হয়। বক্ষাস্থির নিম্নে ঘা আছে এরূপ অনুভব। কথা বললে দুর্বলতা বোধ। বুক সঙ্কুচিত। অনেকক্ষণ কাশবার পর গয়ার উঠে। সর্বদা শীত-শীত।

পক্ষাঘাত।-তরুণ ও কঠিন রোগের পর পক্ষাঘাত। সর্বদা শীত-শীত বোধ করে। কাল দুর্গন্ধ মল। গায়ে দূর্গন্ধ।

শিরঃরোগ।-রোগীর মাথার যন্ত্রণা মধ্যে মধ্যে আসে, ঘুমন্ত অবস্থায় যখন সে পার্শ্ব পরিবর্তন করে তখনই তার যন্ত্রণার বৃদ্ধি হয়। মাথার যন্ত্রণার পূর্বে রোগী তার চোখের সম্মুখে আগুনের ফুল্কিবৎ পদার্থসকল দেখতে থাকে এবং তার দৃষ্টিশক্তি লোপ পাবার উপক্রম হয় (ল্যাক-ডিফ্লো, আইরিস, কেলি-বাই)। সোরিণাম রোগীর মাথার যন্ত্রণা আরম্ভ হলে অত্যন্ত ক্ষুধা পায় (ফস্ফোরাস)। লাইকো, সাইলি ও কষ্টিকাম রোগীর ক্ষুধার জন্যই মাথার যন্ত্রণা হতে থাকে। ইল্যান্স রোগীর ক্ষুধা পাওয়ামাত্র যদি সে কিছু না খায় তৎক্ষণাৎ তার মাথার যন্ত্রণা আরম্ভ হবে। সোরিণামের মাথার যন্ত্রণায় কিছু আহার করলেই কমে যায় (অ্যানাকার্ডিয়াম ও কেলি-ফস)। সোরিণামের মাথার যন্ত্রণা নাক হতে রক্তপাতের পর কমে যায় (মেলিলোটাস)।

চর্মরোগ।-সামান্য চুলকাইলে বা শরীরের কোথায়ও আঁচড় লাগলে সেখানে ছোট ছোট উদ্ভেদ উঠে থাকে, সেখানে অভ্যস্ত চুলকায়, এমনকি চুলকাইতে চুলকাইতে রক্ত বের করে ফেলে। এটার চুলকানিও মার্কারির চুলকানির মত বিছানার উত্তাপে বৃদ্ধিলাভ করে। চর্মরোগে সোরিণামের সাথে সাম্ফারের সাদৃশ্য আছে-একটি অপরটির অনুপূরক। সোরিণাম দুরারোগ্য পাঁচড়া রোগের উত্তম ঔষধ। যখন পাঁচড়ার উদ্ভেদগুলি কমে গিয়া পুনরায় শরীরের স্থানে স্থানে পুঁজবটি উঠে, তখন এই ঔষধ ব্যবহার করা যায়। উদ্ভেদগুলি সাধারণতঃ জানুর ভিতরদিকে, মাথার চুলের ভিতর, আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে, সন্ধি-বাঁকের ফাঁকে ফাঁকে, কানের উপরে ও পিছনে বের হয়ে থাকে। মেজেরিয়াম-দাদ, একজিমা এবং যে কোন প্রকারের চর্মরোগে অত্যন্ত চুলকানি থাকে, রাতে এবং বিছানার গরমে বাড়ে। চুলকাইয়া দিলে পরে জ্বালা করে। টেলুরিয়াম -দাদ এবং অন্যান্য চর্মরোগ (মেজেরিয়ামের মত) চুলকানি বেশী। ডায়োলা-ট্রিকলার – অত্যন্ত চুলকানিযুক্ত চর্মরোগ, মাথায়, মুখে এবং কানের পিঠে একজিমা, যেমন চুলকায়, তেমনি সেটা হতে রস ঝরে। ওলিয়েন্ডার-মাথায় এবং কানের পিঠে উদ্ভেদ। চুলকানি বেশী। সেটা হতে রক্ত পড়ে এবং পোকা জন্মায়। ঘাড়ে, উরুতে এবং অন্ডকোষে হাজাকর ঘা হয়।

উদরাময়।-সোরিণাম প্রাতঃকালীন উদরাময়ে অ্যালো, সাম্ফ, নেট্রাম-সাম্ফ তুল্য। রোগীর মলত্যাগের বেগ সহসা উপস্থিত হয়, মল হতে পচা দুর্গন্ধ বের হয়। কোন সাংঘাতিক রোগের পর যদি কালচে বর্ণের দুর্গন্ধযুক্ত বা পচা ডিমের গন্ধের মত গন্ধযুক্ত মল বের হতে থাকে, তবে এটা দ্বারা উত্তম ফল পাওয়া যায়। সুনির্বাচিত ঔষধ বিফল হলে, সোরিণাম ২০০ বা ১০০০ এক মাত্রায় আশাতিরিক্ত ফল হতে দেখা যায়। সোরিণামে যেমন প্রাতঃকালীন উদরাময় আছে সেইরূপ আহারের পরও উদরাময়ের বৃদ্ধি আছে। খাওয়ার পর হঠাৎ মলত্যাগের বেগ, পায়খানায় দৌড়াইয়া যাবার অবসর হয় না, মল পানির মত, আমযুক্ত; দুৰ্গন্ধ, এত তীব্র গন্ধ যে, মনে হয় যেন পচা মাংস ঢালিয়া রেখেছে। এটার উদরাময়ের বৃদ্ধি সাধারণতঃ রাত্রি ১টা হতে ভোর ৪টার ভিতর। সোরিণাম কোষ্ঠকাঠিন্যেরও ঔষধ। অত্যধিক কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে যখন কোমরে অত্যন্ত ব্যথা থাকে অথবা পাকাশয়ের জড়তাসহ কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য সাম্ফার, লাইকো প্রভৃতি ঔষধ সেবন করে যখন আরোগ্য লাভ হয় না, তখন সোরিণাম মন্ত্রের কাজ করে।

তালুমূলগ্রন্থি-প্ৰদাহ বা টন্সিলাইটিস।-গিলবার সময় কানের গোড়া পৰ্য্যন্ত ব্যথান্বিত হয়। গলার ভিতর এত যন্ত্রণা হতে থাকে যে, মনে হয় যেন গলার ভিতর ঝলসিয়া গেছে। টন্সিল হয়ে মুখ হতে অত্যন্ত দূর্গন্ধযুক্ত লালা বের হতে থাকে (অ্যাসিড-নাইট্রিক, মার্কারি)। ডাঃ অ্যালেন বলেন-সোরিণাম যে কেবল তরুণ টন্সিলাইটিসের জন্য উপযোগী তা নয়, এই ঔষধ রীতিমত সেবন করতে দিলে গলগ্রন্থির প্রদাহের প্রবণতা পর্য্যন্ত দূর হয়ে যায়। সোরিণাম রোগীর গলার ভিতর ক্ষত হয়েছে এরূপ বোধ, সেজন্য কিছু গিলবার সময় যন্ত্রণা অনুভব করে। বেদনাহীন টন্সিল-প্রদাহে ব্যারাইটা কার্ব উত্তম ঔষধ।

কাশি।-সোরিণাম রোগীর প্রতি শীতকালে কাশির আবির্ভাব হয়। সোরিণাম যে সকল রোগীর পক্ষে উপযোগী সাধারণতঃ দেখা যায় তাদের যে কোন প্রকার চর্মরোগ লুপ্ত হওয়ার অতীত ইতিহাস আছে। সকালে ঘুম ভাঙ্গিবার পর এবং সন্ধ্যার পর কাশি বেশী হয়। কটু স্বাদ ও অতি দুর্গন্ধবিশিষ্ট আস্ত মটরের মত শক্ত জমাট শ্লেষ্মা বের হয়। রোগীর কাশতে কাশতে বুকে শ্বাসকষ্ট ভাব উপস্থিত হয়; উঠে বসলে এবং হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমালে উপশম।

কর্ণরোগ।-কানের পশ্চাদ্দিকের একজিমা। ঘন আঠার মত এবং দুর্গন্ধযুক্ত রসস্রাব হতে থাকে। কান-পাকা রোগের এটা উৎকৃষ্ট ঔষধ। রোগীর কান হতে পচা দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা পুঁজ বের হতে থাকে। যখন শিশুদের হাম হয়ে বা আরক্ত-জ্বর হয়ে কান পাকে এবং কান হতে পূর্বোক্তরূপ স্রাব বের হতে থাকে, তখন এটা চমৎকার ঔষধ। সোরিণাম কান-পাকায় অ্যাসিড- নেই, সাইলিসিয়া ও টেলিউরিয়াম তুল্য।

স্ত্রীরোগ।– খোস-পাঁচড়া ইত্যাদি চর্মরোগ বসে গিয়া যাদের ঋতুস্রাব লুপ্ত হয় বা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাব হয় তাদের পক্ষেও এটা ব্যবহার্য্য ঔষধ; প্রদর রোগে যখন বড় বড়, চাপ চাপ ও অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বের হয়, রোগিণী বস্তি-গহ্বরের সেক্রাম অস্থিতে যখন অত্যন্ত বেদনা অনুভূত করে, সে অত্যন্ত অবসন্ন ও বিষণ্ন, তখন সোরিণাম উত্তম ঔষধ। গর্ভাবস্থায় দুর্দমনীয় বমন। রোগিণীর গর্ভস্থ ভ্রূণ প্রবলভাবে নড়িতে থাকলেও এটা দ্বারা উপকার পাওয়া যায়। অষ্টম মাসে শিশু এত নড়ে যে; রোগিণীর ঘুম ভেঙে যায়। আর্ণিকার ভ্রুণও অত্যধিক নড়াচড়া করে, লাইকো রোগিণীর ভ্রূণ এমনভাবে নড়ে যেন ডিগবাজী খেতেছে।

প্রমেহ রোগ। -বহুদিনের পুরাতন স্রাব। রোগীর প্রমেহ সারে না বা লুপ্তভাবে থাকে, সোরিণাম সেবন করতে দিলে স্রাব পুনরায় আবির্ভূত হবে এবং রোগ আরোগ্য হবে। রোগী প্রস্রাব করার পূর্বে মূত্রাধার-মুখশায়ীগ্রন্থি হতে রস নিঃসৃত হয়। প্রস্রাবের উপর চবির মত পদার্থ ভাসে। সোরিণাম শয্যামূত্র রোগে কার্যকরী ঔষধ। এই রোগ সাধারণতঃ পূর্ণিমার সময় বেশী হয় অথবা রোগীর পূর্বে একজিমা হয়েছিল, এরূপ ইতিহাস থাকে।

স্বপ্ন।-রোগী শেষরাত্রে চোর-ডাকাত, নানাবিধ বিপদের বা ভ্রমণের স্বপ্ন দেখে অথবা পায়খানায় বসে বসে বাহ্যে করছে এরূপ স্বপ্ন দেখিবার পর সে বিছানায় মলত্যাগ করে ফেলে।

জ্বর। সোরিণাম নানাবিধ জ্বররোগের উত্তম ঔষধ। টাইফয়েড যখন নির্বাচিত ঔষধ সেবনেও উপশম হয় না, তখন সোরিণাম দ্বারা চমৎকার ফল পাওয়া যায়। ম্যালেরিয়ায় যখন সন্ধ্যাবেলা জ্বর আসে, শীতাবস্থায় পানিপিপাসা থাকে, পানি পান করলেই কাশির বেগ, উত্তাপাবস্থায় মুখমণ্ডলে ঘাম, প্রবল প্রলাপ ও অত্যন্ত পানিপিপাসা থাকে (কি শীতাবস্থা কি উত্তাপাবস্থা), উত্তাপাবস্থায় প্রচুর ঘাম হতে থাকে, সামান্য নড়াচড়ায় এত ঘাম হয়, যেন রোগী ঘর্মে গোসল করে উঠেছে। শেষরাত্রে অত্যধিক পরিমাণে ঘাম হওয়া এটার বিশেষত্ব।

শেষকথা। -পুরাতন রোগে যখন সুনির্বাচিত ঔষধ সেবনে ফল পাওয়া যায় না, সাংঘাতিক তরুণ রোগে যখন প্রতিক্রিয়ার অভাব দেখা যায় তখন সোরিণামকে মনে করতে হয়। চর্মরোগ বিলুপ্ত হয়ে কোন রোগ হলেও সোরিণাম উত্তম। কোন কঠিন রোগের পর দুর্বলতা দূর করতে ব্যবহৃত হয়। দুর্গন্ধ লক্ষণটিই এটার বিশেষত্ব।

সম্বন্ধ।– উদ্ভেদসমূহ বা পাঁচড়া ইত্যাদিতে -হিপার তুল্য; জিহবা যেন দগ্ধ হয়ে গেছে লক্ষণে-স্যাঙ্গুইনেরিয়া তুল্য; রোগের সময় প্রচুর ঘর্মে-নেট্রাম মিউর তুল্য; রোগ আরোগ্যে হতাশ হওয়ায়-চায়না, ওপিয়াম আর্স তুল্য; রাত্রে ক্ষুধা পাওয়ায় চায়না, সালফার, ফস্ফোরাস তুল্য; শয্যামূত্রে-ক্রিয়োজোট, সিনা, সিপিয়া তুল্য।

বৃদ্ধি।– স্পর্শে; চাপে; ঘোড়ায় চড়লে; মানসিক উত্তেজনায়; ঠান্ডা পানীয় পানে (বুকে যন্ত্রণা); পানি খেলে (কাশি); ডানদিকে শুইলে; (লিভার); খোলা বাতাসে; সন্ধ্যায়; মধ্যরাত্রের পূর্ব পর্য্যন্ত; সকালে; শীতকালে (কাশি); পূর্ণিমায়; কফি পানে।

হ্রাস। খাওয়ার সময়; শুইলে (বক্ষঃরোগ); বিশ্রামে; ঘরের মধ্যে; উত্তাপে; গরম কাপড় পরিলে।

শক্তি।– ৩০, ২০০, ১০০ বা তদূর্দ্ধ শক্তি। একমাত্রা প্রয়োগ করে ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!