পডোফাইলাম (Podophyllum Peltatum)

পরিচয়।-এটার অপর নাম মে-অ্যাপেল ম্যানড্রেক।

ব্যবহারস্থল। –উদরাময়, শিশু-কলেরা, প্রাতঃকালীন উদরাময়, অম্লরোগ, শিশুদের দাঁত উঠবার সময়কার নানাবিধ রোগ, অজীর্ণ, বমনেচ্ছা, পাকাশয়ের প্রদাহ, গুহ্যদ্বার-চ্যুতি, হাঁপানি, শিরঃরোগ, শ্বাসনলীর প্রদাহ, ন্যাবা, অর্শ, মস্তিষ্কে জলসঞ্চয়, জ্বর (সবিরাম, স্বল্পবিরাম প্রভৃতি), জরায়ু-ভ্রংশ, ডিম্বাধারে অর্বুদ, হুপিং-কাশি, চোখ-বিকৃতি, গলগন্ড, হৃত্যন্ত্রের রোগ প্রভৃতি।

ক্রিয়াস্থল।-পডোফাইলামের প্রধান ক্রিয়া যকৃৎ ও উদরে। শিশুদের একটি উপকারী বন্ধু। সকালে প্রচুর দুর্গন্ধযুক্ত বাহ্যে হওয়া এটার বৈশিষ্ট্য। এটার উদরাময় বেদনাশূন্য। পডোফাইলাম রোগীর পর্য্যায়ক্রমে উদরাময় ও মাথার যন্ত্রণা হয়ে থাকে। সাধারণতঃ শীতকালে শিরোবেদনা এবং গ্রীষ্মকালে উদরাময় হওয়া এটার বৈশিষ্ট্য।

প্ৰদৰ্শক লক্ষণ।-সকালে বৃদ্ধি, বেদনাহীন, প্রাতঃকালীন উদরাময়, প্রচুর মল, দুৰ্গন্ধ মল, রোগীর কাছে গরম বোধ হয়। মলে ময়দার মত তলানি। প্রত্যেক বার অনেকখানি মল, তাতে শরীর অবসন্ন হয়। শিশু দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ করে, বমির পূর্বে পেটের মধ্যে গুড়গুড় শব্দ হয়। কেবলমাত্র উপুড় হয়ে শুইতে পারে। মলত্যাগ কালে মনে হয় স্ত্রীযন্ত্র পড়ে যাবে। জ্বরে শীতাবস্থায় গল গল করে কথা বলে। জ্বরের আক্রমণ সকালে ৭টায়। উদরাময় ও কোষ্ঠবদ্ধতা পৰ্য্যায়ক্রমে হয়। মাথাধরা ও উদরাময় পর্যায়ক্রমে হয়। উদরাময়ের সঙ্গে পায়ের ডিমিতে খাল ধরে। জিহবা দত্তের ছাপযুক্ত ও ময়লা (পডোকে ভেজিটেবেল মার্কারি বলে); মুখের মধ্যে চটচটে মিউকাস। শিশুকে গোসল করাবার সময় উদরাময়। যকৃৎ বেদনাযুক্ত, হাত বুলাইলে আরাম বোধ করে। হুপিং-কাশি, কোষ্ঠবদ্ধতা, ক্ষুধার অভাব। গ্রীষ্মকালে উদরাময়। শিশুদের দাঁত উঠবার সময় মাথায় ঘাম, শরীর ঠান্ডা। মুখ হতে দুর্গন্ধ বের হয়। পিপাসার অভাব। বমি গরম। তাতে খাদ্যদ্রব্য বা পিত্ত থাকে। শিশু দন্তোদ্গমকালে বা কলেরায় আধ বোজা চোখে পড়ে থাকে। ঘাম ঠান্ডা ও চটচটে। মলত্যাগের পূর্বে সময়ে ও পরে মলদ্বার (Prolapsus-Ani) বের হয়ে পড়ে; মলত্যাগের পর মলদ্বার টাটায়। প্রস্রাবের পর জরায়ু ঝুলে পড়ে।

অর্শ, মলদ্বারচ্যুতি ও অর্শরোগের সঙ্গে মলদ্বার ঝুলে পড়ে ও দীর্ঘকাল স্থায়ী উদরাময় থাকে। সকালে উদরাময় বাড়ে। গাঢ় শুষ্ক মিউকাস বা রক্তমিশ্রিত মিউকাস। মলত্যাগকালে পিঠ গরম হয়ে উঠে। অর্শ না থাকলেই মলদ্বার-চ্যুতির পক্ষে পড়ো উৎকৃষ্ট ঔষধ। মল গরম বোধ হয় এবং মলদ্বার-চ্যুতির সাথে মলদ্বারে টাটানি থাকে।

শিরঃরোগ।-পডোফাইলামের মাথার যন্ত্রণার সময় রোগী জ্ঞান হারাইয়া ফেলে। দুই দিকের রগ যেন বিদ্ধ হচ্ছে এরূপ বোধ। ঐ সময় রগ টিপিয়া দিলে উপশম। ঠান্ডা পানিতে মাথা ধুইয়া দিলেও উপশম। দন্তোদ্গমকালে শিশুর মাথা অত্যন্ত গরম হয়। মাথার যন্ত্রণার পর উদরাময় এবং উদরাময়ের পর মাথার যন্ত্রণা পর্যায়ক্রমে দেখা দেয়। সাধারণতঃ শীতকালে মাথার যন্ত্রণা ও গ্রীষ্মকালে উদরাময়।

উদরাময়।-শিশুদের দাঁত উঠবার সময়কার উদরাময়, গ্রীষ্মকালীন এবং পুরাতন উদরাময়। মলত্যাগের পরিমাণ অত্যধিক, এবং খুব তোড়ে বের হয়, মনে হয় বুঝি পেট খালি হয়ে গেল। মলে দুর্গন্ধ, বেদনাহীন, মলে ময়দার মত তলানি। মলত্যাগের পর মনে হয় আর বুঝি বাহ্যে হবে না, কারণ পেট চুপসে যায়, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার প্রচুর মলত্যাগ করে। মল নিঃসরণকালে শিশুর মলদ্বার বের হয়ে পড়ে। মলত্যাগের সময় ফটফট বা গরগর শব্দ। পড়োর বাহ্যে খুব ভোর হতে বেলা ১০টা পৰ্য্যন্ত একভাবে অধিক পরিমাণে হতে থাকে এবং ১০টার পর হতে আস্তে আস্তে মলত্যাগের মাত্রা অপরাহ্নে হয়ত স্বাভাবিক বাহ্যে নচেৎ মোটেই হয় না। শিশু কলেরা ও দাঁত উঠবার সময় উদরাময় কখন কখনও সাংঘাতিক আকার ধারণ করে। শিশু অবিরত দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ করে। আধ বোজা চোখে পড়ে থাকে এবং অত্যন্ত ঘ্যান ঘ্যান করে। কাটবমি ও ওয়াক তোলা, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং পরিবর্তনশীল বাহ্যে, প্রচুর মল, দুর্গন্ধযুক্ত বাহ্যে ইত্যাদির সাথে সকালে রোগের বৃদ্ধি পড়োর পরিচায়ক লক্ষণ।

সাঙ্কার। শয্যায় থাকতেই মলবেগ হয়, রোগী বেগ ধারণ করতে পারে না। তার কাপড় চোপড় সামলান শক্ত। সাক্ষারের বাহ্যে দুর্গন্ধযুক্ত, এই দুর্গন্ধ যেন রোগীর সঙ্গে সঙ্গেই থাকে। শিশুর দাঁত উঠবার সময়; অতিরিক্ত দুধপানের ফলে বা কোনরূপ পীড়কা বা চর্মরোগ বসে যাবার ফলে উদরাময়ে সাঙ্কার কার্যকরী।

নেট্রাম-সাম্ফ।-নেট্রাম-সাল্ফ রোগী বিছানা হতে উঠে চলাফেরা করলে তার মলত্যাগের বেগ আসে। প্রথমে বায়ু নিঃসরণ হয়ে তারপর বাহ্যে এবং সেটা চারিধারে ছড়িয়ে পড়বে।

ব্রাইওনিয়া।-উদরাময় সামান্য নড়াচড়ায় বৃদ্ধি লাভ করে। সাধারণতঃ শীতের অবসানের পর গ্রীষ্মের প্রারম্ভে খাওয়ার দোষে হয়ে থাকে।

রিউমেক্স।টিউবারকুলার ধাতুগ্রস্ত রোগীদের প্রাতঃকালীন উদরাময়। ভোর হতে বেলা ১০টা পর্য্যন্ত উদরাময়ের বৃদ্ধি, বেলা ১০টার পর হতে উদরাময়ের বেগ কমতে থাকে, অপরাহে আর মলত্যাগ করে না, ভয়ানক কষ্টদায়ক অবিশ্রান্ত শুষ্ক কাশি হয়। এটাই রিউমেক্সের বিশেষ লক্ষণ।

নুফার-লুটিয়া।-এটার মলত্যাগের বেগ ভোর ৪টা হতে ৭টার মধ্যে, মল দুর্গন্ধযুক্ত, কিন্তু সাধারণতঃ এমন উদরাময় টাইফয়েড রোগীরই বেশী দেখা যায়।

স্ত্রীরোগ। রোগীর ডান ডিম্বাধারে ব্যথা, ঐ বেদনা ডান ডিম্বকোষ হতে উরুর দিক পৰ্য্যন্ত সঞ্চারিত হয়। ডিম্বকোষে অর্বুদ হয়ে যন্ত্রণা কাঁধ পর্যন্ত সঞ্চারিত হয়ে থাকে। ডানদিকের ডিম্বকোষে বেদনা এবং বামদিকের ডিম্বকোষে অসাড়তা বোধ। যে সকল রমণী কঠিন পরিশ্রম করে তাদের প্রসবান্তিক জরায়ু-ভ্রংশ রোগে উদর-লক্ষণ থাকলে উপযোগী। পডোফাইলাম রোগিণীর গর্ভাবস্থায় যোনিদ্বার ফুলে উঠে, পেট চেপে শুইলে আরাম বোধ করে। গর্ভাবস্থায় রাত্রে তার বার বার প্রস্রাব হয়ে থাকে। পডোফাইলাম রোগীর উদরাময়ের সাথে মলদ্বার ও জরায়ুর স্থানচ্যুতি বিশেষ লক্ষণ। জরায়ুর স্থানচ্যুতিতে ও স্থানচ্যুতির মত অনুভূতিতে বেলেডোনা, সিমিসিফুগা, অ্যাগারিকাস, অরাম-মিউর, নেট্রাম, মিউরেক্স, লিলিয়াম-টাইগ্রিনাম, সিপিয়া প্রভৃতি ঔষধ তুলনীয়।

জ্বর। -স্বল্পবিরাম ও সবিরাম জ্বর। পিত্তপ্রধান এবং উদরাময় অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং যকৃৎ- রোগগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্বল্প বিরাম জ্বরে কার্যকরী। ম্যালেরিয়া বা সবিরাম জ্বরে রোজ সকাল ৭টায় জ্বর আসিবার পূর্বে পাকাশয়িক ও পিত্তজ লক্ষণ প্রকাশ পায় যথা, গা-বমি-বমি, কাট-বমি, পাতলা মলত্যাগ। রোগী শীতাবস্থায় অবিরত গলগল করে বকিতে থাকে। শীতাবস্থায় পিপাসা থাকে না। অগ্নির উত্তাপে উপশম হয় না, কিন্তু গরমে বা লেপ গায়ে দিয়ে গুইলে উপশম। শীত থাকতে থাকতেই উত্তাপাবস্থা আরম্ভ হয় এবং রোগী ঘুমিয়ে পড়ে। ঘর্মাবস্থায় তার মাথার যন্ত্রণা কমে যায় ও নিশ্চিন্ত মনে ঘুমায়। রোগীর মুখ হতে তীব্র গন্ধ বের হয়।

যকৃৎ রোগ।– পডোফাইলামকে ভেজিটেবল মার্কারী বলে। যকৃৎ বড় ও বেদনাযুক্ত হয়, ঐ স্থানে আস্তে আস্তে হাত বুলাইলে উপশম হয়। জিহবা দন্তছাপযুক্ত ও ময়লা, মুখে দুর্গন্ধ। মুখের স্বাদ পচা। যকৃৎ রোগ হতে ন্যাবা অথবা অজীর্ণ রোগ দেখা দেয়। অম্ল, গলা মুখ শুষ্ক, খাওয়ার পরে মুখে পানি উঠে। কখন কখনও বমি হয়। বমির পরই খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা। কোষ্ঠবদ্ধতা, মলে দুর্গন্ধ, সেইসঙ্গে মাথাধরা। কোষ্ঠবদ্ধতা ও উদরাময় পর্যায়ক্রমে আসে।

সম্বন্ধ :- উদরাময়ে-সাল্ফ, নেট্রাম-সাফ, অ্যালো ও ব্রাইও তুল্য; শিশুদের কলেরায়- ভেরেট্রাম, অ্যালো তুল্য; মলদ্বারের স্থানচ্যুতি ক্ষেত্রে- অ্যালো, নাক্স, সিপি, বেল ও রুটা তুল্য; মাথার যন্ত্রণায় -এপিফেগাস তুল্য; উদরাময়ের সাথে ডিম্বকোষের বেদনায়-কলোসিন্থ তুল্য।

বৃদ্ধি।-অতি প্রত্যুষে; গরম কালে; দাঁত উঠবার সময়; স্পর্শে; সিঁড়িতে উঠলে; পরিশ্রমে; খোলা বাতাসে; ধুবার সময়; খাওয়ার পর; পান করার পর; টক দ্রব্যে।

হ্রাস। -চাপ দিলে; পেটের উপর শুইলে; গা-ভাঙ্গিলে; আক্রান্ত অংশ কেউ টিপিয়া দিলে; গর্ভাবস্থায় উপুড় হয়ে শুইলে; বিছানায় হাত- পা ছড়িয়ে শুইলে; গরম বস্ত্রাদি দ্বারা শরীর ঢাকিয়া রাখলে (শীতাবস্থা)।

শক্তি।– ১x, ৩x, ৬, ১২, ৩০, ২০০, ১০০০ ক্রম বালক-বালিকাদের উদরাময়ে বা কলেরায় ৩০ শক্তি কার্যকরী।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!