মেডোরিনাম (Medorrhinum)
পরিচয়।-এটা একটি নোসোড জাতীয় (রোগ-বিষজ ঔষধ। প্রমেহ বিষ হতে এই ঔষধ তৈয়ারী হয়ে থাকে।
ব্যবহারস্থল।-সাইকোসিস বিষজ গেঁটেবাত, আমবাত, স্নায়ুশূল, পক্ষাঘাত ও নারীদের পুরাতন ডিম্বাশয়-প্রদাহ, ফ্যালোপিয়ান-টিউবের প্রদাহ, তন্তুময় অর্বুদ, কোষময় অর্বুদ ও জরায়ুর অন্যান্য রোগে এবং সাইকোসিস-দুষ্ট শিরঃরোগ, হাঁপানি, বাধক, মৃগী, চোখে-প্রদাহ, যকৃতের ফোঁড়া, চর্মরোগ, বিশেষতঃ হাতের চর্মরোগ, আঁচিল, মূত্রপথের অবরোধ; স্কন্ধবেদনা; কার্সিনোমা বা ক্যান্সার (যদি প্রমেহরোগের ইতিহাস বিদ্যমান থাকে তবে), সর্বশরীরের কম্পনানুভব, তীব্র স্নায়বিক দৌর্বল্য ও অবসন্নতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই ঔষধ কার্যকরী।
ক্রিয়াস্থল। -কুচিকিৎসিত প্রমেহ রোগের অর্থাৎ স্রাব প্রতিরোধ জন্য রোগীর স্বাস্থ্য বিকৃত হলে বা নানাবিধ দূরারোগ্য রোগে ভুগতে থাকলে এটা প্রয়োগে উপকার দর্শে। এই ঔষধ প্রয়োগে অনেক ক্ষেত্রে প্রমেহস্রাবটি ফিরে আসে এবং ক্রমে ব্যাধি-লক্ষণ ও স্রাব দুই-ই অন্তর্হিত হয়। কিন্তু স্রাবটি ফিরে আসতে দেখলেই রোগী যদি ভীত হয়ে পড়েন এবং অন্যরূপ চিকিৎসা করেন তা হলে রোগটি আরও কঠিন হয়ে পড়ে। প্রমেহ রোগদুষ্ট পিতামাতার সন্তানের বহুবিধ রোগেই ঔষধটি কার্যকরী। ঔষধটি ধীর ক্রিয়াশীল। উচ্চশক্তি প্রয়োগ করে ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
প্রদর্শক লক্ষণ।-মেহরোগ উত্তমরূপে সারে নেই, মাত্র চাপা পড়ে আছে-এমন ক্ষেত্রে যে-সকল রোগ জন্মে, বিশেষতঃ বাতরোগ, উন্মাদরোগ ও হাঁপানিরোগ। শিশুরা বেঁটে, বৰ্দ্ধিত হয় না (প্রমেহ বিষদুষ্ট ব্যক্তির সন্তান)। শিশুদের সর্দি-কাশি, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি। টন্সিল বড়, নাকে ময়লা, ঘন হলদে স্রাব (নাক হতে)। ঠোঁট পুরু (মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস লবার জন্য)। মল শক্ত বলের মত। হাত-পায়ে জ্বালা। পুরাতন বাতের বেদনা, দিনে বাড়ে রাত্রে থাকে না (বিপরীত- সিফিলিনাম)। সর্দি হলেই হাঁপানির টান দেখা দেয়। মিষ্টি পছন্দ করে। পুত্র-কন্যা জন্মে না বা মরে যায়। দেহে পিঁপড়ে চলার অনুভূতি। মাসিক ঋতুকালে মুখে ছোট ছোট ফোঁড়া। খুব পিপাসা এবং ক্ষুধা। খাওয়ার পরই আবার খেতে চায়। লবণ, মিষ্টি, মদ, গরম পানীয় গ্রহণের প্রবল ইচ্ছা। গর্ভ অবস্থায় বমি। পেটের উপর শুইলে অর্থাৎ উপুড় হয়ে শুইলে ভাল থাকে। মলদ্বার হতে দুর্গন্ধ স্রাব। মলদ্বারে চুলকানি। মূত্র ধীরে ধীরে বের হয়। শয্যা-মূত্র। দুর্গন্ধ; ঋতুস্রাব কাল, ডেলা ডেলা; পাতলা, হাজাকর, আঁসটে গন্ধ। ঋতুকালে কলিক। স্তন ঠান্ডা ও টাটানি। পড়বার সময় স্বরভঙ্গ। সর্বদা পা নাড়ে। ঠান্ডা চায়। টিউমার, বিশেষতঃ যাদের বংশে মেহরোগ আছে টিউমার নরম ও থলথলে। হাঁটু ও বুকে ভর দিলে (knee-chest position) শ্বাসকষ্ট কমে। মূখ হতে লালাস্রাব। ছেলেদের হস্তমৈথুন অভ্যাস। হাঁপানি, ভোর ২টা হতে ৪টা পর্য্যন্ত বৃদ্ধি। গা হতে দুর্গন্ধ বের হয় (শিশু)।
মন।এই ঔষধটির মনোলক্ষণ বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। স্মৃতিশক্তির অভাব; নাম বা শব্দের অক্ষর ভুলে যায়, বিশেষতঃ পরিচিত বন্ধুর নাম পর্যন্ত ভুলে যায়-তাদের কি নাম তা পর্য্যন্ত জিজ্ঞাসা করতে হয়। এমন কি সময় সময় নিজের নাম পর্য্যন্ত ভুলে যায় (কেলি-ব্রোম, অ্যালিউ, ভ্যালে)। শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে পারে না; চিরপরিচিত জায়গার নাম, বন্ধুর নাম বা কোন দ্রব্যের নাম বানান করতে পারে না। গল্প বলতে বলতে গল্পের সূত্র হারাইয়া ফেলে। রোগী মনে করে, যেন তার পশ্চাৎ আসছে (অ্যানাকা), কে যেন ফিস ফিস করে কথা বলতেছে, এটা পৰ্য্যন্ত সে শুনতে পায়। মেডোরিণাম রোগিণী রোগলক্ষণ ঠিকমত বলতে পারে না, বলবার সময় হতবুদ্ধি হয়ে যায় ও সব গোলমাল করে ফেলে। রোগী বা রোগিণী না কাঁদিয়ে তার রোগলক্ষণ অথবা অপরাপর কথা বলতে পারে না (পালস); সমস্ত দিন সে অসন্তুষ্ট অবস্থায় থাকলেও রাত্রে সে মহা আনন্দে থাকে। সকল বিষয়েই সে ব্যস্ত, অধৈর্য্য ও উদ্বিগ্ন; কোন কাজ করার সময় রোগিণী এত ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে, অল্পেতেই শ্রান্ত হয়ে পড়ে (হিপাব, নেট্র-মি, লিলিয়াম, সাক্ষ)। নিজের লক্ষণাবলীর কথা চিন্তা করলে রোগের বৃদ্ধি হয়।
মস্তক। -মস্তিষ্কের ভিতর অত্যধিক জ্বালাজনক বেদনা, মস্তকের পশ্চাৎদিকেই বেশী যন্ত্রণা হয়, সেটা মেরুদণ্ডের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। রোগী মনে করে তার মস্তক ভারী ও পশ্চাৎদিকে আকৃষ্ট হচ্ছে অর্থাৎ হেলিয়া পড়ছে। গাড়ীতে ভ্রমণ করার সময় তার মাথায় যন্ত্রণা ও উদরাময়ের বৃদ্ধি। কাশলে ও চোখে আলো লাগলে মাথার যন্ত্রণার বৃদ্ধি। তার মাথার ভিতর আড়ষ্টভাব এত বৃদ্ধি হয় যে, রোগিণী মনে ভাবে বুঝি সে পাগল হয়ে যাবে (বেল, ক্যাল্কে, ট্যারেন্টুলা)। মস্তিষ্কের ভ্রমণশীল স্নায়ুশূল, ভিজা স্যাঁতসেঁতে ঋতুতে বৃদ্ধি। মস্তিষ্কের ভিতর তীক্ষ্ণ বেদনা, সেটা হঠাৎ আসে ও হঠাৎ চলে যায় (বেল)। মাথার এমন কোন স্থান নেই যেখানে মেডোরিণাম রোগীর যন্ত্রণা হতে পারে না। রোগীর কপালে যেন একটা দৃঢ়বন্ধনী রয়েছে বোধ। মাথায় অসম্ভব চুলকানি, মাথায় নানাপ্রকার উদ্ভেদ বের হয় দাদের মত চর্মরোগও মাথায় হয়ে থাকে। মাথায় প্রচুর মরামাস পড়ে। রোগিণীর চুল শুষ্ক ও সহজে উঠে আসে। তার মাথার চুল এত শুকনা যে আঁচড়ালে পটপট করে শব্দ হয়।
ক্ষুধা ও আকাঙ্ক্ষা।-মেডোরিণাম রোগীর রাক্ষুসে ক্ষুধা (আয়োড); এই খেয়ে উঠেছে পেটে আর জায়গা নেই, কিন্তু খাবার দেখলেই অমনি খাওয়ার জন্য বায়না ধরে, তার দুর্দমনীয় ক্ষুধা (সিনা, আয়োড, লাইকো, সোরি)। যেমন রোগীর অত্যধিক ক্ষুধা সেইরূপ অত্যধিক পানিপিপাসা, এমন-কি সে যেন স্বপ্নের ভিতর পর্যন্ত পানি পান করে; পানি পান না করে থাকতেই পারে না। ক্ষুধা ও পানিপিপাসা যেমন তার অসম্ভব সেইরূপ মদ্যপান করার আকাঙ্ক্ষাও তার অসম্ভব। মেডোরিণাম রোগীর লবণ, মদ, মিষ্টি ও গরম দ্রব্য ভক্ষণে ইচ্ছা, কমলালেবু ও কাঁচা ফলমূলাদি খাওয়ার জন্যও তার ইচ্ছা খুব। আবার সাল্ফার রোগীর মত মিষ্টিদ্রব্যও খেতে চায়। তামাক, বরফ প্রভৃতি দ্রব্যেও তার অত্যধিক আকাঙ্ক্ষা, যদিও তার এই সকল দ্রব্যে ভয়ানক লোভ, খেতে যেমন চায়, খেতে তেমন পারেও, কিন্তু খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বমি করে ফেলে।
পেটের বেদনা তীব্র; পেটে কামড়ান বেদনা, সেটা খাওয়ার পর বা পানি পান করার পর কমে না। পৈটের ভিতর কম্পন ও ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা। রোগীর যকৃৎ ও প্লীহার অত্যন্ত বেদনা, পেটে ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুইলে কতকটা উপশম। মেডোরিণাম দ্বারা উদরীও আরোগ্য হয়ে থাকে। তার উদরের ভিতর এমন ভাবে স্পন্দন হয় যে, হাত দিয়ে তা অনুভব করা যায়। কুঁচকির গ্রন্থিগুলি ফুলে উঠে। তার সমস্ত শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়, অত্যন্ত চোয়া ঢেঁকুর উঠতে থাকে। মলত্যাগের সময় তার যন্ত্রণা হয়, রোগী মনে করে যেন মলদ্বারে একটি গুটলে বদ্ধ হয়ে আছে, সে কিছুতেই সেটাকে বের করতে পারে না, গুটলেটি বের করতে তার চোখে পানি এসে পড়ে। নবজাত শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যেও এই ঔষধ কার্যকরী। কখনও কখনও মলদ্বার দিয়ে দুর্গন্ধ স্রাব; মলদ্বার অত্যন্ত চুলকায়
স্ত্রীরোগ।-কিছুদিন পূর্বে যে রমণীর বিবাহ হয়েছে তার হয়ত জননী হতে খুব ইচ্ছা। বিবাহের সময় ও বিবাহের পূর্বে সে খুব স্বাস্থ্যবতী ছিল, কিন্তু এখন তার ডিম্বকোষে বেদনা, ঋতুর গন্ডগোল অত্যধিক, তার রতিশক্তি লুপ্তপ্রায় অর্থাৎ কামোদ্দীপনা মোটেই নেই, মুখমন্ডল. মোমের মত সাদা ও রক্তহীন হয়ে যায়-এই সকল কারণে এখন সে খিটখিটে হচ্ছে ও স্নায়বিক দৌর্বল্য অত্যধিক। স্বাস্থ্যবতী স্ত্রীর এমন স্বাস্থ্য হইল কেন? অনুসন্ধানে জানা গেল তার স্বামীর একাধিকবার গণোরিয়া হয়েছিল, এবং সেটা ইঞ্জেকসন দ্বারা ভাল করেছে। এমন ক্ষেত্রে মেডোরিণাম স্ত্রীর সেই নষ্ট স্বাস্থ্য ফিরাইয়া আনিবে। আর তার স্বামী যদি এখনও সেই সাইকোসিস বিষ জর্জরিত উচ্ছৃঙ্খল যুবক–স্বাস্থ্যহীন, ফ্যাকাসে চেহারা, মদ্য ও ধূমপানে প্রবল আসক্ত, সামান্য ঠান্ডাও সহ্য করতে অক্ষম, সামান্য পরিশ্রমে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শক্তভাব, সামান্য পরিশ্রমে অত্যধিক ঘাম, সামান্য ঠান্ডায় রোগলক্ষণের বৃদ্ধি, এরূপ অবস্থাতেই থাকে, তবে হতভাগ্য স্বামী ও স্ত্রী মেডোরিণামের উচ্চ শক্তির কয়েক মাত্রায় কিছুদিনের ভিতর আরোগ্যলাভ করে পূর্বে স্বাস্থ্য পুনঃপ্রাপ্ত হবে।
মেডোরিণাম রোগিণীর ঋতুস্রাব অল্প, কালচে বর্ণের ও চাপ-চাপ; কাপড়ে লাগলে উক্ত রক্তের দাগ উঠা কঠিন। ম্যাগ-কার্ব রোগিণীর কাল ঝুলের মত ঋতুস্রাব হয়, ধুইলে পর কিছুতেই উঠতে চায় না। বামদিকের ডিম্বকোষে ভয়ানক বেদনা, রোগিণী মনে করে যেন ভিতরে একটি থলি বড় হচ্ছে, সেটাতে চাপ লাগলেই সেটা ফেটে যাবে। মেডোরিনাম বাধক বেদনার একটি উত্তম ঔষধ, রোগিণীর এত যন্ত্রণা হতে থাকে যে, সে পা গুটাইয়া রাখতে বাধ্য হয়, যেন জরায়ু ইত্যাদি প্রবল বেগে নীচের দিকে নেমে আসছে (বেল, ক্রিয়ো, ল্যাক ক্যান, লিলিয়াম, নেট্র-কার্ব, সিপিয়া)। যোনির ভিতর ও যোনিদ্বারে ভয়ানক চুলকানি। ঋতুস্রাবের সময় রোগিণীর স্তন দুইটি, বিশেষতঃ স্তনের বোঁটা দুইটি অত্যন্ত ঠান্ডা হয়ে যায় এবং শরীরের অপর অংশ রীতিমত গরম থাকে। কখন কখনও জননেন্দ্রিয় স্থানে নরম থলথলে উপমাংস দেখা যায়।
শিশুদের শীর্ণতা (marasmus) রোগে মেডোরিণাম দ্বারা ফল পাওয়া যায়, যদি শিশু সাইকোটিক-বিষ জনক-জননী হতে অর্জন করে থাকে এমন ইতিহাস পাওয়া যায়, সোজা কথায় বলা চলে প্রমেহ-বিষদুষ্ট পিতামাতার পুঁয়ে পাওয়া ক্ষীয়মাণ শিশু মেডোরিণাম প্রয়োগে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসম্পন্ন হয়ে থাকে। শিশুর মলদ্বারের ক্রিয়ার অভাব, পিছনে সামান্য হেলিয়া পড়লে মলত্যাগ করে, তার বাহ্যে ভয়ানক শক্ত বলের মত গোল। শিশুর মলদ্বার হতে রস নিঃসৃত হয়, সেটা নোনা মাছের পানির মত দুর্গন্ধপূর্ণ (কষ্টি, হিপার)। তুলনীয়। অ্যাব্রোটেনাম-শিশুদের ম্যারাসমাস বা শীর্ণতা (পুঁয়ে পাওয়া) রোগের অন্যতম উৎকৃষ্ট ঔষধ। শিশুর সমস্ত দেহই শুকাতে থাকে, কিন্তু পায়ের দিকেই বেশী শুকায়। টিউবারকুলিনামের শিশুরও পায়ের দিকে বেশী শুকাতে থাকে। নেট্রাম-মিউর -মেডোরিণামের মত শিশুর ক্ষুধা-পিপাসা বেশী, খায়ও খুব অথচ গায়ে মাংস লাগে না। মেডোরিণামের শিশু যেমন মিষ্টি বেশী খায়, নেট্রাম-মিউরের শিশু তেমনি লবণ। ঘাড়ের পিছন দিকটাই বেশী শুকায়। সার্সাপ্যারিলা – শিশুর শরীর অপেক্ষা ঘাড় বেশী শুকায়, কিন্তু বৃদ্ধব্যক্তিদের মত গায়ের চামড়ায় ভাঁজ পড়ে। আয়োডামের শিশুরও ক্ষুধা বেশী, বার বার খায়, হজমও হয়, কিন্তু গায়ে মাংস লাগে না, সমস্ত শরীরই শুকায়। ল্যাপিস-অ্যালাম-রাক্ষুসে ক্ষুধা (আয়োডামের মত) খায়ও খুব, কিন্তু চর্বি ক্রমে শুকাতে থাকে। ধ্রুফুলা ধাতুর শিশুদের পক্ষে অধিকতর উপযোগী।
হাঁপানি।– বয়স্কগণের শ্বাসস্বল্পতা রোগে ও প্রমেহ-বিষ-জর্জরিত পিতামাতার শিশুদের হাঁপানি রোগে মেডোরিনাম উত্তম কার্যকরী ঔষধ। সাইকোটিক বিষদুষ্ট শিশুর হাঁপানি রোগে নেট্রাম- সাক্ষও একটি উত্তম ঔষধ। নেট্রাম-সাদ শিশু কাশবার সময় তার বুক চেপে ধরে কাশতে থাকে। সামান্য নড়াচড়াতে রোগীর শ্বাসস্বল্পতা ও শ্বাসরোধ হওয়ার উপক্রম হয়। আলজিভের দুর্বলতা বা আক্ষেপের জন্য শ্বাসরোধ হয়। শ্বাসযন্ত্র এরূপ অবরুদ্ধ যে, প্রশ্বাস ত্যাগ করতে রোগীর ভীষণ কষ্ট হয়, কিন্তু শ্বাস গ্রহণ অনায়াসে করতে পারে। ডাঃ কেন্ট বলেন, এরূপ হাঁপানি রোগী মেডোরিণাম দ্বারা আরোগ্য লাভ করেছে। গণোরিয়া বিষদুষ্ট ব্যক্তিদের হাঁপানি প্রায়ই রাত্রি ২টা হতে ৫টায় বাড়ে; হাঁপানির আক্রমণের সময় সে উপুড় হয়ে অথবা কনুই ও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে শুয়ে থাকতে বাধ্য হয়। ঐ সময়ে সে মুখখানি খোলা জানালার দিকে রাখতে চায়। সে জিব বের করে থাকলে উপশম বোধ করে। তুলনীয়। কোপেভা-প্রমেহ রোগগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাঁপানি এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য রোগে, যেমন-ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া এমন কি যক্ষ্মাকাশিতেও, যখন কাশির সাথে প্রচুর পরিমাণ পুঁজের মত ফ্যাকাসে রঙের গয়ার বের হয়, তখন এটা বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কেলি-বাই-বর্ষা অথবা শীতকালে সামান্য ঠান্ডা লাগলেই কাশি এবং হাঁপানির টান বাড়ে, সাধারণতঃ শেষ রাত্রি ৩/৪টায় বৃদ্ধি। গয়ার আঠার মত, মুখ হতে দড়ির মত লম্বা হয়ে ঝুলতে থাকে। কেলি-আয়োড – রোগীর শ্বাসকষ্ট বেশী। সামান্য সঞ্চালনেই সে হাঁপেতে থাকে। শুষ্ক কাশি। সাবানের মত গয়ার উঠে।
শিশুর প্রস্রাব।-প্রস্রাব গরম, ঐ প্রস্রাব শিশুর যেখানে লাগে সেই স্থান হেজে যায়। সে প্রত্যেক রাত্রে বিছানায় প্রচুর পরিমাণ ঝাঁজাল ও ঘোর লালবর্ণের প্রস্রাব করে। প্রস্রাবে অত্যন্ত দুর্গন্ধ। কিডনী স্থানে ও কোমরে অত্যন্ত বেদনা হতে থাকে, খুব কতকটা প্রস্রাব হওয়ার পর আরামবোধ। তুলনীয়।–অ্যাসিড-বেঞ্জোয়িক – প্রস্রাবে অতি কটু ঝাঁজাল গন্ধ। শিশুর শয্যামূত্রে বিশেষ উপকারী। ক্রিয়োজোট – প্রচুর পরিমাণ দুর্গন্ধ প্রস্রাব। প্রস্রাবে জ্বালা এবং চুলকানি। -শিশু প্রথম নিদ্রাতেই বিছানায় প্রচুর পরিমাণ প্রস্রাব করে ফেলে। প্রস্রাবের স্থানেই প্রস্রাব করছে এমন স্বপ্ন দেখে।
ধাতুদৌর্বল্য ও ধ্বজভঙ্গ। -যে সকল যুবক গণোরিয়া দ্বারা বহুবার আক্রান্ত হয়েছে, বিশেষতঃ তারা যদি গণোরিয়া চিকিৎসা ইঞ্জেকসনাদি দ্বারা করিয়ে স্বপ্নদোষ ও ধ্বজভঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তবে তাদের পক্ষে মেডোরিণ ফলপ্রদ ঔষধ। যাদের পুরাতন প্রমেহ-স্রাব বহুদিন পৰ্য্যন্ত হতে থাকে, তাদের বাতরোগে ও স্বাস্থ্যহীনতায় এটা ব্যবহার্য্য। রোগীর নিদ্রিত অবস্থায় রেতঃপাত হয়, পানির মত পাতলা, সেটা কাপড়ে লেগে শুকাইলে কাপড় মড়মড় করে না (নেট্রাম- সাম্ফ)। এতে যেমন পাতলা রেতঃস্রাব আছে, সেইরূপ ঘন রেতঃস্রাবও আছে, স্রাবের সাথে সাদা সূতার মত পদার্থ বের হয়। দিবারাত্রি যখন তখন প্রবলভাবে লিঙ্গোচ্ছ্বাস হয়।
কটীবাত বা বাতের রোগ। -কোমরের বেদনা অর্থাৎ লাম্বাগো (lumbago) মেডোরিণামের একটি প্রিয় কর্মক্ষেত্র। গণোরিয়াজাত কটীবেদনা ও কটীশূলে মেডোরিনাম উত্তম ঔষধ। সায়েটিক নার্ভের বেদনায় এটা কার্যকরী। পুরাতন বাতরোগেও এটার ব্যবহার আছে। রোগী বেদনায় ভয়ানক কষ্ট পায়, রোগীর সমস্ত শরীরে ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সূঁচফোটান বেদনা। বাতের কতকগুলি বেদনা নড়াচড়ায় উপশম হয়, আবার কতকগুলি নড়াচড়ায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। রোগীর হাত-পায়ে জ্বালা। এতে অবরুদ্ধ স্রাব পুনরাগমনেও বিশেষ সহায়তা করে ও বাতরোগ নিরাময় করে। তার বামদিকের রেতঃরজ্জুতে (spermatic cord), বামদিকের সায়েটিক-স্নায়ুতে এবং কটীদেশে ভীষণ বেদনা। বেদনা দিবাভাগে অধিক থাকে এবং রাত্রে উপশম হয়। তুলনীয়। -রাস-টক্স-অন্যান্য বাতের মত কটীবাতেরও এটা অন্যতম উৎকৃষ্ট ঔষধ। বেদনা মধ্যরাত্রে এবং বিশ্রামে বাড়ে, সঞ্চালনে এবং উত্তাপ প্রয়োগে কমে। রেডিয়াম-অন্যান্য স্থানের মত কোমরের বাতেও এটা বিশেষ উপযোগী, রাস-টক্সের মত রাতে বৃদ্ধি এবং সঞ্চালনে বা নড়াচড়ায় উপশম, মেডোরিণাম প্রমেহজ বাতে উপকারী। রেডিয়ামের বাত কিডনীসংক্রান্ত রোগের পক্ষে অধিকতর উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গুয়েকাম-তরুণ অবস্থায় অধিকতর উপকারী, উপদংশজাত এবং পারদদুষ্ট ব্যক্তিদের কোমরে বেদনা। গরমে, উত্তাপে এবং নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। বর্ষা এবং শীতেও বেদনা বাড়ে। নাক্স- ভমিকা-কোমরে এবং পিঠে বেদনা, পাশ ফিরলে বাড়ে, আক্রান্ত স্থানের আড়ষ্টভাব, কোমরের বেদনার জন্য কেউ না ধরলে পাশ ফিরিতে পারে না, অথবা বিছানা হতে উঠতে পারে না।
`টমাস ওয়ালস বলেন, শিশুদের মাথায় দুর্গন্ধযুক্ত চিপিটিকা রোগ, দাদ, মরামাস প্রভৃতি এই ঔষধ দ্বারা নিরাকৃত হয়। যে সমস্ত রোগীর বার বার ফুসফুসের প্রদাহ হয়, ফুসফুসাবরণীর প্রদাহ, অন্ত্রাবলীর প্রদাহ ও পুরাতন বাতের আক্রমণ বার বার হতে থাকে, তাদের পক্ষে এই ঔষধ কার্যকরী। জরায়ুর বহিরাবরণী ও অন্তরাবণী-প্রদাহ, ডিম্বনলী-প্রদাহ এবং জরায়ু-প্রদাহ ইত্যাদি রোগের শতকরা ৯৯ ভাগ প্রতিরুদ্ধ প্রমেহ বিষের জন্য হয়ে থাকে। সুতরাং এই সকল রোগে যখন নানাপ্রকার ঔষধ প্রয়োগ করেও ফল পাওয়া যায় না, তখন মেডোরিণামের উচ্চ বা উচ্চতর শক্তির একমাত্রা প্রয়োগ বিধেয় (প্রয়োগ হলে প্রতি সপ্তাহে “কমাত্রা ব্যবহার্য্য)। ফুসফুস-প্রদাহ, ফুসফুসাবরণী-প্রদাহ রোগে যখন দেখিবে এই সকল রোগ বার বার ভাল হয়েও বার বার ঘুরে ফিরে আসছে, তখন যেডোরিণাম একমাত্র ঔষধ, কিন্তু তরুণ অবস্থায় যখন রোগীর যন্ত্রণা প্রতি রাত্রে অত্যধিক হয় তখন মেডোরিণামের হাজার শক্তির একমাত্রায় আশাতিরিক্ত ফল পাওয়া যায়। কোন রোগের তরুণ অবস্থায় মেডোরিণাম প্রয়োগ করা কর্তব্য নয়।
বৃদ্ধি। অতি প্রত্যুষে; নড়াচড়ায়; হাত-পা ছড়ালে; মাথা সামনে ঝুঁকাইলে; সূর্য কিরণে; বিছানার গরমে; গরম ঘরে; নূন-পানিতে গোসল (গলা); সমুদ্র হতে দূরবর্তী স্থানে; রোগের কথা ভাবিলে; সকাল হতে সন্ধ্যা পৰ্য্যন্ত; উত্তাপে।
হ্রাস।–পেটের উপর উপুড় হয়ে শুইলে; পিছনদিকে ঝুঁকলে (কোষ্ঠবদ্ধতা); পাখার হাওয়ায়: সমুদ্র তীরে।
শক্তি।-২০০ শক্তি হতে ঊর্ধ্ব এবং ঊর্ধ্বতম শক্তি।