ম্যাগ্নেসিয়া-ফস্ফোরিকা (Magnesia Phosphorica)
পরিচয়।-সালফেট-অভ-ম্যাগ্নেসিয়া ও ফস্কেট-অভ্-সোডা একত্রে মিশ্রিত করে এই ঔষধ তৈয়ারী হয়ে থাকে।
ব্যবহারস্থল। -শূল-বেদনা; স্নায়ুশূল; আক্ষেপিক কাশি; খিলধরা; বাধক; শিশুদের দাঁত উঠবার সময় নানাবিধ রোগ, মাথার যন্ত্রণা, হুপিংকাশি; চোখের রোগ; তান্ডব রোগ (কোরিয়া); অজীর্ণ; উদরাময়; আমাশয়; হিক্কা, জ্বর, মূত্রনালী মধ্যে ক্যাথিটার বা শলাকা প্রবেশ করাবার মন্দফল প্রভৃতি ক্ষেত্রে এটা কার্যকরী ঔষধ।
ক্রিয়াস্থল। এই ঔষধটি সুসলার আবিষ্কৃত দ্বাদশটি বায়োকেমিক ঔষধের অন্যতম। তিনি বলেন, ম্যাগ-ফস কণিকার অভাব ঘটিলে খালধরার মত বেদনা, সঙ্কোচন (মাংসপেশীর), স্নায়ুশূল প্রভৃতি লক্ষণ আবির্ভূত হয়।
প্রদর্শক লক্ষণ-যন্ত্রণা উত্তাপে, চাপ দিলে, গরম পানীয়ে, দুমড়াইয়া শুইলে উপশম। ঠান্ডা পানিতে দাঁড়িয়ে রোগ হলে। বিদ্যালয়ের বালক-বালিকাদের মাথাধরা। পেটের বেদনায় রোগী ছটফট করে। চলে বেড়ালে বেদনা কম হয়। পড়তে বসলেই ঘুম পায়, পড়ার ইচ্ছা নেই। উদরাময়, জিভ সাদা। রাত্রে ঘুম ভাঙ্গিলে মুখে টক স্বাদ। তড়কা ও হুপিং কাশি। তড়কার সময় জ্বর থাকে না।
শিরঃরোগ।– যদি স্নায়বিক হয় ও সেই সাথে যদি দৃষ্টি-বিভ্রম থাকে, তবে ম্যাগ-ফস ফলপ্রদ। রোগীর মাথার পিছন দিকে তীব্র বেদনা, ক্রমে ক্রমে ঐ বেদনা মাথার চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। যন্ত্রণা এত তীব্র হয় যে, রোগী চোখের সম্মুখে বিদ্যুৎ চমকানবৎ দেখে। ম্যাগ-ফসের সকল জাতীয় মাথার যন্ত্রণা উত্তাপে উপশম এবং ঠান্ডায় বৃদ্ধি। বিদ্যুৎবেগে আসে এবং বিদ্যুৎবেগে চলে যায় (বেল)। বিদ্যালয়ের বালক-বালিকাদের মাথার ১০টা হতে ১১টা বা ৪টা হতে ৫টার ভিতর বেশী। তুলনীয়। – ক্যাল্কেরিয়া-ফস – স্কুলে পাঠরত যুবক-যুবতীদের শিরঃরোগে বিশেষ উপযোগী। ঋতুর পরিবর্তনে মাথাধরায়- গ্লোনইন। আধকপালে দপদপানি মাথাধরা। শিরাসকল ফুলে উঠে, অতিরিক্ত রৌদ্র লাগিয়ে মাথাধরা, গ্যাসের আলোতে মাথাধরা, মাথার কাপড় বা টুপী সহ্য করা যায় না, বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে মাথাধরা বাড়ে, বেলা পড়তে আরম্ভ করলে মাথাধরা কমে। সাইলিসিয়া-পুরাতন শিরঃরোগ ঘাড় হতে বেদনা আরম্ভ হয়, মাথার উপর দিয়ে গিয়ে ডান চোখে অবস্থিতি করে। মাথা গরম কাপড় দিয়ে ঢাকিলে অথবা মাথায় চাপ দিলে কিম্বা প্রচুর পরিমাণ প্রস্রাব করলে উপশম হয়। স্যাঙ্গুইনেরিয়া-এই প্রকারের ডান দিকের অর্দ্ধশিরঃশূলে ব্যবহৃত হয়, বেদনা সকালে আরম্ভ হয়, বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে সন্ধ্যা পৰ্য্যন্ত থাকে। মাথার পিছন দিক হতে আরম্ভ। ঠিক এই প্রকারের মাথাধরা বাম দিক হতে আরম্ভ হয়ে বাম চোখে স্থিতি হলে, স্পাইজেলিয়া ব্যবহৃত হয়।
চোখের অসুখ।-চোখের পাতায় আক্ষেপিক স্পন্দন ও স্নায়বিক বেদনা। উত্তাপে উপশম; রোগীর চোখের পাতার পতন অর্থাৎ সে চোখ মেলতে পারে না, আক্ষেপের জন্য চোখ বুজে আসে, চোখতারকা সঙ্কুচিত হয়ে যায়, সেজন্য আলো একেবারে সহ্য হয় না। চোখের স্নায়ুর (অপটিক-নার্ভ) দুর্বলতার জন্য চোখের সম্মুখে রামধনুর মত বিচিত্র বর্ণের চিত্র দৃষ্টিপথে পড়ে, সেজন্য রোগী পড়াশুনা করতে পারে না। কখনও কোন একটি পদার্থকে দুইটি পদার্থ দেখে। চোখের স্নায়ুশূল ডান দিকেই বেশী; আক্রান্ত অংশে গরম সেক দিলে উপশম।
তড়কা, আক্ষেপ, ধনুষ্টঙ্কার ইত্যাদি। টেনে ধরার ভাব, কিন্তু কখনও জ্বর থাকে না। আক্ষেপিক তোলামি, শিশুদের দাঁত উঠবার সময়কার তড়কা, সর্বাঙ্গে খালধরা ভাব ইত্যাদি ক্ষেত্রে ম্যাগ-ফসের ক্রিয়া অসীম। সুসলার বলেন ধনুষ্টঙ্কারে যখন শিশুর চোয়াল বন্ধ হয়ে যায় তখন এটার আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয়ই প্রয়োগ করা চলে।
লেখকদের আঙ্গুলের আক্ষেপ ও পিয়ানো বাদকদের আঙ্গুলের আক্ষেপ ও ধনুষ্টঙ্কার এই ঔষধে আরোগ্য লাভ করে।
কোরিয়া বা তান্ডব রোগে নানাপ্রকার আক্ষেপ, হস্ত পদাদির অনিচ্ছাকৃত স্পন্দন, কারও সাথে বাক্যালাপ করার সময় কথা জড়িয়ে যাওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে ম্যাগ-ফস শ্রেষ্ঠ ঔষধ।
দাঁত উঠবার সময় শিশুদের আক্ষেপ ও তড়কায় এটা চমৎকার ঔষধ। দাঁত উঠবার সময়ের তড়কা বা আক্ষেপে প্রবল জ্বর, মস্তকে রক্তসঞ্চয়, আরক্ত মুখমন্ডল থাকলে বেলেডোনা উপকারী। শিশুদের খিটখিটে মেজাজে, ক্যামোমিলা। প্রবল আক্ষেপ, ধনুষ্টঙ্কারের মত ঘাড় পিছনের দিকে বেঁকে যায়, মুখ দিয়ে ফেনা উঠে, বিশেষতঃ শিশু যদি কৃমিধাগ্রস্ত হয়, তবে সিকুটা তার ঔষধ
দমকা কাশি। -ক্রূপ, হুপিং-কাশি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ম্যাগ-ফস উপযোগী ঔষধ। কাশির সাথে কখনও জ্বর থাকে না। দমকা কাশির সময়ে খিল ধরে।
শূলবেদনা।-ম্যাগ-ফসের শূলবেদনা উত্তাপে, উদ্গার উঠলে, চাপ দিলে ও সামনের দিকে ঝুঁকলে উপশম; কলোসিন্থ রোগীর শূলবেদনাও সম্মুখের দিকে ঝুঁকলে উপশম; ম্যাগ ফসে যেমন গরম সেক দিলে উপশম, কলোসিন্থে সেইরূপ নেই। ম্যাগ-ফসের শূলবেদনা সূঁচফোটানবৎ, তীব্র আক্ষেপিক। যে কোন প্রকারের শূলবেদনা হোক না কেন যদি গরমে উপশম হয়, তা হলে এই ঔষধের নিম্নশক্তি দ্বারা আশাতিরিক্ত ফল পাওয়া যায়। পাথুরীর শূলবেদনা যখন অত্যধিক বেগের সাথে আরম্ভ হয় এবং গরম সেকে ভাল ফল পাওয়া যায়, তখন ইহাদ্বারা ফল দর্শে। দন্তশূল, রাত্রে দেখা দেয়, স্থান পরিবর্তন করে ও ঠান্ডায় বাড়ে।
বাধক-বেদনা।– ঝিল্পীসমন্বিত বাধক-বেদনা (Membranous dysmenorrhea) যদি উত্তাপে হ্রাস হয় ও বেদনা আক্ষেপিক প্রকৃতির হয়, তবে এই ঔষধদ্বারা চমৎকার ফল পাওয়া যাবে। যতক্ষণ ঋতুস্রাব না হয় ততক্ষণ পর্য্যন্ত অত্যধিক বেদনা।
তুলনীয়।-ল্যাকেসিস, স্রাব আরম্ভ হওয়ার পূর্বে তীব্র বেদনা কিন্তু স্রাব আরম্ভ হলে বেদনা কমে যায়। সিমিসিফুগা – ঋতুস্রাব কখনও কম কখনও বেশী হয়; অনিয়মিত ঋতুস্রাব, তলপেটে বেদনা, কোমরেও বেদনা। ভাইবার্ণাম-ওপুলাস–বাধক বেদনার অন্যতম উৎকৃষ্ট ঔষধ। আক্ষেপিক প্রকৃতির বেদনা, পৃষ্ঠ হতে আরম্ভ হয়ে কোমর দিয়ে জরায়ু পর্য্যন্ত প্রসারিত হয়। জ্যান্থকজাইলাম-কোমরে এবং তলপেটে বেদনা, উরুদেশে এবং পদদ্বয়ে প্রসারিত হয়, স্নায়ুপ্রধান, ভীত, মানসিক অবসাদগ্রস্ত স্ত্রীলোকদের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। ক্যামোমিলার বেদনা রোগিণী সহ্য করতে পারে না, বেদনায় পাগলের মত হয়ে যায়। আর সহ্য করতে পারে না বলে চিৎকার করে। আমাশয়।-পেটে ভয়ানক কামড়ানি থাকে, বারংবার মলত্যাগের ইচ্ছা অথচ সামান্য মল বের হয় সেই সাথে ভয়ানক কোথ, মলত্যাগের সাথে বারংবার প্রস্রাব করার বেগ, আমাশয় বা রক্তামাশয় রোগে কোথ প্রভৃতি বা পেটে অতিরিক্ত শূলাদি ম্যাগ-ফসের নির্দিষ্ট লক্ষণ।
কলেরায় হিক্কা।-কলেরার হিক্কায় এই ঔষধের ৩য় বা ৬ শক্তির চূর্ণ কিছু গরম পানিতে গুলে রোগীকে ১৫/২০ মিনিট অন্তর সেবন করতে দিলে, অতি শীঘ্র শীঘ্র হিক্কা বন্ধ হয়ে রোগী আরোগ্য লাভ করে। তুলনীয়।-সিকুটা, অতি উচ্চশব্দ বিশিষ্ট হিক্কায় উপকারী বিশেষতঃ কৃমিধাতুগ্রস্ত শিশুদের হিক্কায় এটা অধিকতর উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কেলি-ব্রোমেটাম- যেখানে অনবরত হিক্কা হতে থাকে, কিছুতেই সেটার বিরাম-নাই, সেখানে এটা বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইগ্লেসিয়া-আহার এবং পানি বা অন্য পানীয় দ্রব্য গ্রহণের পরে এবং তামাকের ধূমে হিক্কার বৃদ্ধি হলে ব্যবহৃত হয়। কার্বো-ভেজ-হিমাঙ্গাবস্থা, হাত-পা এবং সমস্ত শরীর বরফের মত ঠান্ডা, এই অবস্থায় হিক্কা হলে এবং সেটা যদি নড়াচড়া করলে বাড়ে, এবং পেটফাপা বৰ্ত্তমান থাকে, তা হলে কার্বো-ভেজ বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বেলেডোনা – আক্ষেপিক হিক্কা। হিক্কায় রোগীর সর্বশরীর ঝাঁকি মারিয়া বা ঝাঁকিয়া উঠে।
পৃষ্ঠ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।-রোগীর পিঠে ও সমস্ত শরীরে স্নায়ুশূলের মত বেদনা ঐ বেদনা তড়িতাঘাতের মত হঠাৎ আসে এবং হঠাৎ চলে যায়, কখনও তীরবিদ্ধবৎ ও কর্ত্তনবৎ বেদনাও এতে দেখা যায়। ঐ সকল বেদনা স্থান পরিবর্ত্তন করে বেড়ায় এবং সেক দিলে ঐ বেদনার উপশম হয়। তরুণ সায়েটিকা বেদনা, আমবাতের বেদনা প্রভৃতি যদি পূর্বোক্তরূপ হয়, তবে এটা ব্যবহার্য্য।
শক্তি।– ১x, ৩x, ৬x বা তদূর্দ্ধ। ২০০ শক্তি অনেক ক্ষেত্রে উত্তম ফল দেয়। সুসলার বলেন এই ঔষধের নিম্নক্রম উষ্ণ পানিতে সেবনে উত্তম ফল পাওয়া যায়।